একটা নিকৃষ্ট বাস্তব কৌতুক দিয়ে শুরু করি, “১৯৯২ সালে গণআদালত প্রতিষ্ঠা করার পর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছিল।”
শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর... গোলাম আজমকে জামায়াতে ইসলামের আমীর ঘোষনা করা হলে সমগ্র বাংলাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। নিজে থেকে এগিয়ে এসে এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন জাহানারা ইমাম। প্রতিষ্ঠা করেন “একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি।” সোহরাওয়ার্দীতে তৈরি করেন গণআদালত। লাখ মানুষের উপস্থিতিতে গোলাম আজমের ফাসির পক্ষে রায় দেন। এরপর রায় নিয়ে যান সরকারের কাছে, অনুরোধ করেন রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যে।
হ্যা, সরকার মামলা করে... তবে রাজাকারের বিরুদ্ধে না, বরং জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে। গণআদালতের সাথে সম্পৃক্ত ২৪ জন সহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে অ-জামিনযোগ্য রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে বসে সেসময়ের বিএনপি সরকার। আক্রোশে ফেটে পড়ে জনতা, আন্দোলনের চাপে প্রত্যেককে জামিন দিতে বাধ্য হয় সরকার, কিন্তু মামলা তুলে নেয় নি। অপরদিকে রাজাকারের দল গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরতে থাকে, কিন্তু দমে যান নি জাহানারা ইমাম।
সাধারন মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন, লক্ষ জনতার সাথে রাজাকারের বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি নিয়ে গেলেন জাতীয় সংসদে। সাড়ে তিনশর উপর সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১০০ জন রাজাকারের বিচারের পক্ষে মত দেন, বাকি সব বিপক্ষে! আন্দোলনে যোগ দেন শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আওয়ামিলীগ নেতারা। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেন, প্রতিবাদ করেন। সরকার পুলিশি আক্রমন চালালে রক্তাক্ত হয়েছেন, কিন্তু থেমে যান নি। ক্যান ইউ ইমাজিন? যে দেশের জম্মের জন্যে নিজের ছেলেকে কুরবান করেছিলেন, সেই দেশের পুলিশের হাতে তাকে রক্তাক্ত হতে হয়েছে! এই আন্দোলন চালানো যে কতটা কষ্টের ছিল, তা হয়তো আমরা বুঝতে পারছি না, কখনো বুঝতেও পারব না। হুমায়ুন আহমেদের কিছু লেখায় সেসময়ের কিছু বিষয় ফুটে উঠেছে, যা থেকে কিছুটা ধারনা করা যায়।
ইনিই জাহানারা ইমাম, মা, জননী... একাত্তরে নিজের স্বামী হারিয়েছেন, নিশ্চিত মৃত্যু জেনে ছেলেকেও যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, হারিয়েছেন... স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধাদের কাছ থেকে জননী উপাধী পান... শহীদ জননী! অথচ এত কিছুর পরেও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা মাথায় নিয়ে তাকে মৃত্যুবরন করতে হলে...
শুরুর কৌতুকটা দিয়ে আবার শেষ করি... “১৯৯২ সালে গণআদালত প্রতিষ্ঠা করার পর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছিল।”