স্যার আপনার নতুন উপন্যাস ‘নারী তুমি মায়া’ বর্তমানের সবচেয়ে বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত একটি উপন্যাস।এবারের বই মেলায় আপনার এই বইটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে,এর একটি কারণ আমরা সবাই নিশ্চিত ভাবে জানি তা হল আপনি অনেক ভাল একজন ঔপন্যাসিক।তবে এই উপন্যাসটি সম্বন্ধে আরও একটি কথা মানুষের মুখে মুখে শুনা যাচ্ছে, তা হল উপন্যাসটিতে আপনি আপনার নিজের ভালোবাসা জীবনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন।স্যার এই কথাটি কতটুকু সত্য?
প্রেস কনফারেন্সের সবার চোখ এখন আয়ান চৌধুরীর দিকে।আয়ান এবার হেঁসেই উঠল।মাইকটাকে আয়ান মুখের আরও কাছে নিয়ে এল।আপনারা আমার দিকে যেভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,আমার তো ভয়ই লাগছে।এবার প্রেস কনফারেন্স রুমের সবাই এক সাথে হেঁসে উঠল।আমি কি আপনার নাম জানতে পারি ম্যাডাম এবং কোন পত্রিকা থেকে?
জী স্যার অবশ্যই,আমার নাম শায়লা হক ইন্ডিপেনডেন্ট নিউজ থেকে।
ওকে,মিস শায়লা ‘নারী তুমি মায়া’ এটি নিছক ই একটি উপন্যাস শুধু।এখন আমার ভক্তরা যদি উপন্যাস টিকে আমার ভালোবাসা জীবনের কাহিনী অবলম্বনে রচিত মনে করে মজা পেয়ে থাকে তাহলে ওদের খুশিতেই আমি খুশি।আর আমার লেখার মূল উদ্দেশ্যই তো হচ্ছে আমার ভক্তদের মনো্রঞ্জন করা এবং আর ও ভক্তদের সংখ্যা বাড়ানো।আর আমার মনে হচ্ছে আমি তা করতে পেরেছি।কি বলেন মিস শায়লা?
জী স্যার আপনি অবশ্যই তা পেরেছেন।স্যার লাস্ট একটি প্রশ্ন আছে।
নো মোর কোশ্চেন প্লীজ।অ্যাই নীড টু গো নাও।বলেই আয়ান প্রেস কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে গেল। পিছনে পিছনে রিপোর্টাররা আসতে লাগল।প্লিজ স্যার আমাদের প্রশ্ন এখনও শেষ হয়নি।স্যার প্লিজ আমাদের আর একটু সময় দিন।আয়ানের সেক্রেটারি আর বডিগার্ড রিপোর্টারদের আয়ানের কাছাকাছি ঘেষঁতেই দিল না।আয়ান বাইরে এসে গাড়িতে উঠে গেল,টার্ন টু হোম ড্রাইভার।
বাড়িতে এসে আয়ান সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল।একটা সিগারেট ধরিয়ে রুমের লাইট টা অফ করে দিয়ে ইজি চেয়ারে গিয়ে বসল সে।
আয়ানের মা এসে রুমে ঢুকল।লাইট অফ করে বসে আছিস কেনো?বলেই লাইট টা জালিয়ে দিল কান্তা।
তোর ভক্তদের বেশ কিছু চিঠি এসেছে।
টেবিলে রেখে দাও,পরে পড়ব আমি।
আমি জানি তুই পড়বি না,তবে একটা চিঠি আছে যা তুই অবশ্যই পড়তে চাইবি।
কার চিঠি?
তুই নিজেই দেখ বলে আয়ানের হাতে দিয়ে দিল চিঠিটা ওর মা।চিঠিটা দিয়ে কান্তার চোখে পানি এসে গেল।মায়ের চোখের পানি যাতে আয়ান না দেখে তার জন্য কান্তা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেল।
সাদা খামের উপরে লেখা নামটা আয়ানের পরিচিত।
অনন্যা শিকদার
৩২/১, ধানমন্ডি ৪/এ
ঢাকা।
নামটা পড়তেই আয়ানের হার্টের কম্পন বেড়ে গেল।এত বছর পর অনন্যা চিঠি লিখেছে তাকে।চিঠিটা তাড়াতাড়ি খুলতে গিয়ে আয়ান টের পেল উত্তেজনায় ওর হাত কাঁপছে।
‘তোমার উপন্যাস পড়েছি আমি।অনেক ভাল লেগেছে তোমার লেখা।শুভ কামনা রইল তোমার পরবর্তী লেখা যেন আর ও ভাল হয়।ভাল থেকো।’
অনন্যা
চিঠি টা খুবই সাধারণ এবং নরমাল হোয়াইট প্রিন্ট কাগজে লিখা।আর শুধুমাত্র দুইটা লাইন ই লেখা।কিন্তু আয়ান চিঠি টা বারবার পড়তে থাকল।এক পর্যায়ে ওর চোখে পানি এসে গেল।চিঠি টাতে সে অনন্যার স্পর্শ খুঁজছিল বারবার।সেই অনন্যার স্পর্শ যা আজ থেকে দশ বছর আগে তার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:০৪