somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরীয়তের দৃষ্টিতে রোজা ভঙ্গের কারণ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তার ব্যাখ্যা (২য় অংশ)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরীয়তের দৃষ্টিতে রোজা ভঙ্গের কারণ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তার ব্যাখ্যা (১ম অংশ)
সাধারণত ত্বকের মধ্য দিয়েও প্রবেশ করতে পারে, তবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে-
যেহেতু একটি প্রয়োগকৃত ওষুধ শরীরের ত্বকের বিভিন্ন স্থানে অনুপ্রবেশের যোগ্যতা রাখে, সেহেতু ওষুধ প্রয়োগের জায়গা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কি মাত্রায় ত্বকে প্রবেশ করবে, তা নির্ভর করে ত্বকে ওষুধের প্রবেশ্যতা উপর,ত্বকের pH-এর উপর এবং ষ্ট্রেটাম কর্নিয়ামের ও সহযোগী কলার উপর। ওষুধ লোমকূপ দ্বারা, ঘর্মগ্রহ্নি দ্বারা, সিবসিয়াসগ্রহ্নি দ্বারা প্রবেশ করতে পারে।

সর্বশেষে বলা যায়,এখন পর্যন্ত ত্বকের উপর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় স্থানিক প্রভাব (Local Effect) বিস্তারের জন্য। যেহেতু ত্বকের মধ্য দিয়ে ওষুধের প্রবেশের ঘটনা ভালভাবে জানা হয়েছে, সেহেতু চর্বিদ্রাব্য এবং উপযুক্তভাবে সক্রিয় ওষুধসমূহ ত্বকের উপর এ কারণেই প্রয়োগ করা হয়, যাতে রক্তে ওষুধের প্রয়োজনীয় মাত্রা পাওয়া যায়।
যেহেতু রোজা রেখে গোসল করলে বা শরীরে তেল মালিশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। তাই শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন তৈলাক্ত উপাদান যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, কোল্ড ক্রীম, ভেনিসিং ক্রীম ইত্যাদি প্রয়োগেও রোজা ভাঙ্গে না। কেননা এগুলোর সঙ্গে কোন ওষুধ মিশ্রিত থাকে না। কিন্তু যদি উপরোক্ত তৈলাক্ত উপাদানসমূহে ওষুধ থাকে, বিশেষতঃ যেগুলো চর্বিদ্রাব্য এবং ষ্ট্রেটাম কর্নিয়াম ভেদ করবে জানা যায়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে।
উপরোক্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ওষুধ ইত্যাদি (যেমন মলম, মালিশ) লোমকূপ দ্বারা, ঘর্মগ্রন্থি দ্বারা বা অন্যান্য জখমের দ্বারা ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। সুতরাং মলম ইত্যাদি লাগালে যদি জানা যায়, তা রক্তে শোষণ ঘটেছে এবং মগজে বা পেটে পৌঁছেছে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে যে কোন জখমেই ওষুধ প্রয়োগ করা হোক না কেন, তা যদি শিরায় পৌঁছে, তবে তা সহজে মগজে পৌঁছাবে। অতএব জখমের মধ্যে ওষুধ দিলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে ফিক্বাহ্‌র কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
“জায়েফা (অর্থাৎ পাকস্থলী) এবং আম্মাহ্‌তে (অর্থাৎ মগজ) যে ওষুধ দেওয়া হয়, উক্ত ওষুধ যদি শুকনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা উক্ত ওষুধ পেট অথবা মগজে পৌঁছে না। আর যদি জানা যায় যে, উক্ত ওষুধ মগজে অথবা পেটে পৌঁছে, তবে ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ওষুধ যদি ভিজা হয়, তবেও ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।” (বাদায়ে, হিদায়া, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, মাবসূত ইত্যাদি)
মূলকথা হলো- যে কোন জখম দ্বারা যে কোন ওষুধ প্রবেশ করানো হোক না কেন, যদি জানা যায় যে, তা মগজ অথবা পেটে পৌঁছেছে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে যেহেতু জখমে ওষুধ প্রয়োগ করালে তা রক্তস্রোতে পৌঁছে যায় এবং রক্তস্রোতের মাধ্যমে মগজে পৌঁছে যায়, সেহেতু জখমে ওষুধ দিলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

