এরশাদ এবং তার পরবর্তি কয়েকটি সরকারের সময় আমরা দেখেছি দেশে বড় ধরণের কোন সংঘাত হলে পাড়া, মহল্লা বা চায়ের দোকানে মানুষ জটলা ধরে বসে বিবিসি রেডিওতে প্রচারিত সংবাদ শুনছে। কারণ দেশে এখন যেমন সরকার টিভি, রেডিওকে নিয়ন্ত্রন করছে, তখনও করতো। কিন্তু এখন আর তখনকার সময়ের পার্থক্য হলো, টিভি বলতে তখন দেশে শুধু বিটিভি ছিল, এ ছাড়া বেসরকারি আর কোন টিভি চ্যানেল ছিল না। রেডিওর ক্ষেত্রেও ছিল একই অবস্থা, সবগুলোই ছিল সরকারী নিয়ন্ত্রনে। সরকারের ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু প্রচার করার সুযোগ ছিল না, যেমনটা এখনো নেই।
তাহলে মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে কেন বিবিসির সংবাদ শুনবে না ? তখনকার প্রেক্ষাপটে এটাই ছিল একমাত্র উপায়। আর এখন ? যতদূর জানি, বর্তমানে ২০টা বা তারও বেশি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। তার উপরে আছে ফেসবুকের মতো একটা সহজ ও দ্রুতগামী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যা ব্যবহার করে যে কেউ যে কোন জায়গা থেকে যখন তখন সব ধরণের সংবাদ শেয়ার করতে পারে এবং লাইভ-এ এসে বলতেও পারে। অথচ কি দূভার্গ্য আমাদের, ঝিগাতলায় সংঘটিত নির্মম শিক্ষার্থী পেটানোর প্রকৃত ছবি ও সংবাদ পেতে আমাদেরকে আলজাজিরা, বিবিসি, সিএনএন কিংবা অস্ট্রেলিয়ান টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে হলো। এখন প্রশ্ন, কেন এমনটা হলো? কারণটা পরিস্কার, ঘটনার খুব গভীরে না গিয়েও বলা যায় যে, প্রথমত: অনেককেই সেদিন ছবি উঠাতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়েছে, পকেট থেকে যারাই মোবাইল বের করে ছবি তোলার চেষ্টা করেছে, তাদেরকে হুমকি, ভয়ভীতিসহ মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও একমাত্র ফেসবুকে ছাত্র পেটানোর কিছু ভয়াবহ ছবি এসেছে; যা দেখে দেশের আম-জনতা সবাই বুঝেছে ওখানে কি হচ্ছে ।
কিন্তু এটা যখন নির্যাতনকারী গোষ্ঠি বুঝতে পেরেছে, তখন তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়ার জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছে। তাহলে প্রকৃত সংবাদ পেতে কেন মানুষ বিদেশী মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদকে বিশ্বাস করবে না ?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪১