somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামায পরিত্যাগ করার পরিণাম ও শাস্তি

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কুরআন ও হাদীসে নামায আদায়কারীর প্রতিদানের কথা যেমন বর্ণনা করা হয়েছে; তার সাথে সাথে নামায তরক কারীর ভয়াবহ পরিণাম ও শাস্তির কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। যদি ও এ প্রসংগে একটি বানী-ই যথেষ্ট ছিল। তাসত্বেও মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবীব আমাদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে নামায পরিত্যাগ করার শাস্তি ও ইহার ভয়াবহ পরিণতির প্রতি বারবার আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। এবং নানা ভাবে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। যাতে লোকেরা তওবা করে সঠিক নামাযী হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ নিম্নে মাত্র কয়েকটি কুরআনের বাণী ও হাদীস উল্লেখ করা গেল।


বে-নামাযীর শাস্তি ও পরিণাম সংক্রান্ত আল-কুরআনের বাণী :

১. বিবাদ ও পতনের মূল কারণ নামায ত্যাগ করা

ইরশাদ হচ্ছে,
فخلف من بعدهم خلف اضاعوا الصلوة و اتبعوا الشهوات فسوف يلقون غيا- الا من تاب و امن وعمل صالحا
“তাদের পরে যারা তাদের স্থলাভিষিক্ত হল, তারা নামায নষ্ট করল এবং নফসের লালসা-বাসনার অনুসরন করল। সুতরাং তারা অচিরেই এই কুকর্মের শাস্তি ভোগ করবে। অবশ্য তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্মশীল হয়েছে”। [ সূরা মারয়াম-৫৯]

২. বে-নামাযী ‘সাকার’ নামক জাহান্নামে প্রবেশ করবে ::

ইরশাদ হচ্ছে,
كل نفس بما كسبت رهينة الا اصحب اليمين- في جنت يتساءلون عن المجرمين- ماسلككم في سقر- قالوا لم نك من المصلين ولم نك نطعم المسكين وكنا نخوض مع الخائضين وكنا نكذب بيوم الدين- حتي اتنا اليقين فما تنفعهم شفاعة الشافعين-
“প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ, তবে ডানপন্থীগণ (জান্নাতীগণ) ব্যতীত। তারা থাকবে জান্নাতের বাগানে এবং তারা অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে এল? তারা বলবে আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম না, আমরা মিসকিনদেরকে খাবার দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করে বেড়াতাম এবং আমরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের নিকট নিশ্চিত মৃত্যুর আগমন ঘটল। এমতাবস্থায় সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন উপকারে আসবে না”। [ সূরা আল মুদ্দাচ্ছির-৩৮-৪৮]

৩. যথাযথভাবে যারা নামায আদায় করেনা তাদের শাস্তি ::


ইরশাদ হচ্ছে,
فويل للمصلين الذين هم عن صلاتهم ساهون
“সুতরাং দুর্ভোগ/ওয়াইল নামক দোযখের কঠিন শাস্তি সেই নামায আদায়কারীদের জন্য যারা তাদের নামায সম্পর্কে উদাসীন”। [ সূরা মাউন-৪-৫]

৪. হাশরের ময়দানে বেনামাযী মারাত্মক অপমানিত হবে ঃ

ইরশাদ হচ্ছে,
يوم يكشف عن ساق و يدعون الي السجود فلا يستطيعون خا شعة ابصارهم ترهقهم ذلة وقد كانوا يدعون الي السجود وهم سلمون-
“স্মরণ কর সেই চরম সংকটময় কিয়ামত দিবসের কথা যেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবেনা। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদেরকে আহবান করা হয়েছিল সিজদা করতে। (কিন্তু তারা সিজদা করেনি)। [ সূরা আল ক্বালাম-৪২-৪৩]


আল্লাহ তা’আলার সর্তকতা। কি মারাত্মক অপমান ও যিল্লাতী হবে বে-নামাযীর। হাশরের ময়দানে হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে দুনিয়ার শেষ মানুষটি পর্যন্ত একত্রিত হবে। কোন প্রকার পর্দা বা অন্তরাল থাকবেনা। এমনি সময়ে বে-নামাযীরা তাদের দয়াবান আল্লাহকে সিজ্দা করতে সক্ষম হবেনা।


