somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেপ্যাল বনাম পেপ্যালের জুম সার্ভিস - এক ধোঁকাবাজির কাহিনী

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন বাংলাদেশে ইন্টারনেটের অত প্রসার হয়নি, তখন আমরা বিদেশে থাকা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের পাঠানো র‍্যামিটেন্স কিভাবে সংগ্রহ করতাম? ওয়েস্টার্ন ইউনিউন। এখনো করি অনেকে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ছাড়াও বাংলাদেশে আরো এরকম সার্ভিস চালু আছে যেমন মানিগ্রাম, রিয়া, ক্লিঙ্ক, এক্সপ্রেস মানি সহ আরো বেশ কিছু সার্ভিস। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে এরকম আরেকটি সার্ভিস চালু হয় যার নাম Xoom .
মজার ব্যাপার হচ্ছে Xoom কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে না, সেই ২০০৩ থেকে আছে ( Xoom এর যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে এবং পেপ্যাল এই সার্ভিসটি ২০১৫ সালে কিনে নেয় ১.০৯ বিলিয়ন ডলারে)! সেই সময় তারা অনলাইন টু অফলাইন মানি ট্রানজেকশন সার্ভিস দিতো ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ নামে লোকাল ডিস্ট্রিভিউটর দিয়ে, যার আসল মালিক ইন্ডিয়ান The Patel Group। কিন্তু লো ট্রানজেকশন ভলিউম হওয়ায় জুলাই মাসের ১৬ তারিখ, ২০০৮-এ তারা শ্রীলঙ্কা , বাংলাদেশ, মরক্কো, নেপাল থেকে সার্ভিস গুটিয়ে নেয়। পরে জুম-কে কিনে নেয় পেপ্যাল।
তো এই জুম নতুন করে আলোচনায় আসে যখন আমাদের সবার প্রিয় মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী কিছু দিন আগে সাংবাদিকদের জানান যে পেপ্যাল বাংলাদেশে অফিশিয়ালি চালু হবে ১৯ অক্টোবর। তিনি এও বলেন, পুরো কার্যক্রম নভেম্বর থেকে শুরু হলেও উনারা আগেই উদ্বোধন করবেন। উনার কথায় আমরা আশান্বিত হই, এবার বোধহয় পেপ্যাল এলো! ঘোর অবিশ্বাসীরাও এবার বিশ্বাস করতে থাকে যে পেপ্যাল এলো বলে! সেই আশায় গুঁড়ে বালি, যখন বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশন থেকে বিভিন্ন আইসিটি প্রফেশনালদের ইমেইলে ১৯ তারিখের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় এবং সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয় ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশে “Xoom – A Paypal Service” উদ্বোধন করা হবে ।


আস্তে আস্তে মানুষ জানতে শুরু করে এই কাহিনী। সবার মনে একই প্রশ্ন, যে সার্ভিস ২ বছর ধরে বাংলাদেশে আছে, সেটাকে নতুন করে উদ্বোধন করার কারণ কি? তার উপর এটা জুম, পেপ্যাল তো না! এরকম অবস্থায় মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ১৭ অক্টোবর সকালে একবার ইংরেজিতে এবং বিকালে বাংলায় ব্যাখ্যা দিলেন যে পেপ্যাল উদ্বোধন করা হবে নাকি জুম! উনার কথায় সেটা পরিষ্কার যে ১৯ তারিখ জুম নতুন করে উদ্বোধন করা হবে। তার উপরে তিনি বলছেন, জুম পেপ্যালের সার্ভিস, জুম চালু হওয়া মানে পেপ্যাল চালু হওয়া! এদিকে অনলাইন কমিউনিটির প্রফেশনালরা পেপ্যালে মেইল করতে শুরু করলে পেপ্যালের এশিয়া অংশের হেড অব কমিনিকেশন Pooja Sabharwal মেইলে জানান যে পেপ্যাল বাংলাদেশে সহসাই অপারেশন শুরু করবে না! তবে জুম বাংলাদেশে ২০১৫ থেকেই চালু আছে।



এরপর শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে নানা মত। প্রথমত জুম-কে পেপ্যাল বলে দিনে-দুপুরে অনলাইন ইন্টারনেট প্রফেশনালদের বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা গত পাঁচ বছর ধরেই হচ্ছে। এই করবো সেই করবো বলে বাংলাদেশ আইসিটি ডিভিশন আসলেই কি করেছে সেটা নিয়ে সকলেরই প্রশ্ন। আমরা শুধু বিল্ডিং দেখি, সেলফি দেখি, কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে সেগুলো দেখি, কিন্তু এই জনগণের এই কষ্টার্জিত টাকা কই যায় সেই হিসাব পাই না। তার উপর ৬ মাসে ফ্রিল্যান্সার বানানো হবে, ১৫ দিনে গেম ডেভেলাপার বানানো হবে এরকম আজগুবি নানা কাজ আর ফান্ডের ছড়াছড়ি। কিন্তু ক্ষতি হয় আমজনতার। Payoneer থেকে কার্ড দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নেট+ থেকে কার্ড দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশীদের, আপওয়ার্ক থেকে বাংলাদেশীদের ব্লক করে দেয়া হয়, নতুন প্রোফাইল এক্সেপ্ট করা হয় না- এসব কিছুর পিছনের আইসিটি ডিভিশনের মতো একটা অর্বাচীন প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো দায়ী। তার আরেকটা নিদর্শন পেপ্যালের কথা বলে জুমের মতো সার্ভিস চালিয়ে দিয়ে জনগণের নিকট মুলা বেচার চেষ্টা করা। আপনি নাকি শুধু ইউএস থেকেই টাকা আনতে পারবেন, এখন আমার ক্লায়েন্ট যদি চীন বা কানাডায় হয়, তখন কি হবে?


এই আনন্দ কই রাখবো?
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, আমাদের মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, আপনি এই একটা ভুল করে ধরা খেয়ে গেলেন। বারবার জনগণকে ধোঁকা দেয়া যায় না, তার উপর লেখাপড়া জানা শিক্ষিত জনগণ, যারা বাইরের ক্লায়েন্টদের সাথে বিজনেস করছেন, এই ভুলের সমীকরণ আসলেই তারা মেলাতে পারবেন না!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×