আচ্ছা,কখনও কি এ প্রশ্নটি মাথায় এসেছে, যে কোন প্রিয়জন ছেড়ে চলে গেলে বা মারা গেলে আমরা এত ব্যথিত হই বা কান্না করি কেন? সেই ব্যক্তিটি আর আমাদের মাঝে নেই এটাই মনে করে?নাকি তার সাথে জড়িয়ে থাকা অজস্র সুখ-দুখের স্মৃতিকে মনে করে করে আমরা দিনের পর দিন কষ্ট পেয়ে যাই?
আমি বরাবই বিশ্বাস করি মানুষ খুব স্বার্থপর একটি প্রানী,প্রচন্ড রকমের স্বার্থপর! এখন যদি কেউ হুমড়ি খেয়ে জোর খাটিয়ে প্রতিবাদ করে বলে,"না না আমি তো নই একদমই কিংবা আমার পরিচিত অমুক কে, তমুক কে দেখছি মোটেও স্বার্থপর না সে/তারা।তবে তার প্রতি বিদ্রুপাত্মক হাসি দেয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকবে না,সরি!
জানি,ভ্রু কুচকে ভাবছেন আমি কেন বিদ্রুপের হাসি হাসবো?সেটা তবে খোলসা করেই বলা যাক!
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব আমরা মানুষেরা একটা বিষয়ের সাথে আরেকটা বিষয়কে তালগোল পাকিয়ে মূল বিষয়কেই হারিয়ে ফেলি।এই যেমন স্বার্থের সাথে আমরা উদ্দেশ্যকে মিলিয়ে ফেলি। যদিও এ দুটো ভিন্ন বিষয় একে ওপরের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত বা সমার্থক কিন্তু এদের মধ্যে বিরাট ফারাকও রয়েছে।
কেননা,উদ্দেশ্য জড়িত কর্মের সাথে,অপরদিকে স্বার্থ জড়িত সম্পর্কের সাথে। প্রতিটি কর্মের পিছনে যেমন একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকে তেমনি প্রতিটি সম্পর্কের মাঝেও কিছু স্বার্থ থাকে। আর এই বাস্তবতা অস্বীকার করার কোন পথ নেই!
তাছাড়া, স্বয়ং ঈশ্বরই যখন স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়,সেখানে আমরা কিভাবে স্বার্থহীনভাবে জীবনযাপন করব? ঈশ্বর কিভাবে স্বার্থপর হয়!অবাক লাগছে কি শুনতে? তবে হয়ত আপনার জানা নেই, ঈশ্বর এ বিশাল মর্তলোক সৃষ্টির করেছিলেন আপন উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আর তা হলো তার প্রতি মর্তবাসির উপাসনা! এদিকে মর্তবাসির এ উপাসনাও কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই।তারাও স্বর্গে গিয়ে পুরস্কৃত হওয়ার লোভেই কিন্তু উপাসনা করে আসছে আদিকাল থেকেই। এ যেন সবদিকে স্বার্থের ছড়াছড়ি!
এখন হয়ত আপনি দাবি করতে পারেন, পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে কোন স্বার্থ কাজ করেনা। তবে এটাও জেনে রাখুন,এখানেও কিন্তু স্বার্থ কাজ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু'ভাবেই।যেমন, পিতামাতা বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই সন্তান ধারণ করেন,বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখভালের জন্য সন্তানের সকল ভরণপোষণ দান করেন।অপরদিকে সন্তানও পিতামাতার বাধ্যগত থেকে একসময় পৈতৃক সম্পত্তির ভাগীদার হয়,অথবা পরকালে নেকী হাসিলের আশায় তাদের সেবা করে সওয়াব কামিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও যেন স্বার্থের ছড়াছড়ি! তাইনা?
যাইহোক,আবার ফেরা যাক এই লেখার প্রথম অংশে।প্রশ্ন আসছে, প্রিয়জনের শুন্যতা বা অভাবের সাথে স্বার্থের কি যোগসূত্রতা তাইনা?এটাও কিন্তু বেশ সহজ হিসাব।
কেউ আমাদের জীবন থেকে চলে গেলে আমরা সেখানে যে শুন্যস্থানটা খুঁজে পাই,সেটাই মূলত আমাদের কষ্টের কারণ। স্বার্থপর এই আমরা কখনই চাইনা আমাদের জীবনের সাথে জড়িত একটা ক্ষুদ্রকনিকাও যেন হারিয়ে যাক।সেখানে জীবনের বেশ কিছু মুহুর্ত যাদের সাথে কাটিয়েছি হেসে খেলে তাদেরকে হারিয়ে ফেললে স্বভাবই শূন্যস্থানটুকু পূরণ করতে বেশ খানিকটা সময় লাগে,আর এই সময়টুকুই আমাদের ব্যথিত করে প্রতিনিয়ত!
আমরা কিন্তু কষ্ট পাইনা এ কারণে যে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে;বরং আমরা কষ্ট ও ভয় পাই তারা আমাদের জীবনে যে অপূরনীয় শূন্যতার একটা অনুভুতি দিয়ে গেছে সেটা কাটিয়ে উঠবো কি করে তা মনে করেই! তার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো আপনাকে কষ্ট দেয়;কারণ সেই মুহুর্তে কিন্তু আপনিও তার সাথে উপস্থিত ছিলেন! তার বলা হাসি কান্নায় আবেগমিশ্রিত কথাগুলোও কষ্ট দেয়,কারণ এর শ্রোতাও কিন্তু এই আপনিই ছিলেন!
কোথায় যেন পড়েছিলাম,শূন্যস্থান সবসময় শূন্য থাকেনা, একটা সময় ধূলিকণা দিয়ে হলেও তা পূরণ হয়ে যায়। তাছাড়া প্রকৃতিও নাকি শূণ্যস্থান পছন্দ করেনা। তাই আমাদের জীবন থেকে চলে যাওয়া সেইসব প্রিয়জনদের জায়গাও এক সময় কেউ না কেউ দখল করে নেয়। জীবনে তাদের অভাবও কিন্তু একভাবে না একভাবে পূরণ হয়ে যায়। পিছে শুধু রয়ে যায় কিছু নাম,কিছু কথা ও কিছু স্মৃতি! যা এই স্বার্থপর আমরা একটা সময় স্বার্থের কারণে ভুলেও যাই।
আর এটাই হলো তিক্ত ও বাস্তব সত্য.....!!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৮:২১