somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেও ক্রা দং চূড়ায়

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যোদয়ের আগমুহূর্তে কেওক্রাদং চূড়ায় এসে মনে নামে এক অদ্ভুত অনুভূতি, ভোরের আলো আঁধারির মতই ঘোলাটে। তাই এর অর্থ আমি জানি না।

সূর্যোদয়ের মুহূর্তে

ওই দূরে ডানদিকে দেখা যায় আর্মিক্যাম্প সমেত সুনসং পাড়া, বামে আরো নিচে নেমে লুংথাউসি পাড়া, তা ছাড়িয়ে আরো পুবে রুমানা পাড়া। এগুলো গতকাল গাইডের কাছে জেনেছি। ঐসব পাড়ায় এখন ভোর হচ্ছে, কিন্তু সবার উপরে বলে সব পাড়ার আগে কেওক্রাদংই পেয়ে যাচ্ছে ভোরের সবটুকু আলো। চূড়ার ওপরে নতুন সূর্যের জন্মমুহূর্ত দেখতে আসা আমার মত কিছু পর্যটক, তারা এ সুযোগ মিস করতে চায় না। এইসব পাহাড়, ত্রিভুজ পাহাড়ের শীর্ষে লেগে থাকা মেঘ, দূর পাহাড়শীর্ষের আঁকাবাঁকা অস্পষ্ট রেখাজুড়ে ভোরের রঙের খেলা কোন এক অচেনা জগতে নিয়ে যায়। সমতলের মানুষ আমরা, কতই আর এমন রূপ দেখি পাহাড়ের, ভোর দেখা হয় আরো কম। আমার মন উথালপাথাল হতে থাকে এক অচেনা অনুভূতিতে।

কেওক্রাদং এর একদম শীর্ষে একটা গোলঘর, কংক্রিটের ছাউনি দেয়া। তার চারপাশে বসার কংক্রিটের বেঞ্চ। সেখানেই সূর্যের দিকে মুখ করে বসে আছি উদয়ের অপেক্ষায়। ডানদিকে একটু নিচে আছে আর্মিদের ক্যাম্প। এখানেই সবাই এসে নাম লিখিয়ে যায়। আর সিঁড়ি ধরে একদম নিচে আছে 'স্বাগতম কেওক্রাডং আর্মি ক্যাম্প' নামফলক। লাল সবুজ রঙের বাঁশের বেড়ায় সাদা অক্ষরে লেখা। কেউ যদি কেওক্রাদং এর শীর্ষে উঠতে চায়, এই নামফলকের নিচ অতিক্রম করে প্রায় পঞ্চাশটা সিঁড়ি পেরিয়ে উঁচুতে আসতে হবে।

বগালেকের নামফলক

নিচের সেই নামফলকের সামনেই আছে বম রাজা লালার বাড়ি কিংবা হোটেল। এখানে তার আধিপত্য একচ্ছত্র । এই যে কেওক্রাদং পাহাড়ের চূড়ায় বসে আছি, এটার মালিকানা তারই। পুরো নাম লাল মুন থ বম। অবশ্য তাকে জিগ্যেস করা হয়নি, এত ক্ষমতা থাকলেও পাহাড়টি কেন তার নামে নয়? কিংবা বম হওয়া সত্ত্বেও কেন মারমাদের ভাষায় এই পাহাড়ের নাম? কিন্তু সরকারের কাছে এসব কারণে লালার গুরুত্ব ম্লান হয়নি। সরকার তার থেকে ঠিকই হেলিপ্যাডের জায়গা কিনে নিয়েছে, তার জায়গায় বানিয়েছে আর্মিক্যাম্প।

বম রাজা ও প্রধানমন্ত্রী

চূড়া আর লালার বাড়ির মাঝখানে যে রাস্তা পুবদিকে চলে গেছে, সেখানেই হেলিপ্যাড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে লালার অনেকগুলো ছবি মহাসমারোহে শোভা পায় তার বাড়িতে। হাসিনা এখানে এসে উদ্বোধন করে গেছেন বেশ কিছু জিনিস। কেওক্রাদং চূড়ায় গোলঘরের সামনেই একটা কালো পাথর আর নিচে কালো টাইলসের বাধাই। সেখানে কেওক্রাদং এর পরিচিতি চিহ্ন। সেখানে শ্বেতপাথরে লেখা পদ্যছত্র, 'স্বপ্ননীলে সাজানো উন্নত শৃঙ্গ কেওক্রাদং, শান্তির বাধনে অমৃত জীবন, সম্প্রীতির মহিমায় ভাস্বর বান্দরবন'। আরো লেখা আছে ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখ। সেদিনই হয়তো ছবিগুলো তোলা হয়ে থাকবে।
অবশ্য তার চেয়ে বিখ্যাত কিংবা পর্যটক আকর্ষিত কেওক্রাদং পরিচিতি চিহ্ন কোন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে যান নি। পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তিতে সেনাবাহিনির ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটা প্রধান ভূমিকা ছিল। সেই রেজিমেন্টের মেজর মোশাররফ হোসেন ১৯৯৩ সালে উদ্বোধন করেন কেওক্রাদং এর প্রথম পরিচিতি চিহ্ন। চারকোনা ছোট পাথরে রঙ করা সাদা গা আর লাল বর্ডার, দেখলে মনে হয় হ্যাচকা টানে এটা ফেলে দেয়া যাবে কিন্তু আদতে তা পাথরের মতই শক্ত। চূড়াজয় করলে সবাই এটাকে নিয়েই ছবি তোলে, কেন কে জানে। সেখানে ইংরেজিতে লেখা, কেওক্রাদং, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া, ৩১৭২ ফুট। এটা সে সময়ের কথা, যখন সাকা হাফং কিংবা তাজিংডং আবিষ্কৃত হয়নি। কাজেই নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া ছিল কেওক্রাদংই।

কেওক্রাদং এর গোলঘর ও পরিচিতি চিহ্ন

মনে পড়ে যায় ছোটবেলার কথা। নব্বই দশকের শেষের সময়টায় পাঠ্যবইয়ে জেনেছি কেওক্রাদংকে। সেখানেও অবিকল এটাই লেখা ছিল, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাদং। তখন পাঠ্যবইয়ে এক ভ্রমণকাহিনি পড়ে ঝর্ণা কি জানার আগেই জেনেছি কক্সবাজারে আছে হিমছড়ি ঝর্ণা আর পাহাড় কি বোঝার আগেই জেনেছি বান্দরবনে আছে কেওক্রাদং পাহাড়। কেওক্রাদং নামটা শুনে মনে হত এটা যেন বাংলাদেশের নয়, আমার অচেনা কিংবা বিদেশের কোন নাম না জানা পাহাড়। একটা পাহাড়ের আবার এমন নাম হয় কি করে!
ছোটবয়সের কথা, তখন কি ভেবেছিলাম একদিন আমিও আসব আজকের এই কেওক্রাদংয়ে! অবশ্য এখনকার জেনারেশন অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের ত্রিশজনের টিমে থাকা দুই পিচ্চিভাই মগ্ন আর মননকে দেখলে তা বোঝা যায়। দুজনের মিলিত বয়স আমার চেয়ে অনেক কম, তারা হয়তো এখানে আসার আগে জানতোও না কেওক্রাদং এর কথা কিংবা কখনো পড়েনি পাঠ্যবইয়ে কেওক্রাদং বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষচূড়া, তার আগে এই এতটুকু বয়সেই গতকাল ওরা জয় করে ফেলেছে পাহাড়।

দুইভাইয়ের পাহাড়জয়

মগ্ন আর মনন পাহাড় জয় করেছে অনায়াসেই। আমাদের সাথেই তারা ট্রেকিং করেছে প্রায় পাঁচ ঘন্টার পথ। চাইলে আরো কম সময়ে আসা যেত। কিন্তু অত তাড়া ছিল না আমাদের, বরং যাবার মুগ্ধকর ট্রেকিংয়ে আমরা বেশি সময় দিয়েছি। আসার পথে উপভোগ করেছি প্রতিটি রাস্তা, রাস্তার পাশে ছিল কাশফুল আর বড় বড় ঘাসফুল, কোথাও আমের মুকুল। ধুলাবালি তো ছিলই, বর্ষাকাল চলছে না বলে কথা। মাঝে মাঝে আমাদের ট্রেকিং পাহাড়ি হাটা পথ ছেড়ে নির্মীয়মান রাস্তায় এসে মিলে আর ঠিক তখনই একেকটা গাড়ি এসে আমাদের ধুলায় ভূত বানিয়ে দিয়ে যায়। তবে চিংড়ি ঝর্ণায় এসে এসব ধুয়েমুছে গেছে।

