আমি একজন নিম্নস্তরের মধ্যম আয়ের মানুষ। সঙ্গত কারণেই বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশ নিম্নস্তরের মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় মনে মনে শ্লাঘাই বোধ করছি। যাক ব্যাটা এতোদিন পর আমার স্তরে উন্নীত হতে পেরেছে! এই স্তরে আসার নেপথ্য নায়কদের তো কুর্ণিশ করতেই হয়। প্রথমেই আসে বিদেশী অভিবাসীদের কথা, যাদের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে শনৈ শনৈ পাঠানো বৈদেশিক মু্দ্রা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত তৈরী করতে অসামান্য অবদান রাখছে। এখানে উল্লেখ্য অভিবাসীদের মাঝে পেশাজীবিদের চেয়ে শ্রমজীবিরাই এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। পেশাজীবিদের মাঝে যারা ভিনদেশে অভিবাসিত তাদের বেশীরভাগই যেন পোড়া দেশ থেকে বের হতে পেরে বেঁচে গিয়েছে। এদের বড় অংশ প্রবাসভূমে সপরিবারে মৌরসিপাট্টা গেড়ে বসেছে এবং যারা এখনো পারেনি তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে দেশে স্থায়ীভাবে আর ফিরতে না হয়। এই গোষ্ঠীর দেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ কোথায়! বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশী শ্রমিকশ্রেণীদের পাঠানো টাকাই ফরেন রেমিট্যিন্স হিসেবে আসছে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী। অভিনন্দন বিদেশভূমে খেটে খাওয়া আমার সেই শ্রমিক ভাইদেরকে।
এখন দেশের ভেতরে নজর দেওয়া যাক। দেশকে অর্থনীতিতে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখছে লুটেরা পুঁজিপতিরা, যাদের ভিত কালো টাকা এবং শোষণ যাদের হাতিয়ার। হ্যা, আমি বলছি তাদের কথা যারা দেশে গার্মেন্টস, ঔষধ শিল্পকারখানা সহ বিভিন্ন ধরণের শিল্প এবং ব্যবসা বাণিজ্যে নিবেদিত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সহায়তা করেছে, দেশের মাসুষের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরী করতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখছে। এরা যে কোন ধনতান্ত্রিক দেশের পুঁজিপতিদের মতো শোষকশ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হলেও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। এই শ্রেণীকেও জানাই অভিনন্দন।
এছাড়া অভিনন্দন জানাতে হয় দেশের কৃষককূলকে। যারা কয়েক দশকের মাঝে খাদ্যঘাটতি অবস্থান থেকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত করেছেন। এরাই হলেন বাংলাদেশের দধিচি। নিজেদের রক্ত ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্খনীতিকে চাঙ্গা করতে এদের অবদানই সবচেয়ে বেশী। অথচ পরিহাসের বিষয় প্রায়শই এরা ফসলের উৎপাদন খরচ তুলে নিতে পারেন না মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মে। তবুও তো দেশ এগিয়ে চলছে! কুর্ণিশ কৃষকভাইদেরকে।
এবার আসা যাক তাদের কথায়। যাদের কোটি কোটি টাকা ক্রমান্বয়ে বিদেশে পাচার হচ্ছে, সু্ইস ব্যাংক সহ বিদেশী ব্যাংকে যাদের টাকার পাহাড় জমছে, যাদের বাড়িঘর সহায় সম্পত্তি বাড়ছে উন্নত দেশগগুলোতে তাদের গল্প না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায় এই কাহন। বিশ্বব্যাংক যদি তাদের পাচারকৃত টাকা হিসেবে আনতো তাহলে বাংলাদেশ নিম্নস্তরের মধ্যম আয়ের দেশ না হয়ে সত্যিকার অর্থেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো। এরাই সেই পরজীবি, আমজনতার টাকা লুট করে সম্পদের পাহাড়ের উপর বসে যারা অশ্লীল সুখে দিন যাপন করছে। এদের মাঝে আছে ক্ষমতাধর রাজনীতিক, অসৎ আমলা এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। দেশ যতোটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা এদের কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৩