somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোধ করি আত্ম সমালোচনার প্রয়োজন আছে

১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুকে হাত দিয়ে বলুন আপনার মেয়েকে কিভাবে দেখতে চান? আপনার স্ত্রীকে কিভাবে দেখতে চান? আপনার বোনকে কিভাবে দেখতে চান?
ভাবছেন এ তো পুরুষতান্ত্রিক মানষিকতা থেকে উঠে আসা প্রশ্ন। ঠিক আছে, প্রশ্নটা নারীদের কাছেই করছি। আপনি সমাজের যে স্তরেই অবস্থান করুন না কেন। আপনার ছেলের জন্য বউ করার জন্য কেমন মেয়ে খুঁজছেন? একজন বোন তার ছোট বোনকে কেমন দেখতে চান।
এই কেমন দেখতে চাওয়া বলতে আমি জানতে চাইছি একজন মেয়ে স্বাধীনতার নামে অনৈতিক সম্পর্কে জরিয়ে পড়বে তেমনটি চান নাকি আমাদের শাশ্বত সমাজ ব্যবস্থায় যে নৈতিক মান বজায় রেখে চলতে বলা হয়েছে তেমনটি চলুক সেটা চান।
আমি ধর্মকে এখানে টেনে আনছি না কেবল ধর্মীয় আলোচনায় অনেকের অসহ্য এলার্জি হয় তাই। ধর্মীয় অনুশাসন বাদ দিলেও সমাজে একটা নুন্যতম নৈতিক মানদণ্ড আছে সেটা নিশ্চয়ই মানবেন।
আপনি নিশ্চয়ই ভ্রূণ হত্যাকে সমর্থন করেন না। আপনি নিশ্চয়ই সমাজ পিতৃ পরিচয় হীন মানব সন্তানে ভরে যাক সেটাও চান না। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার ঘরে আসুক এমন একজন মানুষ যে খুব গর্বের সাথে বলে বেড়ায়, “হ্যাঁ, আমি বিয়ের আগে সেক্স করেছি বয় ফ্রেন্ডের সাথে, কিন্তু তার সাথে আমার বিয়ে হয়নি! বিয়ের আগে সেক্স হইতেই পারে, আমার শরীর, আমার অধিকার!!”
অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা এমন একটি স্ট্যাটাসে আপনি অবলীলায় লাইক দিয়ে দিচ্ছেন। মানে আপনি লেখাটাকে সমর্থন করলেন! এটা কি প্রতারণা নয়?
আপনি নিজে যা করছেন না বা নিজের জন্য যা পছন্দ করছেন না ঠিক সে কথাটাই অন্যের বেলায় পছন্দ করছেন। অর্থনীতির ভাষায় নিজের ভোগ করার সুযোগ না থাকলে অন্যকে দিয়ে যে ভোগ করার ব্যবস্থা করে রাখে তাকে বলে পরোক্ষ ভোগ। আপনি কি তাহলে সেই পরোক্ষ ভোগটি করতে চাইছেন? পাশের ঘরে আগুন লাগলে সে আগুন শুধু যে প্রতিবেশীর স্বার্থেই নেভানো হয় তা কিন্তু নয়। নিজের স্বার্থ রক্ষার্থেও ঐ আগুন নেভানো জরুরী। তা না করে যদি সে আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করেন নিশ্চিত জানবেন আপনার ঘরটি পুড়তে বেশি সময় লাগবে না।

ধর্ষণ কখনোই কাম্য নয় যে কোণ ধর্ষণই সমান ঘৃণার। সমান অপরাধের। কিন্তু সবগুলো ঘটনা কিন্তু এক নয়। আমি যদি প্রশ্ন রাখি 'বাড্ডায় গারো তরুণীকে ধর্ষণ ঘটনা' আর 'বনানীর রেইনট্রিতে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনাকে কি আপনি এক চোখে দেখবেন?
আগেই বলেছি অপরাধীর অপরাধ বিবেচনায় দুটোই সমান কিন্তু ভিক টিমের দায় কিন্তু এক নয়। হ্যাঁ একজন নারী যে কোন সময় যে কোন স্থানে গমনের স্বাধীনতা রাখেন। রাষ্ট্রকে উচিৎ তার সে স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা করা।

