আই ব্লগে আমার সে রাতের অভিজ্ঞতার সহভাগ আরো করেছি। এবার আবার করলাম। নতুন ব্লগারদের জন্যে বিশেষ করেঃ
সে দিনটির কথা আমার মনে আছে স্পষ্ট।
আমি ছিলাম চিটাগাংএ। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। আবাসিক স্কুলে পড়তাম। ১ কিমি সামনে সমুদ্র, ২০০ গজ পেছনে পাহাড়। সেদিন সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাইক্লোন। আমরা দোতলায় থাকতাম। ৮ জন এক ঘরে। এমন বাতাস আর ঝড়ের তান্ডব যে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অবিরাম বজ্রপাত, বারান্দায় সামুদ্রিক পাখির স্তুপ। সারারাত সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে (আর এক সতীর্থ সারারাত আজান দিয়ে) রাত পার করি। ভোরে পেছনের জানলা দিয়ে দেখি অভূতপূর্ব দৃশ্য। পেছনের পাহাড় আগে ছিল ঘন জংগলে ঢাকা- সে পাহাড়ে তো কোন গাছই নেই, এমনকি কোন ঘাসও নেই, সবুজ গাছ গাছালীতে ঢাকা পাহাড় এখন মুড়ানো খয়েরী রংএর টিলা। হোস্টেলের বেয়ারা কিছুক্ষন পর ডাকলো পাখী দেখতে, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শামুক খচা (ভাংগা), কাঞ্চি চোরা, ওয়াক, স্নাইপ, গাংচিল, বক আরো অচেনা অনেক প্রজাতির পাখি। বড় সাইজের চার বালতিতেও কুলায় নাই, বারান্দার একপাশে জড়ো করা আছে বাকিগুলো। পাখিগুলো সমুদ্রের দিক থেকে এসে আছড়ে পড়ে মরছিল হোস্টেলের সাথে বাড়ি খেয়ে খেয়ে সারারাত ধরে।
জলচ্ছ্বাস নিহত ছোট্ট একটি মেয়ের মৃতদেহ সৎকারের চেষ্টা
এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আমাদের শীতের ছুটি হয়। ছুটিতে বাবার শিকারের সংগী হয়ে একদিন শিকার কুড়োতে কুড়োতে উত্তর পতেংগা থেকে হালি শহর সৈকতে আসি। তখন সন্ধ্যা প্রায়। বীচ থেকে (তখন মাটির বাঁধ আর ম্যাংগ্রোভ ছিলনা) একসারি নারিকেল গাছ আমাদেরকে গ্রামের ভেতর দিয়ে সোজা সমুদ্র পাড় থেকে রাস্তায় নিয়ে আসতো (আমরা নাম দিয়েছিলাম তাহিতি)। বাবা উত্তর পতেংগায় নেমে গাড়িটিকে হালিশহরে পাঠিয়ে দিতেন। যেখানে বীচ শেষ এবং গ্রাম শুরু হ'তে যাচ্ছে ঠিক সেখানেই একটা ঝোপের মধ্যে কমলা রংয়ের কিছু একটা দেখে এগিয়ে যাই আমি। তিন চার বছরের একটা মেয়ে শিশুর মৃতদেহ -সমুদ্রের পানিতে ভেসে আসা ঘুর্ণিঝড়ের সংহার। বেশ কিছুদিন গত হয়েছে। কিন্তু তাতে না পচঁন ধরেছে না মুখটা একটুও বিকৃত হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল শিশুটি পুতুল খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবা অনেক চেষ্টা করলেন সৎকারের। গ্রামের লোকদের অসহযোগিতায় তা আর সম্ভব হয়নি। তারা এক পর্যায়ে বলা শুরু করলো "শহরোত্তুন মাঁরি আনি খবর দিত ছায়" (শহর থেকে বাচ্চাটাকে মেরে এনে এই নির্জন জায়গায় কবর দিতে চাচ্ছে)।
সৈকতে অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের লাশ ভেসে আসতো।
নীচের লিংকে গিয়ে আরো কিছু জানতে পারবেন। দেখতে পাবেন কিছু ছবিঃ
বিশ্বের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের ভয়াবহতম ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস-১২ই নভেম্বর, ১৯৭০
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫২