ছোট খালার বিবাহিত জীবনের পঞ্চম বছর চলছে। কিছুদিন হল তিনি দুই মেয়ে আর স্বামীসহ আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। আসার পর থেকে খেয়াল করছি খালা উনার স্বামীর সব কাজকর্মেই মুগ্ধ। তিনি যা-ই করেন আমার খালার কাছে অসাধারন লাগে। আমরা বাসা বদলাচ্ছি। সব উলটপালট। যে জিনিসই খোঁজা হয় ‘এটা কই? ওটা কই?’, কিছুই পাওয়া যায়না। পুরাই উধাও। খালু সারাদিন বাইরে থেকে ঘুরে বাসায় এসেছেন। প্লেটে ভাত বাড়া হয়েছে। কিন্তু বসার জন্য জুতসই কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা। তো খালু একটা জায়নামাজ নিয়ে উলটা করে দুই ভাঁজ করে মেঝেতে বিছিয়ে বসে পড়লেন। আমার খালা তার গুণধর স্বামীর গুণ দেখে সে কী মুগ্ধ। এগাল ওগাল হাসি দিয়ে মাকে বলে ‘আপা দেখলেন রুহির আব্বুর কত বুদ্ধি!’
হয়তো দেখা গেল চুলার গ্যাস কোন দিক দিয়ে লিক হচ্ছে তা খুঁজে বের করে সেরে দিয়েছেন। খালা ঢোল পিটিয়ে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবেন উনার স্বামী এ কাজটি করে ফেলেছে।
স্বামীর প্রশংসায় খালা আমার একেবারে ষষ্ঠমুখ। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা উনার মুখ থেকে শুধু জামাইর প্রশংসাবাণীই উচ্চারিত হয় । খালার মতে উনার স্বামী সাকিব আল হাসানের মত অলরাউন্ডার। তিনি বাজারের সব জিনিস সবার চেয়ে কম দামে ভালোটা আনতে পারেন, হোক সেটা কাঁচা বাজার বা শুকনা। কাল আমি বললাম ‘ব্রডব্যান্ড এর লোকগুলোকে কল দিতে হবে। লাইনটা নিচে নামাতে হবে।‘ খালা বলে ‘আরে তোর খালুকে বললে ও-ই করে দিবে। তোর খালু সব পারে।’ ঘরের যে কোন টুকিটাকি সব সমস্যা নাকি তিনি নিজেই সমাধান করেন। আজ বললাম ’১৭ তারিখ তো সুমার বার্থডে। একটা কেক আনতে হবে।’ ‘তোর খালু কে বললেই ঢাকার বেস্ট কেক এনে দিবে। রুহির জন্মদিনেও এনেছিল। সবাই বলছিল এত ভাল কেক কই পেলেন ভাবী!’ আমার পতিভক্ত খালার ভক্তি দেখে আমি আর আমার ছোট বোন অতিষ্ঠ।
ছোট খালা চার বছর আগে ভালোবেসে এই লোকটাকে বিয়ে করেছিলেন। সেই ভালোবাসা এখনো তেমনি অটুট আছে। আমার খালা এমন স্বামী পেয়ে ধন্য। আর খালু আমার খালার এই অসামান্য ভক্তি পেয়ে ধন্য। ধন্য অবশ্য হবারই কথা। এ যুগে কোন লোকই আর এমনটা পায়! তাদের সংসার যে খুব বেশি স্বচ্ছল তা না। কিন্তু তাদের একের অপরের প্রতি এই ভালোবাসা অকৃত্তিম। সেজন্যই আজ তাদের এমন ছোট্ট সাজানো সুখের সংসার।
এরকম মানুষ গুলোই বোধহয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সুখী হতে পারে। যারা এমন অন্ধভাবে পাশের মানুষটাকে ভালোবাসতে পারে, বিশ্বাস করতে পারে, মানুষটার উপর ভরসা করতে পারে। আর আমরা যারা সব ঘটনার কারণ খুঁজে বেড়াই, সব কিছুর পেছনে যুক্তি-অযুক্তি দাঁড় করাই তারা সহজে সুখের মুখ দেখতে পাইনা। আমাদের মধ্যে সবসময়ই হাহাকার থেকে যায়। না পাওয়ার বেদনায় আমরা পুড়ে ছারখার হই। জীবন চলার পথে একটু কম বোঝা ধরনের মানুষ হওয়াই বুঝি ভাল। অন্তত কিছু না বুঝে সুখে জীবনটা কাটিয়ে দেয়া যায়। এ-ই বা মন্দ কী!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১১