আমি স্বল্প দূরত্ব কিংবা বেশী দূরত্ব যেখানেই যাই সিটিংবাস ছারা উঠি না। তার মানে এই নয় যে আমি বেহিসাবি। আমিও রিকশার বদলে স্বল্প দূরত্ব পায়ে হেটেই অতিক্রম করি কেবলমাত্র অর্থ সাশ্রয়ের খাতিরে। আবার এই আমিই বেশি ভাড়া প্রদান করে সিটিংবাসে যাতায়াত করি।
আমার সিটিং বাসে চড়ার প্রধান কারণ হল, তুলনা মূলক পরিচ্ছন্ন সিটে বসে যেতে পারি এবং আমার মানিব্যাগ নিরাপদ থাকে। পকেটমারের হাত থেকে আমি নিরাপদ থাকি।
দ্বিতীয় কারণটি হল, রাস্তায় অযথা সময় নষ্ট হয় না। অর্থাৎ সিটিং বাস লোকাল বাসের থেকে দ্রুততর সময়ে গন্তব্যে পৌঁছায়।
আমরা যারা গন পরিবহন ব্যবহার করি তারা কিন্তু সবাই একই মানের গাড়িতে চড়তে এবং একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে রাজী নই।
কারো কাছে সময়ের মূল্য বেশি, কেউবা তুলনামূলক আরামদায়ক ভ্রমণে আগ্রহী। আবার কারো কাছে অর্থ বাঁচানোটাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
এই যে গনমানূষের ভিন্ন ভিন্ন আকাঙ্ক্ষা সরকারের তো সেভাবেই বিষয়টাকে দেখতে হবে?
আন্তঃনগর রেল আর লোকাল ট্রেন যে এক নয় এটা রেলযাত্রীরা জানেন। দুই ট্রেনের যাত্রীরা সেবাও দুই রকম পান আবার অর্থও দুই রকম খরচ করেন। আমি ঢাকার গন পরিবহন নিয়ে বলছি, এখানে সব থেকে বেশি দুর্ভোগের স্বীকার হন নিন্ম মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এই মানুষগুলো নানা কারণে ব্যক্তিগত গাড়ী চড়তে পারছেন না আবার গন পরিবহনেও চড়তে পারছেন না। এই মানুষগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছিল সিটিং সার্ভিস। যেখানে কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও তারা কিছুটা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারতেন। নিতি নির্ধারক গন যদি বিষয়টি তলিয়ে দেখতেন তাহলে তারা দেখতে পেতেন প্রায় প্রতিটি রুটেই একই সঙ্গে দুই ধরনের বাস চলছে। যেমন ২৭ নম্বর গাড়ী আজমপুর থেকে আবদুল্লা পুর পর্যন্ত লোকাল বাসে নিচ্ছে ২০ টাকা আর সিটিং নিচ্ছে ৫০ টাকা। যার যেটা পছন্দ সে সেই গাড়িতেই উঠছেন। একই ভাবে আবদুল্লাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী- পোস্তগোলা পর্যন্ত তুরাগ নিচ্ছে ৩০-৪০টাকা। রাইদা নিচ্ছে ৫০ টাকা। যারা তুরাগের যাত্রী তারা তুরাগে উঠছেন যারা রাইদার যাত্রী তারা রাইদায় উঠছেন।
গন মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণেই যদি সরকার পরিবহণ ব্যবস্থায় হাত দিত তাহলে সরকারের উচিৎ ছিল সিটিং সার্ভিসকে আরও বেশি জন বান্ধব করা এবং লোকাল সার্ভিসকেও লোকালের মত করে চলতে দেয়া।
বিআরটিএ'র উচিৎ ছিল গাড়ীর রুট পারমিট দেয়ার সময়েই সিটিং এবং লোকাল দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেয়া। প্রশাসন দেখবে যে গাড়ী লোকাল চলার কথা সে সিটিং বলে চালাচ্ছে কিনা। তা না করে সকল গন পরিবহনকে লোকাল ক্যাটাগরিতে নামিয়ে এনে সব মানুষকে একই রকম ভোগান্তিতে ফেলে দিল! এটা কি সুবিবেচনা প্রসূত?
আমাদের নিতি নির্ধারক গন আকাশে পা ফেলে হাঁটেন। তারা কেবল দেখতে পান তাদের চারপাশের সম্পদশালী মানুষগুলোকে। আর এর বাইরে সবাইকে দেখেন ভুখা নাঙ্গা হিসেবে। তারা যেন কেবল অর্থ বাঁচিয়েই চলেন। সামান্য স্বাচ্ছন্দ্য যেন তারা চাইতেই পারেন না! সে কারনেই বোধ হয় তারা বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বানান মধ্যবিত্তের জন্য নয়। আল্লাহ্ যে কবে তাদের বোধোদয় করবেন তা মহান আল্লাহই জানেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কল্যাণ কামনায় একদা যে সিএনজি, ক্যাব ইত্যাদি রাস্তায় নামানো হয়েছিল তাও এখন আর মধ্যবিত্তের নাগালে নেই। বড়জোর সেটা এখন উচ্চ মধ্যবিত্তের দখলে।
অথচ হিসেব করলে দেখা যাবে ঢাকার গন পরিবহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে কম করে হলেও এক তৃতীয়াংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। যাদের পক্ষে আবদুল্লা পুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা যতটা সহনীয় তার থেকে অনেকখানি দুঃসহ ঘামে গরমে মানুষের ভিড়ে ঠাঁসাঠাসি করে এবং প্রয়োজনের থেকে এক ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে যাতায়াত করা।
যেদিন আমাদের নিতি নির্ধারক গন গন মানুষকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে শিখবেন। গন মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবেন সেদিনই কেবল তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১২