somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্ষণশীলতা-প্রগতিশীলতা কি ?

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক্ষণশীলতা-প্রগতিশীলতা কি?

আমার কোনো কোনো বন্ধু  কিছু কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে আমার মতামতকে  রক্ষণশীলদের মত বলে জানিয়েছেন।  তাদের জন্য কিছু কথা লিখতে ইচ্ছে করছে। আমি জীবনের প্রায় সর্বত্র যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে চলি। পরিচিত মহলে সব ধর্মের মানুষের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা অনেক।

আমি  প্রগতিশীলতা মানে আদিম উচ্ছৃঙ্খলতাকে বুঝিনা। আমার কাছে প্রগতিশীলতা মানে ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে মদ্যপানে বিভোর থাকা ও দেহভোগসহ সব ধরণের কাজে অবাধ  লাফালাফি নয় এবং পৃথিবীর সব সংযত আচরণকে ধুত্তুরি বলে উড়িয়ে দেয়া নয়। সামাজিক জীবনকে শ্রদ্ধা করে বিজ্ঞানসম্মত, যৌক্তিক, মানবিক মতামতকে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটিরূপে ব্যক্তি রুচি ও সামাজিক রুচির সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজ, ব্যক্তিজীবন এগিয়ে নেয়ার নাম প্রগতিশীলতা  বলে আমি মনে করি।

আদিমকালে মানুষ গুহায় বাস করত, জঙ্গলে থাকত, কাঁচা মাংস খেত, উলঙ্গ থাকত, রোগে বনজ ওষুধ ব্যবহার করত। সেসময় এমন কোনো কেউ নেই যার সাথে যৌন সম্পর্ক করা যেতনা বা নিষিদ্ধ ছিল। আদিমকালে পিতা, মাতা, ভাই, বোন সবার সাথে সবার যৌন সম্পর্ক হত। কিন্তু আজ এসব অমানবিক অসভ্যতা।

আজ মানুষ বিজ্ঞানের বদলে ঘর পেয়েছে, রান্নার উন্নত পদ্ধতি পেয়েছে, পোশাক পেয়েছে, শিক্ষা লাভের উপায় পেয়েছে, যৌনতাকে সুস্থ, সুন্দর, সংযত পদ্ধতিতে গ্রহণ করার প্রেমময় দিক পেয়েছে। আজ আমাদের ঘর না থাকলে আমাদেরকে উদ্বাস্তু বা যাযাবর বলা হয়,  পোশাক না পরলে তাকে পাগল বা অশ্লীল বলা হয়, কাঁচা খাবার খেলে ছিঃ ছিঃ বলে ঘৃণা প্রকাশ করা হয়, লেখাপড়া না শিখলে অশিক্ষিত বলা হয়, যৌন সম্পর্কে সংযত না হলে তাদেরকে বা প্রেমহীন যৌন সম্পর্কে সম্পর্কিত লোকদেরকে ভোগবাদী বলা হয়, স্বামী স্ত্রী অন্য লোকদের সাথে প্রেম বা যৌন সম্পর্ক করলে তাকে পরকীয়া বা অপরাধ বলা হয়, নাবালক-নাবালিকার সাথে যৌন সম্পর্ককে অমানবিক অত্যাচার বলা হয়।

সর্বোপরি এরকম আরও অনেক বিষয় আছে যা আদিম অতীতে স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু বর্তমানে স্বাভাবিক নয়। বর্তমানকালে এমন কিছু বিষয় আছে যা সভ্য বসবাস বা সভ্য আচরণ বলে অনেক দেশে, সমাজে স্বীকৃত এবং সেসব আচরণ অনুসরণ করলে সমাজে শান্তি থাকে, মানুষের জীবনাচরণ উন্নত হয়।

আজকাল বাংলাদেশের কিছু  শিক্ষিত লোকদেরও বলতে শোনা যায় যে, যৌন আচরণের ক্ষেত্রে কোনো স্থান, কাল বিবেচনার দরকার নেই। ইদানিং কোনো কোনো দেশে কেউ কেউ ইতিমধ্যে পার্ক বা বাইরে লোকের সামনে বসে যৌন কাজ করে পুলিশের রোষানলে পড়েছে। এরকমও কেউ কেউ বলছে যে, প্রেমিক প্রেমিকা রাস্তাঘাটে চুমু খেলে প্রেমের স্বচ্ছ প্রকাশ ঘটে। তাই রাস্তাঘাটে প্রেমিক প্রেমিকার যে কোনো প্রকার চুমু খাওয়াকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
এক্ষেত্রে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। মানব প্রজাতি ব্যতীত আর সব প্রজাতির প্রাকৃতিক সহজাত চিরন্তন কিছু বুদ্ধি ছাড়া আর কোনো বুদ্ধি নেই। কিন্তু একমাত্র মানব প্রজাতিই তাদের বুদ্ধি খাটিয়ে আদিম অবস্থা ছাড়িয়ে জীবনকে সৌন্দর্যমন্ডিত অথবা কদর্যময় করে তুলতে পারে। পশুপাখির  সঙ্কোচ, লজ্জা, দ্বিধা, সৌজন্য বলে কিছুই নেই। কিন্তু মানুষের আছে। তাই মানুষ শ্রেষ্ঠ বুদ্ধির কাজে। আদিম অবস্থার পর মানুষের জীবনে লজ্জা, সঙ্কোচ, সামাজিক ভাল মন্দ বোধের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বোধ মানুষের মনকে সুন্দর করেছে, আবার অনেক বোধ মানুষের মনকে ভোগবাদী করেছে, অত্যাচারী করেছে। এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। আমি মনে করি, মানুষের যেসব আচরণ নিজের এবং সমাজের অন্য কারও ক্ষতি করেনা, বরং জীবনমানকে পশুদের জীবনমান থেকে সুস্থ, সুন্দরভাবে পৃথক করে সামাজিক করে  তোলে সেটি আমরা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু অনেকেই পশুদের থেকে মানুষের জীবনের এই পৃথক হওয়াকে পছন্দ করেনা বা অত্যাচার বলে মনে করে। তাদের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিৎ ।

আমার একজন মুক্তমনা বন্ধু বিদেশে থাকেন। তিনি একদিন বললেন যে, সে যেদেশে থাকে সেখানকার এক পার্কে নারী পুরুষ দিনের আলোতেও সবরকম যৌন কাজ করতে থাকে। আমি এইকথা শুনে অবাক হলাম। কারণ এই সংস্কৃতিটা সভ্য অনেক দেশে অপরাধ। সভ্য মানুষ যৌন কাজের জন্য নিরিবিলি, একান্ত স্থানই পছন্দ করে এবং এতে কারও কোনো ক্ষতি নেই, বরং সামাজিক ভালবাসা, বোধের উচ্চতাই প্রকাশ পায় তাতে।

মানুষ যদি সম্পূর্ণ পশুর মতই থাকতে চায়, তবে মানুষ নিজেদের অপরিসীম বুদ্ধিমত্তাকে চিনতে পারেনি বা কাজে লাগাতে পারেনি বলেই বলা যায়।

নারী পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে কেউ কেউ একটি স্বাভাবিক পোশাকের উপর বোরকা চাপাচ্ছে, আবার কেউ কেউ পোশাক গায়ে রাখাটা কম পছন্দ করছে। মানুষ সভ্য হওয়ার পর, আধুনিক হওয়ার পর নারী পুরুষের পোশাকেরও একটা স্বাভাবিকীকরণ হয়েছে। এই পোশাকের ক্ষেত্রেও অনেকে কোনো মতামত পছন্দ করেনা। তারা মনে করে, "উলঙ্গ বা অশ্লীল বলে কিছু নেই বা পোশাক ও যৌন ক্ষেত্রে সভ্যতা বলে কোনো কিছু  নেই। অনেকে মনে করে," উলঙ্গ, অশ্লীল শব্দটি রক্ষণশীলরা ব্যবহার করে, প্রগতিশীলরা নয়। " আসলে বিষয়টি কি তাই ?

বর্তমান জগতে শরীরে পোশাক না থাকলে তাকে উলঙ্গ বলে এবং প্রকাশ্যে যৌন উত্তেজক পোশাক পরলে ও যৌন কাজ করলে তাকে অশ্লীল বলে। এটা ভুল কিছু নয়। এটা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করার ক্ষেত্রে সাধারণ সৌজন্যের কথা। তবে কারও যদি সম্পূর্ণ আদিমভাবে সব কিছু গ্রহণ করতে ভাল লাগে, সেক্ষেত্রে তাকে সামাজিক স্বাভাবিক সৌজন্যবোধের কথা  স্মরণ করিয়ে দেয়া  যায় বা সামাজিক যেসব সংস্কৃতি আমাদের কারও ক্ষতি করেনা সেসব ব্যাপারে তার সাথে আলোচনা করা যায়। এতে মানুষের সংস্কৃতি উন্নতই হবে।  "সভ্যতা"বলে শব্দটি যারা উড়িয়ে দেয় বা কেবলমাত্র প্রযুক্তির উন্নতি বলে ধরে নেয় -তাদের সাথে মারামারি, কাটাকাটি করার কিছু নেই। তবে আলোচনা চলতে পারে।

