somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিটিক্যাল মাস-২: দুষনমুক্ত যান-সাইকেল, ঢাকা শহরে চলাচলের জন্যে যথেষ্ঠ

২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চতুর্মুখী পাওয়া

বসবাসের জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় অযোগ্যতম শহরে কি পরিমান সময় আপনাকে যানযটে নষ্ট করতে হয়?

নাগরিক জীবনে প্রতিদিনের যাতায়তে আপনি কি পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করেন??

চব্বিশ ঘন্টার ক’'ঘন্টা আপনি কায়িক পরিশ্রম করেন???

প্রতিদিন যাতায়তে আপনার ব্যয় হয় কত????

কোন এক ঈদের গভীর রাতে উত্তরা থেকে সদর ঘাট পর্যন্ত যে কোন যান্ত্রিক যানে করে যদি আপনি যান, বুঝবেন আয়তনে ঢাকা আসলে কত ছোট শহর। আর হৃদয়ংগম করবেন যে প্রতিদিন ঢাকা শহরের যানজটে কি পরিমান সময় আপনার নষ্ট হয়।

সচরাচর যে সব বাহন আমরা ব্যাবহার করি তা পরিবেশের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইড প্রচুর পরিমানে নির্গত করে।

একজন মানুষকে সুস্থ্য থাকার জন্যে সপ্তাহে নুন্যপক্ষে তিন দিন, প্রতিদিন একঘন্টা করে শারিরীক পরিশ্রম করার প্রয়োজন। এই নগরে আমরা ক’'জন এই সময়টুকু দেই বা দিতে পারি?

যাতায়ত ভাড়া যে হারে বেড়েছে সে হারে কি আমাদের আয় বা অভিভাবকের দেয়া ভাতার পরিমান বেড়েছে? না বাড়ার সম্ভাবনাই বেশী।

এই সমস্যাগুলো নিয়ে সবাই আমরা কম বেশী ভাবি। খরচের কথা তো প্রায় সবাই, সব সময়ই। কিন্তু বলতে গেলে কেউই মনে করিনা এগুলো সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।

একদল তরুণ তরুনী, যাদের কেউ কেউ প্রকৌশলী, চিকিৎসক, পদস্থ চাকুরে, উদ্যোক্তা, ব্যাবসায়ী আবার কেউ শিক্ষার্থী আমাদের মত শুধু ভেবেই থেমে থাকেনি। তারা এই সমস্যা চারটির একটি সরল, বাস্তব সম্মত ও গ্রহনযোগ্য সমাধান বের করেছে- সাইক্লিং। আর যার সাথে উপরি পাওয়া –সুস্থ্য বিনোদোন।


সময়

পুরান ঢাকার বাংলা বাজার থেকে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত বাসে, গাড়ীতে বা সি এন জিতে যেখানে এক থেকে থেকে আড়াই ঘন্টা পর্যন্ত লাগে সেখানে সাইকেলে পনেরো মিনিটে সেটা মেরে দেয়া যায়। এভাবে হিসেব করুন মিরপুর থেকে ধানমন্ডি, ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল, কাকলীর মোড় থেকে মহাখালি, আবদুল্লাহপুর থেকে বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন বা শাহজাহানপুর থেকে যাত্রা বাড়ি। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত বাঁচানো যায় ক্ষেত্রভেদে।

পরিবেশ

সাইকেলে আপনি কোন জ্বালানী ব্যাবহার করেন না। জ্বালানী হল আপনার কায়িক শক্তি। এই যাতায়তে আপনি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করেন না বা আপনার যাতায়তের জন্যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় না।

সুস্থ্যতা

সুস্থ থাকার জন্যে যে পরিমান শারিরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন নিয়মিত সাইকেল চালালে সে প্রয়োজন ভালভাবেই মিটে যায়।

কড়ি

আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এই প্রসংগটি এখনকার সময়ে সবচে' অর্থবহ। আজ থেকে বছর সাতেক আগেও যাতায়তের খরচ নিয়ে কেউই আমরা তেমন চিন্তা করতাম না। কারন আমাদের মোট খরচের অল্প একটা অংশ ছিল যাতায়ত ব্যয়। এখন আর তা না। শুধুমাত্র এই একটা কারনেই সাইকেল চালানো যেতে পারে। এইতো গত মাসেই আরেক দফা বাড়লো যানবাহনের ভাড়া। সাইকেল চালিয়ে যাতায়তের ভাড়ার পুরোটাই বাঁচানো যায়। যা মাসে পাঁচশ টাকা থেকে দশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।

আমার পরিচিত একজন সাইকেলে অফিসে যাতায়ত করা শুরু করার পর প্রনোদিত হয়ে অফিসের সাত আটজন সাইকেল ব্যাবহার করছে।

সাইক্লিং সংগঠন

ঢাকায় বেশ ক’টি সাইক্লিং সংগঠন আছে।
এই সংগঠনগুলো নিয়মিত অনেকগুলো রাইডের আয়োজন করে, যেমন দৈনিক, রাত্রিকালীন, সাপ্তাহিক শিক্ষা নবিশী ও দক্ষদের, দুরপাল্লার , ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ক'’দিনের জন্যে ইত্যাদি।

