'আমার কথা খুব সিম্পল। দেশের মানুষদের ৯০ শতাংশই মুসলিম। তাহলে এই দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হতে বাধা কোথায়?'
-'কিন্তু দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে কি লাভটা হচ্ছে? দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম কিন্তু দেশে কি ইসলামের শাসন আছে?'
'ইসলামের শাসন না থাকুক, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা কিংবা অনুভূতির মূল্য তো আছে! যেমন একজন মুসলিম হিসেবে আমি অবশ্যই কষ্ট পাব যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা না হয়।'
-'মুসলিম কি আমিও নই? কিন্তু আমার কথা হল, যে দেশ দুর্নীতিতে টানা শীর্ষদেশগুলোর একটিতে থাকে, ঘুষ ছাড়া যে দেশের কোন সরকারি সংস্থায় কাজ হয় না অর্থাৎ ইসলামি শিক্ষার মূল্যবোধ যেখানে নাই, সেখানে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা আর একটা বাংলা বইয়ের ধর্মীয়করণ করা একই কথা!'
'তো ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করলে অন্য ধর্মেরই বা কি ক্ষতি হচ্ছে! সবাই তো সমানভাবেই তাদের ধর্ম পালন করবে। ইসলাম অলরেডি দেশের রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং এতেই দেশের সহনশীলতা এমন পর্যায়ের। কিন্তু যখন এটা যদি পালটে ফেলা হয়, তখন চিন্তা কর তো, উগ্রপন্থীরা কি অবস্থা করবে এই দেশের?'
-'কিন্তু যেখানে আমরা সঠিকভাবে ইসলাম পালন করি না, সেখানে রাষ্ট্রের ধর্ম ঠিক করে দেয়া ভণ্ডামি নয় কি?'
'ধর্ম পালন তো ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু একটা স্টেট রিলিজিয়ন থাকা মানে তুই আমি অর্থাৎ মুসলিমরা বেনিফিসিয়ারি হব।'
-'ঠিক বলেছিস। আর আমরা বেনিফিসিয়ারি হব মানে অন্য ধর্মের মানুষ অসুবিধায় পড়বে। শোন ভাই, এই দেশে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় কেবল রাজনৈতিক হাতিয়ার এর জন্য। মেজরিটি মুসলিমদের আশ্বস্ত করতেই এই কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে।'
পাড়ার এক ছোট্ট টং দোকানে দুই বন্ধু যখন ধর্ম কিংবা রাজনীতি বিষয়ক এসব উত্তপ্ত কথা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন সূর্য ডুবে গেছে। মাগরিবের নামাজের সময় হয়েছে। মসজিদে নামাজ চলছে, ভেসে আসছে সূরাপাঠের সুর। দোকানদার তার টুপি মাথায় দিয়ে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তখনো থামছে না দুই বন্ধুর এই তর্কবিতর্ক। অবশেষে দোকানদার বলে,
'ভাই আপনাদের চা খাওয়া তো শ্যাষ হইসে। দোকান বন্ধ করন দরকার। আমি এহন নামাজ পড়তে যামু।'
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৫