"সকল মুসলমানদের মতামত আশা করছি.......
ঘটনা ১.....
"সময়টা ছিল ২০১৫ সালের ২৮ রমজান। ১২ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হলো। তো,,ইফতারের প্রায় সব আয়োজন কম্পেলিট। ইফতারের আইটেম ১৫-১৬ টা করা হয়েছে....!
তখন ইফতারের আর প্রায় ৫ মিনিটি বাকি ছিল, এমন সময় আমার এক বন্ধু আবিষ্কার করলেন যে, ইফতারের প্রধান আইটেম "খেজুর" ই নাই। এমন কি এই জিনিষটার কথা কারো মনে ও ছিল নাহ।
তখন সাথে সাথে আমার কিছু বন্ধু বলে উঠল..
-এটা কিছু হইল? খেজুর ছাড়া ইফতার কি হবে?
-তোরা এটা কি বা*লের ইফতার পার্টি দিলি? যে, খেজুর ই কিনছ নাই?
-ভাইরে, তোরা আজকে আমার রোজাটাই বরবাদ করলি, খেজুর ছাড়া ইফতার!! ধুর,
-আর এই জন্যেই আমি আসতে চাই নি। এবার বুঝলি??
এ রকম আরো অনেক মন্তব্য করতে থাকল তারা। যেহেতু আর ইফতারের বেশী সময় ছিল না, সেহেতু খেজুর আর ক্রয় করি নাই। এবং শেষ পর্যান্ত খেজুর ছাড়াই ইফতার করতে হলো সবার...!!
তো, যথারীতি ইফতার শেষ হলো সবার। ইফতার শেষে কেউ কেউ মসজিদের দিকে দৌড় দিলো। আর অনেকেই দেখলাম মসজিদের না গিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ফেবুতে লগইন করে, ইফতার পার্টির সেলফি-কুলপি আপলোড দিচ্ছে!! যাদের মোধ্যে বেশীর ভাগই ছিলো তারাই, যারা একটু আগে খেজুর নিয়ে নিজেদের মোধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু করে দিয়েছিল!!
তো ঘটনা ১ থেকে আপনি কি বুঝলেন?
এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা....
একটা খেজুর নিয়ে আমরা নিজেদের মোধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক করতেছি, খেজুর ছাড়া ইফতার হবে না, ইফতারিতে খেজুর থাকতেই হবে এ রকম আরো অনেক মনগড়া হাদিস তৈরি করতেছি, অথচ আমাদের ফরজ "মাগরিবের নামাজ" যে ছুটে যাচ্ছে তার দিকে আমাদের কোন খবর ই নেই। নেই কোন মাথা ব্যাথা ও... আর আমরা ফরজ নামাজ না পড়ে সুন্নত খেজুর নিয়েই পড়ে আছি!!
ঘটনা ২....
"গত পরশু দিন অর্থাৎ রমজানের তৃতীয় দিন আমার এক বন্ধুর সাথে তারাবীর নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলাম। তো, যথারীতি নামাজ শুধু হলো। তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত পড়ার পর দেখলাম আমার বন্ধুটা বাহির হয়ে যাচ্ছে!!
-কিরে আর নামাজ পড়বি না?
-না..!
-কেন?
-তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত পড়লেই হয়। আমি অনেক বইতে পড়ছি যে, তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত। এবং অনেক হুজুরে ও বলছে!!
এরপর তখন আর তার সাথে আমি কোন তর্কে জড়ালাম না, নামাজ শেষে তাকে বললামঃ তা ভাই বুঝলাম তারাবীহ ৮ রাকাত, কিন্তু তুই "বিতিরের নামাজ" পড়ছত? এরপর সে আর কোন কথাই বল্ল না.....!!
.
তো ঘটনা ২ থেকে আপনি কি বুঝলেন?
এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা! আমরা তারাবীর নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে নিজেদের মোধ্যে অনেক তর্কবিতর্কে যক্ত হই, অথচ বিতিরের ওয়াজিব নামাজটাই আদায় করি নাহ। আবার অনেক সময় দেখলাম তারবীর ২০ রাকাত আদায় করার পর মসজিদ থেকে বাহির হয়ে যাচ্ছে, এদের অবস্থা এই রকম যে বিতিরের আর ৩ রাকাত নামাজ পড়লে এরা মারাই যাবে!! অথচ তারাবির নামাজ ২০ রাকাত থেকে এই বিতিরের ৩ রাকাতই গুরুত্বপূর্ণ!
আমরা আসলে এমন এক মুসলমান যে, ১নং-খাওয়ার পর মিস্টি খাওয়া সুন্নত, ইফতারিতে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত! ২নং- আবার মেসওয়াক করা, রাস্তায় চলাফেরার সময় চক্ষু অবনত করাটাও সুন্নত! কিন্তু আমরা ঐ ১নং সুন্নত গুলো নিয়েই পড়ে থাকি এবং এইসব নিয়ে নিজেদের মোধ্যে তর্কবিতর্ক ও করি। কিন্তু ঐ ২ নং সুন্নত গুলোর দিতে আমরা ভুলে ও তাকাই নাহ। ঐ সুন্নত গুলা মানা তো দূরের কথা, এগুলা ও যে সুন্নত সেটাই জানি না আমরা অনেকেই!!
এর কারন হচ্ছে এক নাম্বার সুন্নত গুলা আমাদের পক্ষে ছিল, তাই এই সব আমরা পালনে ব্যস্ত! আর দু নাম্বার গুলা যেহেতু আমাদের পক্ষে নেই, তাই আমরা আর এগুলা নিয়ে মাথা ও ঘামাই নাহ... :3
আর আমরা বাঙালিরা তো সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকি, এমন কি আমরা আমাদের এই ধর্মীয় বিষয় গুলা ও নিজেদের সুযোগ-সুবিধা মত করে নিচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:২১