somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শেখ এম উদ্‌দীন
আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শিক্ষা, শিক্ষক ও একটি জাতির গল্প

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত দুটি বচন হলো—‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ ও ‘শিক্ষকেরা হলেন এই মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর’। বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের দুটি বিষয় জানা আবশ্যক। প্রথমত মেরুদণ্ড ও এর ভূমিকা। দ্বিতীয় শিক্ষা কেন একটি জাতির মেরুদণ্ড তুল্য এবং এই মেরুদণ্ডের সঠিক গঠনে শিক্ষকের অবদান। এই আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ড গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকের পাণ্ডিত্যপূর্ণ (Scholastic) ভূমিকার দিকে আলোকপাতের চেষ্টা করব।

লেখাটি দৈনিক প্রথমআলোতে প্রকাশিত (Click This Link)

এক

মেরুদণ্ড বা কশেরুকা হলো মানবদেহের ভারবহনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ হাড়ের সমষ্টির নাম। এটি গোল চাকতির মতো ৩৩টি হাড়ের নিবিড় ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সন্নিবেশের মাধ্যমে গঠিত হয়। প্রতিটি চাকতির মাঝে একটি নির্দিষ্ট মাত্রাতে স্থিতিস্থাপকতার শক্ত জেলির মতো কিছু পদার্থ থাকে। এই পদার্থগুলো এই চাকতিগুলোকে আমাদের প্রয়োজনে একটি নির্দিষ্ট কোণে ঘুরতে ও নড়তে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা আমাদের দেহ বিভিন্ন কোণে বাঁকাতে সক্ষম হই। এদের এমন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে স্থিতিস্থাপক নাড়াচাড়া আমাদের দেহের জন্য একটি অপরিহার্য কাজ। যার ফলে আমরা আমাদের দেহকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ অন্য সকল কাজ করতে পারি। জেলির মতো পদার্থগুলো না থাকলে আমরা আমাদের দেহকে নাড়াতে অক্ষম থাকতাম। সুস্থ অবস্থায় আমরা অনেকেই এই ডিস্ক বা চাকতিগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই ক্ষুদ্র হাড়ের একটিও নিজের অবস্থান থেকে এক মিলিমিটার কিংবা তারও কম পরিমাণ বিচ্যুত হয় অথবা এই জেলির মতো পদার্থ নষ্ট হয়ে যায় তখন এই মেরুদণ্ডের সঠিক পরিচর্যা ও অবস্থান সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয় হয়ে ওঠে।

একই ভাবে শিক্ষা হলো এমন একটি উপাদান, যা একটি জাতির করণিক থেকে সচিব পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের রাষ্ট্র যন্ত্রের পরিচালক তৈরির কাঁচামাল ও তার মান নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক। শিক্ষার বিভিন্ন স্তর হলো মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোর মতো। আর শিক্ষকেরা হলেন এই ডিস্কগুলোর সঠিক আকৃতি প্রদান ও সঠিক স্থিতিস্থাপকতার জেল সাদৃশ্য পদার্থ লেপনের কারিগর। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোর সঠিক আকার, আকৃতি ও খাঁজ যেমন করে জেলির মতো পদার্থের সহায়তায় মেরুদণ্ডকে তার সঠিক কাজ করতে সাহায্য ও সহযোগিতা করে, তেমনি শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি সেক্টরে অবদান রাখতে পারে। অর্থাৎ একটি জাতির শিক্ষকেরা যদি নৈতিকভাবে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তবে সেই জাতির উন্নতির চরম শিখরে ওঠা শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য!

উন্নত জাতিসমূহের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সকল জাতিই শিক্ষকতা পেশাকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত এবং সমাজের সবচেয়ে মেধাবী ও বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষগুলোকে শিক্ষকতা পেশাতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। উন্নত কোনো জাতির শিক্ষকদের এলাকার রাজনৈতিক নেতা কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকদের মতামত বা ভালো বাংলাতে বললে মেজাজ-মর্জি অনুযায়ী জ্ঞান বিতরণ ও সংশ্লেষণ করতে হয় না।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সমান মর্যাদা ধারণ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো উদাহরণ নেই যে, কোনো অধ্যাপক তাঁর এই ক্ষমতা শিক্ষার উন্নয়ন ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করেছেন। অপব্যবহার তো কল্পনাই করা যাবে না। অর্থাৎ একটি জাতির উন্নত হওয়ার পেছনে নৈতিকতা ও বিবেকসম্পন্ন মেধাবী মানুষগুলোকে শিক্ষকতা পেশাতে নিয়ে আসা অন্যতম অপরিহার্য একটি উপাদান। একই সঙ্গে ওই দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সকল পর্যায়ের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের শিক্ষকতার মতো পেশাকে প্রভাবিত কিংবা পরিচালিত করার মতো দুরভিসন্ধি নির্মূল করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। দ্বিতীয় উপাদানটি অবশ্য প্রত্যক্ষভাবে প্রথমটির ওপর নির্ভরশীল। কারণ নৈতিকতা ও বিবেকসম্পন্ন মেধাবী শিক্ষকেরাই কেবল পারেন এমন উদার ও নৈতিকতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও আমলা উপহার দিতে। অতএব জাতিকে উন্নতির শিখরে আরোহিত দেখতে চাইলে মেরুদণ্ড গড়ার কারিগরদের দেশের সবচেয়ে জ্ঞানী ও নৈতিক মানুষ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের শিক্ষার মেরুদণ্ডের ডিস্ক মূলত চারটি—প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। অর্থাৎ দুটি বিদ্যালয়, একটি কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। ধারাবাহিকভাবে এই চারটি স্তর নিয়ে আমার নিজের ছাত্র ও শিক্ষকজীবনের দেশীয় ও বিদেশি অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা বলার জন্যই এই লেখার অবতারণা। এই চারটি স্তর নিয়ে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বাচ্চু স্যারের (অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক, লালমোহন বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমোহন, ভোলা) একটি গল্প দিয়ে শুরু করব লেখার দ্বিতীয় পর্ব।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×