somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~জোৎস্নাজল~~

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সারাদিন ঝুম বৃষ্টি ছিলো। আমি অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছি। অনেক বলে কয়ে কেউ ঘরে আনতে পারেনি। ভিজে জ্বর বাঁধাতে চাইছিলাম, হয়েছেও তাই। ভেবেছিলাম জ্বর আসলে হয়ত আমার দিকে তোমার একটু মনযোগ বাড়বে। একদমই না...আমাকে এভাবে ভিজতে দেখেও নিজের কাজ নিয়ে পড়ে রইলে। আমার সাথে কি হাত ধরে একটু বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে হলো না তোমার? আমার বৃষ্টিভেজা চুলের ঝাপটা কি আগের মতো ভালো লাগে না তোমার? আমার কাঁপতে থাকা ভেজা শরীর বাহুডোড়ে আবদ্ধ করে নিজের শরীরের উত্তাপে উন্ষ করে দেয়ার আকর্ষণ নেই আর?

এখন বৃষ্টি নেই । রাতের আকাশ আলো করে রেখেছে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ । হালকা মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি। জ্বর নিয়ে এই ঠান্ডা, কুয়াশা, শিশীরে ভিজে বসে আছি অথচ আমার দিকে তোমার কোন খেয়াল কেনো নেই? আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে...বুক ফেটে কাঁন্না আসছে...কেন এমন করছো তুমি? ও আমি পুরোনো হয়ে গিয়েছি না? এখন আমাকে ভালো লাগে না ?

চারদিকে জোৎস্নার ছড়াছড়ি। পুকুর পারের কামিনী গাছগুলো ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে। যেন মাথায় জোৎস্নার ঘোমটা টেনেছে। জলজ্যোৎস্নায় পুকুরটাও আগের মত থৈ থৈ করছে। সবকিছুই আগের মতো...শুধু জোৎস্নার আলো গায়ে মেখে আমরা দু'জন একসাথে বসে নেই। বৃষ্টিভেজা জোৎস্নারাতের মাটি আর কামিনীর মাতোয়ারা সুবাশ,সাথে সিগারেটের কড়া গন্ধটা নেই....আমার খুব ইচ্ছা করছে ওর কাঁধে মাথা রেখে পুকুরের কালো পানিতে জোৎস্নাভরা চাঁদের ছাঁয়া দেখতে। কিন্তু আমার জন্য তো ওর একটু সময় নেই। গ্রামে বেড়াতে এসেছি অথচ আমাকে একটুও সময় দিচ্ছে না। Laptop এ মুখ গুঁজে পড়ে থাকাটাই মনে হয় সব সুখ...Laptop টা আমি যদি পুকুরর পানিতে না ফেলেছি...

হঠাৎ সিগারেট এর গন্ধ পেলাম। আমি মনে মনেই চমকে উঠি। পিছনে ফিরে দেখি ও হাতে সিগারেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও সিগারেট খায় না। বৃষ্টির দিনে আমার কাছে সিগারেটের মতো জঘন্য জিনিসের গন্ধও ভাল লাগে। এই কারনেই কি ওর সিগারেট ধরানো! মুহূর্তেই আমার রাগ পড়ে গেল, তারপরও রাগ দেখিয়ে না দেখার ভান করে বসে রইলাম।

-এই
~কি?
-ঘুমাবে না?
~না
-না ঘুমালে তোমার শরীর খারাপ করে। ঘুমাতে যাও।
~না আমি ঘুমাবো না। সারারাত এখানে জেগে বসে থাকবো। করুক শরীর খারাপ।
-:| জ্বর দেখি অনেক বেড়েছে। প্রলাপ বকছো...
~X((

একটা শাল দিয়ে আমাকে ঢেকে দিয়ে বললো,এত রাগ কেন তোমার? রাগটা কি একটু কমানো যায় না? তুমি যদি এখন রাগ কমিয়ে ঘুমাতে যাও তাহলে তোমার জন্য একটা surprise আছে...
~কি surprise?
-তুমি আগে ঘুমাও। ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান, ঘুমাও আমার কোলে...

