somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ - ব্লগিং এবং মিডিয়া মোঘলদের মানসিক দৈন্য!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সচেতন মানুষ সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরতে চায়। সমাজে সংঘটিত নানা অনিয়ম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, রাজনীতিবিদদের ত্রুটি সমূহ ধরিয়ে দিতে নিজের অভিমতটি তুলে ধরতে চায়। নিজের বিবেচনাকে শেয়ার করতে চায় কর্তাব্যক্তিদের সাথে। কিন্তু উপায়টা কি?

তথ্য প্রযুক্তির এই জোয়ারের পূর্ব পর্যন্ত তাদের ক্ষোভ প্রকাশের একমাত্র উপায় ছিল সংবাদপত্রের চিঠিপত্র ও মতামত কলাম। কিন্তু তাঁর তো একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া মতামতটি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন তা উপস্থাপনের জন্যও তো চাই একটি মান সম্পন্ন লেখা। কাজেই খুব কম সংখ্যক মানুষের পক্ষেই পত্রিকার পাতায় স্থান করে নেয়া সম্ভব হত।
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে স্থান সংকুলানের সে অভাবটি দূর হয়েছে সত্য তবে সংবাদপত্র নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মানসিক দৈন্য কতটা দূর হয়েছে তা বলা মুস্কিল। কারণ কয়েকটি সংবাদ পত্রের অনলাইন ভার্সনের স্ক্রলে ব্লগ নামক একটি পাতা দেখা গেলেও বেশিরভাগই এখনো সে অব্ধি যাননি। এখন কথা হচ্ছে সংবাদপত্রের সাথে ব্লগ শব্দটি কেন জুড়ে দেয়া হবে? ব্লগারদের জন্য মূল অনলাইন পত্রিকার একটি পাতা থাকতে পারে না? যেখানে ব্লগাররা তাদের লেখাগুলো পোষ্ট করতে পারেন। ঐ পত্রিকা তাদের প্রত্যাশিত মানের লেখাগুলোই প্রকাশ করুক। তাতে তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু মান সম্পন্ন বক্তব্য নির্ভর লেখা প্রকাশে বাধাটা কোথায়?

অস্বীকার করছি না যারা বিভিন্ন ব্লগে লেখেন তাদের মধ্যে কিছু লেখা দেখা যায় এর-ওরটা জোড়া দেয়া। কিন্তু তাই বলে মৌলিক লেখা যে কেউ লিখছেন না তা তো নয়। মাঝে মাঝে এমন অনেক জ্ঞানগর্ভ লেখা দেখা যায় যা সত্যিই যে কোন বিচারে মান সম্পন্ন। অথচ লেখাটি পাঠকপ্রিয় কোন সাইটে না থাকায় তা সাধারণ মানুষের তেমন একটা নজরেই আসে না। এতে করে ঐ লেখকও এক সময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যা দুর্ভাগ্যজনক সন্দেহ নেই।

বর্তমানে বাংলা ভাষায় শতাধিক ব্লগে ব্লগাররা লিখছেন। আর এই অজস্র লেখার মাঝে যে মুক্ত মানিক একেবারেই মেলে না তা তো নয়! অথচ এই ব্লগারদের নেই নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা। একটি সাইটে লিখতে লিখতে হয়ত তাঁর কিছু লেখক বন্ধু পাঠক জুটল। কিন্তু হটাতই একদিন দেখলেন ব্লগ স্থির হয়ে আছে। নতুন কোন লেখা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তখন তাকে ছুটতে হয় অন্য সাইটে। যেখানে আবার নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করা, অন্যদের সাথে ভাব জমানো। এটা একজন লেখকের জন্য অনেকখানি কষ্টের।

কৈশোর থেকেই মানুষ লেখালেখি নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। যা হয়ত তাঁর পাঠ্য বইয়ের কোন এক কবি বা কবিতার প্রতি ভালোলাগা থেকেই শুরু। তখন থেকেই এমন একজন কবি হতে পারা বা এমন একটি কবিতা যদি লিখতে পারতাম! এই তাড়না থেকেই তাঁর লেখার শুরু। আর এরই মধ্যে থেকে একদিন হয়ত একজন সুকান্ত, একজন জীবনানন্দ বেড়িয়ে আসে। এই যে অজস্র সুপ্ত প্রতিভা ছড়িয়ে আছে দেশের আনাচে কানাচে; একটা সময় ছিল যখন তাদের চাইলেও একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি এখন সেই সুযোগটি করে দিয়েছে খুব সহজেই। ফেসবুক, ব্লগ এমন অসংখ্য অনলাইন মিডিয়ায় আমরা এদের অবাধ বিচরণ দেখতে পাই। তারা লিখছে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। এক সময় নিজেদের লেখার মান সম্পর্কে নিজেই বুঝতে পারছে। কেউ ঝরে যাচ্ছে, কেউ শানিত হচ্ছে এ নিয়ে এদের কোন আক্ষেপ নেই।

কিন্তু সমস্যা হল তাদের নিয়ে যারা একটু ভাল লিখেন। তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি বিশেষায়িত ব্লগের প্রতি আকৃষ্ট হন যেখানে একটি নূন্যতম মান বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ মোডারেট ব্লগের প্রতিই তাদের আকর্ষণ। আর সে জন্যেই এদের যত্রতত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে লিখতে চেষ্টা করেন। আর সে লেখা থেকে নেয়ার মত অনেক উপাদানও মেলে। এই সব ব্লগাররা মূলত সমাজকে বদলে দিতে। নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সমাধান খোজার চেষ্টা করেন। তবে লক্ষণীয় বিষয় হল এদের কোন প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা নেই। কজন পাঠক লেখাটি পরলেন। বা কতজন এর পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিলেন এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল এই সব বিশেষায়িত ব্লগের পাঠক সংখ্যা নিতান্তই কম হওয়ায় এসব ব্লগ সাইট তেমন কোন এ্যাডভার্টাইজমেন্ট সাপোর্ট পায় না। ফলে এক সময় এই সাইটগুলি নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ হয়ে যায়। অথবা এর মোডারেটরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে অকালমৃত্যুর স্বীকার হয় সাইটগুলি। সেই সাথে এক একটি সম্ভাবনারও।

