somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোলামোড়ায় ইদের খোলাহাওয়া

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খোলামোড়ায় গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকা বুড়িগঙ্গা

খোলামোড়া নামটায় 'ও' এবং 'আ' উচ্চারণের চমৎকার অনুপ্রাস। বুড়িগঙ্গার পাড়ে কেরানিগঞ্জে এই জায়গাটা। গত ইদে একটা নৌভ্রমণ দিয়ে আসি এই খোলামোড়ায়।

ঢাকার আশেপাশে ঘুরাঘুরির জন্য চমৎকার ছয়টা জলরুট আছে।
১. ত্রিমোহনি-কায়েতপাড়া @ বালুনদ
২. সদরঘাট-কেরানিগঞ্জ @বুড়িগঙ্গা নদির ওপার
৩. সোয়ারিঘাট-খোলামোড়া @বুড়িগঙ্গা
৪. সদরঘাট- কামরাঙ্গিচর @বুড়িগঙ্গা নদির এপার
৫. এফডিসি-রামপুরা @হাতিরঝিল
৬. বেরাইদ-ইছাপুরা বাজার @বালুনদ
৭. মিরপুর ১ বেড়িবাধ- সাদুল্যাপুর @ তুরাগনদ

এই সবগুলো জায়গাতেই আমার ঘোরা হয়েছে। আরো হয়তো জায়গা থাকতে পারে। ঢাকার চারদিকেই চারটা বড় বড় নদি। কাজেই আরো অনেক নৌপথ থাকা স্বাভাবিক।
এখন একেবারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আর বৈঠকি ভাষায় স্মৃতিচারণা করা যাক সেই দিনটির কথা।



অগাস্ট, ২০১৮
আজ দ্বিতীয়বার যাওয়া হইল খোলামোড়া রুটে। ২০১৪তে প্রথম এই রুটে গেসিলাম, ভার্সিতি ফ্রেন্ডদের সাথে। তাই এই লেখায় দুই ট্রিপের তুলনা প্রায়ই আসতে পারে। মাত্র ১০টাকায় ২৫মিনিটের রিফ্রেশিং একটা ভ্রমণ ছিল যাওয়াটা, আসার পথটাও ফিরসিলাম ঐভাবেই। সেবার আমাদের নিয়ে গেসিল ভার্সিতি ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড, যে কিনা জগন্নাথে পড়ে। পুরান ঢাকার জন্য আশেপাশের ঘুরার জায়গা তো এরাই চিনবে! এবার আমি নিয়া গেলাম দিপ্ত ও লিওনকে।

সেবার গিয়ে ফেরার পর কিছু ছবি তুলসিলাম আরেকজনের মোবাইলে। সেগুলা তো হার্ডডিস্ক নষ্টের জন্য গেসেই, প্লাস এই জায়গার নামটাও ভুইলা গেসিলাম। নামটা খুবই খটমটে, এমনকি 'খ' দিয়েই শুরু নামটা, খোলামোড়া। যদিও মানতেই হবে, নামটায় চমৎকার ছন্দ আছে। তাছাড়া তখন নিজের স্মার্টফোন ছিল না। তাই জায়গায় গিয়া সেখানকার পরিচিতিসূচক কোথাও যে ছবি তুলতে হয়, সেই ট্রেন্ড চালু হয় নাই আমার মধ্যে!
ভুইলা যাবার কারণেই গতবছর প্রি-টাঙ্গুয়ার ত্যুরে (সদরঘাট-কামরাঙ্গিচর) যাবার সময় এই রুটটায় টাঙ্গুয়ারগামী বন্ধুদের নেয়া হয়নি। তার বদলে পনের মিনিটের ট্রলার ত্যুর দিয়ে গেসিলাম নদির এপারেই, কামরাঙ্গিচরে।

দূরে দেখা যায় কামরাঙ্গিচর

আজ আর ভুল করলাম না। রীতিমত ম্যাপ দেখে চার বছর আগের ট্রিপ দেয়া জায়গাটার নাম বের করলাম। আশ্চর্য হইল, খোলামোড়া নাম ম্যাপে দেইখাও মনে হয়নাই এই জায়গায় আমি গেসিলাম!

আজকে সাথে ছিল দিপ্ত। বুড়িগঙ্গার পারে যাওয়ার কথা শুইনা তার মধ্যে রনযদ টাইপ বিক্রিয়া দেখা দিল। রনযদ বিক্রিয়া মানে রন আর যদ এই দুবন্ধুর সদরঘাটের নাম শুনলেই নাকে বুড়িগঙ্গার দুর্গন্ধ পাওয়া। তবে তাদের সাথে দিপ্তর পার্থক্য হইল, পিরোজপুরবাসি বোনকে বিদায় দিতে অনেকবার সদরঘাট যাওয়াতে তার এই বিশেষ অনিহা তৈরি হয়েসে। সে যাকগে।

বুড়িগঙ্গায় সারবাধা নৌকা
বাবুবাজার বৃজে এসে লোকজন জিগ্যেস করতে করতে পনের মিনিট হাঁইটা আমরা সোয়ারিঘাট পৌছলাম। তারপর চড়লাম বিডব্লিউটিএ এর ওয়াটারবাসে। তখন অবশ্য নোঙ্গর খুলে ফেলসে, প্রায় সাথে সাথেই জলযানটা ছাড়ল, সাড়ে পাঁচটায়। সেবার অবশ্য এইরকম বদ্ধ জলযানে যাইনাই, ছাদ ওয়ালা লঞ্চের ছাদে বইসা দুপুররোদে গেসিলাম।

