somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্য

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একালের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকে সাংবাদিকরা একবার প্রশ্ন করলেন, 'রবীন্দ্র সাহিত্যকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?'
সমরেশ বাবু অকপটে উত্তর দিলেন, 'সৌভাগ্য হোক কিংবা দুর্ভাগ্য জন্মসূত্রে আমি সনাতন ধর্মের। সঠিকভাবে ধর্ম মানি বা না মানি রবীন্দ্র সাহিত্য আমার কাছে ধর্মগ্রন্থ। এবং রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে ঈশ্বর। '
সমরেশ বাবুর মতো অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের ঈশ্বর মনে করেন। বাংলা সাহিত্যের ঈশ্বর তূল্য রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্য কী এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন- ''অন্তরের জিনিসকে বাহিরের, ভাবের জিনিসকে ভাষার, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলাই সাহিত্যের কাজ।''



'সাহিত্য' শব্দটি বাংলা 'সহিত' শব্দ থেকে সৃষ্ট। 'সহিত' শব্দমূলের সঙ্গে 'য' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে 'সাহিত্য' শব্দটি গঠিত হয়েছে। 'সহিত'-এর অর্থ-সংযুক্ত, সমন্বিত, সঙ্গে, মিলন, যোগ, সংযোগ, সাথে বা সম্মিলন। 'সাহিত্য' শব্দের আভিধানিক অর্থ-সহিতের ভাব, মিলন বা যোগ; অথবা- জ্ঞানগর্ভ বা শিক্ষামূলক গ্রন্থ; আবার-কাব্য-উপন্যাসাদি রসাত্মক বা রম্য রচনা, যাতে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের মিলন
ঘটে।


বিশ্বসাহিত্য কিংবা বাংলাসাহিত্যকে একইভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
সহজভাবে বললে সাহিত্য ব্যাখ্যা করার চেয়ে উপলব্ধি করার বিষয়। সাহিত্য প্রকাশের অনেকগুলো মাধ্যম বা ধারা আছে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গীতিকবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া, নিবন্ধ ইত্যাদি। মূলধারার সাহিত্য বলতে আমরা কবিতা ও উপন্যাসকে বুঝি। সাহিত্যের আদিমতম
উপাদান হচ্ছে কবিতা। শব্দ এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকার জন্য সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। কারণ বিষয়টা এমনই যে দিনের পর দিন আলোচনা, ব্যাখ্যা এবং উদাহরণ দিলেও শেষ করা সম্ভব নয়। মোদ্দাকথা সাহিত্য হচ্ছে উপলব্ধি করার জন্য।



আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ব্যাখ্যা করতে বললে বলব- জীবনের কল্যাণের জন্য, মানুষের সুখ-দুঃখ বোধ জাগ্রত করা, আত্মতৃপ্তি, জাগতিক ও অপার্থিব উপলব্ধি এবং বিনোদনের জন্য যা কথা বলে- সেটাই সাহিত্য। এর মধ্যে পাবেন প্রেম,ভালোবাসা এবং জীবনবোধ। এবং যিনি কথাগুলো বলবেন তিনি হচ্ছেন সাহিত্যিক। সেইজন্যেই- "ধর্মগ্রন্থে স্রষ্টার বাণীসমূহ এবং মনীষী বা মহামানবদের কল্যাণমূলক সকল বাণীই সাহিত্যের পর্যায়ভুক্ত।"


ডাঃ লুৎফুর রহমানসহ অনেক সাহিত্যিক ও ভাষাবিদ সাহিত্যের পরিধি বুঝাতে এই সংজ্ঞাটি সমর্থন করেছেন।


এভাবে দেখলে সাহিত্য অবশ্যই জীবনের চিত্র। কিছু সাহিত্য আমাদের ভাবনার খোরাক তৈরি করে, কিছু নিছক বিনোদন দেয়, কিছু সাহিত্য কাঁদায়-হাসায়, কিছু জীবনকে দেখতে, বুঝতে ও জানতে শেখায়। অর্থাৎ রক্ত মাংসের মানুষকে মানবিক, নৈতিক, আবেগ ও বিবেক বোধে পরিপূর্ণ একজন মানুষ তৈরি করতে সাহিত্য অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখে।


সাহিত্য আমরা কোথায় পাই? বই বা নির্দিষ্ট কোনো পাণ্ডুলিপিতে। যেখানে থাকে গল্প উপন্যাস কিংবা কবিতা। একজন হতাশগ্রস্ত কিংবা কর্মব্যস্ত মানুষ চাইলেই বইয়ের সাদাকালো পৃষ্ঠার ভেতর থেকে সমুদ্র ঘুরে আসতে পারেন, পাহাড়, অরণ্য দেখে আসতে পারেন। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে পারেন। বন্ধুহীন মানুষ বইয়ের ভেতর পেতে পারেন নিজের শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে। পুরোপুরি না
হলেও কাছাকাছি উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। যেটা তার বাস্তবিক জীবনে সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা রাখে।



