somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ বালিকার গোল্লাছুট

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অফিস ছুটির পর নিলয় বেইলী রোড ধরে হাঁটতে থাকে।আজ তার সাথে জামাল সাহেব।বেইলী রোডের সন্ধ্যা পরিণত হয় ছেলে-মেয়ের মিলন মেলায়।নিলয় জামাল সাহেবকে নিয়ে পিঠাঘর পার হয়।
-নিলয়, চলেন কিছু খাই।
জামাল সাহেবের কথায় কিছুক্ষণ চিন্তা করে নিলয়।কি খাওয়া যায়? ষাট টাকায় মিনি বার্গার পাওয়া যায়।প্রতিদিন জামাল সাহেবেই বিল পে করেন।নিলয় স্থির করে মিনি বার্গার খাওয়া যেতে পারে।জামাল সাহেবকে নিলয় বার্গার খাওয়ার কথা বলে।বার্গারের দোকানের সামনে দু’জনে দাঁড়ায়।পাশের দোকানের ম্যানু চার্টে চোখ পড়ে নিলয়ের।চিকেন কর্ণ স্যুপ পঞ্চাশ টাকা।
-চলেন চিকেন কর্ণ স্যুপ খাই।
নিলয় বলে। জামাল সাহেব রাজি হয়ে যান।

মেয়েটি নিলয়ের দিকে ছোট্ট একটি ট্যাবলেট এগিয়ে দেয়।নিলয় ঝুঝতে পারে ওটা কিসের ট্যাবলেট।তবুও জানতে চায়।
-বাবা।
মেয়েটি জানায়।
-খাননি কোনদিন?
-না।আমি এসব কোনদিন খাইনি।
-খেয়েই দেখেন।অন্যজগতের সন্ধান পাবেন।
-নেশা করে নিজেকে ভুলে থাকার প্রয়োজন পড়েনা।
নিলয়ের কথায় মেয়েটির গাল লাল হয় অল্প সময়ের জন্য।সে তার ব্যাগ খুলে একটা টি শার্ট বের করে।
-আপনি একাই থাকেন এখানে?
-হ্যাঁ।
-দেশের বাড়িতে কে কে আছেন?
-বাবা-মা,ভাই-বোন।
মেয়েটি নিলয়ের সামনেই শার্ট খুলে ফেলে।সাদা ব্রা আর দুধ সাদা মসৃণ ত্বকে নিলয়ের দৃস্টি আটকে যায়।জোর করেই নিলয় চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।টি-শার্ট পড়তে পড়তে মেয়েটি তা খেয়াল করে।
-আপনি বসুন।আমি রান্না সেরে নিই।
-আপনি নিজেই রান্না করেন?
নিলয় মাথা নাড়ে।রান্না ঘরের দিকে চলে যায়।মেয়েটি টিভি ছেড়ে দেয়।

পরদিন সন্ধ্যায় ক্যাফেতে বসে স্যুপ খাচ্ছিল নিলয়।লোকটি এসে নিলয়ের পাশে বসে।নিলয় এক হাজার টাকা বের করে লোকটির হাতে দেয়।
-স্যুপ খান।
নিলয় বলে।
-কফি খাওয়া যেতে পারে।
কফির অর্ডার দেয় নিলয়।লোকটি কফিতে চুমুক দেয়।কিছুক্ষণ দু’জনে চুপ করে থাকে।
-কেমন ছিল স্যার?
লোকটি নিলয়কে প্রশ্ন করে।
-ভাল।
-আজ আর একজন আছে স্যার।একদম অন্যরকম।একটু পরেই আসবে।একই খরচ।
নিলয় কথা বলেনা।স্যুপ খেতে থাকে।
-বললেন না যে স্যার?
-ওই মেয়েটি আসবেনা?
-ও তো মাসে একবার আসে।
-তবে আগামী মাসের জন্য বুকিং দিয়ে রাখলাম।
এই কথা বলে নিলয় উঠে পড়ে।লোকটি নিলয়ের চলে যাওয়া দেখে।