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ

পঁচিশ মিনিটে বুড়িগঙ্গার হাওয়া মাখাইয়া নদির ওপারে খোলামোড়া নামলাম। বাজার পার হয়ে চার বছর আগের স্মৃতি হাতড়ে নদির পাড়ঘেঁষে যাওয়া একটা নির্জন রাস্তায় আসলাম। এই পথ ধরেই এর আগে গেসিলাম, এবারো তা পেয়ে গেলাম।

বুড়িগঙ্গায় পিঁপড়ার মতন চলা নৌকা

খোলামোড়া নৌবন্দর

সেবার পানি কম ছিল, এবার বর্ষায় রীতিমত ফুলতেছে বুড়িগঙ্গা, পানির রঙেও তার প্রতিচ্ছবি। সেবার নদীর কূল রাস্তা থেকে অনেক দূরে ছিল। আমরা বন্ধুরা নেমে সবজি ক্ষেতটেতের দিকেও নামসিলাম। এবার অবশ্য নদির কূল রাস্তা ছুইসে, তাই কোন সবজিক্ষেত নাই।

এবার কিছু উৎপাতের পরিমাণ একটু বেশি লাগল। যেমন রাস্তাটায় ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলা বেশ উৎপাত করল। নাকে বুড়িগঙ্গার গন্ধের বদলে উৎপাত করল প্রতিবছর কোরবানির পরপর তৈরি হওয়া বিশেষ সুগন্ধ! এছাড়া নদিপাড়ে জিরানোর সময় মশা খানিক উৎপাত করল।
এতকিছু সত্ত্বেও নদির পাড়জুড়ে হাঁটা, হালকা বাতাসের ঝিরিঝিরি, রঙচায়ের স্বাদ আর চার বছর আগের নস্টালজিয়াটা নিরিবিলি কিছু সময়কে স্পর্শ করে গেল।

ওয়াটারবাসে

লঞ্চের অন্দরমহল


একটা দোকানে বসলাম, রাস্তার সাথেই। তখন যোগ হইল দিপ্তর মুডফেরানো আলাপচারিতা। টানা দুদুটা জব লিংকে পাইলে, মাসে মাসে ২৫হাজার টাকা পাইলে আর বসুন্ধরা থেকে জব অফার আসলে আমিও আজ কিছু মুডফেরানো আলাপ করতাম। কিন্তু দিপ্তর বদলে আজকে আমার মুখে কিছু দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাইতে লাগল। লিওনও দিপ্তর মুখে তার ট্রেডমার্ক হতাশাটা শুনতে না পাইয়া অবাক হইল। দিপ্তর ট্রেডমার্ক এখন বদল হইসে। 'ব্যাপার না, প্যারা নাই' নামক আশাবাদি শব্দযুগলগুলো দীর্ঘশ্বাসকে রিপ্লেস করেসে। সময়ের জাদু।

প্রায় ঘণ্টাখানেক উপরোক্ত আড্ডা একটা দোকানের বেঞ্চে দিয়ে তারপর ফেরার পথ ধরলাম। এবার ওয়াটারবাস না, আগের সেই ছাদওয়ালা ছোট লঞ্চ। দক্ষিণমুখি এই যাত্রায় বেশ বাতাস পাওয়া গেল। মনে হইল, সত্যিই এতক্ষণে বুড়িগঙ্গার হাওয়া মাখাইতেসি। সূর্য বেশ আগেই ডুবছে, চাঁদ এতক্ষণ চুপটি কইরা ছিল, এখন সূর্য পালায়ে যাইতেই সে তার রূপালি আঁচল বুড়িগঙ্গায় বিছায়ে দিল। তার ঝিলিক আইসা দিপ্তর চোখে লাগতেই, পরবর্তিতে লিওনের ভাষায়, দিপ্ততে যেন পিনিক ভর করল। এতদিন একসাথে পড়ালেখা করে আড্ডা দিয়ে যা জানতে পারি নাই, পচিশ মিনিটের জার্নির ঐ পিনিক তা জানায়ে দিয়ে গেল। বলতে লাগল, তার জন্ম নাকি বরিশালে, দশ বছর পর্যন্ত বরিশালে বেড়ে উঠসে সে। সেখানকার কাহিনি বলতে থাকল। আর সুযোগ পেলে এখনো নাকি প্রায়ই সেখানে যায়। এসব শুইনা মনে হল, লিওনের এতদিনের 'বঙ্গীয়বরিশালগৌরব' ছিনাইয়া নিয়া গেল দিপ্ত। স্বয়ং লিওনের মুকুটেও এত বরিশালীয় পালক নেই।

খোলামোড়ার রাস্তা

খোলামোড়া্র রংচা

সবজিক্ষেতের বদলে বুড়িগঙ্গার পানি


বলতে বলতে দিপ্ত হঠাত বরিশাল যাওয়ার ভ্যারা তুলল। কালকেই যাবে, দরকার হলে সে স্পন্সর করবে। আমরা যেন যাই। এই আবদার শুনে দিপ্তর বরিশালের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাইটি কনফিউশনে পইড়া গেল। শেষমেশ বুড়িগঙ্গার খোলা হাওয়া মিলায়ে যাইতেই দিপ্তর পিনিকটা স্তিমিত হইয়া আসলো।
সাথে সাথে আমাদের একবেলা খোলামোড়া ইদট্রিপটিও!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:১২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×