অতএব, যেকোন স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন যদি তা মগজে বা পেটে পৌঁছে, তবে সকলের মতেই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাছাড়া এ মতের স্বপক্ষে হাদীস শরীফেরও সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন- হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে মরফূ সূত্রে বর্ণিত, নিশ্চয় রোজা ভঙ্গ হবে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, বের হলে নয়। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ওজুর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর থেকে কিছু বের হলে ওজু ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোজার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়। আর তিবরানী ও ইবনে আবী শায়বা, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হবে, বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে না।


উপরোক্ত হাদীস শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। উক্ত হাদীস শরীফে মূল রাস্তাকে শর্ত করা হয়নি।

তবে সর্বক্ষেত্রেই ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং বের হলে রোজা ভঙ্গ হবে তা নয়। যেমন- সাপে কাটলে রোজা ভঙ্গ হয় না। অথচ সাপের বিষ ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। অনূরূপ শরীর হতে রক্ত বের হলে বা বের করা হলেও রোজা ভঙ্গ হয় না। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
“৩টি জিনিস রোজা ভঙ্গ করে না- (১) শিঙ্গা লাগালে (অর্থাৎ শিঙ্গা দ্বারা শরীর থেকে যদি ইচ্ছাকৃতভাবেও রক্ত বের করে তবেও রোজা ভঙ্গ হবে না, এখন তা যেভাবেই বের করা হোক), (২) অনিচ্ছাকৃত বমি, (৩) স্বপ্নদোষ।”

অনেকে সাপে কাটার সাথে ইঞ্জেকশনকে তুলনা করে, বলে থাকে- সাপে কাটলে যেমন বিষ ভিতরে প্রবেশ করা সত্ত্বেও রোজা ভঙ্গ হয় না, তদ্রুপ ইঞ্জেকশনেও রোজা ভাঙ্গবে না। মূলতঃ ইঞ্জেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তার সাথে সাপের বিষকে কখনো মিলানো যাবে না, কেননা এ বিষ প্রবেশের ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। এ ব্যাপারে আরো বলা যেতে পারে, যেমন রোজাবস্থায় আগরবাতি জ্বালালে, ধুমপান করলে, কোন গ্যাস নাক দিয়ে গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা এ ক্ষেত্রে সবগুলো কাজ ইচ্ছা শক্তির নিয়ন্ত্রনে। অথচ রাস্তায় চলা-ফেরার সময় ও রান্না-বান্নার সময় যে ধোঁয়া গ্রহণ করি, তাতে রোজা ভঙ্গ হয় না। কেননা এটা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। অতএব, ইঞ্জেকশনের সাথে সাপের বিষের সাথে ক্বিয়াস করা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ ইঞ্জেকশন ইচ্ছাকৃতভাবেই দেওয়া হয়।

অনূরূপ যদি কেউ ভুলে পেট ভরেও খাদ্য খায়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। আর অখাদ্য যেমন পাথর, কাঠের টুকরা ইত্যাদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তদ্রুপ ওযূর পানি অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখের ভিতর চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ অবস্থায় রোজা কাজ্বা রাখতে হবে।