কেওক্রাদং এর ট্রেকিং পথ
চিংড়ি ঝর্ণায় নাকি সত্যিই চিংড়ি পাওয়া যায়। কোন এক বাঙালি হয়তো এর নাম দিয়ে থাকবে, পাহাড়িদের ভাষায় এই মাছকে কি আর চিংড়ি বলে! অনেক রাস্তা হেটে চিংড়ি ঝর্ণার পাদদেশে, যেখানে ঝিরি বয়ে চলেছে, সেখানে এসে মনে হল আবহাওয়া বদলে গেছে। ঝিরিতে তেমন পানি নেই তবে যা আছে তা প্রাণ জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট। গাছের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে আসা পাথর বিছানো পথ, সেখান থেকে হিম করা বাতাস বইছে। সাস্টের সেই শহীদ মিনারে যেমন অনেকগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে মিনারে উঠতে হয়, তেমনি এখানেও পাথর বেয়ে অন্ধকারময় পথ পেরিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয়, তারপর পাওয়া যায় গন্তব্যস্থান চিংড়ি ঝর্ণা। আর কোন ঝর্নায় এমন পেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না!

চিংড়ি ঝর্ণার নিচ থেকে

এখানে পানির সোর্স বলতে এই ঝিরি ঝর্নাই। লালার বাড়িতে এসে ৫০টাকা প্রতি বালতি গোসল করতে গেলে বোঝা যায় পানির মাহাত্ম্য। আশেপাশে কি লালা বা তার বউ আছে? নাহ, আমাদের চারপাশে এই চূড়ায় কোন পাহাড়ি মানুষজন নেই। সবাই পর্যটক, ছবি তুলছে। নিজের আর প্রকৃতির, বেঞ্চি থেকে বামদিকেই আমাদের কটেজ, সেখানে অনেকেই এখনো ঘুমাচ্ছে। আমাদের কটেজটা একদম নতুন। গোলঘর পার হয়ে তার সামনে লালা এবার নতুন করে তিনটি কটেজ বানিয়েছে, ভাড়াও তাই বেশি। কেওক্রাদং চূড়ার পাশ দিয়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে হয়।


সবুজচালা নীল টিনের কটেজ

সবুজচালা আর নীল রঙা টিনের তৈরি কটেজ, ভেতরে একটাই রুম তবে পার্টিশান দিয়ে দুইটি করা হয়েছে। নতুনরুমে সবকিছু ঝকমক করে, তাই ‘রুমের ভেতর লেখা নিষেধ’ সতর্কবাণীটি বেশি চোখে পড়ে। বগালেকের কটেজে সর্বত্র উল্কির মতন লেখা ছিল পর্যটকদের নাম আর এলাকা বা ভার্সিটি, সেটা যাতে এই নতুন কটেজে না হয় সেজন্যই এটা লেখা হয়ে থাকবে। এত কিছুর পরেও অবশ্য এই হুজুগ থামেনি। দুইটি রুমের জন্য দুইটি দরজা আর দুইটি বারান্দা। সেই বারান্দার টিনের দেয়ালে জনৈক গাইডের নাম ফোন নাম্বারসহ দেয়া! তবে বারান্দা দুইটি খুবই সুন্দর, বসে থাকলে দখিনা বাতাস এসে লাগে, দেখা যায় পুরো পাহাড়। দূরে দেখা যায় দার্জিলিং পাড়া।
দার্জিলিং পাড়া! বেঞ্চি থেকে উঠে পশ্চিমে যাই, চুড়া থেকে তা দেখা যায়।

পাখির চোখে দার্জিলিংপাড়া

দূর থেকে ভারি সুন্দর দেখায় এই পাড়া। আজ হালকা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে পাড়াটা। সূর্য এখনো ওঠে নি। হয়তো উঠলে কেটে যাবে এই মেঘ। আবছাভাবে চোখে পড়ে সাদা লাল সবুজ টিনের বাড়িগুলো। গতকাল ট্রেকিং এর শেষদিকে যে দোকানে বসেছিলাম তা কি দেখা যাচ্ছে? দোকানের সেই মহিলার কথা মনে পড়ে। পাড়ায় ঢুকতে একদম শুরুতেই হাতের বামে সেই দোকান। চিংড়িঝর্ণায় ঘুরে আর মাঝে এক জায়গায় জিরিয়ে আমরা থেমেছিলাম দার্জিলিং পাড়ার সেই দোকানে।

