somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় বাংলাদেশ যেন হারিয়ে না যায় কুপমুন্ডকতার অতল গহ্বরে

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলায় প্রথম কুরআনের অনুবাদ করেছিলেন কে? আমাদের দেশের নাম করা কোন পীর নন। অনুবাদ করেছিলেন একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী পণ্ডিত। পরবর্তীতে যিনি ব্রাহ্ম ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করেন। আমরা যাকে ভাই গিরিশ চন্দ্র নামে জানি। উদ্দেশ্য ছিল মহা পবিত্র কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধন।

এই মহান মানুষটি শুধু যে মহা পবিত্র কুরানেরই অনুবাদ করেন তা নয়। তিনি মিশ কাত শরীফের প্রায় অধিকাংশ, হাদিস, তাজকিরাতুল আউলিয়া, দিওয়ান-ই-হাফিজ, গুলিস্তাঁ, বুস্তাঁ, মকতুব্বত-ই-মাকদুস, শারফ উদ্দিন মুনিবী, মসনভী-ই-রুমী, কিমিয়া-ই-সাদত, গুলশান-ই-আসরার ইত্যাদিসহ বহু ইসলামি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।

তৎকালীন মুসলমান আলেমসমাজ এই মহৎকর্ম সম্পাদন করার জন্য এই অজ্ঞাতনামা অনুবাদকের প্রশংসা করে ব্রাহ্মসমাজের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। যা আমাদের বর্তমান আলেম সমাজের কাছ থেকে চিন্তাই করা যায় না।
তাঁদের প্রশংসাপূর্ণ পত্রের অংশবিশেষ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
আমরা বিশ্বাস ও জাতিতে মুসলমান। আপনি নিঃস্বার্থভাবে জনহিত সাধনের জন্য যে এতাদৃশ চেষ্টা ও কষ্ট সহকারে আমাদিগের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধনে নিযুক্ত হইয়াছেন, এজন্য আমাদের অত্যুত্তম ও আন্তরিক বহু কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি দেয়।
কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা, অনুবাদক সাধারণ সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন। যখন তিনি লোক মন্ডলীয় এতো দৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন, তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্ম-পরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিত।
এ ছারাও গিরীশ চন্দ্র রচনা করেন জীবনীগ্রন্থঃ
*ইমাম হাসান ও হোসাইন। প্রকাশকাল ১ জানুয়ারি, ১৯০১।
*চারিজন ধর্মনেতা [ প্রথম চার খলিফা, তথা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.) এবং হযরত আলী (রা.)]-এর জীবনী। প্রকাশকাল ২৫ জুলাই, ১৯০৬।
*চারি সাধ্বী মোসলমান নারী ( হযরত খোদেজা, ফাতেমা, আয়েশা ও রাবেয়ার জীবনী। মৃত্যুর পর প্রকাশিত।

আজকাল এ দেশে যারা নিজেদের পীর বলে দাবী করেন তারা দাবী তুলছেন হিন্দুদের তৈরি কাব্য বর্জনের। যদিও তাদের শিক্ষা সূচনা হয়েছিল সীতানাথ বসাক এর আদর্শ লিপি পাঠের মধ্য হতে। তারাও বেড়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে নানান কবি সাহিত্যিকের সৃষ্ট পাঠ পড়েই। আর তাতে তাদের ধর্ম কর্মে কোন ব্যাঘাত ঘটেছে কিনা তা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, তারা পড়েছেন সত্য তবে হৃদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে কারণেই নিজেদেরকে ক্ষুদ্র মানসিকতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে সক্ষম হন নি। আশ্চর্যের বিষয় হল তাদের এই দাবী মানার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বেশ উৎসাহী হয়ে উঠেছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই এনসিটিবি রেখেছে। তাহলে কি আমরা ধরে নেব এরপরেই আঘাতটা আসবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এর উপরে! আমাদের সরকার বাহাদুর তখন কি করবেন?