আশ্চর্যজনকভাবে অনেক প্রভাবশালী মিডিয়া গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানেরও মাঝে মাঝে একই পরিণতি দেখতে পাওয়া যায়। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বহুল ব্যবহৃত একটি শ্লোগানকে নামকরণ করে চালু করা একটি ব্লগ সাইট। বেশ কিছুদিন এই মোডারেট ব্লগটি চালু ছিল। যেখানে বিষয় ভিত্তিক লেখা প্রদানকে উৎসাহিত করা হত। ইভ-টিজিং সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এই ব্লগটি বেশ সরগরম ছিল বহুদিন। হটাতই একদিন দেখা গেল নতুন কোন লেখা প্রকাশ করা হচ্ছে না। সাধারণ ব্লগাররা বেশ কয়েকবার কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে আলোচনাও করতে চেয়েছেন বলে শুনেছি। তবে শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে ব্লগটি আর চালু করা হয়নি। অথচ এই ব্লগে প্রকাশিত ঢাকার যানজট থেকে মুক্তির উপায় সম্বন্ধে একটি লেখা এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে তা নিয়ে চ্যানেল আইতে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে ঐ ব্লগার তাঁর পরিকল্পনাটি তুলে ধরে ছিলেন। ঠিক একই ভাবে শাহবাগ আন্দোলনকে ঘিরে চালু হওয়া ব্লগ সাইটটিরও একই পরিণতি দেখা গেছে।
সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল এই সব ব্লগ কর্তৃপক্ষ, ব্লগের প্রাণ যে ব্লগাররা তাদের কাছে সামান্যতম দায়বদ্ধতা অনুধাবন করেন না। যে অন্তত ব্লগারদের জানিয়ে দেয়া উচিৎ কেন তারা এটি বন্ধ করে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ একটি অনলাইন মিডিয়ার স্বনামে চালান ব্লগ সাইট হঠাত করেই পুরনো ব্লগারদের লেখা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিল যারা এই ব্লগটির শুরু থেকে এর সাথে সংযুক্ত ছিল। এক কথায় বলা যায় যে সব ব্লগাররা একে নিয়ত প্রাণবন্ত করে রাখত। হঠাৎই একদিন দেখা গেল ব্লগটিতে কোন ব্লগারের লেখা নেই সেখানে দেশের সব প্রথিতযশা লেখক সাংবাদিক সহ বিশিষ্ট জনদের নানা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার কপি। সাধারণ ব্লগারদের অচ্ছুত করে রেখে দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের লেখাগুলো এখানে কেন (রিপোষ্ট) প্রকাশ করা শুরু হল তা একমাত্র তাড়াই জানেন। অথচ ব্লগটি শুরু থেকেই মোডারেট ব্লগ। এখানে একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখেই যে কোন লেখা প্রকাশিত হত। আমার কথা হল পূর্বে যে সব ব্লগাররা এখানে লেখা প্রকাশের যোগ্য বলে বিবেচিত হত আজ হঠাৎ করে কোন বিবেচনায় তারা অযোগ্য হল?

আমাদের মিডিয়া জগতের কর্তা ব্যক্তিদের এ সব কার্যকলাপকে হীনমন্যতা বললে কি খুব বেশী অন্যায় হবে? ব্লগাররা লিখেন তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। কোন প্রাপ্তির আশায় নয়। তারা একটু স্পেস কেন পাবেন না?
আমাদের মিডিয়া জগতের কর্তা ব্যক্তিদের হীনমন্যতা নতুন কিছু নয়। এর আগে কাগজে মুদ্রিত পত্রিকার সিমাবদ্ধতার কথা বলে যা এতদিন আড়াল করে রাখার চেষ্টা চলেছে। আজকের এই অনলাইন মিডিয়া সেটাই যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

তাদের এই হঠকারিতার জন্য ব্লগারদের মাধ্যমে যে জনমানুষের কথা উঠে আসছিল। সেটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। আজকে ব্লগারদের এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে নাও ভিড়াতে হয়, কেন?

যারা প্রতিষ্ঠিত লেখক প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্টনিক মিডিয়া সর্বত্র যাদের অবাধ বিচরন নতুনদের জায়গাটা কেড়ে নিয়ে কেন তাদের লেখাকেই পুনঃমুদ্রিত করতে হবে?
নাকি এ দেশে দুই ভাগে বিভক্ত রাজনীতিবিদদের বশংবদ লেখক ছাড়া নতুনের সত্যভাষন - স্পষ্ট উচ্চারন তাদের সয় না?

সামহোয়্যার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ এর মত ব্লগ সাইটগুলি আছে বলেই আজো নতুন নতুন ব্লগার ব্লগিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন। নয়ত ব্লগিংয়ের চর্চাটাই হয়ত বন্ধ হয়ে যেত। আমাদের মিডিয়া মোঘলরা একটি ব্লগ সাইটের জন্য বছরে দুইটি হাজার টাকা গচ্ছা দিতে পারবেন না। একজন মোডারেটর নিযুক্ত করতে পারবেন না এতটা দীনতা সত্যিই দুঃখজনক। সেইসাথে লজ্জারও বটে।

[email protected]
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×