somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় আল্লাহ! হলিক্রস ‘এরাই আমাদের শিক্ষা দেন’

২৯ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টালিন সরকার : হলিক্রসের স্কুল পরীক্ষার দশম শ্রেণির একটি প্রশ্ন নিয়ে চলছে বিতর্ক যুদ্ধ। প্রশ্নটি হলো ছাত্রীদের মার্জিত ও আটসাঁট পোশাক নিয়ে। এ নিয়ে সরকার সমর্থিত একটি টিভি চ্যানেল ‘খবর’ এবং খবরের পিছনের খবর প্রচার করছে। খবরে শিক্ষাবিদ এবং দেশের জাঁদরেল শিক্ষক-শিক্ষিকার সাক্ষাৎকার প্রচার করছে। একধিক প্রিন্ট-অনলাইন মিডিয়াও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যসহ খবরটি ফলাও করে প্রচার করছে। শিক্ষাবিদরা ওই প্রশ্নকে বলেছেন ‘ধর্ষকদের উষ্কে দেয়ার নামান্তর’। বিপাকে পড়ে হলিক্রস উচ্চ-বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার রানী ক্যাথরিন গোমেজকে ‘পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন করার অপরাধে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করতে হয়েছে। তাকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে হয়েছে, অসাবধানতাবশত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র করার সময় আরও গভীরে আমাদের চিন্তা করা উচিত ছিল।’ ওই প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন যে শিক্ষক তাকেও ‘ভুলের জন্য’ দুঃখ প্রকাশ করতে হয়েছে। প্রশ্নকর্তা বেচারা শিক্ষক ‘অনুতপ্ত’ হয়েছেন। কী ধরনের প্রশ্নের জন্য এতো খবর-বিতর্ক-তর্কযুদ্ধ, শিক্ষাবিদদের এতো উপদেশ-তিরস্কার? ২৫ মে হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির প্রথম সাময়িকীর ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের ৫নম্বর প্রশ্ন নিয়ে ওঠে বিতর্ক। প্রশ্ন হলো-‘সানজিদা চালচলন, বেশভূষা ও কথাবার্তায় বেশ মার্জিত সবাই তার সাথে সদাচরণ করে। অপরপক্ষে তার সহপাঠী রুমানা আটসাঁট পোশাক পরে। তাই সে গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে প্রতিবছর বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে। মাঝে মধ্যে সে অনেক সমস্যায় পড়ে, তার কথাবার্তা চালচলন মার্জিত নয়। পাড়ার ছেলেরা অনেক সময় তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ বছর বৈশাখী মেলায় ঘটে যাওয়া বিষয় সম্পর্কে রুমানা সানজিদাকে জানালে সানজিদা তাকে পোশাক-পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়।’ ক. শালীনতা কী? খ. রুমানা পোশাক-পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বন করবে কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. সানজিদাকে অনুসরণ করে আমরা কীভাবে সামাজিক অবক্ষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি? ব্যাখ্যা কর। ঘ. সুস্থ, সুন্দর সমাজ গঠনে শালীনতার তাৎপর্য ও গুরুত্ব কুরআন-হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ কর। বিতর্ক উঠছে এই প্রশ্ন পড়ে শিক্ষার্থীরা নাকি অস্বস্তিতে পড়ে যায়। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক যৌন-নিপীড়নের ঘটনার পর নামকরা স্কুলের পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন নিয়ে নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় মুখর হয়।হলিক্রসের এই প্রশ্ন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে’। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেছেন ‘এটি একটি সেনসেটিভ বিষয়। এ ধরনের বিষয় প্রশ্নপত্রে পরিহার করাই ভালো।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার বলেছেন, ‘এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রশ্নের মাধ্যমে মেয়েদের হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনার বিষয়ের কারিকুলামটা একটু দেখেন, পড়ে জানেন কি আছে এতে। আমরা কি মেনে চলব আর কি মেনে চলব না’। উদ্দীপন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শ্যামলী নাসরিন বলেছেন, ‘যে কথাটা প্রশ্নে বলা হয়েছে তা হলো টাইট পোশাক। এই কথাটাই বলা উচিত হয়নি। আমি এই বিষয়টার নিন্দা জানাই। এ ধরনের প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত করে। আরো চিন্তা-ভাবনা করে প্রশ্নপত্র করা দরকার। বিষয়গুলো এমন হওয়া উচিত যেখানে তাদের মনটা প্রসারিত হবে।’ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্ন করাটা শুধুমাত্র যারা উত্ত্যক্তকারী তাদেরই উৎসাহিত করবে’।সমালোচনার ঝড়ে ‘পরিস্থিতি বেগতিক’ দেখে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার ক্যাথেরিন গোমেজ স্বীকার করে বলেন, “যেহেতু প্রশ্নে একটু ভুল ছিল এই, আমরা মেয়েদের সচেতন করে দেব, বুঝিয়ে দেব। প্রথমে প্রশ্ন দেখে ওই মুহূর্তে এতো গভীরভাবে ‘ফিল’ করিনি। পরীক্ষার পর মেয়ে কিংবা অভিভাবকরাও কিছু বলেননি। মিডিয়ায় রিপোর্ট দেখে-খবর শুনে টিচারদের সঙ্গে এ নিয়ে অ্যানালাইসিস হয়েছে। প্রশ্নটি আর একটু অন্যভাবে করলে ভালো হত। মূলত বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরাই এ প্রশ্নের মূল উদ্দেশ্য ছিল।”প্রশ্ন হলো শিক্ষার্থীদের শালীন পোশাক পরার পরামর্শ দিলে তারা মনে ‘আঘাত’ পান। ছাত্র-ছাত্রীদের সভ্যতা-ভব্যতা, আচার-আচরণে শালীনতা, চালচলন, বেশভূষা ও কথাবার্তায় মার্জিত হওয়ার শিক্ষা দেয়া কী নারী উত্ত্যক্তকারীদের উষ্কে দেয়া? মার্জিত আচরণ শেখানো খারাপ? অশালীনতা পরিহারে উৎসাহিত করা শিক্ষার্থীদের অপমানের নামান্তর? আটসাঁট পোশাক পরা, মেয়েদের গেঞ্জি-জিন্সের প্যান্ট অশোভন আচরণ না করার উপদেশ-পরামর্শ দেয়া অন্যায়-অপরাধ? শালীন পোশাক পরতে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করা এবং শিক্ষা দেয়া ধর্ষকদের উষ্কে দেয়া? মেয়েদের আটসাঁট পোশাক পরে রাস্তাঘাটে বেলেল্লাপনা না করার পরামর্শ দেয়া কোমলমতি মেয়েদের মনে আঘাত দেয়ার নামান্তর? দেশের জাঁদরেল শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা গবেষণাকারীদের এ উপলব্ধি হলো কেন? তাহলে কী ছাত্র-ছাত্রীদের সভ্যতা-ভব্যতা, শালীনতা, মার্জিত, সদাচরণ ইত্যাদির বদলে শিক্ষালয়গুলোতে আটসাঁট পোশাক পরা, অমার্জিত আচরণ করা, পথেঘাটে বেলেল্লাপনা করার ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে? এরাই আমাদের শিক্ষক; মানুষ গড়ার কারিগর? প্রবাদে রয়েছে ‘শিক্ষাই জাতীর মেরুদ-’ আর ‘ছাত্র-ছাত্রীরাই জাতির ভবিষ্যৎ’। মানুষ বানানোর কারিগর শিক্ষকরা জাতীর ভবিষ্যত ছাত্র-ছাত্রীদের যে শিক্ষা দিতে উৎসাহিত করছেন তাতে জাতীর মেরুদ- শিক্ষার ‘হাল’ কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। (সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×