মূল কথা হলো- আমাদের নিকট মূল রাস্তা শর্ত নয় বরং শরীরের যেকোন স্থান দিয়েই ওষুধ ইত্যাদি প্রবেশ করুক না কেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তা মগজে অথবা পেটে পৌঁছেছে তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। অতএব, ইঞ্জেকশনের দ্বারা যে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তা যে মগজে পৌঁছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত। সুতরাং ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, নাকে ওষুধ দিলে তা পেটে প্রবেশ করতে পারে এবং পায়খানার রাস্তায় ওষুধ প্রবেশ করলে ওষুধের রক্তে শোষণের মাধ্যমে মগজে যেতে পারে কিন্তু কানের সাথে পেটের এবং মগজের সরাসরি কোন সংযোগ নেই। আসলে কানে ওষুধ গেলে কখনো রোজা ভাঙ্গবে, আবার কখনো ভাঙ্গবে না। কানে পানি গেলে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু তেল গেলে রোজা ভাঙ্গবে, এ ব্যপারে ইজমা হয়ে গেছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, পানি বাহিত ওষুধ কানে প্রয়োগ করালে রোজা ভাঙ্গবে না, কিন্তু তেল বাহিত ওষুধ কানে প্রয়োগ করালে রোজা ভাঙ্গবে। পানি বাহিত ওষুধে রোজা না ভাঙ্গার কারণ হলো- ওষুধে পানির উপস্থিতি এবং তেল বাহিত ওষুধে রোজা ভাঙ্গার কারণ হলো ওষুধে তেলের উপস্থিতি। মূলতঃ সকলেই একমত যে, কানে তেল গেলে রোজা ভাঙ্গবে, পানি গেলে রোজা ভাঙ্গবেনা। মগজ বা পেটে প্রবেশ করুক আর না করুক, এটার উপরই ফতওয়া। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“যদি কানের ভিতর তেলের ফোটা ফেলা হয়, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, এতে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না। অনূরূপ হিদায়াতে উল্লেখ আছে। আর যদি তেল অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রবেশ করে, তবেও তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এটা মুহীতে সারাখসীতে আছে। আর যদি কানের তেলের ফোটা ফেলে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। এটা হিদায়াতে আছে এবং এটাই সহীহ মত।” (আলমগীরী ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা-২০৪)

সুতরাং কানে ওষুধ প্রয়োগে রোজা ভাঙ্গা বা না ভাঙ্গার পিছনে এ উসুলকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাকস্থলী বা মগজে পৌঁছানোকে নয়। অনূরূপ কেউ যদি চোখে সুরমা ব্যবহার করে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না, এ ব্যাপারে ফতওয়া হয়ে গেছে অথচ চোখ হতে গলা পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে,
“যদি চোখে সুরমা দেয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না, কেননা চোখ হতে মগজ পর্যন্ত রাস্তা নেই।” (হিদায়া ১ম জিলদ্‌ পৃষ্ঠা-২১৭)

মূলতঃ সুরমা মগজে বা পাকস্থলীতে পৌঁছুক আর না পৌঁছুক কোন অবস্থাতেই সুরমা ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়-
“হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন।”

অতএব, যেসব বিষয় সরাসরি হাদীস শরীফ বা ইজ্‌মা দ্বারা সাব্যস্ত হয়ে গেছে, ঐ সকল ব্যাপারে কোন ক্বিয়াস বা উছূল গ্রহণযোগ্য নয়। মূলকথা হলো- কানে তেল গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, পানি গেলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ এ ব্যাপারে ইমামদের ইজ্‌মা হয়ে গেছে। অনূরূপ চোখে সুরমা দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ হাদীস শরীফে আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাবস্থায় সুরমা ব্যবহার করেছেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের ফায়সালাঃ আমরা জেনেছি কি করে ইঞ্জেকশন প্রয়োগে রোজা ভাঙ্গে। মলম লাগালেও রোজা ভাঙ্গতে পারে সে ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। এ দু’টো ক্ষেত্রেই রোজা ভাঙ্গার মূলকারণ হচ্ছে- প্রথমতঃ রক্তে ওষুধের শোষণ এবং দ্বিতীয়তঃ মগজে বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করা। ওষুধ, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করলে মগজ বা পেটেও যে পৌঁছায় তা নীচের উদাহরণটি থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়-
আমাদের পাকস্থলীতে রয়েছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি- একটি অক্সিন্টিক গ্রন্থি (Oxyntic or Gastric Gland) অপরটি পাইলোরিক গ্রন্থি (Pyloric Gland)। অক্সিন্টিক গ্রন্থিতে থাকে প্যারাইটাল কোষ এবং প্যারাইটাল কোষের H2 receptor উত্তেজিত হলে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। যখন শিরা অথবা পেশীতে রেনিটিডিন (Ranitidine) ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করা হয় তখন রেনিটিডিন প্যারাইটাল কোষের H2 receptorকে ব্লক করে। ফলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয় না। সুতরাং এর দ্বারা পেটে ওষুধের কার্যকারীতা বুঝা গেল। রেনিটিডিন রক্তের মাধ্যমে সহজেই মগজে পৌঁছে। শুধু তাই নয়, মগজের কোষেও অল্পমাত্রায় শোষণ ঘটে।
সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনে নানা জিনিসের ব্যবহার বেড়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে অনেক। পূর্বে যে সকল পদ্ধতিতে চিকিৎসা হতো, এখন চিকিৎসা পদ্ধতির মান, উপকরণ সবই বেড়েছে। এ সকল পদ্ধতির অনেক কিছুই আমরা রোজাবস্থায় ব্যবহার করছি। কিন্তু উপকরণগুলো রোজাবস্থায় ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না, সে ব্যাপারে হয়তো আমাদের অনেকেরই সঠিক কোন ধারণা নেই। সে কারণে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-

