somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেণিহীন সমাজেই নারীদের প্রকৃত মুক্তি ঘটতে পারে[

০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রেণিহীন সমাজেই নারীদের প্রকৃত মুক্তি ঘটতে পারে


আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর নারী কবিতায় বলেছেন--
"নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী তবে এরপর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে।

শতকোটি বছরের বিবর্তনের ফলে আমরা একটা সবুজ পৃথিবী পেয়েছি। পৃথিবী সৃষ্টির আরও শত কোটি বছরের বিবর্তনের পর এক পর্যায়ে আমাদের গ্রহে তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী মানুষ। প্রত্যেক মানুষেরই প্রাকৃতিক নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর এর উপর ভিত্তি করে নারী-পুরুষের দৈহিক গঠনও আলাদা। যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবে নারীরা সরাসরি সন্তানধারনের সাথে জড়িত তাই নারীদের শারিরীক গড়নটা অনেকটা কোমল, নমনীয়, আর পুরুষদের শারিরীক গড়নটা শক্ত। তবে সহস্রযুগের মানব সমাজের বিকাশের ইতিহাস থেকে এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, নারী আর পুরুষ মেধা শক্তিতে, চিন্তায়, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় সমানে সমান। মানব সমাজের বিকাশের জন্য মানব সন্তান প্রয়োজন। সুতারাং মানব সন্তান মূল্যবান আর এই মানব সন্তানকে পৃথিবীতে আনা ও লালন পালনের ক্ষেত্রে আসাধারণ, অদ্ভুত ভূমিকা রাখে নারীরা। সুতারাং সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী নারীদের অনেক মূল্য পাওয়া কথা। কিন্তু' নারীর এই সন্তান ধারনের ক্ষমতাটাকেই দুর্বলতা ধরে নিয়ে সমাজ তাকে মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে নানা কৌশলে নির্মমভাবে বাধাগ্রস্ত করে।

