মেয়েটি সামনের বসার জায়গাটিতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অনর্গল সেল ফোনে কথা বলে যাচ্ছে সিলেটিতে।
এমন নয় যে খুব আস্তে। এখান থেকে শব্দগুলো সব পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছিনা প্রায় কিছুই। একে তো সিলেটি ভাষা, তার ওপরে কথা বলছে খুব দ্রুত।
এ সময়টিতে ক্যাফে ম্যাংগোতে ভিড় থাকেনা তেমন। সাকুল্যে তিন জন এখন- আলাদা আলাদা ভাবে আসা। তিন জনই কফির অর্ডার দিয়েছি।
আমার হাতে রাজ্যের সময়। কিচ্ছু করার নেই আমার এখন। প্রথমে ভেবে ছিলাম লেইকের পাড়ে বসবো। গিয়ে দেখি সব যুগল। গল্প করছে, এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে বসে, আধ শোয়া হয়ে কেউ কেউ। বসতে অস্বস্তি হল, হাঁটতে হাঁটতে তাই এখানে আসা।
দেয়ালে একটা টিকটিকি ছোট্ট একটা মথকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি ঘটনাটি। কানে আবহ শব্দের মতন ভেসে আসছে মেয়েটির কন্ঠ।
ক্যাফের তৃতীয় মানুষটি, সম্ভবতঃ তার জানেমানের জন্যে অপেক্ষা করছে। ঘন ঘন টেবিলে ফেলে রাখা মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে-সময় দেখছে বোধ হয়। রাজ্যের উৎকন্ঠা-উদ্ভ্রান্ত ভাব-আবার অল্প একটু বিরক্তি মিলিয়ে তার মুখটা দেখার মতন হয়েছে। কফি ঠান্ডা হচ্ছে তার। গত ১৫ মিনিটে একটা চুমুক পর্যন্ত দেয় নি।
টিকটিকি-মথ ও ছেলেটির মুখ আর নেপথ্যে মেয়েটির শব্দক্ষেপণ মিলিয়ে সময় সুন্দর একটা মন্তাজ সৃষ্টি করেছে। তার কথায় মাঝে মাঝে ছেদ পড়ছে শুধু খুব সুন্দর করে মগে চুমুক দেবার সময়।
আমার খুব ভাল্লাগছে।
মেয়েটির কথা বলা শেষ। টেবিলে ছড়িয়ে রাখা তার জিনিস পত্রগুলো গুছিয়ে বেড়িয়ে গেল সে।
ত্যতক্ষণে অন্তিম চুমুক দিয়ে আমিও বাইরে।, অল্প কিছু জায়গা পেরিয়ে রাস্তায়।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। একটা কিশোর কুকুরের লেজ ধরে টানাটানি করছে বাচ্চা দু’টো ছেলে। হুড ওঠানো রিকশা কিছু, খুব সপ্রতিভ কাপড় চোপড় আগাগোড়া দামী বর্ষাতিতে ঢাকা, মাথায় হেলমেট চাপানো, আবেদনময় বাইসাইকেলে সওয়ার কিছু আরোহী, নাতি প্রশস্ত রাস্তাটায় একটু জটলার সৃষ্টি করছে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত একটা কথা মনে পড়ে গেল আমার- কখনই ত কোন মেয়েকে প্রথম দেখার সময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে না দেখলে আমার রূপসী মনে হয় নি।
এই মেয়েটাকে কেন এখনো মনে ধরে আছে?
মনে হচ্ছে কেন স্বর্গ থেকে এইমাত্র নেমে আসা উর্বশী!
কন্যাটির সৌন্দর্য কি এতই তীব্র, এতই অতুলনীয় যে তার আঞ্চলিকতার অনাড়ম্বরতাকে তা ছাড়িয়ে গেছে!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২৭