ড. রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করবেন - এই সংবাদের ভিত্তিতে বিগিত ২/৪ দিন যাবৎ ফেইসবুকে কিছু উদ্ভট পোস্ট দেখে ‘'মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশী” প্রবাদ এবং ‘সবজান্তা শমসের’ বাগধারা টি খুব বেশী মনে পরেছে। এও বুঝেছি আদার ব্যাপারীরা কিভাবে জাহাজের খবর রাখে?
পোস্টগুলোতে যাহা লেখা হয়েছে তার সারাংশ হচ্ছে - বিএনপি উনার বাবাকে খুন করেছে, ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করলে পিতার রক্তের সাথে বেঈমানী হবে, বাবা আওয়ামীলীগ করতেন তিনি কেন বিএনপি করবেন….. ইত্যাদি। এক উন্মাদ নাকি লিখেছে - রেজা কিবরিয়ার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনি কিবরিয়া সাহেবের ছেলে কিনা তাহা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। চিন্তা করেন কোন লেভেলের উন্মাদ হলে এমন লেখা সম্ভব।
এর অনেক গুলি প্রশ্নের সুষ্পষ্ট উত্তর ড. রেজা কিবরিয়ার সাক্ষাৎকারে পাওয়া যাবে। তারপরেও কিছু রেফারেন্সের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত ভাবে আলোচনা করবো। নীচের লিংকে উনার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য পড়ে দেখবেন।
‘দেশের মানুষ বলুক, আ.লীগের প্রতি আমার আনুগত্য থাকা উচিত কি না?’
রাজিনীতি হচ্ছে আদর্শের ব্যাপার। কোন দলের আদর্শের সাথে ব্যক্তি বিশেষের আদর্শের মিল হলেই সে ঐ দল করে। আবার কোন দল করা অবস্থায় যদি দলের আদর্শ এবং মৌলিক নীতির পরিবর্তন ঘটে তাহলে সে দল ত্যাগ করে অন্য কোন দল বা জোটের সাথে আদর্শের মিল পেলে সেখানে যোগ দিতে পারে। রেজা কিবরিয়া স্পষ্টতই বলেছেন যে, উনার বাবার সময়ের আওয়ামীলীগের আদর্শ আর বর্তমান আওয়ামীলীগের আদর্শ ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনী ওসমানী সর্বপ্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি সংসদে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করছিলেন যখন আওয়ামীলীগ আদর্শ বিচ্যুত হয়ে বাকশাল হয়েছিল। আর রেজা কিবরিয়াতো বিএনপিতে যোগ দেন নাই। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন।
যাক কিবরিয়া সাহেবের খুনী কারা এই নিয়ে মামলার নথিতে যাহাই থাকুক না কেন উনার পরিবার তাহা মেনে নেয় নাই। কিন্তু অনেক জানা বিষয় অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হওয়াতে অকাট্য প্রমাণের অভাবে বিজ্ঞজনেরা প্রকাশ করে না ।
২০০৫ সালের মার্চ মাসে বিএনপির সরকারের সময়ে প্রথম প্রতিবেদন দাখিল হয়। কিন্তু মামলার বাদী মজিদ খান তাতে নারাজি দিলে আবার তদন্ত শুরু হয়। দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন যাহা আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে সম্পন্ন করে দাখিল করা হয় ২০১১ সালের সম্ভবত ২০ জুন। মামলার তদন্ত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সঠিকভাবে করে নাই বলে কিবরিয়া সাহেবের পরিবার পরিজন তাহা মেনে নেন নাই।
মেনে না নেওয়ার প্রমাণ হলোঃ ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রী আসমা কিবরিয়া অভিযোগপত্রের ওপর হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিমের আদালতে নারাজি আবেদন করেছিলেন। আবেদনে আসমা কিবরিয়া দাবি করেছিলেন, অভিযোগপত্র যথাযথভাবে তৈরি হয়নি। হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এমদাদুল হককে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল তথ্য উদঘাটন হবে বলে নারাজিতে আবেদন করেন।
কিবরিয়া হত্যা : মামলার তদন্তেই পার ১০ বছর
কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রীর অভিযোগ থেকে অবশ্যই বুঝা যায় যে, উনার কাছে তথ্য ছিল ঐ সময়ের ডিসি সব জানতো বা কিবরিয়া হত্যাকারীদের সাথে ডিসির যোগসাজস ছিল। তাই ডিসিকে জিজ্ঞাবাদের আবেদন করেছিলেন।
আরো প্রশ্ন হলো ডিসিকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল? নাহলে, কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাই? উল্টো আওয়ামীলীগ নেতা মজিদ খান সাহেব কেন কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রীকে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্যশীট) মেনে নেওয়ার জন্য ধমক দিয়েছিলেন (রেজা কিবরিয়ার বক্তব্য)? মৃতের স্ত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধমক দিয়ে চার্যশীট গহণ করানোতে আওয়ামীলীগ নেতা মজিদ খানের এত আগ্রহের পীছনে কি কারণ বা স্বার্থ ছিল? ডিসিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মজিদ খানের কি এমন ক্ষতি হতো? একেবারে বিনা স্বার্থে কি মজিদ খান অন্তত কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রীকে ধমক দেওয়ার দৃস্টতা দেখাতেন?
কিবরিয়া সাহেবের প্রকৃত খুনীদের চিহ্নিত করতে হলে সুক্ষভাবে তদন্ত করে এসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে বলেই আমি মনে করি।
যাইহোক যেহেতু তদন্ত এবং চার্যশীটভুক্ত আসামীদের প্রতি কিবরিয়া সাহেবের পরিবাবার (স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে) সন্তুষ্ট নন, এর সহজ অর্থ তারা বিচারাধীন অনেক আসামীকে কিবরিয়া সাহেবের খুনী হিসাবে মেনে নেন নাই বা স্বীকার করেন না। অর্থাৎ যে তদন্তের ভিত্তিতে কিবরিয়া হত্যার বিচার হচ্ছে সেই তদন্তকে সত্য বলে স্বীকার করেন না। এমতাবস্থায় মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশী দেখাতে যাওয়া আর নিজেকে আবাল উন্মাদ হিসাবে প্রকাশ করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই এবং থাকতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস।
যাক, এখন দেখার বিষয় যারা রেজা কিবরিয়ার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আলোকে তাঁর বিরোপ সমালোচনা করেছিলো তারা উনার অপেন প্রশ্নের কি উত্তর দেয়?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৬