বে-নামাযীর ভয়াবহ পরিণাম সংক্রান্ত আল হাদীসের বাণী ঃ

১. নামায তরক করা কুফরী কাজ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,
من ترك الصلوة متعمدا فقد كفر
যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামায ছেড়ে দেয় (ঐ ক্ষেত্রে কার্যত) সে কাফির হয়। [ মিশকাত]


২. বে-নামাযীর মুসলমানিত্ব থাকে না ঃ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন ঃ
لاتتركوا الصلواة متعمدين فمن تركها متعمدا فقد خرج عن الملة
“তোমরা ইচ্ছা করে কোন নামায ছেড়ে দিওনা। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দিবে, সে মিল্লাতে ইসলামের বহির্ভূত হয়ে যাবে”। [ তাবরানী]


৩. বে-নামাযীর অপূরণীয় ক্ষতি ঃ
নবী করীম সা. বলেছেন,
من فا تته صلواة فكا نما وتر اهله وما له
“যার এক ওয়াক্ত নামাযও ছুটে যায়, তার অবস্থা এমন যেন তার সকল পরিবার পরিজন ও ধন সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হল”। [ ”ইবনে হাববান, দুররে মানছুর]


৪. বে-নামাযীর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠিয়ে নেয়া হয় ঃ

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন,
لاتتركن صلواة مكتوبة متعمدا فان من ترك صلواة مكتوبة متعمدا فقدبرءت منه ذمة الله-
“স্বেচ্ছায় কখনো ফরয নামায ছেড়ে দিওনা। কেননা, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ছেড়ে দেয়, তার উপর হতে আল্লাহর জিম্মা (দায়িত্ব) উঠে যায়”। [ ”আহমদ, তাবরানীপ]


৫. বে-নামাযী সীমাহীন কালের জন্য জাহান্নামে থাকবে ঃ
নবী করীম সা. বলেন,
من ترك الصلواة حتي مضى وقتها ثم قضي عذب في النار حقبا-¬
“যে ব্যক্তি নামায এমনিভাবে ছেড়ে দেয় যে, উহার ওয়াক্ত চলে যায়। অতঃপর ক্বাজা আদায় করে দেয়। তবুও যথাসময়ে না পড়ার দরূন এক ‘হোকবা’ পর্যন্ত জাহান্নামের আগুনে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।”
(প্রতি ‘হোকবার’ পরিমাণ দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বৎসর)। [ মাজালিসুল আবরার]

৬. বে-নামাযীর শাস্তি প্রসংগে হুজুরের সা. স্বপ্ন ঃ
একবার ফজরের নামাযের পর নবী করীম সা. একটি স্বপ্নের কথা এভাবে বর্ণনা করেনঃ দুইজন লোক এসে আমাকে তাদের সংগে কোথাও নিয়ে গেলেন। এরপর আমি স্বপ্নে বেহেশত দোযখ দেখলাম এবং দোযখে বিভিন্ন ধরনের আযাব হওয়ার দৃশ্য দেখলাম।
তার মধ্যে এক ব্যক্তিকে দেখলাম, পাথরের আঘাতে তার মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করা হচ্ছে। পাথরটি এত জোরে নিক্ষেপ করা হচ্ছে যে, উহা ছিটকে বহুদুরে চলে যায়। পুণরায় পাথরটি তুলে আনা হয় সেই ফাঁকে লোকটির মাথাটি ঠিক হয়ে যায়। এইভাবে পরপর করা হচ্ছে। তখন নবী করীম সা. সংগীদ্বয়কে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তারা বললেন ঃ লোকটি কুরআন শরীফ পড়েছিল, কিন্তু সে উহার তিলাওয়াত ও তদানুযায়ী আমল করা ছেড়ে দিয়েছিল এবং ফজর নামায না পড়েই শুয়ে থাকত। [ বুখারী]

