somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুমারীত্বের প্রমাণ, আসলেই কি সম্ভব? (১৮+ পোস্ট)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিলনে রক্তপাত এর মাধ্যমে নারীর কুমারীত্ব প্রমাণিত হয়, এটি বিশ্বব্যাপী একটি প্রচলিত ধারণা।
অনেকের ধারণা নারীর যৌনাঙ্গের ভিতরে এক টুকরা মাংস পিন্ড থাকে যা প্রথম মিলনে ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্তপাত ঘটায়। আবার অনেকের ধারণা, মাংসপিন্ড নয় এটা আসলে রক্তনালী দিয়ে তৈরী একটা জালের মত বস্তু, যা প্রথম মিলনে ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। তবে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হলো, এটি আসলে একটি পর্দা যা যৌনাঙ্গের ভিতরের দিকে থাকে এবং যৌনাঙ্গের প্রবেশপথ কে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। প্রথম যৌনমিলনে তা ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। একবার চিন্তা করে দেখুন, তাই যদি হতো, তাহলে মহিলাদের ঋতুস্রাব কি আসলেই সম্ভব হতো? আসলে নারীর যৌনাংগ সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণার অভাবই এসব ধারণার মূল কারণ। (1)
এই সম্পর্কে আধুনিক ধারণার প্রবর্তক বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ইবনে-সিনা। আধুনিক মেডিকাল সাইন্স অনুযায়ী, নারীর যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথের ১-২ সেন্টিমিটার ভিতরে ইলাস্টিক বা স্থিতিস্তাপক একধরণের টিস্যু থাকে। একে বলা হয় hymen. এটাকে তুলনা করা যেতে পারে দরজার ফ্রেম বা চৌকাঠ এর সাথে, যা দরজার চারিদিকে লাগানো থাকে। কিন্তু কোনভাবেই এটি বদ্ধ দরজার সাথে তুলনীয় না। এটির আকৃতি এবং আকার একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। কারো ক্ষেত্রে এটি যৌনাঙ্গের প্রবেশপথের চারিদিকে গোল করে লাগানো থাকে, কারো ক্ষেত্রে এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির অর্থাৎ শুধু একপাশে লাগানো। বেশি সংখ্যক নারীর ক্ষেত্রেই এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি (1)।
একেক নারীর ক্ষেত্রে এটির আকারও একেক রকম হয়। যোনী পথকে একটা ঘড়ি আকৃতির জিনিস হিসেবে কল্পনা করলে, সবচেয়ে বড় hymen এর আকার হলো, যদি একটা ঘড়িতে যদি ১০টা ১০ বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে। সবচেয়ে ছোট hymen হলো যদি ঘড়িতে ৬টা বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে (2),খুব কম সংখ্যক নারী (০.০৩% নারী) hymen ছাড়া জন্মগ্রহণ করেন। আবার খুব কমসংখ্যক নারী যৌনাংগের প্রবেশ পথ রুদ্ধকারী hymen নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যতদিন পর্যন্ত এরা প্রাপ্তবয়স্ক না হয় এবং ঋতুস্রাব না হয়, তারা কোন সমস্যা বোধ করেন না। বয়প্রাপ্তির পর ঋতুস্রাব বের হতে না পেরে ভিতরের দিকে চলে যায় ও ব্যাথার সৃষ্টি করে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলা হয়, hematocolpos । এদের অপারেশন এর মাধ্যমে hymen অপসারণের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয় (1)।
একটি নারী কুমারী হলেও নিম্নের কিছু কারণে, প্রথম মিলনে রক্তপাত না হতে পারে (1,3,4,5)।
> দরজার চৌকাঠের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, প্রথম মিলনে রক্তপাত র‍্যান্ডম বা আপেক্ষিক ব্যাপার। এটি নির্ভর করবে মিলনের তীব্রতা/ রুক্ষতা, যোনীপথের পিচ্ছিলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আগের যুগে প্রথম মিলনে অনেক নারীই ভীত থাকত এবং সঠিক ভাবে উত্তেজিত হতে পারতো না, তাই hymen ছিড়ে রক্তপাতের শিকার হত। বর্তমান যুগে যৌনক্রীড়ায় মেয়েদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্ভাবনা আরো কমিয়ে দেয়।
> কারো কারো hymen জন্মগত ভাবে পাতলা থাকতে পারে এবং শারিরীক এক্টিভিটি যেমন ব্যায়াম, সাইকেল চালনা ইত্যাদির কারণে তা অজ্ঞাতসারে ছিড়ে যেতে পারে।
> উপরে hymen এর যে আকার বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী কারো hymen এর আকার ছোট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে hymen ছিড়ে যাওয়া নির্ভর করে পুরুষাঙ্গের আকারের উপরে।
> আবার নারী ভেদে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা কম বেশী হতে পারে। যার স্থিতিস্থাপকতা বেশী, তার hymen ছেড়ার সম্ভাবনা কম।
> বয়স বাড়ার সাথে সাথে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়তে থাকে। পুরোন যুগে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে এবং কম স্থিতিস্থাপক hymen প্রথম মিলনে ছিড়ে রক্তপাত ঘটাত বলেই নারীর সতীত্বের সাথে রক্তপাতের সম্পর্কের ধারণা গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের বেশী বয়সে বিয়ে হওয়াতে, অধিকতর স্থিতিস্থাপক hymen এর কারণে অনেকে রক্তপাতের সম্মুখীন না হতে পারেন (6)।
> এছাড়াও খুব কম সংখ্যক নারীর জন্মগত ভাবে hymen থাকেনা। এদের ক্ষেত্রে তাই প্রথম মিলনে hymen থেকে রক্তপাতের কথাটা খাটেনা।
আবার কোন কোন নারী কুমারী না হলেও তার রক্তপাত হতে পারে (3)।
> যদি কোন নারী যথেষ্ট পরিমানে উত্তেজিত না থাকে এবং যৌনরস দ্বারা যোনিপথ পিচ্ছিল না থাকে অথবা পুরুষসংগী যদি রুক্ষ ভাবে মিলনে অভ্যস্ত থাকে সে ক্ষেত্রে যোনীর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু এই রক্ত hymen থেকে আসেনা। তবে আপেক্ষিক ভাবে রক্তের উৎস সম্নধে জানার কোন উপায় থাকেনা।
> কিছু ইনফেকশনের কারণে মিলনের সময় রক্তপাত হতে পারে (যেমন Chlamydia infection)
> প্রথম মিলনেই hymen নির্মূল হবে তা নয়। আবার কয়েকটি মিলনে অল্প অল্প করে নির্মূল হতে পারে। ফলে কুমারী না এমন নারীও কিন্তু মিলনের সময় রক্তপাতের সম্মুখীন হতে পারে, যদিও এটা তার প্রথম মিলন নয়।
ঠিক কত ভাগ মহিলা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হন, তা নিয়ে তেমন ব্যপক কোন গবেষনা হয়নি। ১৯৯৮ সালে Dr. Sara Patterson-Brown এর করা the British Medical Journal এ প্রকাশিত একটি গবেষনার কথা জানা যায়। গবেষনাতে অংশগ্রহণ কারী ৬৩% মহিলা জানান যে তারা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হননি (3)।
যুগ যুগ ধরে, এই রক্তপাতের মাধ্যমে সতীত্বের পরীক্ষার কারণে অনেক নারীর প্রতি আঙুল উঠেছে। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বিয়ের পর রক্তমাখা বিছানার চাদর প্রদর্শনের রেওয়াজ আছে। আরব বিশ্বে এমন কি বিয়ের আগে অনেক নারী অপারেশন করে hymen প্রতিস্থাপন করেন। যদিও ইসলামি কোন বই-পুস্তকে কোথাও এই পদ্ধতিতে নারীর সতীত্ব প্রমাণিত হয় বলে বলা নেই (7,8,9)।

সূত্র:
1. http://goo.gl/fVfzd
2. http://en.wikipedia.org/wiki/Hymen
3. http://goo.gl/2XBWD
4. http://en.wikipedia.org/wiki/Virginity
5. http://goo.gl/X2EUw
6. http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/9839261
7. http://goo.gl/r7Iot
8. http://islamqa.info/en/ref/96214
9. http://goo.gl/OV1bz
২৪টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×