somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

জীবনের প্রয়োজনে বদল

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন যাবত উন্নত বিশ্বের মানুষের জীবন যাপন দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রথম অবস্থায় আমার কাছেও মনে হতো এদের সব আছে শুধু আবেগটা খুব কম। কিন্তু বাস্তবতা আবেগকে বেঁধে ফেলার যে মানসিকতা তারা তৈরি করতে পারছে। সেটা বরঞ্চ ভালো হয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের জন্য।
আমাদের দেশে আগে যৌথ পরিবার ছিল অথচ এখন অনেক পরিবার মিলে মিশে থাকত সমস্যা তেমন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতার জন্য পরিবার গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এক সদস্য অন্য শহরে, তো আরেক সদস্য বিদেশে। আট দশজন ছেলে মেয়ের পিতা মাতা একা শেষ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে। অথবা ঘুরে ফিরে এক এক সন্তানের কাছে কোন বাড়িতে মা বাবার জন্য নিদৃষ্ট কোন ঘর নেই। যেখানে তারা স্বস্থি নিয়ে নিজের মতন বাস করতে পারেন।
হয় তো বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু পরিবার মাবাবার যোগ্য মর্যাদা দিয়ে রাখেন।
আমাদের দেশে মা বাবার আবেগ অত্যন্ত বেশী । সন্তানের জন্য নিজের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারেন। নিজের জন্য কিছুই না রেখে সন্তানদের সব তুলে দেন। কিন্তু অন্য পক্ষে সন্তান অতটা উদার হতে পারেন না।
সমস্যা মূলত অর্থনৈতিক। তার চেয়ে বড় বাজে মানসিকতা। যে সব পরিবারে একা কুক্ষিগত করার চিন্তা নাই তারা ভালো আছেন।
তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্যের অংশ মেরে দেয়ার প্রবনতা।

