কাল বিকালে রাস্তায় বের হওয়ার একটা সুযোগ হলো। মোটর বাইকের পিছনে যথারীতি হেলমেট ছাড়া রওনা দিলাম। খানেক দূর আগাতেই অত্যন্ত ভদ্রতা সহকারে একজন ছাত্র এসে বললো,
“আপনার নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করবেন।”
আমি ভাষাহীনভাবে টলমল চোখে, হ্যা-বোধক ভঙ্গীতে হাসলাম। আমার এই সিস্টেম লসের দেশে এই ঊণত্রিশ বছরেও আমার বাবা-মা ছাড়া অন্য কেউতো আমার নিরাপত্তার জন্য কেউতো কখনো আগ বাড়িয়ে সাবধান করতে আসেনি।
আমি পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। গত আড়াই বছরে আমার ছাত্রদেরকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নৈতিক জ্ঞান থেকে শুরু করে আরো অনেক প্রকারের জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা করেছি। আজ আমার ছাত্রসম ছেলেরা আমাকে কিছু শিখালো। আমি লজ্জা পাইনি; আমি গর্বিত। আমার এই সিস্টেম লসের দেশটাকে আগামী প্রজন্ম হয়তো সিস্টেমে নিয়ে আসবে, যেটা আমি বা আমরা পারিনি। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলায় যেতে যেতে 'থাম্বস আপ' প্রদর্শন করে তাদেরকে অভিনন্দন জানালাম।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেলিব্রেটির সাথেও সেলফি তোলার কোনো প্রয়াস আমার নেই, কিন্তু আজ খুব ইচ্ছা করছিল খুব সাধারণ চেহারার এই অসাধারণ মানুষগুলোর সাথে সেলফি তুলতে।
চৌদ্দ বছর আগে বিদায় দেয়া স্কুল ইউনিফর্ম আর আইডি কার্ডটা আজ আমার খুব প্রয়োজন। আমারো যে ইচ্ছা করে- এই ঘুণে ধরা দেশটাকে নতুন করে মেরামত করার সৈনিকগুলোর সাথে একসাথে এক সুরে বলি “We Want Justice”। ইচ্ছা করে লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভারের কাছ থেকে আদায় করা ঘুষের টাকায় পান চিবিয়ে দাঁত লাল করা ট্রাফিক পুলিশদের বাড়ি পাঠিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে। আরো ইচ্ছা করছে আমার দেশের ইতিহাসে এই প্রথম “মন্ত্রীর গাড়ি” ঘুরিয়ে দেয়ার সাক্ষী হতে।
আমি একজন মা এবং আমার সন্তানদের সড়ক নিরাপত্তার জন্য আমার বাকি যে সন্তানেরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে “সড়কে সরব”- আমার ইচ্ছা হয় তাদের মুখে ভাত তুলে দিতে। এই প্রথম কোন মাকে দেখে আমি হিংসায় জলেছি- কেন ঐ মায়ের জায়গাটার দখল নিতে পারলাম না??
এই দেশটা শুধু হাতুড়ি বাবাদের নয়; দাঁত কিলিয়ে খিলখিল করে হাসা হায়েনাদেরও নয়। এই দেশে আজও মাথা উঁচু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বীর সন্তানেরা জন্মায়- যারা দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ছাতা হাতে আর কোন বাবার বুক ফাটা কান্না শুনতে চায় না।
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।