বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ-ফান্ড-লুটসহ বাংলাদেশের সমস্ত হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও তাদের অনুগত তুর্কী-পাকিস্তানের হ্যাকাররাই জড়িত।
সাইয়িদ রফিকুল হক
বাংলাদেশবিরোধী নাশকতার সূত্রপাত ২০১০ সালে। এই ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশে প্রায় ৪০ বছর পরে আবার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-কার্যক্রম শুরু হয়। আর এতেই আঁতে ঘা লাগে পাকিস্তানের সমস্ত দালালের। আর পাকিস্তানপন্থী সমস্ত দালাল একজোট হয়ে যায়। আর মাত্র কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী-দালালকে গ্রেফতারের সঙ্গে-সঙ্গে একাত্তরের আদি-আসল-চিহ্নিত হায়েনা জামায়াত-শিবির ও তাদের এদেশীয় আরও একবংশীয় হায়েনারা একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আর শুরু থেকে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন করতে থাকে একাত্তরের গণহত্যাকারীরাষ্ট্র পাকিস্তান ও বিশ্বের আরেক গণহত্যাকারীরাষ্ট্র তুরস্ক। এই দুইটি দেশ একজোট হয়ে আরও কোনো দেশকে সঙ্গে নেওয়া যায় কিনা—এমন একটি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে তাদের শয়তানীকার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। আর এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. ইব্রাহিম খালেদ তাই স্পষ্টতই বলেছেন, দেশে নাশকতাসৃষ্টির উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবিরের হ্যাকাররা পাকিস্তান ও তুরস্কের হ্যাকারদের সঙ্গে যুক্ত হয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ-ফান্ড হ্যাক করেছে। আর তারা এখন একদলীয় জোটে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে হ্যাকিংয়ের মতো নাশকতাসৃষ্টি করছে।
আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাসংস্থা ‘এফবিআই’ও পাকিস্তানীহ্যাকারদের এইসব অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। অনেকে অবশ্য বিভ্রান্তিসৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরাসরি উত্তর-কোরিয়ার হ্যাকারদের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারতে চাচ্ছে। আর আসল সত্য হলো: এইসব জঘন্য অপকর্মে উত্তর-কোরিয়া কিংবা ফিলিপাইনের হ্যাকাররাও জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু এর নেতৃত্বে ও পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে বাংলাদেশের চিরশত্রু: জামায়াত-শিবির পরিচালিত তুরস্ক-পাকিস্তানের হ্যাকারগং। আর এই হ্যাকারদের সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করেছে ‘বাংলাদেশ-ব্যাংকে’র একশ্রেণীর দেশবিরোধী-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
১৯৭১ সালের চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধাদানকারী প্রথম রাষ্ট্র তুরস্ক। তারপর পাকিস্তান। তারপর আরও অনেক শয়তানরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে আমাদের দেশের একাত্তরের চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে শুরু থেকে এখনও নানারকম বাধার সৃষ্টি করেছে। আর এইসব শয়তান আমাদের মুখচেনা!
সমস্ত শয়তানীশক্তির বাধাদান সত্ত্বেও বাংলাদেশরাষ্ট্র ও বর্তমান সরকার অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে একাত্তরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী-যুদ্ধাপরাধীনেতার বিচার সম্পন্ন করেছে, এবং তাদের ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশবিরোধী একটি অপশক্তি। এই অপশক্তিজোটের নাম তুর্কী-পাকিস্তানজোট। আর এই জোট সবসময় নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসংগঠন জামায়াত-শিবিরকে সবরকমের সাহায্য-সহযোগিতা করছে। এদের ধৃষ্টতার ও নির্লজ্জতার কোনো শেষ নাই। এরা মানুষ নামের জানোয়ার। তাই, তারা এখন জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশের একাত্তরের চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বাংলাদেশবিরোধী এই ‘জামায়াত-শিবির’ সবসময় তাদের পোষ্য।
জামায়াত-শিবির দেশের ভিতরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দেশের জনগণ আগে-পরে সবসময় একাত্তরের চিহ্নিত-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। মানুষের জনসমর্থন না পেয়ে জামায়াত-শিবিরগং তাদের বিদেশীপ্রভু ‘আমেরিকা-পাকিস্তান-তুরস্কে’র পরামর্শে আমাদের দেশের ভিতরে একের-পর-এক নাশকতাসৃষ্টি করে চলেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিককালের অন্যতম একটি বৃহৎ-নাশকতা হলো আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ-ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের গচ্ছিত ৮০০ টাকা লুট। এটি দক্ষ হ্যাকারগণ লুট করেছে। আর এই হ্যাকাররা হলো পাকিস্তানের ও তুরস্কের। এই দুই দেশ এখনও আমাদের দেশের নাশকতাসৃষ্টিকারী একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসংগঠন জামায়াত-শিবিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা।
বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী-হ্যাকিংয়ের মতো যাবতীয় নাশকতার একমাত্র উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা:
