তিমির রাত্রি যাত্রীরা হুশিয়ার
আমি এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের একজন। একটি কৃষিজীবি পরিবার থেকে উঠে এসে যেখানে
সৎভাবে সংসারটা চালানো কঠিন সেখানে রাষ্ট্রের খবরদারী ক্ষিদে মেরে নৃত্য করার সামিল। বৈষম্য
যে দেশের মুল সামাজিক ব্যাধি, সেখানে উদার গণতন্ত্র কেবল কিতাবেই মানায় বাস্তবে নয়।সম্প্রতি
ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষনা সংস্থা সোশ্যাল ইম্প্রেটিভের গবেষনায় সামাজিক অগ্রগতির সুচকে
বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের ৯৯তম স্থান লাভ দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে
স্বস্তিকর বলা যায়। এই জরীপে ১৩২টি দেশের মধ্যে ৮৮.২৪ পেয়ে নিউজিল্যান্ড এক নম্বরে শাদ
সর্ব নিম্নে রয়েছে । দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান সর্ব নিম্নে ১২৪তম । নেপাল-১০১ এবং ভারত-১০২তম
স্থানে থেকে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়েছে । কিন্তু ছোট্ট দেশ শ্রীলঙ্কা ৮৫তম স্থান নিয়ে এশিয়ার
মধ্যে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছে । শিক্ষা ,স্বাস্থ্য, আশ্রয় ,ব্যক্তিগত নিরাপত্তা,পয়নিস্কাশন ,তথ্য পাওয়ার
অধিকার,সামাজিকসহিষ্ণুতাওসম্পৃক্ততা
এইবিষয়গুলো থেকে সামাজিক অগ্রগতির সুচক বিবেচনা করা হয় । সামাজিক অগ্রগতির সুচকে বাংলাদেশ
শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস , গড় আয়ু বৃদ্ধি , বাল্য বিবাহ ও মানব পাচার রোধ ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিবেশী ভরত
ও নেপাল থেকে এগিয়ে আছে । এজন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবে প্রশংসা পেলেও নেতিবাচক
দিক হলো সংখ্যা লঘুর প্রতি বৈষম্য , ধর্মীয় কারনে হয়রানীর শিকার, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, ধর্ম ভিত্তিক
রাজনীতি ইত্যাদি ।এসব বাধা কটিয়ে উঠে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি শাসন ব্যবস্থায়
অধিকতর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ায় রোল মডেল
হতে পারে । গত চার দশকে বাংলাদেশ আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে যতটা এগিয়েছে রাজনৈতিক
অঙ্গনে ততটা অগ্রগতি সম্ভব হয়নি । নেতৃত্বের দুর্বলতার কারনে সেটা সম্ভব হয়নি । ভয়টা
সেখানেই । শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন আসলে সংখ্যালঘু নির্যাতন সীমা ছাড়িয়ে যাবে । এটা কোন গনতান্ত্রিক
দেশের জন্য কাম্য হতে পারেনা । শিক্ষাঙ্গনে খুনোখুনি , পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস , প্রশাসনে কোটাপদ্ধতি
ও রাজনৈতিক মদদে নিয়োগের ফলে সঠিক মেধার অবমুল্যায়ন , কৃষক ও সংখ্যা লঘূদের কোন কোটা
পদ্ধতি না থাকায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কৃষক ও সঙ্খ্যা লঘূ সমাজের পক্ষে প্রশাসন সহ সরকারী উচ্চপদে
প্রতিনিধিত্ব করার কেউ থাকবে না । বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকারকে এসব বিষয়ে সংসদে বিল এনে
জাতীয় সমস্যা বিবেচনায় যুগোপযোগী সমাধান করতে হবে । জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে
সকলের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে অবহেলিত ,বঞ্চিত দরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠীর
তিমির রাত্রির অবসান হবেনা ।