৭. বে-নামাযীর হাশর হবে বড় বড় কাফিরদের সাথে ঃ
নবী করীম সা. ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি যথাযথ ও সঠিকভাবে নামায আদায় করতে থাকবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য হবে নূর (হিসাবের জন্য) হবে অকাট্য দলীল এবং পূর্ণমুক্তি নির্দিষ্ট হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাযের হিফাজত করেনা, তার জন্য নূর, অকাট্য দলীল এবং মুক্তি কিছুই হবেনা। বরং সে কারূন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফ নামক মুনাফিক কাফেরদের সাথে জাহান্নামে যাবে। [ আহমদ, দারমী, বায়হাকী]

আলোচ্য হাদীসে বে-নামাযীর নিকৃষ্ট পরিণামের কথা বুঝাবার জন্য নবী করিম সা. মানব ইতিহাসের চারজন নিকৃষ্ঠতম ব্যক্তির উল্লেখ করে বলেছেন, বে-নামাযী লোক কিয়ামতের দিন ঐ চার ব্যক্তির সংগী হবে।
চার ব্যক্তির সংগী হবার কারণ ব্যাখা প্রসংগে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এবং ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. স্ব স্ব গ্রন্থে লিখেছেন’ হয় সে তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে বেশী মশগুল থাকার কারণে নামায সংরক্ষণ করবেনা, অথবা, দেশ শাসনের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকার দরূন অথবা ওজারতী ও সরকারী বেসরকারী চাকুরী জনিত ব্যস্ততার কারণে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যতিব্যস্ততার দরূন।
অতএব, নামায না পড়ার কারণ যদি ধন-সম্পদের ব্যাপারে বেশী মশগুল থাকার দরূন হয় তার পরিনতি হবে কারূনের সাথে। আর রাষ্ট্রীয় কাজের দরূন হলে তার পরিণতি হবে ফেরাউনের সাথে। জাতীয় বা দায়িত্বপূর্ণ চাকুরীর কারণে হলে সে পরকালে হামানের সঙ্গী হবে। আর ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষিকাজের জন্য নামায ত্যাগকারী উবাই ইবনে খালফের সাথে হাশর হবে।


৮. বে-নামাযীর জন্য ১৪ প্রকার শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে::


হাদীস শরীফে এসেছেঃ যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করে। আল্লাহ তায়া’লা তাকে চৌদ্দ প্রকার শাস্তি প্রদান করেন।
পাঁচ প্রকার শাস্তি দুনিয়াতে -৫
তিন প্রকার মৃত্যুর সময়ে -৩
তিন প্রকার শাস্তি কবরে -৩
তিন প্রকার কিয়ামতের দিন -৩
মোট ১৪ প্রকার শাস্তি

দুনিয়ায় পাঁচ প্রকার শাস্তি ঃ
১. তার জীবন ও জীবিকার বরকত কেড়ে নেয়া হবে।
২. তার চেহারা হতে নেক্কার লোকদের নূর মুছে ফেলা হবে।
৩. সে যেকোন নেক আমল করুক আল্লাহ তায়া’লা তাতে কোন ছওয়াব দান করেন না।
৪. তার কোন দো’য়াই কবুল হয়না।
৫. নেককারদের দো’য়ায় তার কোন অংশ থাকে না। অর্থাৎ উক্ত দো’য়ার বরকত হতে বঞ্চিত থাকে।


মৃত্যু কালিন তিন প্রকার শাস্তি ঃ
১. অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় তার মৃত্যু হবে।
২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যু বরন করবে।
৩. চরম তৃষ্ণার্ত অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে। যদি সমস্ত পৃথিবীর সাগরের পানিও তাকে পান করান হয়, তবুও তার তৃষ্ণা নিবৃত্ত হবেনা।


কবরের তিন প্রকার শাস্তি ঃ
১. তার কবর এত সংকীর্ণ করা হবে যে, তার এক পাঁজরের হাড় অন্য পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়।
২. তার কবরে আগুন জ্বালানো হয়, সে উহার শিখার উপর দিনরাত উলট-পালট অবস্থায় দগ্ধ হতে থাকে।
৩. তার কবরে একটি ভয়ংকর বিষধর অজগর নিয়োগ করা হবে। যার চোখ দু’টি আগুনের এবং নখরগুলি লোহার তৈরী হবে। অজগরটি বজ্রের ন্যায় আওয়াজ দিবে এবং মৃত ব্যক্তিকে চব্বিশ ঘন্টা রাতদিন কিয়ামত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।


কিয়ামতের তিন প্রকার শাস্তি ঃ
১. অত্যন্ত কড়াকড়ি ভাবে বে নামাযীর হিসাব নেয়া হবে।
২. তার উপর আল্লাহর কহরের শাস্তি হবে।
৩. অত্যন্ত অপমানের সাথে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।


অপর এক বর্ণনায় এসেছে ঃ
কিয়ামতের দিন বে-নামাযীর কপালে তিনটি লাইন লিখা অবস্থায় উঠবে।
“হে আল্লাহর হক বিনষ্ট কারী।
হে আল্লাহর গজবের পাত্র।
দুনিয়াতে তুমি যেভাবে আল্লাহর হক নষ্ট করেছ,
সে রূপ আজ তুমি আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত”। [ জাওয়াজেরে ইবনে হাজর মককী, ফাজায়েলে নামায]


৯. বে-নামাযীর স্থান ও তার প্রতি ঘৃণা ঃ

ক. বে-নামাযী জিনাকার এবং বদকার থেকে ও নিকৃষ্ট ঃ
বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের একজন মহিলা একবার হযরত মুসা আ. এর নিকট এসে আরয করলঃ হে মুসা; আমি জিনার মত জঘন্য পাপ করেছি তাতে আমার সন্তান হয়েছিল কিন্তু সন্তানটিকেও আমি মেরে ফেলেছি।
পরে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে আমি তওবা করেছি। তবে যদি আপনি আমার পক্ষ হতে তওবা কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো’য়া করতেন অবশ্যই আমার দো’য়া কবুল হত। হযরত মুসা আ. রাগান্বিত হয়ে বললেন, দূর হও এখান থেকে। তোমার পাপে আমরাও কি ধ্বংস হব? অতঃপর মহিলাটি ভয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
অতঃপর হযরত জিবরাইল আ. হযরত মুসার নিকট অহী নিয়ে এসে বললেন, হে মুসা! ঐ জিনাকার মহিলাটির চেয়ে আর কোন বড় পাপী কেউ আছে কি? হযরত মুসা আ. বললেন উহা অপেক্ষা বড় পাপী কে হতে পারে? তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ইরশাদ হলো হে মুসা! আপনার ধারণা ঠিক নয়। যে ব্যক্তি জেনে শুনে ইচ্ছা করে নামায পড়ে না, সে ঐ জেনাকারিনী ও অন্যায় ভাবে আপন সন্তান হত্যাকারিনী মহিলার চেয়েও অধম ও নিকৃষ্ট। [ মেরী নামায]

খ. নামাযে অবহেলাকারী ব্যক্তি শয়তানের ন্যায় অভিশপ্ত ঃ
বর্ণিত আছে আগেকার যুগে শয়তান মানুষের দৃষ্টি গোছর হত। একবার এক ব্যক্তি তাকে দেখে বলল, হে শয়তান! তুমি আমাকে এমন একটি পথ বাতলিয়ে দাও, যাতে আমিও তোমার মত অভিশপ্ত হতে পারি।
শয়তান বড় আশ্চর্য হয়ে বলল, আজ পর্যন্ত আমার নিকট এরকম দরখাস্ত তো কেউ করেনি। তোমার এমন কোন প্রয়োজন দেখা দিল যে, আমার নিকট এরকম দরখাস্ত করলে? সে ব্যক্তি বলল, ইহা আমার নিছক একটি অভিলাষ মাত্র। আর কিছু নয়। তখন শয়তান বলল, আমার মত হওয়ার পথ একেবারে সহজ, আর তাহলো নামাযে অবহেলা করতে থাক এবং সত্য মিথ্যার পরোয়া না করে কসম খেতে থাক।
লোকটি তখন শপথ নিল, আমি আল্লাহর নিকট ওয়াদা করছি যে, আমি কখনো কোন নামায ত্যাগ করব না এবং এতটুকু অবহেলাও করবনা। এবং কখনো কসম খাবনা। এটা শুনে শয়তান বলল, তুমি ছাড়া আজ আমাকে কেউ ধোকা দিয়ে এভাবে কথা আদায় করতে পারে নাই। তাই আমিও ওয়াদা করছি যে, মানুষকে আর কখনো উপদেশ দিতে যাবনা। [ তামবিহুল গাফেলীন, আবুল লাইস ছমরকন্দী/ ফাজায়েলে নামাজ]