এত সুন্দর একটা কথা, ও গেয়ে শোনালো । আমার চোখে পানি চলে এসেছে। চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিনা, আমি আর রাগ দেখাতেও পারছি না।

~এটা কি তুমি বললা? এত সুন্দর একটা কথা...তুমি লিখেছ?
-না একটা গান। ভালো লেগেছে?
~হু

ও আমার কাছে এসে চোখ মুছে দিতে দিতে বললো,কাঁদছো কেনো পাগলী? চোখের জলে তোমার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে...চলো তোমার surprise টা দেই।

আমার হাত ধরে ও নদীর দিকে নিয়ে যেতে থাকলো।
~একি কই যাচ্ছো তুমি?
-surprise

নদীর পাড়ে এসে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এ কি অপরূপ জলজোৎস্না!
-কি ভালো লাগছে?
~হ্যাঁ। অসম্ভব...আমি কল্পনাই করিনি এত দারূণ একটা surprise...
-উহু এটা তো surprise না।
~তাহলে?

ও নদীর একটু কাছে গিয়ে একটা রশি ধরে টানতেই দেখলাম একটা নৌকা ভেসে এলো। এতক্ষণ গাছের আড়ালে ছিলো। আমি প্রায় চিৎকার করে উঠলাম,Oh my gosh, oh my gosh!!! Is this my surprise?
-হ্যাঁ। আজ আমরা দু'জন পুরোটা রাত, পুরোটা ভোর জলজোৎস্নায় ভেসে বেড়াবো।
~সত্যি???
-তিন সত্যি।
~এদিকে আসো তো।
-এবার তাহলে আমাকে কিছু দিবা?
~আসোই না...
-আউউ...এটা কি হল??? ব্যাথা পেলাম তো...
~হিহিহি...চিমটি দিয়ে দেখলাম স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি...
-তো নিজেকে না দিয়ে আমাকে দিলে কেন?
~তোমার শাস্তি। আমাকে সারাটাদিন এভাবে কষ্ট দেবার জন্য। তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি?
-সারাদিন কষ্টটা না দিলে এখন সময়টা এতটা দারূণ হতো? এখন কি আর কষ্টটা আছে?
~...
-আমি জানি এখন আর কষ্টটা নেই। তোমার মন এখন খুব ভালো। তোমার মুখে লেগে থাকা মিষ্টি হাসিটাই বলে দিচ্ছে।

ও আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি ওর হাত ধরে নৌকায় উঠে এলাম। ও নৌকার রশিটা কেটে দিয়ে আমার কাছে এসে বসলো।
~এই শোনো
-হু
~আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও তুমি। আমি তোমাকে আমার ছাঁয়া দিয়ে ঢেঁকে রাখবো...তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দিব...আর তোমাকে গানটা শোনাবো।

ওর চোখ ভিজে গেল। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ওর চোখের জলে জোৎস্না পড়েছে। আমি আমার আচঁল দিয়ে মুছে দিলাম ওর চোখের জোৎস্নাজল...

সেদিন মধ্যরাত্রিতে জলজোৎস্নায় আমাদের নৌকাটা ভেসে যেতে থাকলো...খুব ভালো না হলেও আমি ওকে গানটা শোনাচ্ছিলাম---

ঘুমাও তুমি, ঘুমাও গো জান
ঘুমাও আমার কোলে
ভালোবাসার নাও ভাসাবো
ভালবাসি বলে।

তোমার চুলে হাত বুলাবো
পুর্ণ চাঁদের তলে
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার জোৎস্না পড়ুক গলে...

********************************************************************
উৎসর্গ:আমাকে আর আমার বরকে এবং আমাকে এই গানটা যে প্রথম শুনিয়েছিলো তাকে আর তার বউকে। :P
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:১০
১৮টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×