somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ প্লাস গোল্ডেন এ প্লাস ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটের রেজাল্ট প্রকাশিত হল। একেবারে চমকে দেয়ার মত তথ্য। মোট পরীক্ষা দিয়েছিল ৪০,৫৬৫ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৩,৮৭৪ জন। পাশের হার মাত্র ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৯১ শতাংশই ফেল!!!!!!!!! অথচ মাত্র কয়েকমাস আগে ঘটা করে এইচএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হল। সেখানে এ প্লাস, গোল্ডেন এ প্লাসের ছড়াছড়ি। এবার মানবিক বিভাগে এ প্লাস পেয়েছিল ৫,৭২৪ জন। এদের মোটামুটি সবাই পরীক্ষা দিয়েছে, সাথে আছে গত বছরের এ প্লাসধারীরা। তো সব মিলিয়ে ৭ হাজারের বেশি এ প্লাস পাওয়া স্টুডেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। এরা আমাদের কর্তাব্যক্তিদের ভাষায় সোনার ছেলে-মেয়ে। তো এই সোনার ছেলে-মেয়েদের আমরা খুব সহজে গাছের আগায় তুলে দিয়েছিলাম। ওদেরকে একটা স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে রেখেছিলাম। যেদিন পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট হয় সেদিন মিষ্টির দোকানে লম্বা লাইন পড়ে যায়, মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিপুল অংকের আয় বেড়ে যায়, টিভি চ্যানেলগুলোতে ভি চিহ্ন দেখানোর প্রতিযোগিতা লেগে যায়। আর অভিভাবকদের মুখে দেখা যায় চওড়া হাসি। তারা তৃপ্তিৃর, পরিতৃপ্তির হাসিমাখা মুখ নিয়ে রাতে ঘুমোতে যান, আর স্বপ্ন দেখেন তার আদরের পুত্র কিংবা কন্যা যেভাবে তার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তাতে তিনি বোধহয় দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি। এরপর তার স্বপ্নের গন্ডি আরও বড় হতে থাকে, তার গোল্ডেন পুত্র কিংবা কন্যার প্রতি প্রত্যাশার পারদ বাড়তে থাকে।
অন্যদিকে রেজাল্টের পর সাময়িকভাবে এ প্লাস পাওয়ার আনন্দে অবগাহন করার পর সেই গোল্ডেন ছেলে কিংবা মেয়ের আনন্দের ফানুস একটু একটু করে ফুটো হতে থাকে। পেছনের স্মৃতি ওকে তাড়া করতে শুরু করে। ওর ভাবনার দিগন্ত রেখায় এসে উঁকি দিতে থাকে সেই পরীক্ষার আগের রাতের স্মৃতি। যখন বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ঘরে ফেসবুক ওপেন করে প্রশ্ন ডাউনলোড করে সেগুলো তাড়াহুড়ো করে রিভাইস দিতে থাকে। এরপর পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্ন পাওয়ার পর মুখপল্লবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বজয়ী হাসি। পরীক্ষার পর আত্মবিশ্বাস উঁচুতে উঠতে থাকে। বন্ধুকে বলতে থাকে দোস্ত আর কোনো চিন্তা নেই গোল্ডেন এ প্লাস নিশ্চিত। প্রশ্ন প্রতিদিনই পাওয়া যাবে। অন্য দিকে যাদের একটু ঘাটতি থাকে তাদের জন্য আছে স্যারদের উদার হস্ত। আগে যেসব বাংলা কিংবা ইংরেজি স্যাররা ৬০ এর উপরে নম্বর দিতে গেলে দুইবারের জায়গায় তিনবার ভাবতেন, তাদের হাত দিয়ে এখন ৯০ এর উপর নম্বর পাওয়া যায়। ওপর মহলের নির্দেশ তো আর অমান্য করা যায় না! যাহোক এভাবে দিন এগোতে থাকে। ভর্তি পরীক্ষায় বসার আগে থেকেই সেই সোনার ছেলে-মেয়েদের হাড়ে কাঁপুনি আসতে থাকে। কারণ এ প্লাস তো এমনিতেই পাওয়া গেছে, ওটা এমন কঠিন নয়, কিন্তু গোড়ায় গলদ থেকে গেছে। বেসিক গুলো ভালো করে জানা হয়নি। এখন কি হবে! কি আর হবে প্রত্যাশার ফানুস এক নিমেষেই উধাও। ওরা তখন চলে আসে কঠিন বাস্তবতার জগতে। এ প্লাস ওদের কাছে হয়ে ওঠে এক অব্যক্ত যন্ত্রনার নাম। কয়েকমাস আগে যারা মাথায় করে তুলেছিল, তারাই এখন তুলে আছাড় দিতে উদ্যত। ওদের অবস্থা তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের মতো হয়ে যায়-
এ মণিহার আমায় নাহি সাজে
এ যে পরতে গেলে লাগে, ছিড়তে গেলে বাঁধে।

আমরা গড়পড়তা সবাইকে স্বপ্ন দেখাচ্ছি, একটু পড়লেই সে এ প্লাস পেয়ে যাচ্ছে। ফলে কে প্রকৃত মেধাবী, আর কে প্রকৃত মেধাবী নয় সেটি নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এখন একটা ছেলে কিংবা মেয়ে খুব কষ্ট করে এ প্লাস পাচ্ছে, আবার তারই আরেক বন্ধু দেখা যাচ্ছে তার থেকে অর্ধেক কষ্ট করেও এ প্লাস পাচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত মেধাবীরাও বেশি পড়াশুনা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কেউ যদি সহজে কিছু পায় তাহলে সে আর কষ্ট করতে চাইবে কেন? বলা হয়ে থাকে মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা সবচেয়ে ভয়ংকর। এই যে, কচি, উন্মুখ, স্পর্শকাতর মনগুলোকে আমরা অলীক স্বপ্ন দেখানো শুরু করে মাত্র দু্ই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে তাদের কল্পনার, স্বপ্নের জগৎটাকে এক নিমিষে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছি। এর ফলে ওদের মনোজগতে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছি, ওদেরকে সমাজের অপাংক্তেয় করে ফেলছি, এর যে সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়া হবে তা নিয়ে আমরা কেউ ভাবছি না । যে সমাজে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেড়ে উঠছে সে সমাজের সামনে যে ভয়ংকর বিপদ ঘনিয়ে আসছে আমরা সেটা নিয়ে কেউ ভাবছি না । আমরা ভাবছি সাময়িক লাভের কথা। শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে গিয়ে আমরা যে সুন্দর, সৃষ্টিশীল, স্বপ্নাতুর মনগুলোকে হত্যা করছি, এ হত্যাকান্ডের দায় কে নিবে!!!!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×