পশ্চিমবঙ্গের অনেক ভাইকে দেখা যায় বাংলা ভাষাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে। অথচ তারা খুব ভালভাবেই জানেন বাংলা ভাষার জন্য একমাত্র পূর্ববাংলার বাঙালিরাই রক্ত দিয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন মুসলমান। যা ইতিহাসের পাতাকে অলংকৃত করে রেখেছে। ১৯৫২ সালের সেই ২১ফেব্রুয়ারির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজও বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। যে শ্রেষ্ঠত্ব অন্য কোন জাতি অর্জন করতে পারেনি, সেটা পূর্ববাংলার মানুষ অর্জন করে নিয়েছে।
একসময় পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার মানুষ ছিল একাত্ময় আবদ্ধ। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা মিছামিছি নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি দাবী করে। সর্বশেষ অবস্থায় দেখা যায়, তারা তাদের মাতৃভাষা ভুলতে বসেছে। ভুলতে বসেছে তাদের বাঙালি সংস্কৃতি।
ভারতের রাষ্ট্রীয়ভাষা নির্বাচনে রবীঠাকুরের হিন্দি ভাষার প্রতি সমর্থন। উপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের মুখে ঢাকার বাঙালি মুসলমানকে কাকের সাদৃশ্য মনে হওয়ার প্রকাশ। ঢাকা ভার্সিটি হওয়ার বিপক্ষে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের শিক্ষিতজনের শ্লোগান। বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের এসব কথা থেকে পূর্ববঙ্গের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ, হিংসা ও ঘৃণা জন্ম নিতে থাকে। তারা ভাবতে থাকে তারাই প্রকৃত বাঙালি।
মজার বিষয় হচ্ছে, চর্চাপদের আবিষ্কারক জনাব হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ঢাকা ভার্সিটি হওয়ার বিপক্ষে বড় গলায় কথা বলেছিলেন কিন্তু যখন ঢাকা ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করলো তখন এই ভদ্রলোক নিজে ঢাকা ভার্সিটির ভিসি হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। উনার জন্য দুঃখ, উনি ভিসি হতে পারেননি, কিন্তু ইতিহাসে হাসির পাত্র হয়ে আছেন। কিন্তু উনি বিখ্যাত মানুষ বটে। এই বিখ্যাত মানুষদের ভিন্নরূপের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মনে এক ধরণের হিংসার জন্ম দেয়। যার কারণে পশ্চিমবঙ্গের অনেক বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশীদের বাঙালি মানতে পারেন না। যার প্রভাব থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ পাব্লিকও রেহাই পায়নি। তবে বাংলাদেশের বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গের ভাইদেরকে আজীবন বাঙালি ভাই হিসেবেই মনে করে যাবে। যদিও তারা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রবীঠাকুরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে হিন্দি ভাষার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
হয়ত কিছুকাল পর আসামের মত তারাও স্বাধীনভাবে নিজ মাতৃভাষায় কথা বলতে পারবে না। ওরা সময়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, উল্টো সময়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়ে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি হারাতে বসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৬