কোন একটা দিন আসে এক ঝাঁপি স্মৃতি নিয়ে। পর্দা খুলছে আর নামছে, যেন একদিনেই শেষ করতে চায় নাটকের সব পর্ব। ঐ বিশ দিনের টোনা-টুনির সংসারটা যেন হয়েছিল দ্বিতীয় মধুচন্দ্রিমা। বাবা মা বিশ দিনের জন্য উড়ালপঙ্খি হওয়ার আগে, হাতে চাবি ধড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই কয়দিন তোরা দুই জন একটু বাসায় থাক।‘ সেমিস্টার ব্রেকটাও পরেছিল মোক্ষম সময়ে। আপাদমস্তক হয়ে উঠলাম ঘরকন্যা। একটা ঝুম বৃষ্টির রাতও এসেছিলো, সেই দিন বাবার গাড়িটা হওয়ে গিয়েছিলো পঙ্খিরাজ। আমার পাঁশে কিন্তু তখন শার্ট ইন করা, চেহারায় লোক লোক ছাপের এখনকার ব্যস্ত কোন ডেন্টিস্ট ছিল না!!! ছিল, জিন্স আর হাত গুটানো ইন ছাড়া শার্ট পরা, ছোকরা গোছের এক নব্য প্রাক্টিসিং ডেন্টিস্ট। কিছুক্ষণ খটাখটি, কিছুক্ষণ মান ভাঙ্গানো, কিছুক্ষণ হাসির রোলে লুটিয়ে পরা, তারপর ঐ ঝুম বৃষ্টিতেই কোথায় যেন হারিয়ে যাওয়া……
খুব অভ্যস্ত গিন্নির মতোই, রান্নাঘরের খুটুর খাটুর শেষ করে, রিমোট হাতে একদিন বসেছিলাম রঙ বাক্সটার সামনে। টুকটাক রঙ বাক্সের নেশাটা বিসর্জন দিতে হয়েছিল কয়েক মাস আগেই। পর্দা পালটাতে পালটাতে, একটা পর্দায় চোখ আঁটকে গেলো, ‘আরে এটাতো আমার গল্প…….।’ সেই গল্পটির লেখক এমনই জাঁদরেল মহিলা, আমার মত বই না পড়া, বই না ছোঁয়া মানুষকে, একেবারে ঘাড় ধরে গ্রন্থ কীট বানিয়ে দিলেন !!!!!
সময়ের রদবদলে কোলে আসলো ছোট্ট একটা মানুষ। রঙ বাক্সটায়ও ইতি পরেছিল আমার গল্পটায়। ওটা কি শুধু আমি??? নাকি শত সহস্র ‘সুবর্ণ-র’ মাঝে একটা আমি। ইতি পরলে কি হবে…… ঐ জাঁদরেল লেখক একের পর এক পড়িয়েই ছাড়লেন তিন প্রজন্মের গল্প। তিনটা সময়, তিনটা কাল, তিনটা মানুষ, কিন্তু সবটাই তো আমি।
আরও কিছুদিন পর, আমার দুই পাঁশে তখন ছোট্ট দুইটা মানুষ, কম্বল জড়ানো ওমে ঘুমাচ্ছে। আমি তখন এক ক্লান্ত রাত জাগা পাখি, মাথায় ঝুলছে থিসিসের কাজ। কিন্তু টিমটিমে আলোয় সাঁতার কাটছি বারোটি উপন্যাসের মস্ত একটা বইয়ে।
এমনই স্মৃতিময় দিনগুলো কেন আসে?
যন্ত্রণা দিতে নাকি মায়ায় ভরাতে?