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার এর লেখা “দুখের তুলনা” কবিতাটি( একদা ছিল না যুতা চড়নও যুগলে/ দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে ….) অনেক আগেই পাঠ্যসূচি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন দেখছি যতীন্দ্র মোহন বাগচী-এর কবিতা ‘কাজলা দিদি’ কেও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন এ সব সাহিত্য পাঠ থেকে শিশু কিশোরদের দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে? বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা এই পীর মহাজনদের কাছে কোনোদিনই ভাল লাগেনি যদিও এই বাঙলার আলো জলেই তাদের বেড়ে ওঠা। এই বাঙলার আল ক্ষেত ধরেই তাদের ছুটে চলা। তারা বাংলায় মোনাজাত করেন না উর্দুতে করেন; এমন কি হিন্দিতেও। কেন?

তারা বাংলা শ্লোক বলেন না, উর্দু শের তাদের খুব পছন্দ! উর্দু তো মহানবী(সঃ) এর ভাষাও নয়। তাহলে কেন তাদের এমন উর্দু প্রীতি? তারা জল বলতে নারাজ, বলবেন পানি। পানি তো মুলত উর্দু শব্দ কেন এক্ষেত্রে বাংলা ‘জল’ বলা যাবে না? সাধারন ভাবে মনে হবে এটা হয় উর্দু প্রিতি নয়ত বাংলার অবমাননা, আসলে তা নয় এটাও ঐ সংকির্নতা। কেননা জল শব্দটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্যবহার করে। তারা তো ‘বাংলা’ শব্দটিও ব্যবহার করে তাই বলে কি আমরা বাংলার স্থলে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করব? সেটাও নিশ্চয়ই তারা উর্দু থেকেই নিতেই বলবেন? তাহলে আর বাহান্ন কেন? কেন ভাষা আন্দোলন? কেন সেদিনের আত্মত্যাগ?

এরপরে কি তারা ভাই গিরীশ চন্দ্রকেও বর্জন করতে বলবেন? অসম্ভব কিছু নয়। তৎকালীন ভারতবর্ষের আলেম সমাজ যা মেনে নিতে পেরেছিলেন বর্তমান আলেম সমাজ তার কিয়দংশ পর্যন্ত মেনে নিতে অক্ষম। সেই মানসিক উচ্চতা ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। একটি সৎ উপদেশ, একটি মানবতার উক্তি। একটি উচ্চ মাগীয় সাহিত্য যেখানেই থাকুক না কেন। যিনিই রচনা করুন না কেন। তা গ্রহণ করতে তাদের এত বাধে কেন?

আমাদের ভয়টা এই কুপমুন্ডুকদের নিয়ে নয় আমাদের ভয়টা যারা সামান্য স্বার্থে এই কুপমুন্ডুকদের পদলেহন করে চলেছেন তাদের নিয়ে। আমরা যেন ক্রমশ এক অন্ধকার গহ্বরের দিকে ছুটে চলেছি। ইসলামের কথা বলবেন, বলুন না। তাই বলে হীনমন্যতা কেন? ইসলাম কি মানুষকে কুপমুন্ডকতা শেখায়? মহানবীর শিক্ষা তা নয়। পাকিস্তান যে নীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই একই নীতির নব সংস্করণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছি না।

বর্তমান সরকার হয়ত যৌক্তিক কারণেই প্রথম থেকে দেশের অর্থ নৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতকেই প্রধান এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছিল তবে এখন মনে হচ্ছে সমান্তরালভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া জরুরী। আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ যেন বিভ্রান্ত না হয়। তারা যেন একটি সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়েই বেড়ে ওঠে। আমাদের বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে না আছে দেশ প্রেম, মানব প্রেমের বার্তা না আছে ধর্মের মুল ধারনা। অথচ এ দুই একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ হওয়া উচিৎ ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলার পাশাপাশি আবহমান বাঙলার চিরায়ত সংস্কৃতি ধারণ করে কিভাবে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে হবে সে শিক্ষা দান। আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ, আমাদের সহিষ্ণুতা, আমাদের সহজিয়া জীবনাচরণই বাঙলার প্রাণ। সে প্রাণের উচ্ছ্বাসে আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক বড় মনের মানুষ হয়ে। ভাল মানুষ হয়ে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠুক পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহবস্থানের মত সুশীল মানসিকতা। তারা ধার্মিক হোক, কুপমুন্ডক বা সংকীর্ণতা যেন তাদের স্পর্শ না করে।

[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×