জামাল সাহেব স্যুপ এর অর্ডার দেন।নিলয় স্যুপে চুমক দেয়।বেশ গরম স্যুপ।নিলয়ের ভালোই লাগে।ক্যাফেটি একদম ফাঁকাই ছিল।ঠিক এই সময় বাইশ-তেইশ বছরের দুটি আধুনিক তরুণী আর একটি লোক ক্যাফেতে ঢুকে।মেয়ে দুটির লাস্যময়িতা নিলয়ের চোখে লাগে।স্যুপে চুমুক দিয়ে নিলয় জামাল সাহেবের দিকে তাকায়।জামাল সাহেব মেয়েদুটিকে চোখ দিয়ে গিলছেন তখন।
-চোখ দিয়েই গিলে খাবেন নাকি?
নিলয় মৃদস্বরে জামাল সাহেবকে বলেন।
-এখন দেখুন।পরে কথা হবে।
নিলয় সামনের মেয়েটির দিকে তাকায়।মেয়েটির চোখে নিলয়ের চোখ আটকে যায়।নিলয়ের মনে হতে থাকে মেয়েটি চোখ দিয়ে কথা বলতে জানে।নিলয় চোখ সরিয়ে নেয়।ওদের কথাবার্তা নিলয় মনোযোগ দিয়ে শুনে।নিলয়ের মনে হয় এই লোকটি না ওদের আত্মীয় না প্রেমিক।লোকটি মেয়েটিকে তিথি বলে ডাকছিল।স্যুপ শেষ করে নিলয় আর জামাল সাহেব ক্যাফে থেকে বের হয়ে আসে।
-দেখলেন?
জামাল সাহেব নিলয়কে প্রশ্ন করেন।
-হ্যাঁ।
-কি বুঝলেন?
-কি বুঝলেন মানে?কোটিপতি ঘরের মেয়ে মনে হয়।
-আরে না।মেয়ে দুটি ডিজে।আর ওই লোকটি দেখলেন ও হলো মেয়ে দুটির দালাল।এক রাতের জন্য পাঁচ হাজার নেবে ওরা।
নিলয় বুঝতে পারে জামাল সাহেবের সব ধরণের অভিজ্ঞতা আছে।


ক্যাফেটা আজও ফাঁকা।নিলয় ভাবে পাশেরটিতে লোক দাঁড়িয়ে খায়।আর এই ক্যাফেতে লোক হয়না।নিলয় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে।তারপর উঠে চলে যায়।এভাবে এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়।অষ্টম দিনে লোকটিকে একা পেয়ে যায়।নিলয় গায়ে পড়ে পরিচিত হয়।গল্প করে।লোকটিকে স্যুপ খাওয়ায়।
-আমার তিথিকে লাগবে।
নিলয় মৃদস্বরে লোকটিকে বলে।
-ছয় হাজার এক রাত।
লোকটি জানায়।
-পাঁচ হাজার।
কিছুক্ষণ মুচড়ামুচড়ি করে লোকটি রাজি হয়ে যায়।


-আপনার যিনি বৌ হবেন,তিনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান হবেন।
খেতে খেতে মেয়েটি বলে।
-কেন?
-বারে আপনি কত সুন্দর রাঁধেন।কোন রকম নেশা করেন না।
মেয়েটির কথায় নিলয় হাসে।

নিলয়ের পাশেই মেয়েটি শুয়ে আছে।মেয়েটির ধবধবে উরু নিলয়ের চোখে লাগে।নিলয় খেয়াল করে মেকআপ ছাড়া মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে।
-আপনি কি আলো জ্বেলেই সেক্স করবেন।
মেয়েটি বলে।
-পরে জানাই।
মেয়েটি চুপ করে থাকে।টিভি দেখতে শুরু করে।
-আমি খুব ভালো নাচি।নাচবেন?
-এতো রাতে জোরে গান শোনা যাবেনা।
-আস্তেই দেন।আর ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেন।
তিথি নাচতে শুরু করে।নাচতে নাচতে টি-শার্ট খুলে ফেলে।নিলয় মুগ্ধ হয়ে নাচ দেখতে থাকে।


ত্রিশ বছর পর।রিতিকা তার মেয়ের সাথে শাহবাগে ছবি প্রদর্শনী দেখতে এসেছে।একটি ছবির কাছে এসে রিতিকা দাঁড়িয়ে যায়।ব্রা আর হাফপ্যান্ট পড়া একটি তরুণী নিজের মনে নাচছে।কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল রিতিকা মনে পড়েনা।মেয়ের ডাকে চমকে উঠে।পাশের ছবির দিকে হেঁটে যায়।

“আগুনের আঁচ এসে লাগে আমার শরীরে,ও চোখে উষ্ণতা ঝরে
টের পাই,-
ভালোবাসা নেই।
স্যুপ বুঝি নিঃশব্দে অদৃশ্য হয়, খালি পাত্র উষ্ণতা হারায়।
লাস্য আছে
হাসি আছে
তবে প্রেমহীন।
আলো ঝলমল ঢাকা শহরে প্রতি সন্ধ্যায়
ভালোবাসা ফেরি করে
মেঘ বালিকারা।-ভালোবাসা নয়,উত্তাপ বিকোয়, তবে প্রেমহীন
মৃত্যু শয্যায়। বেঘ বালিকা, ও মেঘ বালিকা ছুটছো কোথায়”?

৩০/০৩/২০২৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৫৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×