(ধর্মঘটে গাড়িচালক আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থকদের উৎসর্গে)
--------------
(০১) বসন্তী এক বিকেল। ঘড়ির কাটায় ৩টে হলেই 'জনগণ' নামের পাব্লিক বাসটি এ স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের দিকে ছুটবে। এখন সময় ২.৩৪ মিনিট। সিটগুলো এখনো পূর্ণ হয়নি, দু'চারজন যাত্রী মাত্র। এই দু'চারজনের মধ্যে একজন হলেন সাংবাদিক আরাফাত। যাত্রী স্বল্পতায় আরাফাত আজ প্রথমসারির শূন্য এক সিটে বসে পড়লেন। হঠাৎ দু'জন যুবতি বাসে উঠতেই আরাফাত সামনের সিট তাদেরকে দিয়ে পেছনে চলে গেলেন। এই পুণ্যার্জনের সুযোগ উনার সবসময় হয়ে উঠে না; যখন কোন অতি রূপসী রূপের ঘ্রাণ ছড়াতে ছড়াতে বাসে উঠেন তখনই আরাফাত এই পুণ্যার্জনে ধন্য হন।
বাস ছাড়ার ৩মিনিট পূর্বেই সিটগুলো যাত্রীতে পূর্ণ হয়েগেছে। এখন যারা আসবে তাদেরকে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে যেতে হবে। ঠিক সময়েই বাস ছাড়লো, উপবিষ্ট যাত্রিদের অর্ধেক যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ভাড়া কিন্তু সকলেরই সমান।
অন্যান্য জায়গার ন্যায় নিশ্চিন্তপুরেও গাড়ী থামলো, কিছু যাত্রী নামলেন আর কিছু উঠলেন। নবাগত যাত্রীদের মধ্যে একজন অতিকায় বৃদ্ধ রয়েছেন। চেহারা-সুরত খুব একটা ভাল না। পোশাকেও ধনীব্যক্তির পরিচয় মিলল না। মুখভর্তি ধবধবে সাদা এক ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা দাড়ি। এক হাতে লাঠি অন্য হাতে বাজারের ব্যাগ। সিট না থাকায় উনাকেও এখন বাকি পথ দাঁড়িয়ে যেতে হবে। যদি কোন সুপুরুষ উনাকে একটু বসতে দিতেন, তবে হয়ত বাকি পথ একটু আরামে যেতে পারতেন।
(০০) বসন্তীরঙে ফুটে উঠা গ্রামের সবুজ প্রকৃতি আরাফাতকে কিছুটা বিমোহিত করছিল হয়ত। তাই মাঝেমধ্যে আরাফাতকে গ্রামের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে দেখা যাচ্ছে । আকস্মিক আরাফাত অনুভব করলেন, বন্দুকের নল দিয়ে কে যেন তার মাথায় হালকা নক করলো। মাথা উঁচু করে বুঝতে পারলেন দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ লোকটির লাঠির হাতল এসে তার মাথায় লেগেছে। হাতল লেগে যাওয়ায় বৃদ্ধ লোকটি বারবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে অপরাধ-ভরা চাহনিমিশ্রিত থ্যাঁতলানো সুরে বলছেন,
: স্যারি বাবা, দেখিনি! ঝাঁকুনিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তোমাকে কষ্ট দিয়ে দিলাম। দুঃখিত বাবা আমার। আমি দেখিনি।
আরাফাত কিছুটা বিরক্তিপ্রকাশ করে আবারো মোবাইলে মনযোগ দিল।
গাড়িটি হাইওয়েতে উঠতেই ড্রাইভার দিল গতি বাড়িয়ে। আকস্মিকভাবে একটি ট্রাকে মুখোমুখি হয়ে আরাফাত সহ প্রায় সবাই এখন হসপিটেলে। ড্রাইভারসহ ছ'জন মর্গে আছে; আত্মাহীন অবস্থায়। এই ছ'জনের মধ্যে এক ইঞ্চি লম্বা ধবধবে সাদা দাড়িওয়ালা অতিকায় বৃদ্ধ চাচাও রয়েছেন। আরাফাতসহ জীবিতরা আফসোস করছে উনার জন্য। সেই যুবতিদ্বয়ের জন্যও তারা আফসোস করছে, যাদের দেহ কিছুক্ষণ পর মর্গে ডুকবে।
বিঃদ্রঃ ইহা সম্পূর্ণই আমার নিজের লেখা। কেউ কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে তার ইহকাল ও পরকালের ক্ষতি কামনা করি।
ছবি: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৫৯