somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ তোফায়েল ইসলাম
কাল আমার পরীক্ষা। কিন্তু এটা আমার কাছে বিশেষ কোন ব্যাপারই না, কারন শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতার কয়েকটা পাতাই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারন করতে পারেনা॥ ” —টমাস আলভা এডিসন। –

স্বাভাবিক জীবনের চেয়ে জেল জীবন ব্যয়বহুল!

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাভাবিক জীবনের চেয়ে জেল জীবন ব্যয়বহুল!
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদিকে খাবার ও অন্যান্য খরচ বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এ খরচ ঢাকার অনেক পরিবারের মাসিক খরচের চেয়ে বেশি। অথচ এ খরচ কারাগারে কয়েদির জন্যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ব্যয় করার কথা। এ ব্যয়ের সিংহভাগই খরচ হয় দ-প্রাপ্তদের পেছনে যারা জেল কর্তৃপক্ষর হয়ে অন্যান্য বন্দীদের দেখভাল করেন।
কোনো রকমে কোনো অসুবিধা ছাড়া এক মাস কারাগারে ঘুমাতে চাইলে, জেল কর্তৃপক্ষের দেয়া খাবার এবং গোসল ও টয়লেটের জন্যে পর্যাপ্ত পানি পেতে খরচ করতে হয় ষোল হাজার টাকা। অতিরিক্ত খাবার হিসেবে ডিম, মাছ ও মাংস খেতে চাইলে বাকি ১৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে । মাসে এ ধরনের ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে নূন্যতম। এর অতিরিক্ত কিছু পেতে চাইলে বাড়তি খরচ করতে হবে।
একজন কয়েদিকে তার স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাত বা কথা বলতে চাইলে ৩’শ থেকে ১৫’শ টাকা দিতে হয়। একটি রুমের ভেতর জানালা দিয়ে স্বজনের সাথে কথা বলা যায়। কোনো কয়েদিকে তার স্বজন এক হাজার টাকা পৌঁছে দিতে চাইলে অন্তত দুই’শ টাকা কেটে রাখে জেল কর্মচারি। বাংলাদেশ জেল কোড অনুসারে যে কোনো কয়েদি কারাগারে নূন্যতম অধিকার ভোগ করতে পারেন এমন বিধি রয়েছে।
তবে টাকা খরচ করতে না পারলে যে কোনো কয়েদির জেলজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনজন কয়েদি ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাদের একজন গত ২৭ মার্চ ও অন্য দুজন গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জেল জীবন থেকে বের হয়ে আসেন।
এক মাস কারাগারে ছিলেন এমন একজন সিএনজি অটোরিক্সা চালক বলেন, যারা কারাগারে টাকা খরচ করতে না পারে তাদের জীবন দৃশ্যত জাহান্নামের জীবন হয়ে দাঁড়ায়। কয়েদিদের এমনভাবে সারিবদ্ধভাবে ডান দিক থেকে বাম দিকে শুতে হয় যা ‘ইলিশ ফাল’ হিসেবে পরিচিত। ইলিশ মাছ সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখার মতোই কয়েদিদের শুয়ে রাত কাটাতে হয়। সারিবদ্ধ কয়েদিদের সবচেয়ে পেছনের জনকে কারারক্ষক লাথি মেরে দেখেন সেলে আরো একটু জায়গা অবশিষ্ট আছে কি না ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জেল কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি কয়েদি ৬ বর্গফুট জায়গা পাওয়ার কথা। সিএনজি অটোরিক্সা চালক বলেন, আমি যেদিন প্রথম কারাগারে যাই তখন আমার সঙ্গে থাকা দুই তরুণ শোওয়ার জায়গা না পেয়ে রাতভর কান্না করেছে। তবে কারাগারের অন্য কয়েদিদের তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি ছিল না। তিনি জানান, জেলে থাকাকালিন সময়ে স্ত্রীর দুইটি স্বর্ণের বালা বিক্রি ও অন্যখান থেকে ৩০ হাজার টাকা যোগার করতে হয়েছে। সদরঘাট এলাকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকেসহ আরো ৩০ জনকে এক মাসের সাজা দেয় মোবাইল কোর্ট।
কারাগারে সিএনপি চালককে পাঠানোর এক ঘন্টার মধ্যেই আমদানীখানায় এই বাণিজ্যের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমদানীখানা হচ্ছে নতুন কয়েদিদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান। এখান থেকে পরে তাদের বিভিন্ন কক্ষে স্থানান্তর করা হয়।