সময় এসেছে আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের। ছেলে মেয়ের মুখাপেক্ষি না থেকে নিজের বাড়িতে রাজার মতন থাকার জন্য মানসিকতা তৈরি করতে হবে। শক্ত হতে হবে মানসিক ভাবে বাচ্চাদের বাবা মায়ের উপর নির্ভরশীল না রেখে তাদের মতন সয়ংসম্পন্ন হতে দেওয়ার। একটা বয়স পর্যন্ত সন্তানকে দেখাশোনা করবে বাবা মা এবং একটা বয়সের পরে ছেলে মেয়ে অভিভাবককে দেখাশোনা করবে এই ধারনাটা পরিবর্তন করে সমাজে সংস্কার আনতেই হবে। যত কাছের সম্পর্কই হোক সম্পর্কের মধ্যে একটা পর্যায়ের দূরত্ব রাখা দরকার। তা সবার জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।
সন্তানের সংসারে বাবা মার ঢুকে যাওয়া যেমন কাম্য নয় ছেলে মেয়েরও বাবা মায়ের উপর নির্ভর না করে একটা বয়সের পর থেকে নিজের মতন সয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। বাবা মা সন্তানের মধ্যেও অবিচ্ছদ্দ যে সম্পর্ক তাকে মধুময় করতে একটু দূরত্ব রাখাই বাঞ্চনিয়। নানা প্রয়োজনেই সবাই নিজের জীবন নিজের মতন যাপন করতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি মানুষের বোঝা বয়ে নিজের জীবনটা বুঝতে পারার সুযোগ অনেকে পায় না।
বিদেশে অনেক পরিবারের সন্তান বাবা মার বিপুল সম্পদের তোয়াক্কা না করে নিজের মতন জীবন যাপন করতে পারে। বাংলাদেশে তেমনটা দেখা যায় না।
মানুষ আসলে আট নয় বছর বয়সের পরেই আমি হয়ে উঠে। তখন থেকে স্বনির্ভর হওয়ার সবরকম শিক্ষা তাদের দেয়া দরকার। প্রতিদিন নিজের কাপড় জুতা জামা বিছানা ঘর পরিচ্ছন্ন গুছিয়ে রাখা থেকে, খাবার তৈরি করে খাওয়ার শিক্ষা ছেলে হোক, মেয়ে হোক সবাইকে এক ভাবেই শিখানো দরকার পড়ালেখার পাশাপাশি। জীবন যাপনের প্রতিটি স্তরে বাচ্চা যেন সয়ংসম্পূর্ণ হয় সেটাই শিক্ষা দেওয়াই আসল শিক্ষা।
আমাদের দেশের মানুষ যারা অনেককাল বিদেশে আছেন তারা অনেকে স্বয়ংসম্পর্ন জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়েছেন। তারপরও পুরুষ বাইরের কাজে যতটা পারদর্শি তাতটা নন গৃহকর্মে নিপুন। নিজের সব কিছু গুছিয়ে চলার বেলায়। এ ব্যাপারে নারী অনেক বেশী পারদর্শি সয়ংসম্পূর্ন। একা হয়েও তাই নারীরা ভেঙ্গে পড়েন না। কিন্তু পুরুষরা একা হলে অগোছাল এলোমেলো হয়ে পরেন। সবচেয়ে প্রথম অসুবিধা হয় তাদের খাবার খাওয়া থেকে। তৈরি করতে পারেন না কিছু যেহেতু সারা জীবন মায়ের পর স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল থেকেছেন। অথচ শিশু বয়স থেকে যদি শিক্ষাটা হয়ে যায় তবে যে কোন অবস্থায় নিজের খাবার তৈরি করা থেকে প্রয়োজনে অন্যকেও সেবা করতে পারেন তারা।
বিদেশে আসা ইয়াং ছেলেরা বা দেশে বাড়ি ছেড়ে হোস্টেলে আসা ছেলেটির সবচেয়ে বড় কষ্ট হয় খাবারের জন্য। অথচ তারা যদি বাড়িতে ছোট বেলা থেকে রান্না শিখে অভ্যস্থ হতো তবে মেয়েদের মতন তারাও নিজের খাবার নিজেরা তৈরি করে নিতে পারত। যারা বিদেশে একা থেকে কিছুটা শিখে যায় বিয়ের পর তাদের রান্না বান্না লাটে উঠে বউয়ের উপর নির্ভর করে।
এটা সম্পূর্ণ মানসিকতার ব্যপার। আমাদের সংস্কৃতিতে ছেলেদের বড় করা হয় গৃহকর্ম বিমুখ করে পর নির্ভর করে। এটা তাদের ক্ষতি, সাথে একটা পুরো জাতির ক্ষতি। শুধু রান্না খাওয়ার জন্য স্ত্রীর উপর নির্ভর না করে সুখে পাশে থাকার মানুষ হিসাবে ভাবার মানসিক বিকাশ হবে না, যতদিন পুরুষ বিয়ে করেছে বউ রান্না করে খাওয়াবে বলে এই ভাবনার বাইরে চিন্তা করা না শিখবে। পুরুষ আয় করবে আর নারী রান্না করে ঘর সামলাবে এ ধারনা ভুলে দুজনে মিলে সব কিছু করতে হবে। দুজনে পাশাপাশি সব কাজ সব ভালোলাগা ভাগ বন্টন করার চিন্তা মননে এলেই সুন্দর পরিবার হবে।
মেয়েরা কিন্তু শুরু করে দিয়েছে তারা বাইরে যেমন ভালো কাজ করে আয় করছে তেমন সংসার সামলিয়ে চলতে পারে । পুরুষরা পিছিয়ে পরছে নিজেদের মানসিকতার করনে।
আমাদের বাঙালি মানসিকতায় বিদেশের মানুষ সম্পর্কে ধারনা, কোন দম্পত্তি এক সাথে অনেকদিন সংসার করে না, জীবন কাটায় না। এ ধারনা অনেক কাল আগে থেকে আমার নেই। তবে আরো দৃঢ় হলো কাছে থেকে এক সাথে থাকা অনেক বিদেশি দম্পতিকে দেখে। অনেককে দেখেছি মধুর সম্পর্কে জড়িত আজীবন।
ভালোবাসা পৃথিবী জুড়ে অনেক মানুষের মাঝে আছে যা আমাদের ধারনার বাইরে। কাজেই অনুরোধ থাকবে, প্রকৃত ভাবে না জেনে মানুষ সম্পর্কে ধারনা করবেন না। উল্টাপাল্টা যা খুশি মতবাদ ছড়াবেন না।
পশ্চিমা দেশে অনেক মানুষ কাছাকাছি পাশাপাশি অনেককাল যাবত সুখি সুন্দর বিবাহিত জীবন যাপন আগেও করেছে ,এখনও করছে । আবার বাংলাদেশের মানুষের মাঝেই যত ভালোবাসা বিরাজ করে এমন ধারনা সবটাই ভুল।
আবার বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ডির্ভোসের সংখ্যা আশংকা জনক ভাবে বেড়ে গেছে এ নিয়েও অনেক হাহুতাস করছেন, বর্তমান সময়ে। এ সংখ্যা পরিবর্তন করে কমিয়ে আনতে হলে । পারিবারিক এবং পুরুষ হিসাবে বড় হয়ে উঠার সাথে জীবন যাপনের চিন্তা চেতনার বিস্তর মানসিক ভাবনার পরিবর্তন করে মানুষ হিসাবে সব কাজ সমান ভাবে করার চিন্তা চেতনা বিকাশ করতে হবে। বউকে ভালোবাসতে হবে সঙ্গী হিসাবে। ভাগ করে নিতে হবে সব কাজ এক রকম।
মেয়েরা মানিয়ে নিয়ে নিজের মতন জীবন যাপন করতে পারে অনায়াসে। ছেলেদের জন্য অনেক কঠিন কাজ এটা। তাই ছেলেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে সব শিখে বড় হওয়ার জন্য পরিবারগুলোর মানসিকতা পরিবর্তন খুব জরুরী।
অনেকের ভালোলাগবে না এমন তীতা সত্যি কথা। যদিও জীবন যাপনে নানা সমস্যার সম্মুখিন তারা হচ্ছেন প্রতি নিয়ত। কিন্তু বাস্তবে মুখে অন্যের কাছে স্বীকার করবেন না।
এটা আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের বৈশিষ্ট। ভাব দেখিয়ে সত্যকে না মানা। তবে যারা মেনে নিচ্ছেন, তারাই ভালো আছেন।







সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৩৭
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×