আদিম সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের মূল্য বেশী ছিল। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছিল। কারণ তখন মানুষ দল বেধে বেধে প্রতিকুল পরিবেশকে মোকাবিলা করে নিজেদের জন্য জিনিসপত্র জোগাড় করার সংগ্রামে ব্যস্ত থাকত সামান্য কিছু অনুন্নত হাতিয়ার নিয়ে। এই সংগ্রামের জন্য লোকবল বেশী দরকার হত। অর্থাৎ মানব সন্তান দলের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় এবং মূল্যবান ছিল। আর এই মানবসন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীদের ভূমিকা বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাই এদিক থেকে আদিম সমাজব্যবস্থায় নারীরা ছিল বেশী আদরের।
আদিম সমাজব্যবস্থা শেষ হয়ে যখন অপরের শ্রম দিয়ে তৈরি জিনিস আত্নসাৎ করার সুযোগ সৃষ্টি হল এবং যখন সমাজে শোষণ কার্যটি যুক্ত হল তখন থেকে নারীদের উপরও শোষণ, অত্যাচার, অবমূল্যায়ন শুরু হয়ে গেল অবাধে। আদিম কালের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে তথা নারী-পুরুষের মধ্যে যে সহজ সরল ভাবনা চিন্তা, সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল তা শ্রেণি বিভক্ত সমাজে বিলুপ্ত হয়ে জটিল, কুটিল হয়ে পড়েছে।
শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নারীরা অর্থনৈতিক শোষনের পাশাপাশি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের নিকৃষ্ট মন মানসিকতার দ্বারাও শোষিত। এই সমাজে প্রত্যেকেই জিনিসের মালিক হওয়াকে বড় মনে করে। সেই হিসেবে পুরুষরা নারীদেরকে তাদের নিজেদের স্বার্থে আধুনিক দাসীতে পরিণত করতে ব্যস্ত অনেকদিন ধরে।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বার্থপরতা, ব্যক্তি বিচ্ছিন্নতা অনেক বেশী। এই সমাজ “শুধু খাই, খাই- নিজের চাই -এই নীতি নিয়ে ব্যস্ত। এখানে নিজের পেট ভরানোর গুরুত্বটা প্রথম, তারপর কিছু ছিঁটে ফোটা বাঁচলে তা অন্যের -এই মন্ত্র বিরাজমান। এই ধরনের হীন মানসিকতার কারণে পুরো মানব সমাজ অনেক অমানবিক ঘটনার শিকার। এই সমাজে নারীরা লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি, অভিনয় সবকিছু করছে। কিন্তু' পুরুষের জন্য উত্তরাধিকারী সৃষ্টি অথবা পণ্য হিসেবে নিজেকে বিভিন্নভাবে বিক্রি করা- এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই নারীরা বন্দী।
শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নারীদের উপর যে শোষণ রয়েছে তা নির্মূল হওয়ার জন্য সেই সমাজ ব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে কেউ কারও মালিক নয়, যেখানে সকল মানুষ এক সাথে সবার জন্য উৎপাদন করবে এবং উৎপাদিত সম্পদ সকল মানুষের জন্য সমান ভাবে বন্টিত হবে -যেখানে প্রতিটি মানুষ আমরা শুধুমাত্র মানব সমাজকে অধিকতর উন্নত করার জন্য কাজ করব এবং সুস্থ', সভ্য, স্বাভাবিক পথে জাগতিক রূপ, রস, রং উপভোগ করতে পারব। নারীদের যতক্ষণ মানুষের মত মূল্য দেওয়া না হবে ততক্ষণ জ্ঞানে, গরিমায় সমগ্র পৃথিবীর মানব জাতি একেবারে শূন্য থাকবে। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ সম্পদ উৎপাদনের সব প্রকার ব্যবস্থা আয়ত্ত করেছে, কিন্তু সম্পদ বন্টনের অব্যবস্থার ফলে জনগণ কোনদিক থেকে শান্তিতে বাস করতে পারছেনা।
স্বাধীনতা আর উচ্ছৃঙ্খলতা এ দুটো এক কথা নয়। যখন সমাজের সকলের সুখের সঙ্গে আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সুখের সঙ্গতি বিধান হবে তখন আমারা প্রকৃত সুখের পূর্নাঙ্গ স্বাদ লাভ করব। আমাদের মন তখন সব রকম ক্ষুদ্রতার বাইরে চলে যাবে। নিজেদের তখন আর মালিক মালিক মনে হবে না; কেবল মানুষ মনে হবে- যে মানুষ নারী কিংবা পুরুষ কাউকে শোষণ করাত দূরের কথা, শোষণ করার কিংবা কারও উপর আধিপত্য বিস্তারের চিন্তাকে নিকৃষ্ট মনে করে। কেবলমাত্র এই ধরনের সমাজেই নারীদের প্রকৃত মুক্তি আসতে পারে।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ মজুরী বৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলেছিল সরকারের লেঠেল বাহিনীর দমন পীড়ন। ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সম্মেলনে জার্মান রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব রাখেন। সেই মত পর্যায়ক্রমে এটি কার্যকর হয় এবং প্রতিবছর এটি পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।
ন্যায়ের জন্য লড়াই অবশ্যই প্রয়োজনীয়- সেটি নারীদের পক্ষের লড়াই হোক কিংবা পুরুষের পক্ষের। তবে নারীদের উপর অত্যাচার, শোষণ অধিকতর বেশী বলে তাদের প্রতিটি আন্দোলনকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা উচিৎ। অসাধারণ মানবিক গুনের অধিকারী নারী সমাজের সকল আন্দোলনকে আমি অভিবাদন জানাই।
৮ মার্চ ২০১৭ ইং আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ
“নারী পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি নিয়ে মহীয়ষী নারী বেগম রোকেয়া বহুকাল আগেই বলে গেছেন যে, “আমরা (নারীরা) সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোন ব্যক্তির এক পা বঁধিয়া রাখিলে, সে খোঁড়াইয় খোঁড়াইয়া কত দূর চলিবে? পুরুষদের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে, একই। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা, আমাদের লক্ষ্য ও তাহাই।
আশা করি আমাদের নারীরা এসব নিয়ে ভাববেন এবং পুরুষ সমাজ মানব সমাজের প্রকৃত মুক্তির জন্য নারীদেরকে মানুষরূপে মূল্যায়ন করবেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×