প্রাথমিক এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে আমদানীখানা থেকে তাদের একজন একজন করে কয়েদি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ৩ হাজার ৬’শ টাকা দিয়ে সেবা প্যাকেজ না ক্রয় করলে কারাগারে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একজন কয়েদির জন্য পাঠাতে হয় ৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪০০ টাকা কারা ফটকের স্টাফদের কমিশন থাকে।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হওয়া মিরপুরের এক ব্যবসায়ী আমদানীখানায় থাকার প্রথম রাতের ভোগান্তির কথা জানান। ধারণক্ষমতার বেশি কয়েদিকে এখানে রাখা হয়। ২হাজার ৬৫০ জন কয়েদির ধারণ ক্ষমতা থাকলেও এখানে ৭ হাজার ৬’শ কয়েদিকে রাখা হয়।
তিনি জানান, আটকের ২২ ঘন্টা পরেও প্যাকেজের টাকা না দেওয়া পর্যন্ত টয়লেটের পানি ও গোসলের পানি দেওয়া হয়নি। এমনকি সকালে তার পরিবারের লোকেরা দেখতে আসলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি প্যাকেজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তার এক আত্মীয় এসে ৪ হাজার টাকা জমা দিলে তাকে সব সুবিধা দেওয়া হয়।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৩২ জনের সঙ্গে তাকে সেনপাড়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টাকা পরিশোধের করায় তাকে বড় কক্ষে রাখা হয়। একই সঙ্গে তাকে ভালোভাবে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। দুইটি কম্বল ও একটি বালিশও দেওয়া হয়। খাবার ও গোসলের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না। অতিরিক্ত খাবার খেতে চাইলে রুমেই এসে দিয়ে যায় বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত খাবারের জন্য প্রতি সপ্তায় ৩ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। যে কয়েদিরা প্যাকেজ ক্রয় করে তারা দিনের বেলায়ও ঘুমাতে পারে। আর যারা এই প্যাকেজ ক্রয় করে না তারা দিনের বেলা ঘুমাতে পারে না। প্যাকেজ ক্রয় না করা কয়েদিরা বাইরের নোংরা টয়লেট ব্যবহার করতে হয় যেখানে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। কারাভোগের সময় বর্ণনা করতে গিয়ে এসব কথা জানান এই ব্যবসায়ী। জেল কোডে বলা আছে কারাগারের টয়লেট থাকবে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন আর পানি সরবরাহ থাকবে সার্বক্ষণিক।
কারাগারে ছিলেন এমন ৩০ ভাগ কয়েদি ডেইলি স্টারকে জানান, যারা হতদরিদ্র ও আত্মীয় কাছে থাকে না তারা প্যাকেজ ক্রয় করতে পারে না। কাকারাগারে কয়েদিদের পরিবারের সদস্যরা দেখতে আসলে ৩’শ থেকে ১৫’শ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সিএনজি অটোরিক্সা চালকের স্ত্রী এক মাসে ৭ বার কারাগারে তাকে দেখতে যায়। কারাফটকে ঘুষ বাবদ ৩ হাজার ৯’শ টাকা দিতে হয়েছে।
নাম গোপন রাখার শর্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কারাগারে একটি গ্রুপ কয়েদিদের জন্য ঘুমানোর ব্যবস্থা, পরিমাণ মতো খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করার দায়িত্বে আছে। তবে কিছু অবিবেচক কর্মকর্তার কারণে কয়েদিরা ভোগান্তিতে থাকে বলে জানান সাবেক এই কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা আরো জানান, কয়েদিদের দেখার জন্য স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কোনো বিধান নেই। পরিবার ও স্বজনরা কয়েদির সঙ্গে দেখা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের ২ টাকার একটি ফর্মপূরণ করার বিধান রয়েছে। ঘুষ দিয়ে কয়েদিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিসার আলম এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, কারাগারে অপরাধীদের পাঠানো হয়। তাদের অভিযোগ সত্য নয়। এই বিষয়ে ফোনে আইজি প্রিজনের মন্তব্য নিতে চাইলে তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×