ইনহেলার (Inhelar): বাজারে যে সকল ইনহেলার পাওয়া যায়। তার Base হচ্ছে এরোসল (Aerosol) অর্থাৎ এরোসলের মাধ্যমেই ওষুধ নাকের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। উদাহরণ হিসেবে সলবিউটামল ইনহেলারের কথাই ধরা যাক। সলবিউটামল ইনহেলার নেয়া হয় এবং প্রথমবার ওষুধ গ্রহণের মাত্রা যদি হয় ৪০ থেকে ১০০ মাইক্রোগ্রাম, তবে সর্ব্বোচ্চ প্লাজমা ঘনত্বে (Peak Plasma Concentration) পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩-৫ ঘন্টা। রক্তে পৌঁছালে যেহেতু ওষুধ মগজে পৌঁছে, সুতরাং রোজা ভেঙ্গে যাবে।

ইনফিউশন (Infusion): অনেকেরই শারিরীক অসুস্থতার কারণে স্যালাইন নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাজারে গ্লুকোজ, ডেক্সট্টোজ স্যালাইন পাওয়া যায়। রোজা রেখে স্যালাইন গ্রহণে অবশ্যই রোজা ভেঙ্গে যাবে।

চেতনানাশক (Anaesthesia): চেতনানাশক সাধারণতঃ গ্রহণ করা হয় শ্বাসের (Inhelation) মাধ্যমে, শিরার মধ্য দিয়ে বা কখনও পেশীর মধ্য দিয়ে। যেগুলো শ্বাসের মাধ্যমে নেয়া হয় তাতে রয়েছে- ক্লোরফর্ম, সাইক্লোপ্রোপেন, এনফ্লুরেন, ইথার, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি। ক্লোরফর্মের কথাই ধরা যাক। ক্লোরফর্ম খুব সহজেই শোষিত হয়, রক্তে এবং মগজে ওষুধের মাত্রা খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যায়।
রাসায়নিকভাবে স্থানিক চেতনানাশক (Local Anaesthetic) আবার দুই প্রকার-
(১) পুরনো উপাদানসমূহ, যেমন- এষ্টার।
(২) সাম্প্রতিক উপাদানসমূহ, যেমন- এমাইড।
এছাড়া রয়েছে বেঞ্জাইল এলকোহল, মেনথল, ফেনল, এরোসল, প্রপিলেন্ট ইত্যাদি। বেশীরভাগ স্থানিক চেতনানাশকগুলো খুব দ্রুত ত্বকের মাধ্যমে, মিউকাস মেমব্রেনের স্তর এবং ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে খুব দ্রুত হৃৎপিন্ড (Heart), মগজ (Brain), বৃক্ক (Kidney) এবং অন্যান্য কলাতে ছড়িয়ে যায়। সুতরাং সহজেই সিদ্ধাতে আসা যায় রোজাবস্থায় চেতনানাশক দিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

সাসটেইন্‌ড রিলিজ ড্রাগ (Sustained Release Drug): কিছু ওষুধ রয়েছে, যা একবার সেবন করলে তা শরীর থেকে ধীরে ধীরে রক্তে প্রয়োজনীয় মাত্রা নিঃসরণ করে। ফলে বার বার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। এর মধ্যে কিছু ইঞ্জেকশন রয়েছে, যা ৭দিনে একটি নিলেই হয়। কিছু ট্যাবলেট রয়েছে, যা ২৪ ঘন্টায় ১টি সেবনই যথেষ্ট। এসকল ওষুধ রোজা পূর্বেই গ্রহণ করলে রোজাবস্থায় এর কার্যকারিতা শরীরে থাকলেও তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

