আমার কিছু বন্ধু আমাকে বড়ুয়া বলে সম্বোধন করে। আমি মুচকি হাসি। আমার নাম কখনো সেটা ছিল না। আমার অন্য নাম আছে। তারা হয়ত এটা করে, আমাকে মনে করাতে সাহায্য করে আমি তাদের ধর্মের নই। আমি সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফ নিয়ে রিসার্চ করে দেখার চেষ্টা করলাম, আসলে ইসলাম অন্য ধর্ম সম্পর্কে কি বলে।
" ধর্ম নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। " (কোরআন ২:২৫৬)
বুঝতে পারলাম, এরা যা করে সেটা ভুল। অথবা তারা কোরআন শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞ। আমার কিছু বন্ধু তারা জোর করে আমাকে বলে আমি অন্য ধর্ম কেন পালন করি অথবা আমি কেন মুসলিম হয়ে যাচ্ছি না। আমি ঘেঁটে ঘেঁটে বের করলাম হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেছেন,
" আপনারা যারা বিশ্বাস করেন না! আমি যার উপাসনা করি, আপনারা তার উপাসনা করেন না। সুতরাং আমি যার উপাসনা করছি আপনারা তার উপাসনা করছেন না। তাই আমার ধর্ম আমার, আপনার ধর্ম আপনার। " (চ্যাপ্টারঃ- ১০৯)
সুতরাং আমি এটায় উপনিত হলাম, তারা জোর করে আমাকে আমার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করতে পারে না যদি তারা সঠিকভাবে কোরআন শরীফ পড়ে থাকে।
এবার আসা যাক, ২০১৩ সালের মার্চ মাসের ২৭ তারিখে। ৩৭ জেলার ৪৭ টি হিন্দু বাড়িতে হামলা অথবা রামুর বৌদ্ধপল্লীতে। চারিদিকে হাহাকার। যারা করেছে তারা মুসলিম হতে পারে বলে মনে করি না।
" সাবধান! তোমরা কেউ যদি অমুসলিমদের প্রতি নিষ্ঠুর এবং কঠিন হও অথবা তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করো অথবা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের থেকে কিছু নাও; আমি(হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ) শেষ বিচারের দিন আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবো।" (আবু দাউদ)
রামুর হামলার সময় হাজার হাজার ধর্মীয় সম্পত্তি নষ্ট হলো। আমরা কাঁদলাম, সে সময় ফান্ড বানিয়েছিলাম। অনেক মুসলিম ভাইয়েরা সাহায্য করেছিলেন। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান। আসলে ইসলাম যারা মন থেকে পালন করে অথবা ইসলাম যারা অন্তরে ধারন করে, তারা অন্য সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আবার অনেকে পথভ্রষ্ট হয়। পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম নিয়েই সবচেয়ে বেশি ধর্মব্যবসা হয়। কিছু ভালো মানুষ বলে তারা ইসলাম রক্ষার জন্য যুদ্ধ করো। অথচ কোরআনে উল্লেখ আছে,
" এবং তোমরা আল্লাহর কথানুসারে তার সাথেই যুদ্ধ করো যারা তোমার বিপক্ষে যুদ্ধ করতে চায়। তবে তোমরা আক্রমনাত্মক হবেনা। অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (২:১৯০)
এরপর যদি বলেন, যারা ধর্মের জন্য যুদ্ধ করছে তারা সঠিক আমি দুঃখিত। পৃথিবীতে অনেক মুসলিম নির্যাতিত হয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটা দেশে যেখানে ৯৫% মুসলিম সে দেশে নির্যাতিত হয়ে আসছি আমরা সংখ্যালঘুরা। আমরা কোনো যুদ্ধে যাই না, আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ঈদে কোলাকুলি করি, মা প্রতি ঈদে সকালে সেমাই রান্না করে। আমরা তৃপ্তি ভরে খাই। আমি কেবল এটা বলতে চাই, ধর্ম দেখানোর ব্যাপার না, ধর্ম ধারণ করতে হয় অন্তরে। আপনি যেই ধর্মেরই হোন না কেন, আপনার বিশ্বাস করতে হবে ঈশ্বর আছেন, অবশ্যই আছেন! তাহলেই আপনি ধার্মিক।
" যদি তুমি ভালো করো, তবে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য করো। আর যদি তুমি খারাপ করো, তবে সেটাও তাদের জন্যেই। (১৭:৭)
আপনারা যারা সত্যি আল্লাহর উপরে আস্থা রাখেন, আল্লাহকে বিশ্বাস করেন আল্লহকে ভয় করেন। আপনারা প্রকৃত ইসলাম থেকে বহুদূরে সরে এসেছেন। ভালোভাবে জানুন, ইসলাম অন্য ধর্ম সম্পর্কে কি বলে। আর যদি কিছু ভুল বলে থাকি দয়া করে এই মালাউনকে ক্ষমা করবেন।
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। মারা যাওয়ার পর একলোক ঈশ্বরের সম্মুখীন হলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো তুমি কিভাবে মারা গেলে? সে বললো, আমি আমার স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছি। ঈশ্বর তখন বললেন, তুমি তোমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছো। তোমার স্ত্রীর জীবন তুমি রক্ষা করতে পারোনি। সুতরাং তুমি ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত!
ধর্ম এমনই। এখানে ব্যর্থতার কোনো অবকাশ নেই...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৮