somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে সমীকরণটা আমরা কখনোই মেলাতে পারি না

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ গড়াই নিউজ
গত ১৫ নভেম্বর "বিএনপির প্রার্থী দেখে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ" শিরোনামে লিড নিউজ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। নিবন্ধটির একটি জায়গায় লেখা হয়েছে "আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, নেতা-কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য, দলে গ্রুপিং সৃষ্টিকারী, বিনা ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, টিআর-কাবিখা বিক্রয়কারী, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত এমপিরা মনোনয়ন পাবেন না। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এমপিদের আমলনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই"।
আমরা ধরেই নিতে পারি সরকার সমর্থক এই পত্রিকাটির রিপোর্ট সত্য নির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ। কেননা এর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
যদি তাই হয় তাহলে আমরা প্রশ্ন করতেই পারি যে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জানেন যে তাঁর কিছু এমপি টিআর-কাবিখা বিক্রয়কারী, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত! তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তিনি কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না? অভিযুক্ত এমপিদের দলীয় মনোনয়ন দেবেন কি দেবেন না সেটা নির্ভর করে তাদের বিজয়ী হয়ে আসতে পারার সম্ভাবনার উপর। এটা তো কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা হতে পারে না। সত্যিই যদি বর্তমান সাংসদদের মধ্যে কেউ টিআর-কাবিখা বিক্রয়কারী, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত থেকে থাকেন তাকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। কেননা তাঁরা অপরাধী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বোধ সর্বোপরি দায়িত্বশীলতা প্রশ্নাতীত। সাধারণ মানুষ তাঁর কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করবে এটাই স্বাভাবিক।
তা ছাড়া এ দেশের মানুষ যেমন একটি সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তেমনি একই সাথে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ এবং আদর্শিক রাজনৈতিক চর্চা দেখতে চায়। সেটা আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতৃত্বের পক্ষেই কেবল দেয়া সম্ভব; যদি তাঁরা আন্তরিক হন।

এটা ভুলে গেলে চলবে না যে এ দেশের মানুষ ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে বা মহাজোটকে নির্বাচিত করে নি নির্বাচিত করেছিল দুর্নিতির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে। যেখানে আওয়ামীলীগ, জাঁতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। প্রতিরোধ ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি আর দুর্নিতির বিরুদ্ধে যেখানে বিএনপি, জামায়াত সহ তাদের সমমনা দলগুলো একাকার হয়ে গিয়েছিল। এটা বলাই বাহুল্য সাধারন মানুষের প্রথম চাওয়াটা পুরন হলেও দ্বিতীয়টি গত নয় বছরেও আওয়ামীলীগ পুরন করে নি। সম্ভবত চেষ্টাও করেনি। যে কেবল এ দেশের মানুষের মনে হতাশারই জন্ম দিয়েছে। আর আজ এই শেষ সময়ে এসে যখন সরকার সমর্থক পত্রিকাতেই এ বিষয়ে লেখা হয় তখন এর সত্যতাই আরো জোরদার হয়। যার জবাবদিহিতা তো তাদের করতে হবে।

প্রধান দল হিসেবে আওয়ামীলীগের দায়িত্ব ছিল দুর্নিতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তথা জোটকে আরও শক্তিশালী করা। জোটের শরিকদের আরও বেশি সম্মান দেয়া এবং উন্নয়নের অংশীদার বলে স্বীকার করে নেয়া। দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে, আওয়ামীলীগের প্রধান সেই উদারতা দেখাতে পারলেও প্রথম ও মধ্যম সারীর নেতারা সেই উদারতা দেখাতে পারেন নি। ফলে মাঠ পর্যায়ে এই জোট একাট্টা থাকতে পারে নি। তাঁরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে।
আজ যে বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগের ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাঁর পেছনে প্রধান কারণ এই দুটিই। এক, জেনে শুনেও কোন কারণ ছারাই দলের জন্য, দেশের জন্য ক্ষতিকর এমপিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা। দুই, জোটকে শক্তিশালী না করে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া।
এখনও সময় আছে আওয়ামীলীগ যদি সরকারের নয় বছরের উন্নয়নের খতিয়ানের সাথে সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে পুনরায় একাট্টা করে দেখাতে পারে তাহলে এই নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তারা নির্ভার থাকতেই পারে। তাঁরা কি সেই সৎ সাহস দেখাতে পারবে?

বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তৎকালীন যে সব নেতার বিরুদ্ধে দুর্নিতির অভিযোগ উঠেছিল। বেগম জিয়া যদি তখন তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতেন তাহলে দৃশ্যপট কি হত?
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁরা ঠিকই নিজেদেরকে ধোপ দুরস্ত প্রমাণে সক্ষম হতেন। কেউ কেউ যদি সেটা নাও পারতেন সামান্য শাস্তির আওতায় এলেও এক সময় ঠিকই নিজেদেরকে পুনরায় গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারতেন। আসল যে লাভটা হত তা হল, বিএনপি সাধারণ মানুষের মাঝে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হত। বিএনপি তখন সেই সৎ সাহস দেখাতে সক্ষম হয়নি। তাঁর ফল তাঁরা আজ ভোগ করছে। আওয়ামীলীগও কি সেই একই ভুল করছে না?
আমরা যারা রাজনীতির বাইরের মানুষ তাঁরা যে সমীকরণটা মেলাতে অক্ষম তা হল আওয়ামীলীগ বলি আর বিএনপি বলি এই দলগুলো কাঁদের বাঁচাতে গিয়ে কেনই বা এমন আত্মহননের পথ বেছে নেয়?

আলোচিত নিবন্ধের সব শেষে লেখা হয়েছে "সূত্রমতে, বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বড় অংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর নিজ সংসদীয় এলাকায় দেখা মেলেনি অনেকের। সাংগঠনিক কাজের চেয়ে এসব নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরিতেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রেখেই বিনা ভোটে নির্বাচিত এমপিরা গত চার বছর নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এ বিষয়টি দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও অবগত রয়েছেন।" এটাই যদি সত্যি হয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেন এই চারটি বছর ধরে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না। কেন তাদের বাড়তে দিলেন? কেন দেশের ক্ষতি হতে দিলেন?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর আওয়ামীলীগের একজন শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আমরা তো করতেই পারি। একইসাথে দাবী জানাচ্ছি এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনসাধারণের কাছে এই বার্তাটি প্রেরণ করুন যে শুধু উন্নয়ন নয় একইসাথে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনেও আওয়ামীলীগ বদ্ধপরিকর। আর সেটা যদি করতে পারে তাহলে বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামীলীগের চিন্তা করতে হবে না।

[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×