যে জেলের ভাত খেয়েছে, সে হাসপাতালের ভাতও খেতে পারবে, কিন্তু জেলখানা যেমন কোন কয়েদির'ই পছন্দের জায়গা না তেমনি হাসপাতালটাও যে তার পছন্দের হাসপাতাল হবে, তেমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই। বরং জেলে যাবার আগে আসামীর ভাবা উচিৎ ছিল, যে অন্যায়টি সে করেছে তাতে তার জেল হতে পারে ।
এখন কেউ যদি বলে, বাঙালি নাটক প্রিয় জাতি, সব কিছুতেই কেবল নাটক খোঁজে। তাতে কোন কাহিনী থাক বা না থাক। অবশ্য এটা খুব বেশি দোষেরও না, কারণ বর্তমানে যতগুলো টিভি চ্যানেল হয়েছে আর যত নাটক বানানো হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কাহিনীর ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন তারপরও কিছু ভাল নাটক যে হচ্ছে না, তা না।
এ পর্যন্ত জেলখানা নিয়েও বাংলাদেশে অনেক নাটক নির্মিত হয়েছে। সে সব নাটকে দেখা গেছে কেউ কেউ জেলের ভেতর মারাও গেছে। যেহেতু জেলের ভেতর কয়েদির পরিবারের কোন আত্মীয়-স্বজন থাকে না সেহেতু সে সব মৃত্যু নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকে মানুষের মনে, যেমন কেন মরলো, কিভাবে মরলো, বেশ তো সুস্থ্য মানুষ ছিল, এভাবে তো মারা যাবার কথা না, ইত্যাদি, ইত্যাদি...
তবে নাটকের চেয়ে বাস্তবে মনে হয় কয়েদিরা একটু বেশিই অসুস্থ্য হয়। বিশেষ করে ভি.আই.পি কয়েদিরা। এরা জেলে যাবার কয়দিন পরই শোনা যায়, উনি ভীষণভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে, এখনি উনাকে প্রাইভেট কোন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার দরকার। তা না হলে উনার যদি কিছু হয়ে যায়, তবে তার জন্য সরকার'ই দায়ী থাকবে। যদিও এসব ভি. আই.পি কয়েদি জেলে থাকা অবস্থায় কোন দিনই প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পায়নি বা ভবিষ্যতেও পাবেনা। কারণ আমাদের উদার মনোবৃত্তির সরকার প্রয়োজনে তার জন্য মেডিকেল বোর্ড বসাবে এবং নির্ভেজাল একটা রির্পোট দেওয়ার ব্যবস্থা করবে, যাতে তাকে কোন প্রাইভেট হাসপাতালে না নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
তারপরও এসব ভি. আই. পি কয়েদি রোগীর শুভাকাঙিখরা যদি সব সময় ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকে আর বলতে থাকে যে, রোগীর শরীর খুব খারাপ, তাকে বাইরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে, সরকারের আয়োজনে মেডিকেল বোর্ড যে রির্পোট দিয়েছে, তাতে রাজনীতির দূর্গন্ধ আছে, তাহলে আমাদের সরকারের আর কি করার থাকতে পারে !
এসব শুভাকাঙ্খির অনেকেই অাবার ইতোমধ্যে একাধিকবার জেল খেটেছে, অনেকের নামে এখনো ধানের শীষের মতো থোকা থোকা মামলা ঝুলে আছে, ভারী বাতাসেও যেগুলো সহজে ছুটে পড়বে না কিংবা মাড়াই করে ওগুলো কেজি দরে বিক্রিও করা যাবেনা, এগুরো প্রয়োজন মাফিক সময় পর্যন্ত ঝুলেই থাকবে। কারণ এগুলো ঝুলিয়ে রাখলে লাল ঘরটাকে চেনাতে সুবিধা হয়। তারপরও এসব শুভাকাঙ্খিরা আশা করে, তাদের প্রিয় কয়েদি বেসরকারী হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা পাবে। এরা বোঝেনা যে, জেলখানা আসলে শ্বশুর বাড়ি না, আবদার করলেই কয়েদিকে তা দেওয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত বাদী আকাশের তারা গোণা শুরু না করছে।