গ. বে-নামাযী মহা ক্ষতিগ্রস্ত, অকৃতজ্ঞ ও মহাপাপী ঃ
আল্লামা সফীরী রহ. বলেন, ফেরেশ্তাগণ
ফজরের নামায পরিত্যাগকারীকে “ইয়া ফাজির (হে দুষকৃতকারী)”,
জোহরের নামায পরিত্যাগকারীকে “ইয়াখাসির” (হে ক্ষতিগ্রস্ত) ,
আসরের নামায পরিত্যাগকারীকে “ইয়া আ’ছী” (হে মহাপাপী)”,
মাগরিবের নামায পরিত্যাগকারীকে “ইয়া কাফির” (হে অকৃতজ্ঞ)” এবং
ই’শার নামায তরককারীকে “ইয়া মুদ্বী’অ” (হে আল্লার হক নষ্টকারী) বলে সম্বোধন করে থাকে।
[ গায়াতুল মাওয়ায়েজ, ফাজায়েলে নামায]

ঘ. নামায পরিত্যাগকারী পাড়া, মহল্লা এলাকার প্রতি বালা মুসীবত নাযিল হয়ঃ
আল্লামা শা’রানী রহ. বলেনঃ যে সকল পাড়া বা এলাকার লোক নামায পড়ে না, সবধরনের বালা মুসীবত সেখানেই নাযিল হয়। এসব এলাকায় ভূমিকম্প, বজ্রপাত, বাড়ীঘর ধ্বসে যাওয়া, ঘুর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, সুনামী, টর্নেডোতে আঘাত হানা কোনোটি বিচিত্র নয়। সেখানের কেউ যেন এরূপ ধারণা না করে যে, আমি তো নামাযী আছি, অন্যরা নামায পড়–ক বা না পড়–ক তাতে আমার কি? কেননা, বালা মুসীবত যখন নাযিল হয় তখন ব্যাপক ভাবেই নাযিল হয়।
হাদীস শরীফে এসেছে, একজন সাহাবী নবী করীম সা. এর নিকট আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে নেক্কার লোক বর্তমান থাকা অবস্থায় ও আমরা ধ্বংস হতে পারি? নবী করীম সা. বললেন হ্যাঁ, যখন অন্যায় ও পাপাচার ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, নেক্কার লোকদের কর্তব্য হচ্ছে অন্য লোকদেরকে সাধ্যানুযায়ী অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখা ও সৎকাজের আদেশ করা। [ফাজায়েলে নামায]

ঙ. বে-নামাযীর শাস্তির ধরন ঃ
হাদীস শরীফে আছে, বে-নামাযীর দু’হাত জিঞ্জির দ্বারা বেঁেধ ফেরেশতাগণ তার মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠ দেশে আঘাত হানতে থাকবে।
অন্য এক হাদীসে আছে, জাহান্নামে ‘লমলম’ নামে একটি উপত্যকা আছে। উটের গ্রীবার ন্যায় মোটা এবং একমাসের পথের ন্যায় দীর্ঘ ভয়ংকর ভয়ংকর সাপ দ্বারা উহা পরিপূর্ণ। সেখানে এরা বে-নামাযীদেরকে দংশন করে শাস্তি দিতে থাকবে।
অপর এক হাদীসে আছে, জাহান্নামে ‘জুব্বুল হুয্ন’ নামে একটি ময়দান আছে। উহা শুধু বিরাট আকারের বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ণ। এক একটি বিচ্ছু খচ্চরের মত উঁচু ও মোটা। বে নামাযীদেরকে দংশন করার জন্যই এগুলিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। [ফাযায়েলে নামায]


