এই বার্তায় জাওয়াহিরি ক্রিমিনাল বলে চিত্রায়িত করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের কারিগরদের। যাদের পঁচাত্তরে শেষ করে ফেলা হয়েছে। যারা ইতিহাসের সেই জঘন্যতম কাজটি করেছিল, তারা কারা? কারা তাদের পৃষ্ট পোষকতা করেছে? এই অডিও বার্তায় কি তাদেরই প্রেতাত্নারা কন্ঠ দিয়ে গেল না?
জাওয়াহিরির বার্তা থেকে যদি তার নামটি মুছে ফেলা হয় তাহলে অনুমান করা অনেক বেশি সহজ হয়ে উঠবে। এটা আসলে কাদের প্রানের কথা। আমরা তো জানি মাত্র কদিন আগে কে বাহাত্তর এর সংবিধান নিয়ে কে বিষদ্গার করেছে।
সাঈদির রায় ঘোষণার পর সমগ্র দেশ জুরে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলে তা দমনে যখন দেশপ্রেমিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিল তখন কে বলেছিল দেশে গণহত্যা চালান হচ্ছে।
আমরা এটাও দেখেছি মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সঠিক বিচারের দাবীতে যখন শাহবাগ উত্তাল হয়ে উঠল তখন সেই লক্ষ জনতাকে নাস্তিক বলে অভিহিত করে কারা সেই আন্দোলনকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
আমরা এটাও জানি শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতিদের উঠিয়ে দিতে গিয়ে আড়াই হাজার মওলানাকে হত্যা করা হয়েছে বলে কারা প্রচারনা চালিয়েছে। যে সংখ্যাটি শেষ পর্যন্ত মাত্র চল্লিশে নেমে এসেছিল। অথচ সত্য তো এটা যে, আগে পড়ে কিছু মানুষ হতাহত হলেও সেই অভিযানের একজন মানুষও নিহত হননি। কাজেই এই বার্তায় যে বলা হয়েছে বাংলাদেশে 'মুসলমানদের ওপর একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে” সেটিও নতুন কোন কথা নয়।
বার্তাটিতে সবচেয়ে চমকপ্রদ আহ্বানটি হল; ইসলামের 'সত্যিকারের নেতাদের' কাছে জড়ো হয়ে তাদের সমর্থন ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি তার আহ্বান। প্রশ্ন হল বাংলাদেশে ইসলামের 'সত্যিকারের নেতা কারা?
এটা তো সত্যি এ দেশে কিছু সংখ্যক ইসলামের সেবক নামধারী নেতা বর্তমানে ভীষণ বিপদে আছেন। তাদের কাউকে মহামান্য আদালত ইতিমধ্যে সাজা প্রদান করেছেন। কেউবা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে এখন বিচারের কাঠগড়ায়। সেই সাথে গত কয়েক মাস ধরে দেশ জুড়ে চালান নৈরাজ্যের দায়ে অভিযুক্ত অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাহলে কি জাওয়াহিরি এই নেতাদের রক্ষার্থেই বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন?
এ প্রশ্নের উত্তর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরে পাকিস্তানের জামায়াত ইসলামী দিয়েছে- তাকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করে। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের শুরু থেকেই শুনে আসছি মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের নামে সরকার ইসলামি নেতাদের উপর জুলুম করছে। সে হিসেবে তাদের ভাষায় এ দেশের ইসলামি নেতা কাদের মোল্লা-সাঈদিরাই! একে মিথ্যে প্রমান করতে হলে এ দেশের প্রকৃত ইসলামী নেতাদেরই এদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। নয়ত তাদেরকেও একসময় ইসলাম বিরোধী বলে চিত্রায়িত করা হবে। যা শুধু তাদের জন্যই নয় দেশের জন্যও ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
জাওয়াহিরির এই অডিও বার্তাটি যদি তারই হয়ে থাকে তা যেমন আমাদের জন্য অনেক বেশি উদ্বেগের। ঠিক তেমনি এটি যদি তার না হয় তাহলেও কম উদ্বেগের নয়। কারণ এটি নিছক কোন অডিও বার্তা নয়, বলা যায় এ দেশের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও এই বার্তাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বিনাশী এক ভয়াবহ চক্রান্ত। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে যতই নগণ্য হোক না কেন দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে এরা যথেষ্ট পারঙ্গম।
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ হলেও এ দেশের মুসলমানরা সুফিবাদে বিশ্বাসী। এটা যেমন দেশটির অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে তেমনি এটাও তো ঠিক; এই মাটিতেই জন্ম হয়েছে বাংলা ভাই, শায়খ আঃ রহমানদের। ঠিক যেমন রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা উভয়ই এ দেশের মাটিতেই বেড়ে ওঠা এ মাটিরই সন্তান। এটা ভুলে গেলে চলবে কেন?
সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে লক্ষ লক্ষ কওমি মাদ্রাসা প্রতিনিয়ত যে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের মত করেই বড় করে তুলছে তার মধ্য থেকে যে কতক সংখ্যক জঙ্গিবাদের ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠছে সে খবর কি আমরা রাখি? বাংলাদেশ সরকারের হয়ত সামর্থ্য নেই এতদসংখ্যক মাদ্রাসার ব্যয়ভার বহন করা। তবে এটা তো সম্ভব এই মাদ্রাসাগুলির অর্থায়ন-পাঠ্যসূচি এসব নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা। এটা এখন সময়ের দাবী।
গ্রাম বাংলার সহজ সরল ধর্মভীরু মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলতে চান। সামর্থ্যের অভাবে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন তারা নিশ্চয়ই সন্তানকে জঙ্গি বানাতে চান না। তাদের অর্থাভাব এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সন্তানদের যদি কেউ জঙ্গি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে সে দায় ভার কার? রাষ্ট্র কি এ ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারে?
জাওয়াহিরির এই বার্তা যদি সঠিক হয় তাহলে তিনি যাদের উপর ভরসা করে এই আহবান জানালেন তারা তো এ দেশেরই সন্তান। এ দেশেই তাদের বাস। এরা যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা তো মাত্র ক’দিন আগেই আমরা দেখলাম।
বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানাব জাওয়াহিরির এই বার্তা সঠিক হোক বা না হোক একে হালকা ভাবে দেখবেন না। আমরা এটাও উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ করছি বিএনপি নেত্রী এ পর্যন্ত এই বার্তা সম্পর্কে মর্মাহত(!) টাইপেরও কোন প্রতিক্রিয়া দেখান নি। কাজেই এ দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা অক্ষুণ্ণ রাখতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। আর তা তারা যত দ্রুত নিতে সক্ষম হবে ততই মঙ্গল।
সঞ্চালক; আপন ভুবন ডট কম
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২২