somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুই যে আমার পুতুল পুতুল এক ছোট্ট রাজকুমার

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রিপোর্টখানা কোনোমতে হাতে দিয়ে মুখ নীচু করে, বলতে গেলে চোখ কান বুজেই সেখান থেকে একপ্রকার ছুটে পালালেন পতিদেবতা। শিরি হাতে রিপোর্ট নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখবে কি, পতিদেবতার তড়িঘড়ি পলায়নপর গমন পথের দিকে হা করে চেয়ে রইলো সে। হলো কি? এমন চোরের মত চেহারা করে পালালো কোথায় তার ভালোমানুষ স্বামীটি!

ভালো করে কাগজখানা মেলে ধরলো চোখের সামনে। দূচ্ছাই, কিচ্ছু বুঝা যায়না। ধীরে গিয়ে পৌছোলো এবার সে বসার ঘরে। তিনি মুখের উপর নিউজপেপার মেেলে ধরে বিশাল মনোযোগে কোনো সংবাদ বা দুঃসংবাদে ডুবে আছেন। তবে কেনো যেন সন্দেহ হলো সেটা এক প্রকার ভান। কিছুই পড়ছেন না তিনি। শিরিকে ঢুকতে দেখে একটু বিচলিতও হলো যেন। শিরি গিয়ে বসলো তার সামনে, মনে মনে যত কথাই বলুক না কেনো সে, মুখে সাত চড়ে রা না করা মানুষ শিরি। আস্তে জানতে চাইলো, কি লেখা আছে রিপোর্টে? পতিদেব আরও আস্তে জবাব দিলেন, পজিটিভ।

কথাটা শোনা মাত্র কি হলো যে শিরির। রিনরিনে এক মৃদু ঝংকারের সুললিত সুর বয়ে চললো তার তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে। মুখখানাও মনে হয় এবার লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠলো। জানিনা কি ছিলো সে মুখে, হঠাৎ খেয়াল করলো পতিদেব এবার হা করে চেয়ে আছে তার মুখের দিকে। এইবার ওর ছুটে পালানোর পালা।

সে যাইহোক বেশ কিছুদিন ধরে দূরারোগ্য রোগে ভুগছিলো শিরি। যা খায় তাই বমি হয়ে যায়। সারাটাক্ষন মাথা ঝিমঝিম করে। প্রথম দিন তো সে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা ওদের বিয়ের যুগল ছবিটা হতে ধুলো মুছতে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠলো ওর। ভীষন ভয় পেয়ে দৌড়ে গেলো শ্বাশুড়ির ঘরে। শ্বাশুড়ি তখন জি বাংলায় কোনো এক সিরিয়ালে নিমগ্ন ছিলেন। তার পায়ের কাছে বসে নতুন বুয়া মোমেনা। শিরিকে ওমন ছুটে আসতে দেখে চোখ তুলে তাকালেন তারা দুজনেই। রাসভারী শ্বাশুড়ি কিছু বললেন না বটে কিন্তু মোমেনা তার ফ্যাকাসে মুখে চেয়ে বলে উঠলো, কি হইসে বউ? কিছু না বলে ফিরে এলো শিরি , কেনো যেন বলতে ইচ্ছে হলোনা কাউকেই ওর সমস্যাটার কথা। ভাবলো হঠাৎ কোনো কারণে শরীর খারাপ করেছে ওর। হাসব্যান্ডকে ফোন দিতে গিয়েও ফোন দিলোনা সে।

হঠাৎ মায়ের ফোন। ওর গলা শুনে মা বুঝে ফেললেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে তার। শিরি বললো, তেমন কিছু না তবে কিছুদিন ধরে এমন সব অদ্ভুত সমস্যা হচ্ছে ওর। কেনো যেন মনে হচ্ছে ও আর বাঁচবেনা। বলে ভ্যা করে কেঁদে ফেললো শিরি। ওর মা তো হেসে খুন। শিরি ভীষণ অবাক হলো। মা তো এমন নন যে মেয়ের এত বড় বিপদে হাসবেন। তারপরপরই মা ওর ফোন কেটে শ্বাশুড়িকে ফোন দিলেন।