টিকা (Vaccine): হজ্জ্বে যাওয়ার পূর্বে মেনিঞ্জাইটিস টিকা নেওয়ার একটি প্রচলন রয়েছে। এ টিকার মাধ্যমে শরীরে এন্টিজেন প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়, যা শরীরে এন্টিবডি তৈরী করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। রোজা রেখে যে কোন টিকা গ্রহণেই রোজা ভেঙ্গে যাবে।

এক্সরে (X-ray): রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। রোজাবস্থায় এক্সরে করালে রোজা ভাঙ্গবে না কিনা, সে ব্যাপারে আলোচনার পূর্বে এক্সরে নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সাধারণতঃ সাধারণ অবস্থায় ইলেক্ট্রোডের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি প্রবাহিত হয় না। কিন্তু যখন চাপ ০.০১ থেকে ০.০০১ মিঃমিঃ পর্যন্ত কমিয়ে আনা হয়, এদের বলা হয় ক্যাথোড রে। এই ক্যাথোড রে প্রবাহের সময় সামনে ধাতব জিনিস ধরা হয় তখন খুব ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় রশ্মি নির্গত হয়, যে রশ্মির শরীর ভেদ করে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, একেই বলা হয় এক্সরে।
দেখা গেছে, সূর্য্যরশ্মি যদি গ্লাসের প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো যায় তবে যে রকম বর্নালী দেখা দেয়, তেমনি পটাশিয়াম ফেরোসায়ানাইডের ক্রিষ্টাল সল্টের মধ্য দিয়ে এক্সরে পরিচালনা করলে একই রকমের বর্ণালী দেখা দেয়। মূলতঃ সূর্য্যরশ্মির মতোই এক্সরে এক ধরনের রশ্মি। রোজাবস্থায় এক্সরে করালে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। তেমনি ত্বকের অসুখের ক্ষেত্রে অনেক সময় UV-Exposure দেয়া হয় এতেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া (Blood Transfusion): রোজা রেখে রক্ত গ্রহণ করলে অবশ্যই রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু রোজা রেখে কেউ রক্তদান করলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। কেননা প্রথম অবস্থায় রক্ত শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থায় রক্ত বের হয়েছে। শরীর থেকে সাধারণভাবে কিছু বের হলে রোজা ভঙ্গ হয়না, শরীয়তের উল্লিখুত বিষয়গুলো ছাড়া।

আকুপাংচার (Acupuncture): এ পদ্ধতিটি প্রথমে চীনে প্রচলন ঘটে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষত সেই সকল অংশে যেখানে শরীরের স্নায়ু রয়েছে, সেখানে এক প্রকার সূচ ফুটানো হয়, যাতে শরীরে এক ধরণের নিঃসরণ ঘটে। কিন্তু সূচের মধ্য দিয়ে শরীরে কিছু প্রবেশ করানো হয়না, সে কারণে আকুপাংচারে রোজা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।

আল্ট্রাসনোগ্রাম (Ultrasonogram): আল্ট্রাসনোগ্রাম পদ্ধতিতে শরীরে এক ধরণের শব্দ তরঙ্গ পাঠানো হয় এবং তা পুণরায় ধারণ করে, তার প্রতিক্রিয়া পর্দায় দেখা হয়। সুতরাং এতে রোজা নষ্ট হবেনা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পূর্বে যে জেলটি শরীরে লাগানো হয়, তা পানি দ্রাব্য এবং তা মস্তিস্কে বা পেটে পৌঁছায় না। সুতরাং সে জেলেও রোজা ভাঙ্গার কোন সম্ভাবনা নেই।

এন্ডোস্কপি (Endoscopy): এন্ডোস্কপিতে একটি নল বা পাইপ পেটে মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অবস্থা দেখা হয়। সুতরাং নলটি যদি পাকস্থলী স্পর্শ করে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে কিন্তু নলটি যদি পাকস্থলী স্পর্শ করার পূর্বে বের করে আনা হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না।

নাক-কান ছিদ্র করাঃ রোজাবস্থায় কেউ যদি গহনা পরিধানের জন্য নাক, কান ছিদ্র করে, তবে রক্ত বের হলেও রোজা ভঙ্গ হবে না কিন্তু তাতে যদি মলম লাগানো হয় (Ointment -যেগুলোতে ওষুধ রিয়েছে) তবে রোজা ভঙ্গ হবে।

দাঁত তোলা (Teeth Extraction): রোজা রেখে, লোকাল এনেসথেসিয়া ছাড়া দাঁত তুললে রোজা ভঙ্গ হবে না, তবে যদি কিছু পরিমাণ রক্ত ভিতরে যায় রোজা ভঙ্গ হবে। কিন্তু লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে দাঁত তুললে রোজা ভঙ্গ হবে।

ইনসুলিন গ্রহণঃ এমন অনেক রোগী আছেন, যারা রোজা না রাখার মতো অসুস্থ নন কিন্তু রোজা রাখার সামর্থ্য থাকলেও ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন। সেক্ষেত্রে ইনসুলিন গ্রহণের সময়সীমা পরিবর্তন করে সুফল পাওয়া যাবে। কিন্তু রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে।

রেডিও থেরাপী (Radio Therapy): রেডিও থেরাপী দেয়া হয়, সাধারণতঃ দু’টি প্রধান পদ্ধতিতে-
(১) টেলি থেরাপী (Tele Therapy),
(২) ব্রেকি থেরাপী (Brscy Therapy)।
এ দু’টো পদ্ধতিতে বিশেষতঃ দু’টি রে ব্যবহৃত হয়- গামা রে (γ-Ray) এবং বিটা রে (β-Ray)। রেডিও থেরাপীতে যে সকল রেডিও একটিভ পদার্থ ব্যবহৃত হয়, তাদের মধ্যে কোবাল্ট-৬০, সিজিয়াম-১৩৭, রেডিয়াম, ইররিডিয়াম, ষ্ট্রনিয়াম, ফসফরাস, ইট্রিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রেডিও থেরাপী এক্সরে প্রয়োগের মাধ্যমেও দেয়া হয়। তবে সেখানে অনেক উচ্চ মাত্রার এক্সরে প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে রে ব্যবহৃত হয় বলে রেডিও থেরাপী প্রয়োগে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।

মেডিসিনাল প্যাচ (Medicinal Patch): মেডিসিনাল প্যাচ সাধারণতঃ বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন উপাদানের তৈরী হয়ে থাকে। মাথা ব্যাথা, বুকের ব্যাথা, বাতের ব্যাথা এ সকল রোগের জন্য বিভিন্ন রকমের প্যাচ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি প্যাচ নিয়ে আলোচনা করা যাক।

বুকের ব্যাথাঃ- বুকের ব্যাথায় অনেক সময় হৃৎপিন্ডের কৌশিক নালী (Blood Capillary) সংকুচিত হলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন কম হয়, ফলে ব্যাথা উঠে। সে ক্ষেত্রে আইসোসরবাইড ডাই-নাইট্রেট প্যাচ ব্যবহার করলে ব্যাথা কমে যায়। রক্তে ওষুধের শোষণ না হলে এটা সম্ভব নয়।

বাতের ব্যাথাঃ- বাতের ব্যাথায় ব্যালাডোনা প্লাস্টার (Belladonna Plaster) যা বাতের ব্যাথা এবং আরো বিভিন্ন কারণে ব্যবহৃত হয়। ব্যালাডোনা প্লাস্টারে আরো লেখা আছে “Aganist Pleurisy, Bronchitis, Cough, the affections of the throat, chest, lungs, etc. 1 or 2 plasters as the case requires are used.”
সুতরাং এ সকল প্যাচ ব্যবহারে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে। তাই যদি জানা যায়,কোন প্যাচ ব্যবহারে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে, তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি জানা যায় রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে না তাহলে রোজা ভাঙ্গবে না। কিন্তু মূলতঃ প্যাচ এ কারণেই দেয়া হয়, যাতে ধীরে ধীরে রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটে।

