সেদিন ছোট একটুখানি একটা কবিতা লিখেছিলাম, এত্ত এত্ত সব দিবস, গোলাপ, ভালোবাসা, বসন্ত দিবসে ফুল না থাকার আক্ষেপ নিয়ে ।
ওখানে বসন্ত আসছে
এখানে তুষার ঝরছে
গোলাপ কোথাই পাই
হাউ এ্যবাউট আমিই
গোলাপ হয়ে যাই
তোমাকে দিব বলে।
কানে কানে বলি, ফুল নেই, তা নয় । এখন তো বাজার ভর্তি ফুলের বানিজ্য। কিন্তু ফুল আমি বাগান থেকে তুলতে চাই। কিন্তু এমন বরফ আচ্ছাদিত মাঠে ফুল ফোটে না বরফের ফুল ছাড়া।
ফুল ফোটার অনেক দেরি আছে আমার এই ভূখণ্ডে। যদিও গ্রাহাউন্ডহাগ দুই ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছে ছয় সপ্তাহে এবার শীত শেষ হবে। বসন্ত আসতে ছয় সপ্তাহ বাকি থাকলেও ফুল দেখার জন্য সত্যিকারে অপেক্ষা করতে হবে আরো আট দশ সপ্তাহ। তবে যখন ফুল ফুটবে তখন ফুলের বন্যায় ভেসে যাবো। সব শূন্য সাদা রঙের মাঝে যখন রঙ আর রূপের আলো নিয়ে গাছে গাছে শুধুই ফুলের ছড়াছড়ি। প্রজাপতি আর মৌমাছির মতন আমিও নাচব ফুলে ফুলে আরোহণ করব মধু, দক্ষিণে ভ্রমণ শেষে ফিরে আসা পাখিদের সাথে গল্প কথায় আনন্দে।
প্রকৃতির এত রূপ সত্যি মনে বসন্তের আলোড়ন এনে দেয়। বসন্ত মানে ফুল ফোটার দিন; উপলব্ধি অনুভুতির গহীনে প্রসার বিস্তার করে বাস্তব সাক্ষাতে। অবাক বিষ্ময়ে প্রতি বছর একই ভালোলাগায় মাতি। ফুলের বনে হেসে গড়িয়ে যাই।
প্রথমবার এমন বসন্ত দেখে উপলব্ধি করেছি, "আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে" কথার গভীর অর্থ।
শীত বা মরুর দেশে দ্বীপ বা সমুদ্রে ভেসে থেকেও সংস্কৃতিক ভাবে, সংযুক্ত থাকি আমরা জন্মভূমির সাথে। বেড়ে উঠার ভূমির অনেক জীবনের চর্চা করা ভালোলাগার বিষয়গুলোর সাথে। তাই বসন্ত থেকে দূরে থেকে ও প্রতিটি মানুষের মনে দোলা লেগেছে বসন্ত বাতাসে দুলে উঠার দেশের নারীর টানে। সব কাজ সেরে। নিজেদের মতন অনেকেই আয়োজন করেছেন বসন্ত বরণের অধিবাসী ভূমিতে।
বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর মাঝে গ্রীষ্ম, শীত বর্ষা এই তিন ঋতুর পার্থক্য সহজে বোঝা যায়। বাকি শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত, কেমন মিলে মিশে যায়। অন্তত আমার কাছে মনে হয়। এই যে বসন্ত এসেছে এখন শীত পেরিয়ে, বাগানে কিন্তু ফুল ফোটা চলছিল শীতকালেও। শুধু ফুলদের নাম বদলের পালা। নতুন করে তেমন বৈচিত্রময় হয়ে উঠে না। বাংলাদেশ সব সময় সবুজ থাকে তাই তো চির সবুজ দেশ।
বসন্তে পলাশ ফুটে। এছবিটা তুলেছিলাম দু বছর আগে বই মেলা থেকে
অনেকে কৃষ্ণচূড়ার ছবি দিচ্ছেন বসন্তে। কৃষ্ণচুড়া বৈশাখে ফুটবে তার জন্য তুলে রাখুন।
শিমুল ফোটে ফাগুনে।
একবার গিয়েছিলাম সীমান্তের কাছে এক জায়গায় বেড়াতে। এক বিশাল প্রাচীন শিমুল গাছ দু হাত মেলে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা সবাই তার উপর বসে এক দুপুর কাটিয়ে দিয়েছিলাম।
একটা শিমুল বাগান আছে ইচ্ছে আছে এক সময় সেখানে যাব ফুল ফোটার সময়।
বাংলার পথ থেকে শিমুল কে ধরার চেষ্টা করেছিলাম।
পৃথিবীর ভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে ঋতু আসে। সেভাবে সে জায়গায় রূপ বৈচিত্র ভিন্নভাবে ধরা পরে।
বিষুব অঞ্চলে দুই ঋতু। গ্রীষ্ম আর শীত বা গ্রীষ্ম আর মনসুন বা বর্ষাকাল। এভাবে জায়গা মতন ভাগ করা।
উত্তর আমেরিকা , কানাডা, ইউরোপ, আফ্রিকা, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড সব দেশগুলোই চার ঋতুর দেশ। দক্ষিণ আমেরিকায় তিন ঋতু গ্রীষ্ম, শীত কোথাও কখনো বর্ষা যোগ হয়ে যায়।
উত্তর আমেরিকায় প্রতিটি ঋতু বৈচিত্রময় হয়ে উঠে আপন গড়িমায়। শীত শীতের মতন নিথর শিতল হিমের অতলে তলিয়ে যায়। গ্রীষ্ম আবার সবুজ সতেজ পাতায় ফসলে, গরমে, উষ্ণতায়। শরৎ নিজের বৈশিষ্ট্যে নিয়ে রঙিন ঝলমলো, হলুদ লালের আগুন রঙা রূপে মুগ্ধতায় মাতে । বসন্ত আপন সৌরভে গৌড়বে নেচে উঠে ফুলে ফুলে সম্ভারে । ফুল ছাড়া পাতার দেখা পাওয়া ভার বসন্তের গাছে।
চারটি ঋতু বৈচিত্রের বর্ণাঢ্য স্বকিয়তায় নিজেদের মতন হাজির হয়, আকর্ষণীয় হয়ে। আমি তাদের সবার সাথেই মিতালি করি ভালোবেসে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:১৫