somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরাজয়ের গল্প

১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






দীপার হাত হতে চামুচ পড়ে যায়।দীপা তথমত খেয়ে যায়।মাটি হতে চামুচ তুলে ধুয়ে নেয়।পায়েস ঘাঁটতে থাকে।নিজের উপর খুব রাগ হয় দীপার।হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার রোগটা দিন দিন বেড়েই চলেছে।আগেও এই অভ্যাস ছিল।আর তরকারি কাটার সময় হাতটা প্রায়ই কেটে ফেলতো।অপল জানতে পারলেই খুব রাগ করতো।বকতো।বুঝাতো।আর এখন অপল কিছুই বলেনা।দীপার চশমা ঝাপসা হয়ে আসে।চশমা খুলে শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে আবার পড়ে নেয়।পায়েসটা প্রায় হয়ে এসেছে।
-মা,হয়েছে।বাবাকে রেডি করেছি।
-এইতো হলো বলে।আর দশ মিনিট।
বড় মেয়ে নিশার কথায় রান্নাঘর হতে চেঁচিয়ে দীপা বলে।
-তাড়াতাড়ি করো মা,জানোইতো বাবা কেমন।
-তোর বোনকে বল মোমবাতি আর কেক সাজাতে।
-লীপা সব সাজিয়ে ফেলেছে।

অপলের মেজাজটা আজ বড্ড খিঁচ ধরে আছে।শেরাটনের সিগনালে প্রায় মারামারি করে দোতালা বাসে চড়েছে।ভীড় আর গরমে দমবন্ধ করা এক অবস্থা সামলিয়ে কল্যাণপুর এসে নামে।দরদর করে ঘামতে ঘামতে ওভার ব্রীজ পার হয়।তালা খুলতেই একটা কটু ঘ্রাণ নাকে ধাক্কা মারে।ফ্যান ছেড়ে দিয়ে জামা-কাপড় না ছেড়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে।মনে মনে ঠিক করে এরপর কি কি করবে।যাই করুক আজ নির্মলাকে গল্পের প্লট খুলে বলতে হবে।গতকাল না বলাতে খুব রাগ করেছিল।রাগ করে শেষে চলেই গিয়েছে, গল্প না করে।ময়লার বালতি ঘরের বাহিরে রেখে আসে।গতকাল বাহিরে রাখতে মনে ছিলনা।কটু গন্ধে ঘর ভরে গিয়েছিল।আর এই জন্যেই নির্মলা এখনও ঘরে আসেনি মনে হয়।দরজায় টোকা পড়ে।অপল দরজা খুলে দেয়।
-এই মাসের বাড়ি ভাড়া।
দরজায় বাড়িওয়ালী।
-একটু অপেক্ষা করুন, আনছি আমি।
টাকা গুনে শেষ করে ভাড়ার রশিদ অপলের হাতে ধরিয়ে দেয়।
-ভাবীদের আনবেন না?
-আপা, ঢাকায় যে খরচ।কুলিয়ে উঠতে পারবোনা।
-তা ঠিক।
বাড়িওয়ালী আপা চলে যান।অপল স্নান ছেড়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।আজ কোন বিষয়ের উপর কবিতা লেখবে তা নিয়ে ভাবতে থাকে।রাজনীতি না প্রেমের কবিতা?ভাবটা ঠিক আসছে না।ছটফট করতে থাকে।এদিকে নির্মলাও দেরী করছে।শেষে পাবলো নেরুদার কবিতা পড়া শুরু করে।পড়তে পড়তে মনে হয় এখন লেখা যায়।অপল ল্যাপটপে লেখা শুরু করে।
“ ফুরিয়ে যায় কাঙ্খিত প্রহর

আমরা এক সাথেই ছিলাম পথের মাঝে
কোন সূত্র না রেখেই সে হারিয়ে গেলো

মুহূর্তগুলো হারিয়ে যায় অনন্ত গহ্বরে
আর মস্তিষ্ক জমা করে রাখে স্মৃতিগুলো

আয়নায় প্রতিবিম্বটি দাঁড়িয়ে নিজের বেড়ে উঠা দেখে
তারপর আয়নাও একা।প্রতীক্ষায় বসে থাকে নতুন কারোও জন্যে।