স্প্রে (Spray): বাজারে বিভিন্ন রকমের স্প্রে পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন রকম স্প্রে ব্যবহৃত হয়। হঠাৎ ব্যাথা পেলে ব্যাথা অংশে স্প্রে করলে ব্যাথা কমে যায়। এ সকল স্প্রেতে সাধারণতঃ ব্যাথানাশক উপাদান (Pain KIller Materials) থাকে। কিন্তু কিছু স্প্রে ব্যবহৃত হয় ঘাম কমিয়ে আনার জন্য, এগুলো ব্যবহারে ঘর্মগ্রন্থি (Sweet Gland) সংকুচিত হয়ে আসে এবং ঘামের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও রয়েছে এরোসল স্প্রে (Aerosol Spray) যা চেতনানাশকের (Anaesthesia) জন্য ব্যবহৃত হয়। সুতরাং যদি জানা যায়,কোন স্প্রে ব্যবহারে ওষুধ রক্তে পৌঁছে তবে সে ধরণের স্প্রে ব্যবহারে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যে সকল স্প্রে ব্যবহারে রক্তে উপস্থিতি পাওয়া যাবেনা, সেরকম স্প্রে ব্যবহারে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। শুধু সুগন্ধি স্প্রে (Perfume Spray) শরীরের ত্বকের কোন অংশে দিলে যদি তার প্রবেশের কোন যোগ্যতা না থাকে, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা অনেক স্প্রের ক্ষেত্রেই উদ্বায়ী পদার্থ (Volatile Substance) থাকাতে সেটা শরীরের ত্বকে প্রবেশের পূর্বেই উড়ে যায়।
মূলকথা হলো- রক্তে যে সকল ওষুধের শোষণ ঘটে, ঐ সকল ওষুধ ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, কারণ রক্তে ওষুধের শোষণ ঘটলে তা অবশ্যই মগজে পৌঁছে যায়।

অসুস্থতার কারণে রোজা না রাখার হুকুমঃ একটি বিষয় খুবই লক্ষনীয়, তাহলো- কারো যদি রোজাবস্থায় দিনের বেলায় ইঞ্জেকশন নেওয়ার খুব বেশী প্রয়োজন পড়ে, তবে তার জন্য রোজা না রাখার হুকুম তো শরীয়তে রয়েই গেছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেন-
“আর যদি কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হয়, তবে অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করবে।”

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অসুস্থতার কারণে, মুসাফির সফরে কারণে অথবা কারো রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হলো, অনূরূপ শরয়ী কোন ওজরের কারণে যদি কেউ রমজান মাসের রোজা না রাখে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে কি সে রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করতে পারবে?
তার জবাবে বলতে হয়- হ্যাঁ, কেউ যদি অসুস্থতার কারণে, সফর অথবা শরয়ী যেকোন ওজরের কারণে রমজান মাসের রোজা রাখতে না পারে এবং অন্য সময় রোজাগুলো আদায় করে নেয়, তবে সে রমজান মাসের ন্যায় সকল ফাযায়িল-ফযীলত হাছিল করতে পারবে। কারণ শরীয়তের কোথাও উল্লেখ নেই যে, এরূপ ব্যক্তি রমজানের ফাযায়িল-ফযীলত হাছিল করতে পারবে না। বরং হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ওজর অথবা রোগ ব্যতীত রমজান মাসের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে যদি তার পরিবর্তে সারা বছরও রোজা রাখে। তবেও ওটার সমকক্ষ হবে না।” (আহ্‌মদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনে মাযাহ্‌)