আমার কোনো কোনো বন্ধু বলেন যে, "বাংলাদেশের সমাজে জন্মেছি বলে আমি উন্নত অনেক দেশের খোলামেলা পোশাক ও যৌন আচরণকে পছন্দ করিনা। যদি পশ্চিমা দেশে জন্মাতাম তাহলে আমি ওদের ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতাম।"
তাদেরকে বলছি-যদিও আমি বাংলাদেশে থাকি তবে সারাবিশ্ব চোখে দেখতে পাই। কোথায় কতটুকু ভালবাসা, শান্তি, আদিখ্যেতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, ভোগবাদিতা, পাশবিকতা, মানবিকতা সৃষ্টি হয়েছে তাও দেখি। আমি বাংলাদেশে জন্মেছি, লেখাপড়া এখানে শেষ করেছি। এদেশের শিক্ষিত, আধুনিক সংস্কৃতিবান পরিবারের নারী পুরুষরা শার্ট, প্যান্ট, পাজামা পাঞ্জাবী,  সালোয়ার কামিজ, শাড়ী পরে। এখানকার বেশীরভাগ মানুষ এইসব পোশাকে অভ্যস্ত। এখানে পাপ পুন্যের কোনো অজুহাত নেই, বরং এটাকে মানুষের সমাজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে  ধরা হয়।  এসব পোশাকে আমাদের শারীরিক বা মানসিক কোনো ক্ষতিও নেই, আবার ব্যক্তি এবং সমাজের কোনো সামাজিক সৌজন্য নষ্ট হয়না। অকারণে এখানে কেউ অর্ধ উলঙ্গ বা উলঙ্গ হয়না বা বুক, স্তন বের করে চলেনা। এখানে নারী পুরুষ কেউ হাফপ্যান্ট পরে বুক বের করে চললে তাকে মাস্তান বা বেয়াদব বা খারাপ বলা হয়। এখানে কারা সামাজিক নারী পুরুষ এবং কারা পর্ণোস্টারের মত নারী পুরুষ তা সবাই আলাদা করতে পারে। বাংলাদেশের লোকদের পোশাকের এই যে স্বাভাবিকতা - তা সামাজিক উন্নত বোধকেই সম্মান জানায়।

আবার এদেশে প্রেমিক প্রেমিকা বা যৌন সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিরা কেউ রাস্তায় রাস্তায় প্রকাশ্যে চুমু খায়না এবং যৌন কাজ শুরু করেনা। এদেশের শিক্ষিত পরিবারের লোকজন স্ত্রী, প্রেমিকাকে চুমু ও যৌন কাজের জন্য নিরিবিলিতে ডাকতে পছন্দ করে। ভালবেসে বা ভোগের সময় যৌন কাজের জন্য নিরিবিলি জায়গা খোঁজাটা পশুদের সমাজ থেকে মানুষকে সম্মানজনকভাবে আলাদা করেছে এখানে। এতে কারো ক্ষতি হয়না, বরং ভাল হয়।

আমরা সবাই স্বাধীন মানুষ। স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার ও চলার অধিকার আমাদের সবার আছে। কিন্তু আমরা সামাজিক জীব। সমাজের সবার স্বাধীনতা, মানবিকতার দিকে খেয়াল না করে একা একা খাওয়া, চলা, যাচ্ছে তাই আচরণ করা শোভন নয়।

যারা একেবারে আদিমভাবে চলতে, বলতে পছন্দ করে, তাদের সমাজে জন্মাইনি বলে বা তাদেরকে সমর্থন করিনা বলে আমাকে যদি কারও রক্ষণশীল মনে হয়, তবে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কারণ, যেভাবেই হোক প্রগতিশীলতার নামে কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা আমার সংস্কৃতিতে বাসা বাধেনি। কোনো পাপ পুন্যের দোহাই ছাড়া আমি স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি এবং সামাজিক কাজকর্মে  সুস্থ, সুন্দরভাবে জড়িত আছি।











৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×