somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও কোরআনে বিশ্বাসের ভিত্তি

০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক ধর্মে বিশ্বাসীরাই যেহেতু এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাস করে সেহেতু “স্রষ্টা আছে” ধরে নিয়ে যৌক্তিক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই লেখাটিকে বিচার-বিবেচনা করতে হবে। একটি গ্রন্থ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী কি-না – সেটা যাচাই করার আগে নিদেনপক্ষে নিম্নের দুটি শর্ত পূরণ করতেই হবে: শর্ত-১: গ্রন্থটিকে স্রষ্টার বাণী বলে দাবি করতে হবে। অর্থাৎ গ্রন্থটি যে স্রষ্টার বাণী – সেটা গ্রন্থের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লিখা থাকতে হবে। দাবি করাটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে গ্রন্থকে স্রষ্টার বাণী বলে দাবিই করা হয়নি সেই গ্রন্থকে আবার স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করাটাই তো বোকামী! আগে তো দাবি করতে হবে – তারপরই না কেবল দাবিটা সত্য নাকি মিথ্যা এবং সেই সাথে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসবে। শর্ত-২: গ্রন্থটিকে ভুল-ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি থেকে মুক্ত হতে হবে। একটি গ্রন্থকে স্রষ্টার বাণী বলে দাবি করার পরও যদি সেটির মধ্যে সুস্পষ্ট ভুল-ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি থাকে তাহলে সেই গ্রন্থটি স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এই দুটি শর্ত পূরণ করার পরই কেবল একটি গ্রন্থ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী কি-না – বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে শর্ত-১ পূরণ করতেই হবে। কেননা শর্ত-১ পূরণ করতে না পারলে সেই গ্রন্থ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রশ্নই আসে না। মুসলিমদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়: তারা কেন ইসলাম ও কোরআনে বিশ্বাস করে – অর্থাৎ তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি কী? একেক জন হয়তো একেক ভাবে উত্তর দেবেন। তবে মোটামুটিভাবে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলো চলে আসবে। কোরআন যে কোনো মানুষের নিজস্ব বাণী হতে পারে না – তার স্বপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি-প্রমাণ আছে। যেকেউ নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা নিয়ে কোরআন অধ্যয়ন করলে এই সিদ্ধান্তে উপণীত হওয়ার কথা যে, কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ লিখা যেকোনো যুগের মানুষের পক্ষে সত্যি সত্যিই অসম্ভব। ১. কোরআনই হচ্ছে একমাত্র গ্রন্থ যেখানে স্রষ্টা নিজেই বক্তা এবং সেই সাথে বেশ কিছু আয়াতে অত্যন্ত জোর দিয়ে কোরআনকে স্রষ্টার বাণী বলে দাবি করা হয়েছে। অতএব, কোরআন খুব ভালো ভাবেই শর্ত-১ পূরণ করে। কোরআন থেকে কিছু নমুনা: আয়াত ১৪:১, ১৬:১০২, ২০:৪, ২৬:১৯২-১৯৪, ২৭:৬, ৩২:২, ৪৫:২, ৭৬:২৩, ৯৭:১, ইত্যাদি। ২. কোরআনই হচ্ছে একমাত্র গ্রন্থ যেখানে কোরআনের দাবিকে ভুল-প্রতিপাদনের সুযোগ রাখা হয়েছে (আয়াত ৪:৮২) এবং সেই সাথে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কোরআনে যুক্তি-তর্কের ঊর্ধ্বে সুস্পষ্ট কোনো ভুল-ভ্রান্তি বা অসঙ্গতি পাওয়া যায় না। কাজেই অনেকটা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে যে, কোরআন দ্বিতীয় শর্তও পূরণ করে। অধিকন্তু, নিজে একটি গ্রন্থ লিখে এভাবে চ্যালেঞ্জ দেওয়াটা আদৌ সম্ভব বা স্বাভাবিক নয়। মানব জাতির ইতিহাসে এমন চ্যালেঞ্জ কেউ কখনো দিয়েছেন বলেও মনে হয় না। মানুষ কখনো এই ধরণের চ্যালেঞ্জ দেয় না বা দেওয়ার সাহস পায় না। তাও আবার বেশ কয়েকটি ধাপে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে! কিছু নমুনা: আয়াত ১৭:৮৮, ১১:১৩, ২:২৩-২৪, ৫২:৩৩-৩৪, ১০:৩৭, ইত্যাদি। ৩. কোরআনে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী আছে। এ পর্যন্ত একটি ভবিষ্যদ্বাণীও ভুল প্রমাণিত হয়নি। ইতোমধ্যে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিতই হয়েছে। অতএব, সম্ভাবনার ভিত্তিতে অবশিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও সঠিক হওয়ার কথা। ৪. কোরআনই হচ্ছে একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে সেই ধর্মগ্রন্থের নাম (কোরআন), ধর্মের নাম (ইসলাম), ও অনুসারীদের নাম (মুসলিম) উল্লেখ করা হয়েছে (আয়াত ২:১৮৫, ৫:৩, ২:১২৮, ২:১৩১)। সবগুলো ধর্মগ্রন্থের বহিরাবরণ খুলে ফেলে ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে অজ্ঞ কাউকে যদি সনাক্ত করতে বলা হয় সেক্ষেত্রে সে একমাত্র কোরআনকেই সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। ৫. কোরআনই হচ্ছে একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে তার আগের বাণীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে (আয়াত ৫:৪৮, ৩:৩, ৩৭:৩৭, ৩৫:৩১, ১৫:৯, ১০:৩৭) – প্রচলিত কিছু বিশ্বাসকে সংশোধন করা হয়েছে (আয়াত ৪:১৭১, ৫:৭৩, ২১:২২, ২:১১৬, ৪:১৫৭) – এবং সেই সাথে নিজেকে ফুরকান (Criterion) হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে (আয়াত ২৫:১, ২:১৮৫)। নিজে একটি গ্রন্থ লিখে কোনো মানুষের পক্ষে এভাবে ঘোষণা দেওয়াটা কি সম্ভব? ৬. কোরআনে প্রসঙ্গক্রমে “This is the Truth- wherein there is no doubt” কথাটি কয়েক জায়গায় অত্যন্ত জোর দিয়ে বলা হয়েছে। নিজে একটি গ্রন্থ লিখে এতটা জোর দিয়ে এমন দাবি কেউ কি কখনো করেছে? মানুষ সাধারণত এই ধরণের দাবি করার সাহস পায় না! ৭. কোরআনের দাবি অনুযায়ী কোরআনের পাণ্ডুলিপি আজ পর্যন্তও সংরক্ষিত আছে (আয়াত ১৫:৯)। এমনকি কোরআনের একটি আয়াতের উপর ভিত্তি করে একদম শুরু থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থও রেখে আসছে (আয়াত ৫৪:১৭)। আজই যদি কোনো এক দৈব দুর্বিপাকে পৃথিবীর বুক থেকে সবগুলো ধর্মগ্রন্থ নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কোরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেটার প্রায় অবিকল অনুলিপি তৈরী করা সম্ভব। অবহেলা করার কোনোই উপায় নেই! ৮. কোরআনের ভাষাসম্বন্ধীয় মোযেজা (Literary excellence and eloquence) এমনকি কিছু খ্রীষ্টান স্কলারও স্বীকার করেন। এমনও নজির আছে যে, শুধুমাত্র কোরআন তিলাওয়াত শুনেই কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ক্যাট স্টিভেন ওরফে ইউসুফ ইসলামের সবচেয়ে প্রিয় মিউজিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে উনি বলেছিলেন, “কোরআন তিলাওয়াত!” "The Quran is a miracle of purity, of style, of wisdom and of truth." – Rev. R. Bosworth-Smith "Whenever I hear the Quran chanted, it is as though I am listening to music, underneath the flowing melody, there is sounding all the time the instant beat of a drum, it is like the beating of my heart." – A. J. Arberry "That inimitable symphony, the very sound of which move men to tears and ecstacy." – Marmaduke Picktall ৯. কোরআনে সালভেশনের তত্ত্ব একদম স্পষ্ট ও সার্বজনীন (আয়াত ২:৬২, ৫:৬৯, ২২:১৭, ১০৩:১-৩)। অমানবিক বলার যেমন কারো সাধ্য নেই তেমনি আবার অবৈজ্ঞানিক বা অস্পষ্ট বলারও কোনো পথ খোলা নেই। কেননা কোরআনে যেমন “অরিজিনাল সিন” বলে কিছু নেই তেমনি আবার কর্মফলের উপর ভিত্তি করে পূর্ববর্তী জীবনের পাপের ফলস্বরূপ পুনঃ পুনঃ জন্ম-মৃত্যুও নেই। প্রত্যেক শিশু নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুরা পাপ বা অভিশাপের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মায় না। এর যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তিও নেই। বরঞ্চ নবজাতক শিশুকে পাপী বা অভিশপ্ত ধরে নেওয়াটা চরম অমানবিক। একটি শিশু ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার আগেই যদি মারা যায় সেক্ষেত্রেও তাকে নিষ্পাপ ধরা হয়। এমনকি মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ পূর্ণবয়স্ক মানুষদেরও নিষ্পাপ ধরা হয় (আয়াত ২৪:৬১)। কোরআন অনুযায়ী এই পার্থিব জগৎ একটি পরীক্ষাক্ষেত্র (আয়াত ১৮:৭, ৬৭:২, ২:২১৪, ২:১৫৫)। প্রত্যেক বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তার স্ব-স্ব বিশ্বাস ও কর্মের জন্য দায়ি থাকবে। এক জনকে অন্য জনের পাপের বোঝা বহন করতে হবে না (আয়াত ১৭:১৫, ৬:১৬৪)। বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং সেই সাথে নিজের ভাগ্য নিজে বেছে নেওয়ার জন্য মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে (আয়াত ১৭:১৫, ১৮:২৯, ৭৬:৩, ১৩:১১)। এই জগতের ভালো-মন্দ কাজ ও নিজস্ব পছন্দের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী জগতের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ভাগ্য তথা পরিণামও বলে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সালভেশন হচ্ছে স্রষ্টার মহান একটি উপহার। তবে একদম ফ্রী-লাঞ্চ নয়! লাঞ্চের টোকেনস্বরূপ স্রষ্টায় বিশ্বাসের পাশাপাশি ভালো কাজও করতে হবে (আয়াত ৪:১২২, ৮৫:১১, ১৮:১০৭, ১৯:৬১, ৩২:১৯, ২৯:৯, ২:১১২, ২:১৭৭)। অন্যথায় ন্যায়-অন্যায় বা ভালো-মন্দের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। ১০. ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর জন্মের আগেই পিতা মারা গেছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে মাতা মারা গেছেন। সবগুলো পুত্র সন্তান ছোট বেলায় মারা গেছেন। এমনকি একজন ছাড়া বাদবাকি কন্যা সন্তানরাও তাঁর আগে মারা গেছেন। প্রায় সারাটা জীবন তাঁকে সংগ্রাম ও প্রতিকূলতার মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে। অথচ এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলোর কিছুই কোরআনে নেই! শুধু তা-ই নয়, তাঁর জীবনের সাথে জড়িত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিত্ব যেমন হযরত খাদিজা, হযরত আয়েশা, হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান, ও হযরত আলী-সহ আরো অনেকের জীবন বৃত্তান্ত তো দূরে থাক তাঁদের নাম পর্যন্ত কোরআনে নেই! অথচ নাম না-জানা অনেকেরই নাম কোরআনে এসেছে। অতীতের অনেক ঘটনাও কোরআনে স্থান পেয়েছে। এমনকি যীশু তথা ঈশা (আঃ)-এঁর মাতা মেরির নামে কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ চ্যাপ্টার আছে এবং মাতা মেরিকে নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানও দেওয়া হয়েছে। অথচ মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর মাতা-পিতা, স্ত্রী, ও সন্তানদের নাম পর্যন্ত কোরআনে স্থান পায়নি। বাস্তবে আদৌ কি সম্ভব? কোরআন যদি মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর নিজের লিখা বাণী হতো তাহলে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনের কিছু স্মৃতি, হৃদয়বিদারক দৃশ্য, ও কিছু নিকটতম ব্যক্তিত্বের নাম কোরআনে স্থান পাওয়ার কথা ছিল। অধিকন্তু, কোরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে সেই ধর্মগ্রন্থের বাণী বাহকের বিরুদ্ধে সমালোচকদের বিভিন্ন সমালোচনা ও অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে। মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বিভিন্নভাবে উপহাস-বিদ্রূপ করে কোরআনে কিছু আয়াতও আছে। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের দু-একটি তিক্ত ঘটনাও কোরআনে স্থান পেয়েছে (আয়াত ৬৬:১, ৮০:১-৪, ৮:৬৭, ৯:৮৪, ১৬:১২৬)। কোরআনের উপর মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর হাত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচকদের উপহাস-বিদ্রূপ, অভিযোগ, ও তিক্ত ঘটনাগুলো কিন্তু সহজেই এড়িয়ে যেতে পারতেন। কাজেই যেকোনো যুক্তিবাদী মানুষের এখানে থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করার কথা। ১১. হাদিসকে বলা হয় মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর নিজস্ব বাণী। কোরআনও যদি তাঁর নিজস্ব বাণী হতো তাহলে হাদিস ও কোরআনের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য থাকতো না। কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হাদিস ও কোরআনের বাণীর মধ্যে রাত-দিন তফাৎ (Hadith books are a living witness, which prove that the Qur’an is not the word of Muhammad or any other human being.) অধিকন্তু, কোরআন যদি মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর নিজস্ব বাণী হতো বা মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর নামে কেউ যদি লিখতেন সেক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই কোরআনের “কেন্দ্রীয় চরিত্র” হতেন মুহাম্মদ (সাঃ)। অথচ কোরআনের “কেন্দ্রীয় চরিত্র” হচ্ছেন আল্লাহ। কোরআনে আসলে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বিভিন্নভাবে আদেশ-উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কে আদেশ-উপদেশ দিয়েছেন? আল্লাহ। কোরআনের মতো একটি গ্রন্থ লিখে কেউ কি কখনো কাল্পনিক কারো বাণী বলে চালিয়ে দিয়েছেন? ইতিহাসে এমন বোকামী কিংবা পাগলামীর কোনো নজির নেই। কোরআন যেভাবে লিখা হয়েছে সেভাবে আসলে সম্ভবও নয়। ১২. কোরআন যে মুহাম্মদ (সাঃ) বা কোনো মানুষের নিজস্ব বাণী হতে পারে না তার জ্বলন্ত একটি প্রমাণ হচ্ছে কোরআনে যেখানে ইব্রাহীম (আঃ), ঈশা (আঃ), ও মূসা (আঃ) প্রমূখদের নাম ডজন ডজন বার উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর নাম এসেছে মাত্র চার বার! মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে কোরআন লিখলে ডজনেরও বেশী নাম না-জানা ব্যক্তিত্বদের নাম ও তাঁদের বর্ণনা কোরআনে আসাটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক, যেখানে তাঁর নিজের সম্বন্ধেই তেমন কিছু নেই এবং তাঁর জীবনের সাথে জড়িত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নাম পর্যন্তও কোরআনে স্থান পায়নি। অপরদিকে অন্য কোনো মানুষ যদি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আল্লাহর নবী বানিয়ে দিয়ে কোরআন লিখতেন (যদিও অসম্ভব- কেননা মুহাম্মদ (সাঃ) সেই সময় জীবিত ছিলেন এবং এই অভিযোগকে খণ্ডন করার জন্য কোরআনই যথেষ্ট) সেক্ষেত্রেও খুব স্বাভাবিকভাবেই কোরআনের “কেন্দ্রীয় চরিত্র” হতেন মুহাম্মদ (সাঃ), ঠিক যেমন গসপেল ও গীতার "কেন্দ্রীয় চরিত্র" যথাক্রমে যীশু ও কৃষ্ণ। কিন্তু বাস্তবে কোরআনের “কেন্দ্রীয় চরিত্র” হচ্ছেন আল্লাহ। ১৩. কোরআনই হচ্ছে একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা কি-না সেই ধর্মের প্রচারক নিজের জীবদ্বশায় এবং নিজের তত্ত্বাবধানে লিখে সমাপ্ত করে গেছেন। কোরআনের অসংখ্য আয়াতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এবং সরাসরি বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও ধর্মীয় স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে (আয়াত ১৮:২৯, ৬:১০৪, ১০:৯৯, ১৭:১৫, ৪২:৪৮, ৬:১০৮, ৭৬:৩, ১০৯:৬, ২:২৫৬)। ১৪. কোরআনে এমন কোনো শিক্ষা নেই যেটা মানবতার বিরুদ্ধে যেতে পারে। কোরআনে এমন কোনো মতবাদ বা বিশ্বাসও নেই যার দ্বারা পার্থিব জগতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লোটা সম্ভব। কোরআনে এমনকি পৌরোহিত্যকেও বাতিল করা হয়েছে (আয়াত ৯:৩১, ৯:৩৪, ২:৪১, ২:১৭৪)। কোরআন অনুযায়ী স্রষ্টার সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক – কোনো রকম মধ্যস্থতাকারী নেই। ১৫. কোরআনই সম্ভবত একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের জন্য বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সেই সাথে সমালোচকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হয়েছে। কোরআনের স্বর ও বাচনভঙ্গীও অন্য যেকোনো গ্রন্থ থেকে অসাধারণভাবে আলাদা। কোরআনে মাঝে-মধ্যেই অবিশ্বাসীদের প্রতি প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোনো একটি বিষয়ে বর্ণনা দেওয়ার পর বিশ্বাসের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এভাবে: Think … Ponder … Reflect … Pay heed … the Qur’an is for those who possess intelligence … Will you not use your sense? … Do you not understand? … If you are in doubt, then consider this or that … Which of the favours of your Lord will you deny? … Will you not then believe? (আয়াত ২২:৫-৭, ৩:১৯০, ১০:২৪, ১৩:৩, ৩০:৮, ৩৯:২৭, ৭৫:৩-৪, ৬:৫০, ২১:১০, ২১:৩০, ২৩:১২-১৬, ৪১:৫৩, ৪৭:২৪, ৫২:৩৫-৩৬, ৫৫:১-৭৮)। ১৬. খ্রীষ্টান স্কলাররা যেহেতু কোরআন নিয়ে গবেষণা করেন সেহেতু তারা কোরআন সম্পর্কে অবগত। তারা এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ)-কেও কোরআনের গ্রন্থকার মানতে নারাজ! অবস্থার উপর নির্ভর করে কোরআনকে কখনো মুহাম্মদের বাণী, কখনো ইহুদী রাবাইদের বাণী, কখনো খ্রীষ্টান পাদ্রীদের বাণী, কখনো শয়তানের বাণী, কখনো মৃগী রুগীর বাণী, কখনো বা আবার মুহাম্মদের কোনো এক সেক্রেটারির বাণী বলা হয়! তাহলে কোন্‌টি সত্য! সবগুলো তো আর সত্য হতে পারে না! মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলাম-বিরোধীরা একই সাথে সবগুলোকেই সত্য দেখতে চায়! মানব জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থের বিরুদ্ধে যেহেতু এ'রকম অদ্ভুত ও বিক্ষিপ্ত মতামত নেই সেহেতু এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, কোরআনে মানুষের চেয়ে বড় কোনো শক্তি কাজ করেছে। ১৭. ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস দাঁড়িয়ে আছে কোরআনের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে কোরআন (আয়াত ২৯:৫১, ৩০:৫৮), যেটা যুক্তির দ্বারা খণ্ডনযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে একক স্রষ্টা ও স্রষ্টার মনোনীত দূতে বিশ্বাস। একক স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার চেয়ে বড় বোকামী আর দ্বিতীয়টি নেই। এবার প্রশ্ন হচ্ছে স্রষ্টা থেকে থাকলে তাঁর পক্ষে মানুষের সাথে যোগাযোগ করাটা স্বাভাবিক ও সম্ভব কি-না? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই স্বাভাবিক এবং বিষয়টি বিজ্ঞানসম্মতও বটে (যেমন: বেতার তরঙ্গ)। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মহাসচিব ইচ্ছে করলে জাতিসংঘে বসেই বাংলাদেশের একজন মানুষের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর বাণী পৌঁছে দিতে পারেন। অতএব, “স্রষ্টা ও স্রষ্টার দূত” সম্পূর্ণ যৌক্তিক একটি বিশ্বাস। ১৮. কোরআনে মানুষকে এই মহাবিশ্ব ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য যেভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে সে'রকম কিছু দেখা যায় না। কোরআনের কিছু বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের সাথে সহমতও পোষণ করে। তবে কোরআন নিছক কোনো বিজ্ঞানের গ্রন্থ নয়। এটি একটি জীবন বিধান। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে মাত্র। আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বেই মহান স্রষ্টা তাঁর গ্রন্থে এমন সব তথ্যের অবতারণা করেছেন যেগুলোর মর্ম ধীরে ধীরে উপলব্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো অন্যান্য ধর্মের বিজ্ঞানীদের দ্বারা তাঁদের অজান্তেই সত্য বলে স্বীকৃত হচ্ছে। এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, একটি গ্রন্থের কিছু বক্তব্য বিজ্ঞানের সাথে সহমত পোষণ করা মানেই সেই গ্রন্থটি এমনি এমনি স্রষ্টার বাণী হয়ে যায় না। শর্ত-১ ও শর্ত-২ পূরণ করার পরই কেবল এই বিষয়টাকে একটি যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৯. কোরআনের কিছু সাংখ্যিক মাহাত্ম্য সত্যিই আশ্চর্যজনক। ২০. সাহিত্যের বই-পুস্তকে শুধুমাত্র সাহিত্য নিয়ে কথাবার্তা থাকে। পদার্থবিদ্যার বই-পুস্তকে শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যা নিয়েই আলোচনা থাকে, যদিও একক কোনো বইয়েই পদার্থবিদ্যার সবকিছু পাওয়া যাবে না। রসায়নবিদ্যার বই-পুস্তকে শুধুমাত্র রসায়নবিদ্যা নিয়েই আলোচনা থাকে, যদিও একক কোনো বইয়েই রসায়নবিদ্যার সবকিছু পাওয়া যাবে না। জীববিদ্যার বই-পুস্তকে শুধুমাত্র জীববিদ্যা নিয়েই আলোচনা থাকে, যদিও একক কোনো বইয়েই জীববিদ্যার সবকিছু পাওয়া যাবে না। গণিতের বই-পুস্তকে শুধুমাত্র গণিত নিয়েই আলোচনা থাকে, যদিও একক কোনো বইয়েই গণিতের সবকিছু পাওয়া যাবে না। ইত্যাদি। ইত্যাদি। ইত্যাদি। অনুরূপভাবে, চার্লস ডারউইনের "প্রজাতির উৎপত্তি" নামক বইয়ে শুধুমাত্র জীবজগতের বিবর্তনের উপর মতবাদ পাওয়া যাবে। একই গ্রন্থে পার্থিব-অপার্থিব অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে। এবার ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে যদি তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে একক গ্রন্থ হিসেবে কোরআনের চেয়ে অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে এতো বেশি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর একটা বড় অংশ ইতোমধ্যে সেই ধর্মের অনুসারীদের দ্বারাই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অতএব, কোরআন হচ্ছে মানব জাতির ইতিহাসে একমাত্র লিখিত গ্রন্থ যেখানে সবচেয়ে বেশি বিষয় নিয়ে যেমন আলোচনা করা হয়েছে তেমনি আবার কোরআনে বিশ্বাসীদের দ্বারা কোরআনের একটি অংশ প্রত্যাখ্যাতও হয়নি। কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যেটি পড়তে গেলে পাঠকের মন কখনো স্রষ্টার দিকে – কখনো স্রষ্টার দূতের দিকে – কখনো মহাবিশ্বের উৎপত্তির দিকে – কখনো মানুষের উৎপত্তির দিকে – কখনো মহাকাশ ও গ্রহ-নক্ষত্রের দিকে – কখনো আকাশ-বাতাস ও ঝড়-বৃষ্টির দিকে – কখনো নদ-নদীর দিকে – কখনো সমুদ্রের দিকে – কখনো পাহাড়-পর্বতের দিকে – কখনো গাছ-পালা-ফল-মূলের দিকে – কখনো পশু-পাখির দিকে – কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে – কখনো দর্শনের দিকে – কখনো কবিতার দিকে – কখনো সাহিত্যের দিকে – কখনো ইতিহাসের দিকে – কখনো ইহুদীদের দিকে – কখনো খ্রীষ্টানদের দিকে – কখনো সাবিয়ানদের দিকে – কখনো ম্যাজিয়ানদের দিকে – কখনো পেগ্যানদের দিকে – কখনো বিশ্বাসীদের দিকে – কখনো অবিশ্বাসীদের দিকে – কখনো সামাজিক আইন-কানুনের দিকে – কখনো অর্থনীতির দিকে – কখনো যুদ্ধের দিকে – কখনো সালাত-সাওম-হজ্জের দিকে – কখনো জাকাত-চ্যারিটির দিকে – কখনো এতিম-বিধবাদের দিকে – কখনো মা-বাবা-ভাই-বোনের দিকে – কখনো পাড়া-প্রতিবেশীর দিকে – কখনো নারী-পুরুষের দিকে – কখনো বিয়ে-শাদীর দিকে – কখনো নৈতিকতার দিকে – কখনো ন্যায় বিচারের দিকে – কখনো জান্নাত-জাহান্নামের দিকে – ইত্যাদির দিকে যাবে। অধিকন্তু, কোরআনই হচ্ছে একমাত্র গ্রন্থ যেটিকে দেড় বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মনে-প্রাণে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে, যথাসাধ্য অনুসরণ করার চেষ্টা করে, এবং সেই সাথে পুরোপুরি ডিফেন্ডও করে। এমন গ্রন্থ এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই! ২১. কোরআন যে সত্যি সত্যি একটি জীবন্ত মোযেজা – তার জ্বলন্ত একটি প্রমাণ হচ্ছে ৯/১১ ঘটনা। ৯/১১ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী ইসলাম, মুসলিম, ও মুহাম্মদ(সাঃ)-এঁর বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও প্রপাগ্যাণ্ডা চালানো হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তা কল্পনারও বাইরে। অথচ ৯/১১ ঘটনার পর খোদ আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্বেই ইসলাম গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশী। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে কোরআন। কোরআনের আরেকটি মোযেজা হচ্ছে ইসলাম গ্রহণের পর অনেকেই আবার তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ইসলাম প্রচারে ব্যয় করেন। ইসলাম প্রচারে তাদের অসাধারণ দৃঢ়তা ও আগ্রহ সত্যিই অবাক করার মতো। তারা এতটাই ডিভোটেড, এতটাই প্রাউড, আর এতটাই কনফিডেন্ট যে তাদের কথা শুনলে জন্মসূত্রে মুসলিমরা লজ্জা পাবে। কারো বিশ্বাস না হলে কোথাও না যেয়ে শুধুমাত্র ইউটিউবে Sheikh Yusuf Estes, Dr. Gary Miller, Hamza Andreas Tzortzis, Adam Deen, Abdur Raheem Green, Dr. Bilal Philips, Khalid Yasin, Yusuf Islam, Yusuf Chambers, Dr. Murad Hoffman, Prof. Jeffery Lang, Hamza Yusuf Hanson, Abdal-Hakim Murad, Idris Tawfiq, Abdullah Hakim Quick, Malcolm X, Michael Wolfe, Dr. Ingrid Mattson, Yvonne Ridley ইত্যাদি নাম লিখে সার্চ দিয়ে তাঁদের লেকচারগুলো শোনা যেতে পারে। এঁরা ছাড়াও ইউটিউবে আরো অনেকেই আছেন। ২২. কোরআন-বহির্ভূত প্রমাণ – তৌরাত ও ইঞ্জিলে একজন নবী সম্পর্কে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী আছে (Deuteronomy 18:18-19, Isaiah 29:12, John 14:16, John 16:7-9, John 16:12-14, Acts: 3:22-25, Acts 7:37)। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া অন্য কারো সাথে খাপ খায় না। এমনকি কোরআনেও দাবি করা হয়েছে যে, মুহাম্মদই হচ্ছেন তৌরাত ও ইঞ্জিলে উল্লেখিত নবী (আয়াত ৭:১৫৭, ৬১:৬)। তৌরাত ও ইঞ্জিলে সত্যি সত্যি ভবিষ্যদ্বাণী না থাকলে কেউ এমনি এমনি এভাবে দাবি করতে পারেন না নিশ্চয়। ২৩. কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যে গ্রন্থে অবিশ্বাস করা মানে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ, মুহাম্মদ (সাঃ) দীর্ঘ তেইশ বছরে কখনোই কোরআনকে নিজের বাণী বলে দাবি করেননি। তিনি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোরআনকে আল্লাহর বাণী বলে দাবি করেছেন। ফলে কোরআনকে মুহাম্মদ (সাঃ) বা অন্য কারো বাণী বলাটা অযৌক্তিক, অনৈতিক, এবং সেই সাথে অন্ধ বিশ্বাসও বটে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আরো বিস্তারিত লিখা সম্ভব হলো না। তথাপি নিরপেক্ষ ও মুক্ত মনে উপরের সবগুলো যুক্তি সার্বিকভাবে বিবেচনা করে দেখুন তো কোরআনকে কোনো মানুষের বাণী হিসেবে আরোপ করা যায় কি-না। কোরআনে বিশ্বাসের স্বপক্ষে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। আগে তো যুক্তি দাঁড় করাতে হবে – তারপরই না কেবল সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের প্রশ্ন আসবে। ইহাই যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম। ইচ্ছে করলে যেকেউ, যেকোনো সময় উপরোল্লেখিত যুক্তিগুলো যাচাই করতে পারেন। যারা কোরআন নিয়ে অধ্যয়ন করেনি তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা অধ্যয়ন করেও বলে যে, কোরআন মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে বলেছে তাদের হেমায়েতপুরে ভর্তি হওয়া উচিত। একটি গ্রন্থে বিশ্বাসের স্বপক্ষে এতগুলো যুক্তি-প্রমাণ দাঁড় করানোর পরও সেটা আবার 'অন্ধ বিশ্বাস' হয় কী করে? এমনকি বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্বের স্বপক্ষেও এতো বেশী যুক্তি-প্রমাণ নেই। অন্ধ বিশ্বাসের অভিযোগকে কবর দেওয়ার জন্য প্রথম দুটি যুক্তিই তো যথেষ্ট। এখন কেউ যদি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে সেক্ষেত্রে কোরআনের তো কিছু করার নেই। পৃথিবীর ঘূর্ণন ও গোলত্বকেও কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। তবে কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যেটা নিরপেক্ষ মন-মানসিকতা নিয়ে অধ্যয়ন করার পর অবিশ্বাস করার মতো কারো সামনে বড় কোনো যৌক্তিক ওজর থাকার কথা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×