চ. বে-নামাযীর কোন ওজর আপত্তি গ্রহণ করা হবেনা



১. শাসন ও রাজকার্য বা চাকুরীর ওজরঃ

শাসন ও রাজকার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি বা সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে চাকুরীরত ব্যক্তিরা যদি এসব দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে কিয়ামতে ওযর পেশ করে যে, এসব কাজের ব্যস্ততার কারণে নামায পড়তে পারিনি।
আল্লাহ তা’য়ালা তখন হযরত দাউদ আ., হযরত সোলাইমান আ. প্রমুখ রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার পরিচালনাকারী নবীগণকে হাজির করে বে-নামাযীকে প্রশ্ন করবেন, রাজত্ব বা সরকারী চাকুরী যদি নামাযের পথে বাঁধা হতো, তাহলে তাঁদের ও নামায তরক করতে হত। অথচ তাঁরাতো কখনো নামায ত্যাগ করেন নাই। অতএব, তোমার অলসতাই তোমার নামায ত্যাগ করার কারণ। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাকে বলবেন, যাও, একে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।


২. রোগ-যন্ত্রণা বা স্বাস্থ্যহানীর ওজর ঃ

কেউ যদি কিয়ামতে এ ওজর পেশ করে যে, রোগ-যন্ত্রণা ও স্বাস্থ্যহানীর দরূন আমি নামায পড়তে পারিনি, তখন আল্লাহ তা’য়ালা কঠিন পীড়াগ্রস্ত আইউব আ. কে হাজির করে বে-নামাযীকে প্রশ্ন করবেন যে, তুমি মিথ্যাবাদী, কারণ, রোগ যদি সত্যিই নামায পড়তে বাধা হত তাহলে আইয়ুব একবার ও নামায পড়তে পারতেননা। অথচ তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহকে ভূলে যাননি। সুতরাং রোগ বা স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া তোমার ছলনা মাত্র। অলসতা করে তুমি নামায পড়নাই। এরপর ফেরেশতাকে বলবেন, যাও, একে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।


৩. রুজি-রোজগারে অত্যধিক ব্যস্ত থাকার ওজর ::

এক ব্যক্তি কিয়ামতে বলবেন, হে আল্লাহ, পরিবার পরিজনের লালন-পালন এবং তাদের জন্য খাদ্য উপার্জনে সারাক্ষণ ব্যস্ত ছিলাম বিধায় নামায পড়ার সুযোগ হয়নি। তখন হযরত ইয়াকুব আ. কে হাজির করে ঐ বে-নামাযীকে বলবেন, তেমাদের মধ্যে কার সন্তান-সন্ততি বেশী ছিল? সন্তানের বিয়োগ ব্যাথায় তুমি বেশী কষ্ট পেয়েছ, না ইয়াকুব বেশী কষ্ট পেয়েছে? তার পুত্র ইউসুফকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কোমর বেঁকে গিয়েছিল। বার্ধ্যক্যের কারণে কষ্টে কালযাপন করেছে। কিন্তু এক বারের জন্য ও সে নামায ত্যাগ করে নাই। অতঃপর ফেরেশতাকে বলবেন, যাও, একে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।

৪. স্বামীর সংসারে অত্যধিক কাজ কর্মের ওজর
কিয়ামতে আল্লাহর আদালতে একজন বে-নামাযী মহিলাকে নামায না পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলবে, হে আল্লাহ! আমার স্বামীর সংসারে বহু কাজকর্ম ছিল এবং তার ভয়ে সবসময় অস্থির থেকে সংসারের নানাবিধ কাজে সারাক্ষণ লিপ্ত থাকতাম। একারণে নামায পড়ার কোন সময়ই পাইনি।
আল্লাহ তা’য়ালা তখন ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া রা. কে হাজির করবেন এবং বে-নামাযী মহিলাটিকে বলবেনঃ দেখ, স্বামীর জুলুম নামাযের পথে বাঁধা হলে আছিয়া কিছুতেই নামায পড়তে পারতনা। কেননা আছিয়ার স্বামী ফেরাউন ছিল তোমার স্বামীর চেয়ে অধিকতর বড় জালিম। আজ তোমার ওজর সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। তুমি অলসতা করেই নামায পড়নাই। অতঃপর ফেরেশতাকে নির্দেশ দিবেন। যাও, একে জাহান্নামে ফেলে দাও। [রুহুল বয়ান, মেরী নামায]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:০৬
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×