ক্লাস টেনে রচনা প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিমন্ত্রির হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে আল্হাদিত আমার পরিচয় হয়েছিল বিশ্বসাহিত্যের সাথে ৷ পরিচয় হলেও বিশ্বসাহিত্য বা স্বদেশী সাহিত্যের বিশাল সাগরের অমূল্য রত্নভান্ডার থেকে মুক্তো কুড়োতে পেরেছি খুব সামান্যই ৷
মনে পড়ে স্কুলের লাইব্রেরী থেকে প্রথম পড়া সেই বইগুলিঃ “আজব হলেও গুজব নয়” কিংবা “মোটর গাড়ির গোড়ার কথা” ইত্যাদি ৷ তিন গোয়েন্দা পড়ার বয়স শেষ করে কলেজে পড়াকালীন আমি পড়েছি রবিন মিলফোর্ড আর মুসাদের বেশ কিছু কৈশোরিক আ্যডভেঞ্চারের কাহিনী ! সে তুলনায় মাসুদ রানা পড়েছি অনেক কম !
তখন বৈশাখ মাস,কলেজের ছুটিতে বাড়ী গিয়েছি । শীর্ষেন্দুর ‘দূরবীণে’ ডুবে আছি । সেদিন বিকেলে হঠাত ঈশাণ কোণ তার রুদ্রাক্ষিতে কাজল পড়তে শুরু করলে সদ্য পড়া বইয়ের পাতার ঝড় বাস্তবে দেখার নাচন ওঠে আমার উৎসুক মনে । পাশের বাড়ীর বন্ধুকে সাথে নিয়ে ছুটলাম গ্রামের প্রান্তে ঈদগাহ মাঠে । কালবৈশাখীর রুদ্র মাতম চরমভাবে উপভোগের সাথে মায়ের উৎকণ্ঠিত বকুনি বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়েছিলাম সেদিনের সেই ঝড় সন্ধ্যায় !
মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ণ হণ্যেতে’ আর মির্চা ইউক্লিডের ‘লা নুই বেঙ্গলী’ তে বুঁদ ছিলাম আরও কিছুদিন ! তারপর ‘শেষের কবিতা’ যখন পড়তে শুরু করলাম তখন তার মুগ্ধতার মশালে আলোকিত হল আমার অন্ধকার কুটীর । ‘সঞ্চয়িতা’ রসেও ভিজেছিল আমার তপ্ত তৃষিত তনুমন । ‘দুর্গেশনন্দিনীর’ অন্দরমহল কিংবা ‘কপালকুণ্ডলার’ কাপালিক এখনও আমার অনুভূতিতে সমুজ্জ্বল ।
তারপর দিনে দিনে ধর্ম,দর্শন,কবিতা কিংবা রাজনীতি নিয়েও পড়াশোনা হয়েছে অল্পবিস্তর । শিকার ও সুন্দরবন নিয়ে যতগুলো বই পেয়েছি,সবগুলোই কিনেছি আর গোগ্রাসে গিলেছি ।
সংগৃহীত বইগুলো যেভাবে স্মিত হাস্যে তৃপ্ত করে দুচোখ-মন সেভাবে হারিয়ে যাওয়া কিংবা অফেরত বইগুলোর স্মৃতিও মাঝে মাঝে মনকে করে উদাস । উপরের ছবিতে মার্ক করা খুব প্রিয় বইটার জন্য আমার হতাশা মেশানো ভালোবাসা কারণ বইটা যে আর !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৪