বাস্তবতা কি বলে, আমাদের দেশে নারী কি আসলেই নিরাপদ?
মোটেই না। চলতি পথে, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই নারী নিরাপত্তা হীনতায় ভোগে। এ সমাজ এ রাষ্ট্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ। তাই বলে কি সে নিজেও তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন না? আমরা কেন নিজ গৃহে দরজা আটকে রাখি? রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিরাপত্তা দান করা এ কথা বলে তো কেউ দরজা খুলে রেখে ঘুমাতে যাই না।
রাস্তায় ছিনতাই কেন হবে এই প্রশ্ন রেখে কেউ রাস্তায় বেড় হচ্ছি না। যতটা সম্ভব নিজেদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আমরা ঘর থেকে বেড় হই এবং
যথাসাধ্য নিজের নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টাও নিজেরাই করি।
রেইনট্রি হোটেলের ভিক টিম নিজেরাও যখন বুঝতে পারছে ওভাবে হোটেলে যাওয়া তাদের ঠিক হয় নি, তখন সেখান থেকে কেন তাদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন তো নয় তাদের এই ভুল স্বীকারে অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা কমে যাচ্ছে।
আমাদের এটা মাথায় রাখা উচিৎ যে সমাজে পাঁচ বছরের মেয়ে পর্যন্ত নারী লোভী পশুদের কাছে অনিরাপদ সেখানে যে কোন মেয়েই যে কোন সময়ে এমন লালসার স্বীকার হতে পারে। কাজেই সাবধানতা অবলম্বন খুবই জরুরী।

সমাজ বিরোধীদের কাছ থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকার মানে এই নয় যে তাদের আস্কারা দেয়া বরং সেটা করে তাদের পশুত্বকে এড়িয়ে চলাকেই বোঝায়।
একই সাথে বলব আমরা যে প্রতিনিয়ত পশ্চিমা সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছি সেটা আমাদের নারী সমাজকেই সব থেকে বেশি অনিরাপদ করে তুলছে। এখান থেকে বেড়িয়ে আসাও জরুরী। সর্বোপরি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারীকে বোঝানো হয় তোমার মান সম্মান; তোমার বেঁচে থাকার অধিকার সবকিছু নির্ভর করে সতিচ্ছেদের উপর। কি অদ্ভুত কথা। কে এটা নির্ধারণ করে দিল? কোন যুক্তিতে? একটা মেয়ে ধর্ষিতা হলে কেন সম্ভ্রম হারাবে? সম্ভ্রম তো হারাবে ধর্ষক।
শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক কোথাও শেখানো হয় না একজন নারী সব কিছুর পূর্বে একজন মানুষ। বরং শেখানো হয় নারী তেঁতুল সমতুল্য, নারী মাত্রই ভোগ্য পণ্য।
প্রতিটি বখাটে কোন না কোন ঘরেই বাস করে। তাদের মাথার উপড়ে মা-বাবা, ভাই-বোনের ছায়া। এরাই রাস্তায় মেয়েদের উত্যক্ত করছে। ধর্ষনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আবার ঘরে ফিরে যাচ্ছে কই এ সমাজ তো কখনোই কোন অপরাধীর পরিবারকে অভিযুক্ত করে সমাজচ্যুত করছে না! এই পরিবার গুলোকে এক ঘরে করে রাখছে না। উপরন্ত শালিসের নামে ভিকটিমকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। বখাটেরা শুধু মেয়েটিকেই নয় পরবর্তিতে তার পরিবারকেও নির্যাতন করতে শুরু করে। এ সমাজে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। কি করে এর সমাধান হবে?
রাষ্ট্রই বা কি করছে? রাষ্ট্র শেখাচ্ছে 'ও' তে ওড়না। একটি শিশুকে তাঁর ছেলেবেলাতেই নারী পুরুষের ভেদাভেদ শেখাচ্ছে। আমাদের সমাজে এখনো ছেলে শিশু বাড়তি যত্ন আত্তি পায়। যে ছেলে শিশু ঘরে বাড়তি যত্ন পেয়ে বেড়ে উঠছে সে তো বড় হয়ে নারীদের অবহেলা করতেই শিখবে। ছেলে বেলার এই যে শিক্ষাটা সে পেল, যত শিক্ষিতই হোক না কেন পুরুষের মাথা থেকে এ আর কোনোদিনই বের হয় না। একজন উচ্চ শিক্ষিত পুরুষ কর্মক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পরেন যখন দেখতে পান তার বস একজন নারী। একজন নারীর কথা অনুযায়ী একজন পুরুষ সিদ্ধান্ত নিলে আর দশজন পুরুষ তাকে নপুংসক বলে মনে করে। অথচ সেই তো উত্তম পুরুষ যে নারীকে সম্মান করে নারীকে শ্রদ্ধা করে। আমার সন্তানের শিক্ষা নির্ভর করে তার মায়ের উপর অথচ সন্তানের মাকে আমি সম্মান করি না। তাহলে এই সন্তান কি করে অন্য নারীকে সম্মান করবে?
সমাজের প্রান্তিক নারী-পুরুষ এক সাথে রাস্তার মাটি কাটছে একই পরিমাণ কাজ উভয়েই করছে অথচ দুজনে বেতন কাঠামো দুই রকম। কেন?
মোট কথা নারী বা পুরুষ আমরা যে যাই বলি না কেন কার্যক্ষেত্রে কেউই সেই কাজটা করছি না। আমরা নিজেরাই প্রতারণা করছি নিজেদের সাথে। এ সমাজে তাই নিত্য নতুন ব্যাধী ছড়িয়ে পরছে, ভয়াবহ আঁকারে।

[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৫২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×