এ প্রসঙ্গে আরো বলা যেতে পারে যে, যেমন- মেয়েদের অসুস্থতা (হায়েজ-নেফাস)-এর সময় নামাজ পড়া ও রোজা রাখা নিষিদ্ধ। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর রোজা কাজ্বা করতে হয় কিন্তু নামাজ কাজ্বা করতে হয় না। এর কারণ কি?
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“হযরত মুয়াজাহ্‌ আদভিয়া তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হায়েজগ্রস্থা স্ত্রীলোক রোজা কাজ্বা করে কিন্তু নামাজ কাজ্বা করে না, এর কারণ কি? তখন হযরত আয়িশা সিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, যখন আমরা এ অবস্থায় পৌঁছাতাম, তখন আমাদেরকে রোজা কাজ্বা করার আদেশ দেওয়া হতো কিন্তু নামাজ কাজ্বা করার আদেশ দেওয়া হতো না।” (মুসলিম শরীফ)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যে সকল মেয়েরা অসুস্থতার কারণে নামায পড়তে পারেনা এবং রমজান মাসে কিছু সংখ্যক রোজা রাখতে পারলোনা, তবে কি তারা উক্ত নামাযের ফযীলত ও রমজান মাসের রোজার ফযীলত হতে মাহরূম থাকবে? জবাবে বলা যায়-কখনোই নয় বরং সে নামায ও রোজার পরিপূর্ণ ফযীলতই লাভ করবে। কারণ সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর।
অনুরূপ কারো যদি ওযু অথবা গোসলের প্রয়োজন হয় কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায়, তবে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে, এখানে পানি দ্বারা ওযু-গোসল করে নামায আদায় করলে যে ফযীলত সে লাভ করতো তায়াম্মুম দ্বারা নামায পড়লে সে ততটুকু ফযীলত লাভ করবে।
এমনিভাবে ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“ই’তিকাফকারী সম্পর্কে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে ব্যক্তি মুলতঃ সকল গুনাহ হতে বিরত এবং সকল নেক আমলের ফযীলত তাকেও দান করা হবে।”
অর্থাৎ ই’তিকাফকারী মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে বাইরের যে নেক কাজগুলো করতে পারেন না, সে সকল নেক কাজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়ে থাকে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, যারা ওজরবশতঃ বা অসুস্থতার কারণে রমজান মাসের রোজা রাখতে পারবে না, তারা অন্য সময় উক্ত রোজাগুলো আদায় করলে অবশ্যই রমজান মাসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ ফাযায়িল-ফযীলত লাভ করতে পারবে। বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্লিখিত অবস্থায় রোজার মধ্যেই বরং কোন ফায়দা বা সাওয়াব নেই।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু বর্ণনা করেন, একবার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে ছিলেন, একস্থানে লোকের ভীড় দেখলেন, (সেখানে গিয়ে দেখলেন) এক ব্যক্তির উপরে ছায়া দেওয়া হচ্ছে। (এটা দেখে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কি? লোকেরা বললো- (যাকে ছায়া দেওয়া হচ্ছে) সে একজন রোজাদার, (তখন) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সফরে রোজা রাখা সাওয়াবের কাজ নয়।” (বুখারী, মুসলিম)

অতএব, কেউ যদি ওজরবশতঃ রমজান মাসে রোজা রাখতে না পারে, তবে সে তা অন্য সময় ক্বাজা আদায় করলেও রমজান মাসের ন্যায় ফযীলত লাভ করবে।
জেনে হোক অথবা না জেনে হোক রোজাবস্থায় যারা ইঞ্জেকশন নিয়েছে, তাদের উক্ত রোজা অবশ্যই কাজ্বা করতে হবে, তবে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না।

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ও ফিক্বাহের অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সারগর্ভ আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন পালন করতে গিয়ে আমরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্ট সকল সমস্যার সমাধানই কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্‌মা ও ক্বিয়াসের মধ্যে রয়েছে।

মোটকথা হলো- উত্তমভাবে গবেষণা ও তাহক্বীক্ব করার পর এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইঞ্জেকশন ইত্যাদি মগজে পৌঁছে থাকে, আর শরীয়তের উসুল হলো- ওষুধ ইত্যাদি মগজ বা পেটে পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইমামদের মত হলো- ওষুধ ইত্যাদি মূল রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা শর্ত নয় বরং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন, যদি তা মগজ বা পেটের যে কোন একটির ভিতর প্রবেশ করার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। সুতরাং ইঞ্জেকশন সম্পর্কে সঠিক রায় হলো- “রোজাবস্থায় ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ইঞ্জেকশন দ্বারা ব্যবহৃত ওষুধ নিশ্চিতভাবে মগজে পৌঁছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্যসূত্রঃ
(১) The theory and practice of Industrial Pharmacy. (Chapter: Biopharmaceuties & Semisolids)
By Leon Lachman, A. Lieberman Herbert and L. Kanig Joseph
(২) Guyton’s medical Physiology
(৩) Remington's Pharmaceutical Sciences
by Joseph P. Remington
(৪) Goodman & Gilman's the Pharmacological Basis of Therapeutics
by Joel Griffith Hardman, Lee E. Limbird, Alfred G. Gilman
(৫) Cummingham’s manuals of practical anatomy
By Cunningham, D. J. (Daniel John), ; Robinson, Arthur,
(৬) Martindale's Extra Pharmacopoeia
Ed J E F Reynolds Royal Pharmaceutical Societ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×