আধুনিক বাংলাসাহিত্যের গ্রান্ডমাস্টার হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, 'নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট দূর করার উপায় হচ্ছে কিছু লেখা। নিজের দুঃখটাকে অন্যের ভেতর প্রভাবিত করে দেওয়া।' অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তাঁর দুঃখ, ব্যথা,স্বপ্ন, আক্ষেপ সবকিছু সাহিত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। যাতে তাঁর নিজের ভেতরটা যেমন তৃপ্তি পায় তেমনি যাঁরা পাঠ করবেন তাঁরাও নিজের স্বপ্ন, ব্যথা, দুঃখগুলোর সাথে নিজেকে দ্রবীভূত করতে পারবেন।


যার ফলে পারস্পরিক উদরতা, মতাদর্শ, জ্ঞান ও দক্ষতার প্রকাশ এবং বৃদ্ধি ঘটবে। ব্যক্তি পরিচিত যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হবে। মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাও বৃদ্ধি ঘটবে। যেটা অন্য কোনো মাধ্যমের তুলনায় সাহিত্য পাঠ ও রচনায় অতিদ্রুত করা সম্ভব হয়।


মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনচেতা। যে জিনিসটি তার ব্যক্তিস্বাধীনতায় বাঁধা সৃষ্টি করে কিংবা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটা সে গ্রহণ করতে চায় না। তাই সব ধরনের সাহিত্য, বই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় না।


মানুষ সবসময় চায় জ্ঞানগর্ভ কঠিন কথার তুলনায় সহজবোধ্য ও আনন্দময় কিছু। এই জন্যেই সাহিত্যের বইয়ের তুলনায় পরীক্ষা পাশের পাঠ্যবই আমাদের কাছে এতটা রসকষহীন। পাঠ্য বই পড়ায় আমাদের আগ্রহ কম, কারণ বেশিরভাগ সময় এটা শুধুমাত্র পরীক্ষা পাশের জন্য পড়া হয়। যা একজন পাঠক বা ছাত্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়া।
সেই তুলনায় সাহিত্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। আমরা প্রায় শতভাগ স্বাধীন থেকে সাহিত্যের বই পাঠ ও রচনা করায় মনোনিবেশ করতে পারি। যেটা পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।



মানুষের স্বজাত প্রবৃত্তি, স্বাধীনচেতা মনোভাব, বিনোদিত হওয়ার বাসনার কারণেই গল্প উপন্যাস কিংবা কবিতার বইয়ের তুলনায় পাঠ্যবই বহুলাংশে পিছিয়ে। কারণ মানব সাইকোলজি বরাবরই 'পরীক্ষা' নামক বিষয়টির উপর দ্বিধা, ভীতি, এবং অনীহা প্রকাশ করে। নির্মল সাহিত্যর সাথে পরীক্ষা নামক কোনো ব্যাপার জড়িত নয়। তাই সাহিত্যর বই পাঠ্য বইয়ের তুলনায় জনপ্রিয়।



উপরের আলোচনা দিয়ে আমি যে কয়টি
বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করতে চেয়েছি তা হলো।
১। সাহিত্য কী?
২। বাস্তব জীবনে সাহিত্যের প্রভাব।
৩। উদার ও নিরাপদ সমাজের জন্য সাহিত্য চর্চা(সাহিত্য পাঠ বা লেখা)-এর গুরুত্ব।
৪। সাহিত্য কি ব্যক্তিমনের খোরাক? ব্যাখ্যা।
৫। সাহিত্যের বইয়ের তুলনায় পাঠ্যবই পড়ার প্রতি সবার এত অনীহা কেন?



‪#‎পরিশিষ্টঃ‬ আমি মাঝেমধ্যে গল্প কবিতা লেখার চেষ্টা করলেও মোটেই সাহিত্যিক নই। এই ব্যাপারে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। তবে ছেলেবেলা থেকে প্রচুর বই পড়েছি। এবং আর দশজনের মতো পাঠ্যবই পড়ায় আমারও ভারি অনীহা।
সেই হিসাবে নিজেকে সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ ছাত্র বলতে পারি। মানুষের সাইকোলজি সবসময় সহজ কিছু চায়।
আমরা জ্ঞানের কথা শুনতে কম পছন্দ করি। এই লেখায় পাঠক হয়তো সাহিত্যের নির্মল আনন্দ পাননি। জ্ঞান জ্ঞান গন্ধ আসছে। হয়তো কিছু কাঠিন্যও এসেছে। পুরো লেখা পড়ার পর নিজের কাছেই মনে হচ্ছে সাহিত্য নামক ব্যাপারটা সবার কাছে
আবার বিভীষিকা না হয়ে যায়! সবার সম্মানে জানাচ্ছি সাহিত্য সত্যিকার অর্থেই আনন্দের মাধ্যমে জ্ঞান দেওয়া।


সর্বশেষে ছেলেবেলায় শোনা একটি ছড়া এবং পুঁথি আপনাদের জন্য। আশাকরি মজা পাবেন। শুধুমাত্র আনন্দের জন্য নিতে পারেন আবার কেউ চাইলে ব্যাখ্যাও দিতে পারেন...



'সাতটি ঘোড়া পাড়ল ডিম
শেয়াল দিল তা
দু'দিন পরে বের হলো এক
কানা বগির ছা
বা বা বা
কী মজা..'



'আয় আয় আয় আয়
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল
কিছুদূর যাইয়া মর্দ রওনা হইল।
লাখে লাখে সৈন্য মরে
কাতারে কাতার
গুণিয়া দেখি হইল-
পঞ্চশ হাজার!'
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×