somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাস্থ্য সেবায় বিপ্লব ঘটিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক কিন্তু বিপ্লবীরা অসহায়ঃ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"চাকরিটা আর রেভিনিউ হচ্ছেনা বেলা শুনছো,
এখন আর তোমায় আটকাব না,
সম্বন্ধগুলো এইবার তুমি চেয়ে দেখতে পারো,
মাকে বলে দাও বিয়ে আমায় আর করছো না,
চাকরিটা চলে যাচ্ছে বেলা সত্যি,
আর তো মাত্র কয়েটা মাস ব্যাস,
কিছুদিন পর বেকার আমি হয়ে যাব কনফার্ম,
চুপ করে কেন বেলা কিছু বলছো না..."
লাইন গুলো দেখে কনফিউজড হচ্ছেন?
হ্যা, অঞ্জন দত্তের গান কে এভাবেই গাইতে হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার নিরব বিপ্লবী গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে 'আমাদের ডাক্তার' খ্যাত কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের।
কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় উন্নয়নশীল বিশ্বে রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। আর তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন তারই সু্যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নপুরণ তথা গ্রামীণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সৃষ্টি করেন কমিউনিটি ক্লিনিক । কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকের কাজ অসম্পন্ন রেখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ে তৎকালীন আওয়ামলীগ সরকার। ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে পটপরিবর্তনের ফলে বন্ধ হয়ে যায় জনকল্যাণ মুলক এই প্রকল্পটি। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরুজীবিত করেন । নিয়োগ দেন প্রায় ১৪০০০ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের যোগ্য করেছেন গ্রামীণ জনগনকে সেবা দানের জন্য। গ্রামীণ মানুষের হাসপাতাল খ্যাত এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ গরিব মানুষ সেবা নেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রসবপূর্ব (প্রতিষেধক টিকাদানসহ) এবং প্রসবপরবর্তী (নবজাতকের সেবাসহ) সেবা দেন। সময়মতো প্রতিষেধক টিকাদানসহ (যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। জনগণের জন্য বিশেষ মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সেবা প্রদান করা হয়। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালা-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা-পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানী, চর্মরোগ, কৃমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- কনডম, পিল, ইসিপি ইত্যাদি সর্বক্ষণিক সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়।জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদান করে দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। আর কমিউনিটি ক্লিনিকের এ সবকিছুই সম্পাদিত হচ্ছে
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে।৩০০'র বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারি সম্পন্ন হচ্ছে।মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুহার হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক।স্বাস্থ্য সেবার এই সফলতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মানজনক পুরুষ্কার যার মূলে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক তথা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) রা। স্বাস্থ্য সেবায় বিপ্লব ঘটিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক কিন্তু আজ এই বিপ্লবের ১৪০০০বিপ্লবীরা অসহায়।এর মধ্যে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ৫২ শতাংশ নারী রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ সিএইচসিপির সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে।সরকার দু’মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)নিয়োগ প্রদান করে। কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রায় দু’বছর পেরোলেও হেল্থ প্রোভাইডারদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। যদিও নিয়োগের পর ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্প কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে চাকরি জাতীকরণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সকল জেলার নিজ নিজ সংসদ সদস্যকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর সর্বশেষ স্বাস্থ্যমন্ত্রী চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি তাই স্বাস্থ্য সেবার এই বিপ্লবীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। শুধুমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানের সূযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা পারে সব সব আশ্বাস ও বিশ্বাস হারিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে।
তাই কবি হেলাল হাফিজের ভাষায় 'প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু' তাদের আর্জি...
"একটা কিছু করুন।
এভাবে আর কদিন চলে দিন ফুরালে হাসবে লোকে
দুঃসময়ে আপনি কিছু বলুন
একটা কিছু করুন।

লেখকঃ সৈয়দ খায়রুল অামীন

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×