মেয়েদের সাইক্লিং

আমাদের ঢাকায় মেয়েরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অফিস করছে সাইকেলে। এটা বাস্তব, যদিও অবিশ্বাস্য। সংখ্যায় স্বল্প হলেও এটা শুভ সূচনা। মেয়েদের মানসিকভাবে সাবলম্বী হবার ক্ষেত্রে এটা একটা বিশাল পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে সাইক্লিং সংগঠনগুলোর অবদান পরিসীম। সংগঠনগুলোর সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের সবচে’ বড় মাধ্যম ফেইসবুক । প্রত্যেকটি সাইক্লিং সংগঠনের ফেইসবুক পেইজ বা গ্রুপ আছে। যখন একটি মেয়ে অফিসে সাইকেলে যাতায়ত করতে চায়, তখন যে সাইক্লিং সংগঠনের সদস্য সে, সেই সংগঠনের ফেইসবুক পাতায় তার বাসার কাছাকাছি থাকা এবং তার অফিসের কাছাকাছি অফিস করা কোন সংগী সাইক্লিস্টের খোঁজ করে এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পেয়েও যায়। এছাড়াও এই সংগঠনগুলোর সদস্যেরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে সাইকেল চালানো শেখায়ও (ছেলেদেরকেও)।

ক্রিটিক্যাল মাস

ঢাকায় সাইক্লিংএর সবচে বড় ইভেন্ট হচ্ছে ক্রিটিক্যাল মাস। ঢাকার সাইক্লিং সংগঠন গুলো একসাথে মিলে এটার আয়োজন করে থাকে। প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার এরা সবাই মিলে সাইক্লিং করে, বিশেষ করে ঢাকার রাজপথগুলোতে। এই ইভেন্টের উদ্দেশ্য হল যাদের নিজস্ব গাড়ি (car) আছে তাদের দেখানো যে স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্যে সাইকেলই যথেষ্ঠ (To demonstrate to the car-owning crowd that bicycles are completely adequate for their local needs)

ক্রিটিক্যাল মাস-১

ক্রিটিক্যাল মাস শুরু হয়েছে গত মাসে। প্রথমবারেই বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। অংশ নিয়েছিল ১৭৫ + রাইডার। রাইড, বিরতি, হুল্লোড়ে কেটেছে অপূর্ব সময়। ঢাকা শহরে গত মাসের শেষ শুক্রবারে যারা সকালের দিকে রাস্তায় বের হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই চোখে পড়েছে।

ক্রিটিক্যাল মাস-১ এর কিছু আটকে রাখা সময়ঃ

রাইডিং, ঢাকা শহরে।




একটু বিরতি


আড্ডা অল্পস্বল্প

জ্বী, ওজন কমাতেও :D

ফেরা


ক্রিটিক্যাল মাস-২


আগামী ২৮ শে অক্টোবর, শুক্রবার সকাল আটটায় ক্রিটিক্যাল মাস-২
শুরু হবে সংসদ ভবনের সামনে থেকে।
রুটঃ http://goo.gl/MpRx5

ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর প্রোমোঃ


ঢাকার মানুষদের

সময় বাঁচাতে,

সাস্থ্য রক্ষা করতে,

অর্থ বাঁচাতে,

আর পরিবেশ বান্ধব হতে

সচেতন করুন।

সাইকেল চালাতে চলে আসুণ ক্রিটিক্যাল মাস-২ তে।


__________________________________________


যাদের সাইকেল নেই কিন্তু যোগ দিতে চান, আগেভাগে জানালে তাদের একটা ব্যাবস্থা হলেও হয়ে যেতে পারে।



পত্রিকায় ক্রিটিক্যাল মাস-২

২৯ অক্টোবর, ২০১১,

শনিবার ডেইলি স্টারে ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর ছবিসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।


সেখানে বলা হয়ঃ

বিকল্প বাহন, ট্রাফিক ব্যাবস্থার উন্নতি সাধন এবং জনসাস্থ্য উন্নয়নে সাইকেল ব্যাবহারকে জনপ্রিয় করে তুলতে ২০০ জনেরও বেশী সাইক্লিস্ট "ক্রিটিক্যাল মাস" রাইডে অংশ গ্রহণ করে। বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠি যেমন বিডি সাইক্লিস্ট, রয়্যাল বেংগল রাইডারস, ভ্রমণ বাংলাদেশ, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব আর বিবর্তন ইভেন্টটি আয়োজন করে।

এই ইভেন্টটি পৃথিবীর আরো ৩০০ টি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়।

সুত্রঃ

More than 200 cyclists joined a 'Critical Mass' ride

একই দিনে ইন্ডিপেন্ডেন্টে আরেকটি প্রতিবেদন বের হয়। সে প্রতিবেদনেও ক্রিটিকাল মাস-২ ইভেন্ট কাভার কোড়া হয়। ইনডিপেন্ডেন্টে আরেকটি আয়োজক সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হয় -বাংলাদেশ সাইকেল টুরিষ্ট সাঈদ।

ইনডিপেন্ডেন্টে ওঠা ক্রিটিক্যাল মাস-২ এর ছবি সাথে খবরঃ


সুত্রঃ
Pedal Peddling
______________________________________________

ফুয়াদ হাসান চৌধুরীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৩
৫১টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×