কিভাবে কেটে যায় সময়;যেন আকাশে উড়ছে ঘুড়ি
একদিন সুতো ছিঁড়ে যাবে জানি”।

-কি লিখছো আজ।
অপল সদ্য লেখা কবিতা পড়ে শোনায় নির্মলাকে।
-এটা কি প্রেমের কবিতা?
-না।
-কবিতার মধ্যে কেমন একটা দুঃখের ঘর বানিয়েছো।
নির্মলার কথা শুনে অপল হো হো করে হেসে উঠে।জড়িয়ে ধরে দীপাকে।আলতো করে চুমু খায় নির্মলার পাতলা ঠোঁটে।নির্মলার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠে। আর ঠিক এই সময় অপলের ফোন বেজে উঠে।

-কি করছো? অপর প্রান্ত হতে দীপা ফোনে বলে।
-বসে আছি।
-বাসায় ফিরে ফোন দিলেনা যে?
-আজকে বাসে এতো ভীড় আর রাস্তায় এতো জ্যাম,একদম ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।এখনই ফোন দিতাম।
-কি রান্না করবে?
-খিঁচুড়ি।বড়টা কি করছে?
-পড়ছে।তুমি কি লিখতে বসেছো?
-কেন?
-কথা বলে আরাম পাচ্ছিনা।তুমি তোমার লেখা নিয়েই থাকো।
দীপা ফোন কেটে দেয়।অপলের মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।নির্মলা চলে গিয়েছে।বিষণ্ণ মন নিয়ে অপল রান্নাঘরের দিকে যায়।খিঁচুড়ী চাপিয়ে দিয়ে এসে ফেসবুক নিয়ে বসে।ফেসবুকের প্রতিটি স্ট্যাটাসে রাজনৈতিক প্যাচাল আর সেলফি।সেলফি আর সেলফি।কি সুন্দর হাসি-খুশি আর সুখী চেহারা প্রত্যেকের।সত্যিই কি এরা সুখী?না ওই বিশেষ মূহুর্তের সময় সুখী?কে জানে?

মাঝরাতে অপলের ঘুম ভেঙ্গে যায় অপলের।শরীরের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে।ছটফট করতে থাকে।ঘুম আসতে চায়না।কি করবে ভাবতে থাকে।ট্যাব অপেন করে পর্ণ সাইটে ঢুকে পড়ে।মাষ্টারবেশন শেষে ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে ঘুম ভাঙ্গে দীপার ফোনে।
-উঠিছো?
-উঠবো।
-সাতটা বাজে।তাড়াতাড়ি করো।না হলে অফিসের দেরী হয়ে যাবে।
-উঠছি।
অপল রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।


-তুমি কি একটা গল্প লিখবে বলেছিলে।
-হ্যাঁ,গল্পের প্লটটা মাথার মধ্যে ঘুরছে অনেকদিন ধরে।
-কি বিষয়ের উপর?
নির্মলার কথার উত্তর দেয়না অপল।চেয়ে থাকে চুপচাপ।
-কি দেখছো?
-কবিতা।
-তবে বলো শুনি।

“ভুল

একদল উচ্ছল তরুনীর কেলো হাসিতে উজ্জল শোক দিবস।
মাতাল এক ঈশ্বর,হাতে তার প্রাণের সম্ভার।

রক্তাক্ত প্রজার অসহায় আর্তনাদ
মাতাল এক ঈশ্বর ,হাতে তার দায়িত্বের দন্ড।

রক্তে মিশে যায় প্রাণঘাতী বিষ
মাতাল এক ঈশ্বর ,হাতে তার প্রাণের সম্ভার।


অচেনা-অজানা এক রোডম্যাপ
মাতাল এক নেতা,হাতে তার নৌকার বৈঠা”।

-ফেসবুকে দেবে?
-হ্যাঁ।
-৫৭ ধারায় যদি কেউ মামলা করে দেয়?
-আমরাতো ফেসবুকের ফিচকে কবি।আমাদের কবিতায় কেউ কিছু মনে করবেনা।
-তবে লেখো কেন?
-এইটা একটা ভাববার বিষয়।মনে করো,নিজেকে ভুলে থাকতে।নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পৃথিবী হতে।কিম্বা নিঃসঙ্গতা কাটাতে।
নির্মলা একদৃস্টিতে অপলকে দেখতে থাকে।তারপর অপলের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় অপলকে।অপল নির্মলার ভারী বুকে মুখ গুঁজে দেয়।
-কাঁদছো?
-অপল মাথা নাড়ে।
-দুঃখ করোনা।একদিন তোমারও ভালো দিন আসবে।
-কবে?কবে?
নির্মলা উত্তর করেনা।শক্ত করে ধরে থাকে অপলকে।
-মেয়েরা বড় হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।কি করবো সামনের দিনগুলিতে।দীপার কাছ হতে কতদিন দূরে থাকবো?এই সিকিউরিটি বিহীন জব কতদিন করা যাবে?
-অপল, থাক ওসব কথা। তোমার গল্পটা তৈরী করো দেখি।
-কি হবে লিখে?
-দেখো, এমন কথা বললে আমি চলে যাবো কিন্তু।
অপল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নির্মলাকে।
-বলছি।গল্পটা কি হতে পারে?বাংলাদেশের বর্তমান সমাজের উথ্থান-পতন।রাজনীতি।রাজনীতিকে কেন্দ্র
করে বাঙ্গালী জীবনের আবর্তন।শত সমস্যা স্বত্তেও পৃথিবীর বুকে বাঙ্গালীর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর গল্প।
-এতো বিশাল পরিব্যাপ্তি।গল্প বলছো কেন?বলো উপন্যাস।
-জানিনা।
দীপার ফোন আসে।
-বলো।
-কি হয়েছে?গলাটা কেমন কেমন লাগছে।
-মেয়েদের কথা।তোমার কথা খুব মনে পড়ছে।
ও প্রান্তে দীপা নীরব হয়ে যায়। অনেকক্ষণ পর কথা বলে।
-চিন্তা করে আর কি করবে?জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে। তুমি এক জায়গায়।আমি আর এক জায়গায়।
নির্মলা চলে যায়।অপল লিখতে বসে।


“স্বর্গ আমার জন্যে নয়

স্বর্গ আমার জন্যে নয়,আমি শুধু ভালোবাসতে চাই
আমি পৃথিবীতে ভালোবাসা নিয়েই থাকতে চাই
অবশ্যই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

স্বর্গ আমার জন্যে নয়, আমি শুধু তোমাকে পাশে চাই
আমার ভুবন গড়ে উঠুক তোমাকে নিয়ে
- আমৃত্যু।

স্বর্গ আমার জন্যে নয়,আমার জন্যে বিরহের নরক রাখা হোক সযত্নে
আমি অহর্নিশি পুড়তে থাকবো সেই অসহ্য বিরহভালোবাসার আগুনে।

স্বর্গ আমার জন্যে নয়,আমার জন্যে তোমার অফুরন্ত ভালোবাসার
আলো ছড়িয়ে থাকুক আমার ছোট্ট পৃথিবীর, ছোট্ট গন্ডির চারপাশ জুড়ে”।


১৫ বছর পর।কলিংবেলের শব্দে লীপা দরজা খুলে দেয়। দরজায় দু’জন যুবক দাঁড়িয়ে আছে।একজনের হাতে ক্যামেরা।
-আমরা সাংবাদিক।এটি কি অপল বাবুর বাসা?
-হ্যাঁ।
-আপনি?
-আমি উনার ছোট মেয়ে।
-আমরা অপল বাবুর সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি।
-কারা এসেছে লীপা?
-সাংবাদিক মা।
-ভেতরে নিয়ে আয়।
-আদাব,ভালো আছেন আপনি?
-বসো বাবারা।
-আমরা এসেছি অপল বাবুর সাক্ষাৎকার নিতে।উনি তো এবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
-জানি।
-আমরা শুনেছি উনি প্রচুর কবিতা লিখেছেন।আর সব কবিতাই উনার ফেসবুকে পোষ্ট করতেন।উনার আইডি অনেকদিন যাবৎ ডি-এক্টিভেটেড।উনাকে ডাকবেন।
দীপা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।তারপর অপলের ঘরে সাংবাদিকদের নিয়ে যায়।অন্ধকার ঘর।দীপা আলো জ্বেলে দেয়।
-আলো কে জ্বাললো?কর্কশ গলায় বলে উঠে অপল।
-আমি।তোমার সাথে দু’জন দেখা করতে এসেছে।
-কেন? নির্মলাকে নিয়ে যেতে?

চায়ে চুমুক দিতে দিতে একজন বলে উঠে-নির্মলা কে?উনার লেখার কোন চরিত্র?
-আমরা কেউ জানিনা।দীপা বলে।
-চিকিৎসা চলছে?
-হ্যাঁ।


১৪/০৮/২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×