somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলমান বাঙ্গালী যে ভাবে পোষাকে অবাঙ্গালী হয়ে উঠল

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লুঙ্গী আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতির অংশ নয় এটা আমাদের আরাম সংস্কৃতির অংশ। আরাম প্রিয় বাঙ্গালী খুব সহজেই সকল আরাম উপকরণকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ করে নিতে পারঙ্গম। কিন্তু ধুতি অনেক ঝামেলার জিনিস তাই বাঙ্গালী ওটা ত্যাগ করেছে বিষয়টি যদি এমন হত তাহলে বলার কিছু ছিল না।
বিষয়টা ভিন্নতর, এখানে আমরা যত বেশী মুসলমান হয়েছি(!) তত বেশি নিজস্ব সংস্কৃতিকে দুরে ঠেলে দিতে চেয়েছি।
আশ্চর্যের বিষয় হল নিজস্ব সংস্কৃতিকে এই যে দূরে ঠেলেছি এর পেছনে ছিল না ধর্মীয় কোন নির্দেশনাও। ইসলামে পোশাকের কোন কোড অব কন্ডাক্ট নেই আছে দেহ ঢেকে রাখার নির্দেশনা। যার সাথে ধুতি সাংঘর্ষিক ছিল না, যার সাথে শাড়িও সাংঘর্ষিক নয়। অথচ হিন্দুর পোশাক বলে আমরা একে ত্যাগ করতে চেয়েছি। হাস্যকর বিষয় হল হিন্দুদের ব্যবহৃত ধুতি ত্যাগ করে আমরা বৌদ্ধদের ব্যবহৃত লুঙ্গিকে তুলে নিয়েছি, খৃষ্টানদের ব্যবহৃত প্যান্টকে গ্রহণ করেছি।
এই গ্রহণ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই আমার প্রশ্ন হল কেন একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বির দোহাই দিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে দুরে ঠেলে দেয়া হবে? প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি এ দেশে ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে হিন্দুদের প্রতি তথা বাংলার প্রতি হিংসাত্মক মনোভাবও একইভাবে ছড়ানো হয়েছিল?
এটা স্বিকার করে নেয়াটা হবে অন্যায় অপবাদ। কেননা এ দেশে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সূফীবাদের মাধ্যমে। যারা আত্তীকরণের পক্ষে, দূরে ঠেলে দেয়া বা হিংসা প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে ছিলেন। তারা ভালবাসতে শিখিয়েছেন, ঘৃণা করতে নয়। তারা ভালবেসে, সেবা দিয়েই মানুষকে জয় করেছিলেন। এ দেশে শত শত বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থেকেছে এই সূফীবাদের শিক্ষার কারনেই। সমস্যাটা শুরু হয়েছে যখন এ দেশীয় ইসলামের মধ্যে উগ্র মতবাদ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তখন থেকে। আর সে ক্ষেত্রেও প্রথমেই দায় পাকিস্তানীদের। তারাই শিখিয়েছে ঘৃণা তারাই শিখিয়েছে উত্তম অধম ইত্যাদি। তারা মুসলমানদের প্রতীকী করতে চেয়েছে পোশাকে। তারা আলাদা করতে চেয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। আর সেকারনেই আমরা সবাইকে গ্রহণ করতে পারলেও কেবল হিন্দুদেরকে গ্রহণ করতে পারছি না। অথচ নজরুলের ভাষায় হিন্দু-মুসলিম ছিল একই বৃন্তে ফোটা দুটি ফুল।
দুটি ফুল দুই ধরনের বৈশিষ্ট নিয়ে বেশ ছিল, যা ছিল প্রতিক্রিয়াশীলদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায়। বাঙ্গালীর বাংগালীয়ানাকে নিঃশেষ করার জন্য প্রয়োজন ছিল তার স্বকিয়তা থেকে দূরে রাখা। সেটা করতে গিয়েই ধর্মীয় বিভাজনকে টেনে আনা হল। আসলে হিন্দুর নাম করে আমাদের সরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে নিজস্বতা থেকে।
