somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোল রয়েস: গাড়ির জগতে আভিজাত্যের প্রতীক

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বজুড়ে সমাদৃত দ্রুতগতির এবং বিলাসবহুল গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস অন্যতম। ১৯০৬ সালের ১৫ মার্চ চার্লস স্টুয়ার্ট রোলস এবং স্যার ফ্রেডরিখ হেনরী রয়েস যৌথভাবে রোলস রয়েস কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। গাড়ি তৈরির পাশাপাশি বিমানের ইঞ্জিন তৈরির কাজেও জড়িয়ে পড়ে কোম্পানীটি। একসময় বৃটেনের রাজা রানীরা ব্যবহার করতেন রোলস রয়েস। তখন এসব গাড়ির দাম ছিল আকাশচুম্বী। বছরে মাত্র ৫০০টি গাড়ি তৈরি হতো। এখনো কিন্তু রোলস রয়েসের দাম অনেক। রোলস রয়েসের রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোর দাম প্রায় সোয়া তিন লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় আড়াই কোটি টাকার বেশি। আর এ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ১০০% আমদানী শুল্ক দিতে হয়। মানে বুঝুন, দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা!

অভিজাতদের গাড়ি রোলস রয়েস
উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে রোলস রয়েস। অন্যদিকে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে অভিজাত শ্রেণীর মাঝে। বৃটেনের রাজ পরিবার ডেইলমারের গাড়ি ব্যবহার করত। কিন্তু দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে পঞ্চাশের দশক থেকে তারা রোলস রয়েসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। রাজকন্যা এলিজাবেথ (এখন বৃটেনের রানী) দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে রোলস রয়েসের ফ্যান্টম-৪ সিরিজের গাড়ি ব্যবহার করতে শুরু করেন। গাড়িটি রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্র প্রধানদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ফ্যান্টম-৪ সিরিজের এই গাড়িগুলো পৃথিবীর অন্যতম দূর্লভ গাড়ি, মাত্র ১৮টি তৈরি হয়েছিল এ ধরনের গাড়ি।

১৯৫৫ সালে সিলভার ক্লাউড সিরিজের গাড়ি নিয়ে আসে রোলস রয়েস। ৪,৮৮৭ সিসি ইঞ্জিনের এই গাড়িগুলো ঘন্টায় ১০৬ মাইল বেগে চলতে পারত। এ দশকের শেষ দিকেই আসে ফ্যান্টম-৫ সিরিজের গাড়ি যা ফ্যান্টম-৪ এর চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছিল।

ষাটের দশকে এসে রোলস রয়েসের আবেদন আরও বেড়ে যায়। রূপালী পর্দার তারকায় পরিণত হয় রোলস রয়েস। অভিনেতা-অভিনেত্রী, পপ তারকাসহ সেলিব্রেটিরা রোলস রয়েস ব্যবহার করতে শুরু করেন, এদের মধ্যে ছিলেন জন লেলন, রেক্স হ্যারিসন, ইনগ্রিড বার্গম্যান, ওমর শরিফের মত সেলিব্রটিরা।

যেভাবে রোলস রয়েস বিএমডাব্লিউ’র হাতে চলে গেল
১৯৭৩ সালে গাড়ি উৎপাদন বিভাগটি আলাদা করে রোলস রয়েস মোটরস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় বৃটিশ সরকার। উদ্দেশ্য ছিল মূল রোলস রয়েস কোম্পানী যাতে জেট ইঞ্জিনের কাজে মনোযোগ দিতে পারে। এরপর ১৯৮০ সালে রোলস রয়েস মোটরকে অধিগ্রহণ করে ভিকারস। ১৯৯৮ সালে ভিকারসের কাছ থেকে রোলস রয়েসকে কিনে নেয় ভক্সওয়াগন, আর ২০০২ সালে আবার মালিকানা বদল হয়। এবার রোলস রয়েসকে কিনে নেয় বিএমডাব্লিউ।

১৯৯৮ সালেই রোলস রয়েসকে কিনতে চেয়েছিল বিএমডাব্লিউ। কিন্তু বেশি দর হেঁকে ভক্সওয়াগনই রোলস রয়েস মোটর্সের মালিকানা পেয়ে যায়। এদিকে গাড়ির অন্তর্দহ ইঞ্জিনের ( Internal combustion engine) জন্য তখন বিএমডাব্লিউ-এর ওপরই নির্ভরশীল ছিল রোলস রয়েস।

চুক্তি জটিলতা
চুক্তি অনুযায়ী ঐতিহাসিক ‘ক্রু ফ্যাক্টরী’,’স্পিরিট অফ একসটাসি’ মাসকট এবং রেডিয়েটর গ্রিলের স্বত্ত্ব পেয়ে যায় ভক্সওয়াগন। কিন্তু রোলস রয়েসের ব্রান্ড নেম এবং লোগো তখনো মূল রোলস রয়েস কোম্পানীর হাতে। মূল কোম্পানীটির সাথে কিছু অংশীদারিত্বমূলক কর্মকান্ডের কারণে রোলস রয়েস লোগো এবং ব্রান্ড নেম কিনতে সক্ষম হয় বিএমডাব্লিউ। এক ধরনের অচলাবস্থার উপক্রম হয়। কারণ স্বত্ত্ব, মাসকট এবং রেডিয়েটর গ্রিলের নকশা ভক্সওয়াগনের হাতে থাকলেও ব্রান্ড নেম এবং লোগো ছিল বিএমডাব্লিউ-এর হাতে। ইঞ্জিন সরবরাহের কাজটিও করত বিএমডাব্লিউ। ১২ মাসের নোটিশে ইঞ্জিন সরবরাহ বন্ধ করার সুযোগ ছিল বিএমডাব্লিউ’র। এত অল্প সময়ে রোলস রয়েস গাড়ির জন্য নতুন করে ইঞ্জিনের নকশা তৈরি করা সম্ভব ছিল না। এসময় ভক্সওয়াগন বলে তারা কেবল বেন্টলি ব্র্যান্ডটি (রোলস রয়েসের মালিকানাধীন ব্র্যান্ড) চেয়েছিল যা বাজারে রোলস রয়েসের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছিল।

দরকষাকষির পর ভক্সওয়াগন এবং বিএমডাব্লিউ একটি সমঝোতায় আসে। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিএমডাব্লিউ ইঞ্জিন সরবরাহ করে, ভক্সওয়াগন রোলস রয়েস নাম এবং লোগো ব্যবহারের অনুমতি পায়। ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে বিএমডব্লিউ রোলস রয়েস উৎপাদন শুরু করে। অন্যদিকে ‘ক্রু ফ্যাক্টরী’ বেন্টলি মোটরস লিমিটেডের ফ্যাক্টরীতে পরিণত হয়। রোলস রয়েস মোটরর্সের নতুন কারখনা চালু হয় গুডউড-এ।


রোলস রয়েস গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যান্টম, গোস্ট এবং রেইথ সিরিজ।

রোলস রয়েস রেইথ সিরিজ
• রোলস রয়েস রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোয় আছে ৬২৪ হর্সপাওয়ার ক্ষমতার ৬.৬ লিটার ভি-১২ ইঞ্জিন, ফলে মাত্র চার সেকেন্ডেই ঘন্টায় ৬০ মাইল বেগ তুলতে পারে গাড়িটি।
• জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান নির্ণয় করে সামনের পথের নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি রাস্তার ধরন বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
• মৌখিক নির্দেশের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা যায়, এ যেন ভৃত্য যে মৌখিক নির্দেশে কাজ করে।
• ভেতরে ছাদের অংশেও পরিবর্তন এসেছে। এটি মোলায়েম এবং এক হাজারের বেশি ফাইবার অপটিক ল্যাম্প রয়েছে। রাতে গাড়িতে চড়ার সময় মনে হবে আপনি আকাশের নিচে বসে তারা দেখছেন।

রোলস রয়েস নিয়ে মজার কয়েকটি তথ্য
• ১০ হর্সপাওয়ারের প্রথম রোলস রয়েস গাড়িটির দাম ছিল ৩৯৫ পাউন্ড, আর এখন সেটির দাম আড়াই লাখ পাউন্ডের বেশি।
• এ পর্যন্ত তৈরি হওয়া রোলস রয়েস গাড়িগুলোর ৬৫ শতাংশই সচল আছে।
• রোলস রয়েসের রেডিয়েটর গ্রিল পুরোপুরি হাতে তৈরি হয়।
• রেডিয়েটরটি তৈরি করতে একজনের পুরো একদিন লেগে যায়, আর সেটি পালিশ করতে লাগে পাঁচ ঘন্টা।
• ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ট্রেডমার্ক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না রোলস রয়েস।
• ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাইফেলও তৈরি করেছে কোম্পানীটি
• ফ্যান্টম সিরিজের একটি গাড়ি তৈরি করতে দু’মাস লেগে যায়।
• রোলস রয়েস গাড়ির সামনে হুডের ওপর স্থাপিত মাসকটটি কোন সংঘর্ষের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেতরে ঢুকে যায়।

* সূত্র: অনলাইন ঢাকা গাইড। এ ধরনের আরও লেখা দেখতে দেখুন এই লিংকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×