দার্জিলিংপাড়ায় ঝাড়ু আর হলদের স্তুপ
দোকানের মালিক মহিলাটি, তার দাদাই ছিল দার্জিলিংপাড়ার প্রতিষ্ঠাতা। তার নাম মানকিপ। শুরুর দিকে, মহিলাটি বলল ১৯৬৩ সালের দিকে, মানকিপ আর তার কিছু আত্মীয় স্বজন নিয়ে পাহাড় কেটে এই পাড়া তৈরি করেন। তার নামেই ছিল এই পাড়ার নাম। একসময় বাঙালি পর্যটকদের আনাগোনা অনেক বেড়ে যায়, যারা কেওক্রাদং যাবার পথে জিরিয়ে নেয় এখানে। তারাই এ পাড়ার নাম দেয় দার্জিলিং পাড়া। দোকানে বসে চোখে পড়ে স্তুপকরা হলুদ। তার কড়া ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে। এজন্যই হয়তো বগালেকে ডালের রঙ ছিল মাত্রাতিরিক্ত হলুদ! আরো দেখি বমদের প্রার্থনাকেন্দ্র, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। তারা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। মনে আসে বগালেকের আরপি বমের কথা। সে বলেছিল, খ্রিষ্টান হলেও তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলো এখনো প্রচলিত। তবে বমরা যে চেঞ্জ হচ্ছে না, তা নয়। ট্রেকিং করার পথে সালোয়ার কামিজ পরা দুএকজন পাহাড়ি মেয়ে চোখে পড়ে, যারা কিনা সেই ঐতিহ্যের অনুসারী নয়।

দার্জিলিংপাড়ায় দিন হয়

দার্জিলিংপাড়ায় আসার আগে পথে ছিল হারবোন পাড়া আর রুনটোং পাড়া। আমরা অবশ্য সেসব পাড়া হয়ে যাইনি। কারণ গাইড নেয়নি! পথে আমরা একটা যাত্রিছাউনিতে জিরাই যেখান থেকে আজকের এই কেওক্রাদং চোখে পড়েছিল, তবে পাশেই ছিল হ্যাপি হিল নামে আরেকটা পাহাড়। আর কেওক্রাদং থেকে হ্যাপি হিলকেই তখন বেশি উঁচু লাগছিল। গাইড বলে, দেখতে উঁচু হলেও কেওক্রাদং এ গেলেই বুঝবেন, আসলে হ্যাপি হিল তার চেয়ে ছোট। আর পাশাপাশি মনে হলেও কেওক্রাদং থেকে হ্যাপি হিল পাহাড়ে যেতে লাগে দুই ঘন্টা। আমরা অবাক হই। আসলেই আজ মনে হচ্ছে কেওক্রাদং এর সমমাপের কোন পাহাড় নেই।

পশ্চিম দিক ছেড়ে আবার পুবদিকে আসি।

সবুজ গালিচায় মোড়ানো পাহাড়
ট্রেকিং করার সময় পথের কোন বাঁকবদলে চোখে পড়েছিল শান্ত স্নিগ্ধ অনেক পাহাড়। সেখানে জুমচাষের জন্য কোথাও আগুন দেয়া আর পাহাড়ের ফাঁকেফাঁকে মাথা উঁচু অনেক রকম গাছ। মান্দার আর শিমুল গাছ এই ফাগুনে তাদের রঙ মেলে আকাশের কাঁথায়। কোথাও পাহাড় দেখে মনে হয়েছিল যেন সবুজ মিহি গালিচা দিয়ে তাদের মুড়ে দেয়া হয়েছে। আমার সামনেও এখন সবুজ চাদরে মোড়ানো অনেক পাহাড়। সবগুলোই আমার পায়ের নিচে, মনে হয় যেন গুগল আর্থ দিয়ে চারপাশে পাহাড় দেখছি। সূর্য উঠতে আর বেশি দেরি নেই। প্রতি মুহূর্তে পাহাড়ের রঙ বদলাচ্ছে। সামনেই বড় কাশফুলের ঝাড়। তার ফাঁক দিয়ে সূর্য উঠার অপেক্ষা। মানুষের আগমন এখন আরো বেড়েছে। হেলিপ্যাডেও দেখা যায় বেশ কজন পর্যটক। হেলিপ্যাডের পাশ দিয়ে নেমে গেছে এক রাস্তা। এই ভোরবেলায় একটা মালামালভর্তি জিপগাড়ি সেই রাস্তা দিয়ে দূরে যেতে থাকে।