ছি ছি এখন এসব ভেবে লজ্জা লাগছে ওর। সেদিনও লজ্জা লেগেছিলো ওর কিন্তু লজ্জাটা বেশিক্ষন টিকেনি মানে এসব লজ্জা টজ্জা নিয়ে ভাবার সময় ছিলোনা তখন ওর। চোখের সামনে কেবলি ভাসছিলো, ছোট্ট ছোট্ট দুটি হাতের মুঠি, গুটু গুটু পা.....নিস্পাপ হাসির একটি কচি মুখ..
কি এক অজানা ভালোলাগায় মন ভরে উঠছিলো। মনে পড়ে ...

হঠাৎ ওমন গুরু গম্ভীর শ্বাশুড়ির হাক ডাক শুরু হলো। চমকে উঠলো শিরি। পর্দা ঠেলে হুইল চেয়ারে ওর ঘরে প্রবেশ করেছেন শ্বাশুড়িআম্মা স্বয়ং। ওকে কাছে টেনে বললেন, খুব সাবধানে থাকবে এখন থেকে, ভালো খাবার খেতে হবে, বেশি পরিশ্রম চলবে না, চুল খোলা রাখবেনা, মোমেনা তুমি সব সময় বৌ এর বাথরুম মুছে শুকনো খটখটে রাখবে। আর বৌমা তোমার কি কি খেতে ভালো লাগে সব বলবে আমাকে। কোনো কিছু লুকোবেনা নইলে নাতী বা নাতনী যে আসছে সে হবে পেটুক রাজা নয়তো খাই খাই স্বভাব হবে। বলে নিজেই হা হা হা করে হাসতে লাগলেন।
শ্বসুর মশাই ঢুকলেন হই হই করে। তার দিকে তাকিয়ে শিরির চোখ কপালে উঠলো। মনে হলো ঢাকা শহরের সব মিষ্টির দোকানই খালি করে এনেছেন তিনি। একটু পর খালা শ্বাশুড়ি, খালু শ্বসুর, মামা, মামী, চাচা, চাচী, ফুপু , ফুপা সমস্ত শ্বসুরকুল এসে হাজির বাড়িতে। এই উপলক্ষ্যে হাজির বিরিয়ানী অর্ডার দেওয়া হয়েছে। হাজার হোক বংশের প্রথম সন্তান আসছে শুধু মুখে এ সুসংবাদ চলে!

এসব কিছুর মধ্যমনি শিরি। চাচী শ্বাশুড়ির দেওয়া নতুন জামদানী শাড়ি পরতে হয়েছে তাকে। সবাই নানা উপদেশ দিচ্ছে। হঠাৎ পুরো বাড়িতেই উৎসবের আমেজ।
রান্নাঘরে কি যেন একটা আনতে গিয়ে শুনতে পেলো, ছোট দেবর পিছের বারান্দার কোনায় কাকে যেন ফিসফিস করে বলছে, এ্যাই জানো, ভাবীর বাচ্চা হবে, সারাবাড়ি ভর্তি মানুষ জড়ো হয়েছে। পুরাই ঈদ আজ আমাদের বাড়িতে। তোমাকে মিস করছি। আর ভাবছি কবে ......

মুচকি হেসে সেখান থেকে সরে গেলো শিরি.........



ওর ভুবন জোড়া এখন শুধু একটি আনন্দ। যে আনন্দের প্রতীক্ষায় আছে শিরি। কবে আসবে ওর অনাগত ছোট্ট রাজকুমার। সব সময় ফিসফিস করে কথা বলে সে ছোট্ট রাজকুমারের সাথে। আচ্ছা ছেলে হবে নাকি মেয়ে? ওর পছন্দ ছেলেই কিন্তু তার পছন্দ ......


অপেক্ষায় দিন কাটে তার .......

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×