আমরা বিশ্বের যে প্রান্তেই চোখ রাখি দেখব, ইসলামকে তারা গ্রহণ করেছে নিজস্ব পোষাকে, নিজস্ব ঢংয়ে। ইসলামের মুল অনুশাসনের সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক একজন মুসলমান হিসেবে নিশ্চয়ই সে তা পরিত্যাগ করতে বাধ্য। কিন্তু ইসলামের নাম করে এই যে, এ দেশের মুসলমানদের বাঙ্গালীয়ানা থেকে সরিয়ে আনার প্রয়াস এটা একটি সুনিপুণ ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়।

লুঙ্গি এবং ধুতি এই দুই-ই ভারতীয় উপমহাদেশীয় পোশাক। বড় জোড় বলা যায় একটি হিন্দুদের দ্বারা অন্যটি বৌদ্ধদের দ্বারা বহুল ব্যবহৃত। একই সাথে তৎকালীন মুসলমানদেরও। পরবর্তীতে যখন ভারতবর্ষে মুসলমানদের আধিক্য দেখা গেল তখন তারা ধুতি ছেড়ে লুঙ্গী এবং ঢোলা পাজামায় গিয়ে ঢুকলেন। কোন যুক্তিতে তারা ধুতিকে হিন্দুদের পোশাক আর লুঙ্গী ও ঢোলা পাজামাকে নিজেদের পোশাক বানিয়ে নিলেন তা গবেষণার বিষয়।
এরপরে যখন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের জন্ম হল তখন দেখা গেল পূর্ব বঙ্গের মুসলিম নারীরাও শাড়িকে ছেড়ে সালোয়ার কামিজের মধ্যে ঢুকে যেতে লাগলেন। এখানেও তারা পুরুষের মত ইসলামকে নয় মূলত পাকিস্তানীদের অনুসরণ করতে শুরু করলেন। আর এরপর যখন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটল তখন দেখা গেল আত্তীকরণের আরেক রূপ। এরা শাড়ী পড়েন আবার মাথায় স্কার্ফ জড়ান। তারা বোরখা পড়েন; কেউ মুখ ঢেকে, কেউ চোখ ঢেকে আবার কেউ মুখ খোলা রেখে। ইসলাম কি বলে?
ইসলামে মহিলাদের যেভাবে আব্রু করতে বলা হয়েছে তার সাথে আধুনিক পোষাকের মধ্যে আবায়াটা সবথেকে বেশি সাযুজ্যপুর্ন। কিন্তু এখানে আমরা দেখতে পাই ঐ আবায়াটাই সবথেকে কম ব্যবহৃত হয়। বোরখা বা আবায়া তারা যেটাই পরুন না কেন তার নিচে শাড়ী কোনভাবেই ইসলামের সাথে অসংগতিপূর্ন নয় তাহলে তা ফেলে সালোয়ার কামিজের প্রতি এত মোহ কেন?
মুসলমানদের এই পোশাকি মুসলিম হওয়া থেকে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে।
তাহল, বাঙ্গালীর আদি পোশাক কি?
এর সঠিক উত্তর জানতে হলে আমাদের ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের দিকে চোখ ফেরাতে হবে। তবেই কেবল প্রকৃত উত্তরটি পাওয়া যায়। তৎকালীন সময়ে আঁকা পট চিত্র ইতিহাসে এর অক্ষয় স্বাক্ষর। তখন দ্বিমাত্রিক পট চিত্র আকার রেওয়াজ ছিল ।যার অনেক চিত্র এখন সংরক্ষিত রয়েছে। যেখান থেকে মুঘল আমল বা তার পরবর্তী ইংরেজ আমলে বাংলার মানুষের পোশাকের পরিচয় মেলে।
তখনকার সময়ে বাংলার অবস্থাপন্ন গৃহস্থ পুরুষের প্রধান পোশাক ছিল ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি (‘ব্যাপারী পাঞ্জাবি’ নামে যেটা পরিচিত, দুই পাশে আর বুকে পাঞ্জাবির মতো পকেট), হাতাকটা ফতুয়া ও ঢোলা পাজামা। মূল কম্বিনেশন ছিল পাজামার সঙ্গে ব্যাপারী পাঞ্জাবি আর ধুতির সঙ্গে ব্যাপারী পাঞ্জাবি ও হাতাকটা ফতুয়া দুটোই।
আর মহিলাদের বেলায় ছিল শাড়ী। তখনকার সময়ে মহিলারা বক্ষবন্ধনীর মত করে একখণ্ড কাপড় বুকে পেঁচিয়ে নিতেন যাকে বলা হত কাঁচুলি। এই কাঁচুলিকেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের নারীরা ব্লাউজের রূপদান করে। কাজেই ব্লাউজকেও নির্দ্বিধায় বাঙ্গালী পোশাক বলাই যায়।
চলবে......।।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২২
৪৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×