আমাদের যাবার অনুমতি নেই সেদিকে। কারণ সেখান থেকে বছর দুয়েক আগে দুই পর্যটক এক মারমা গাইডসহ অপহৃত হয়। নাম এন্ট্রি করার সময় গতকাল সেই আর্মি বলে, আমরা পাহাড়ের কোন জায়গা বাদ দেইনাই, আশেপাশে যত পাড়া যত পাহাড় আছে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি, পাই নাই। সেই থেকে পাসিংপাড়া হয়ে জাদিপাইপাড়া আর তারপর মাইটি জাদিপাই ঝর্ণা, তারপর আরো দূরে তলাবং বা ডাবল ঝর্ণা, লুংফ্রে সাইতার ঝর্ণা- এরকম অনেকগুলো সুন্দর গন্তব্যে যাবার এই পথটি পর্যকদের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায়। এখান থেকে বারো ঘন্টা হাটার দূরত্বে তিনদেশের সীমান্ত, তাই সন্ত্রাসী গ্রুপের আনাগোনা অনেক বেশি। পর্যটক থাকলে তারা মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে। গাইডের বলেছিল, আমরা ওখানে যেতে পারি কোন সমস্যা হয় না। তার কথা সত্য,এই জিপগাড়িটি তে দেখি বেশ কজন বাঙালি আছে। মনে হয়, এখানকার স্থানীয় হয়ে যেতে পারলে ভাল হত। তবে আশার কথা, সেই আর্মির ভাষায়, আমাদের আর দুবছর সময় দিন, জাদিপাইপাড়ায় ক্যাম্প হয়ে গেছে, এরপর আরো দূরের পাড়ায়ও আস্তে আস্তে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্প হবে, রাস্তা করা হবে, তখন আপনারা সেখানে যেতে পারবেন।
দূরের পাসিংপাড়া কিংবা জাদিপাইপাড়া দেখে তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আবার কখনো আসা হয় কিনা কে জানে। গতকাল কেওক্রাদং চূড়া থেকে দেখা সেই দূরবর্তী পাড়াগুলোতে জ্বলছিল আলো, যেন তারা বলছিল, আমরা আছি, আবার কোন একসময় এসো। ফাগুনের হাওয়া এসে গায়ে লাগছিল তখন। চাঁদের আলো ছিল। গতকাল রাতে ছিলাম কেওক্রাদং এর পশ্চিমে, চাঁদ একটু দেরিতেই যেন অস্ত যাচ্ছিল। সবার উপরে ছিলাম বলে চাঁদ নামে দেরি করে আর ফাগুনের বাতাসও যেন হয়ে ওঠে সর্বকূলপ্লাবী। সবদিকে বাতাসের প্লাবনে কাল রাত থেকেই শীত চাড়া দিয়ে ওঠে, এই ভোরেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই শীতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাতলা শাল গায়ে দিয়ে আমি বসে থাকি।
হেলিপ্যাডে আসি।

সূর্য উঠার পরে কেওক্রাদং এ

সূর্য প্রায় উঠল বলে। এখানেও ছবিপর্ব চলতে থাকে। গতকাল সূর্যাস্তের সময়ও ছিলাম এখনেই, কারণ হেলিপ্যাড থেকে সূর্যাস্ত সবচে ভাল দেখা যায়। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধান, এর মধ্যে পুরো পৃথিবী একবার চক্কর দিয়েছে। আমরা রয়ে গেছি সেই একই জায়গায়।
অবশেষে দিকপ্রান্ত আলোয় ছাপিয়ে সূর্য উঠে, সেই চিরাচরিত রূপক, ডিমের কুসুমের মতন নিপাট গোল সূর্য। আমাদের চোখমুখে কুসুমরঙ এসে জুড়ে। মনে হয়, পৃথিবী আরো কয়েকবার চক্কর দিয়ে আসুক এই ডিমের কুসুমকে ঘিরে, আমি ততদিন রয়ে যাই এখানেই এই কেওক্রাদং চূড়ায়।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×