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ-ফান্ড-লুটসহ সমস্ত হ্যাকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান সরকারকে নাজেহাল করা। জনগণ যেন তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়! আর এই সুযোগে ১৯৭৫ সালের মতো একদল এজিদ—বাংলার এজিদগোষ্ঠী বাংলার সিংহাসন-দখল করবে। ১৯৭৫ সালের মতো তারা দেশব্যাপী পরিকল্পিতভাবে নাশকতাসৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতেই এইসব অন্যায়-অপকর্ম ও হ্যাকিংয়ের মতো জঘন্য কাজে প্রবৃত্ত হয়েছে। তাদের এই সমস্ত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও শয়তানীকর্মকাণ্ডে সবসময় সবরকমের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে পাকিস্তান ও তুরস্ক। পাকিস্তান একাত্তরে আমাদের দেশে ভয়াবহ-গণহত্যাকারী, আর তুরস্ক তাদের মদদদাতা। এভাবেই আজ দুটি শয়তানীশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে কিংবা ফাঁসিতে মৃত্যুবরণকারীদের পক্ষে প্রতিশোধ নিতেই বাংলাদেশরাষ্ট্রের স্বার্থপরিপন্থী অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এরা আমাদের স্বার্থবিরোধী মুখচেনা-শয়তান।
কেন তারা এই শয়তানী-হ্যাকিংয়ে জড়িত আর পাকিস্তান-তুরস্ক কিংবা মিশরের ব্রাদারহুডেরা কেন বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসংগঠন জামায়াত-শিবিরকে সাহায্য করছে? তার কারণগুলো এখানে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. পাকিস্তানের অতীত-বর্তমানের শাসকগোষ্ঠী হলো ইসলামের ঘোরশত্রু ওহাবীআকিদায় বিশ্বাসী। তাদের চিন্তাধারায় শয়তানপুত্র ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ধ্যানধারণা সবসময় বিরাজমান। তারা ওহাবীদর্শনকে তাদের ঈমানের মূলস্তম্ভ হিসাবে গড়ে তুলেছে।
২. বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরও ওহাবীআকিদায় বিশ্বাসী একটি ধর্মান্ধদল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা বিকৃত-চিন্তাভাবনার অধিকারী একজন আবুল আলা মওদুদী। পাকিস্তানের লৌহমানব আইয়ুব খানের শাসনামলে দাঙ্গাসৃষ্টির মাধ্যমে ‘কাদিয়ানীহত্যা’র দায়ে আবুল আলা মওদুদীর ফাঁসির আদেশ হয়েছিলো। পরে সবদলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আইয়ুব-সরকার তাকে প্রাণভিক্ষা দেয়। পবিত্র ইসলাম-বিকৃতির দায়ে একজন আবুল আলা মওদুদী আজও সুন্নীমুসলমানদের কাছে অভিযুক্ত।
৩. তুরস্কের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও প্রত্যক্ষভাবে ওহাবীআকিদায় বিশ্বাসী। তারা একজন শয়তানপুত্র ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারী।
৪. মিশরের গণধিকৃত-সংগঠন ‘ইখওয়ানুল মুসলিমীন’ বা ‘ব্রাদারহুড’ও ওহাবীআকিদায় বিশ্বাসী। মিশরের সুন্নীমুসলমানরা আজও তাই কোনো ‘ব্রাদারহুডে’র পিছনে নামাজ আদায় করে না।
আকিদাহগত-ঐক্যের কারণে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পাকিস্তান-তুরস্কের সরকারের ঘনিষ্ঠতা। মিশরের ব্রাদারহুডের সঙ্গেও সমানভাবে সখ্যতা। তাই, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য জামায়াত-শিবিরের ডাকে সাড়া দিয়েছে পাকিস্তান ও তুরস্ক। আর অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে শলাপরামর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো দুটি জঙ্গীবাদীরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির স্বীয় স্বার্থউদ্ধারের জন্য দেশের ভিতরে একের-পর-এক খুন, সিরিয়াল খুন, সমাজজীবনে ধর্ষণবৃদ্ধি করাসহ যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম করার দুঃসাহস পাচ্ছে। একাত্তরের হায়েনা জামায়াত-শিবিরের নেতাদের ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে এবং দেশের ভিতরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষসৃষ্টির লক্ষ্যে জামায়াত-শিবির বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ-জালিয়াতির মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। এটা আজ নিশ্চিত যে, পাকিস্তান ও তুরস্কের হ্যাকারগণ সম্পূর্ণ অসৎউদ্দেশ্যে ও যৌথপ্রচেষ্টায় জামায়াত-শিবিরের কোটি-কোটি টাকা খেয়ে জামায়াত-শিবিরের ট্রেনিংপ্রাপ্ত হ্যাকারদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা সম্মিলিতভাবে এই বাংলাদেশবিরোধী-হ্যাকিংয়ে জড়িতে হয়েছে।
জামায়াত-শিবির তাদের নাশকতা সরকারের ওপর চাপানোর জন্য তাদের দলীয় ও অনুগত ফেসবুকার ও ব্লগারদের ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের ফেসবুকে ও ব্লগে জামায়াত-শিবিরের পোষা বহুসংখ্যক লোক রয়েছে। আর তাদের নিজস্ব ব্লগও রয়েছে। আবার অন্যান্য ব্লগেও তাদের বেতনভুক্ত-এজেন্ট রয়েছে। এরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর সবসময় আক্রোশবশতঃ ভালো-মন্দ বিচার না করে সরকারবিরোধী-মনোভাব-প্রকাশ করে থাকে। এর কারণ, এই সরকার তাদের পিতাদের ফাঁসি কার্যকর করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে, ইনশা আল্লাহ।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২১/০৫/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩১